ছিটমহলে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ জরিপ, অর্থাৎ জনগণনার কাজ চলছে৷ নির্ধারণ করা হচ্ছে নাগরিকত্ব৷ কারা বাংলাদেশে থাকতে চান, কারা চলে যেতে চান ভারতে – তা নির্দিষ্ট হবে এ জরিপে৷ আর ৩১শে জুলাই চূড়ান্ত হবে ছিটমহল বিনিময়৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের চারটি জেলায় ভারতের ছিটমহল আছে৷ লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম এবং নিলফামারী৷ জুলাই মাসের মধ্যে ঐতিহাসিক এই ছিটমহল বিনিময় চূড়ান্ত হলে অবসান হবে ছিটমহলবাসীর কয়েক দশকের কষ্ট আর যন্ত্রণা৷
লালমনিরহাট
লালমনিরহাটে ভারতের ছিটমহল রয়েছে ৫৯টি৷ তারই একটি ছিটমহল বাঁশমারীর বাসিন্দা বিনোদ চন্দ্র ভারতে চলে যেতে চান৷ তিনি এরইমধ্যে জরিপকারী দলের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে নিজের নাম নিবন্ধন করেছেন৷ টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, ‘‘আমি সপরবিারে ভারতের নাগরিত্ব পেতে আগ্রহ জানিয়েছি৷ কারণ আমার আত্মীয়-স্বজনরা সব ভারতে থাকেন৷ তাঁদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে চাই৷ তাই সপরিবারে ভারতে যাচ্ছি৷''
তবে ভারতীয় এই ছিটমহলে এমন মানুষও আছেন, যাঁরা বাংলাদেশে থেকে যেতে চান৷ তাঁদেরই একজন শাহজাহান মন্ডল৷ তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশেই আমার সব কিছু৷ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে আমার আত্মীয়-স্বজন আছেন৷ তাঁদের ছেড়ে আমি কোথায় যাবো?''
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেয়াকে ঘিরে যশোরের অভয়নগর উপজেলার মালোপাড়ায় ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার পাশাপাশি লুটপাটও করা হয়৷
ছবি: DW
নেই নিরাপত্তাকর্মীর সাড়া
যশোরের অভয়নগরের চাপাতলী গ্রামের প্রবেশপথে পুলিশের সতর্ক অবস্থান৷ গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের দিন এই গ্রামের নিম্নবর্ণের হিন্দু অধ্যুষিত মালোপাড়ায় বসবাসরতদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে৷ আক্রান্তরা জানান, ঘটনাস্থলের মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে থানার অবস্থান হলেও অনেক ফোন করেও সে সময়ে পুলিশ কিংবা কোনো নিরাপত্তাকর্মীর সাড়া মেলেনি৷
ছবি: DW
‘নদী ঠাকুর’
দুর্বৃত্তদের হামালায় লণ্ডভণ্ড মায়া রানি বিশ্বাসের একমাত্র মাথা গোঁজার ছোট্ট নিবাস৷ সেদিন হামলা শুরু হলে পাশের বুড়ি ভৈরব নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ওপারে উঠে প্রাণে বেঁচে যান বিধবা এই নারী৷ তাঁর ভাষায় ‘নদী ঠাকুর’ সেদিন না থাকলে জানটা হয়ত থাকতো না৷
ছবি: DW
প্রাণ বাঁচাতে নদীতে
নিজের ঘরের ভাঙা আসবাব, টেলিভিশনের পাশে মালোপাড়ার গৃহবধু উজ্জ্বলা বিশ্বাস৷ হামলাকারীদের ভয়াবহ রূপ সামান্য দেখেছিলেন তিনি৷ প্রাণ বাঁচাতে তিনিও ঝাঁপ দেন বুড়ি ভৈরবে৷ হামলার সময়ে তাঁর মনে হয়েছিল যে ভগবান সেদিন পাশে ছিলেন না৷
ছবি: DW
বই-পত্র পুড়িয়ে দিয়েছে
কলেজ পড়ুয়া মঙ্গলা বিশ্বাসের বই-পত্র, এমনকি সার্টিফিকেটও পুড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা৷
ছবি: DW
সুন্দর স্বপ্নে চির
হামলাকারীদের ভেঙে দেয়া আয়নায় কলেজ পড়ুয়া মঙ্গলা বিশ্বাসের প্রতিবিম্ব৷ বাড়ির দেয়ালে টাঙানো এই ভাঙা আয়নার মতোই মঙ্গলার সুন্দর স্বপ্নেও চির ধরিয়েছে হামলাকারীরা৷ মঙ্গলার আক্ষেপ, তাঁর বই-পত্র আর সার্টিফিকেট কী দোষ করলো?
ছবি: DW
আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয়
হামলার ছয় দিন পরে এঁরা ফিরছেন বাড়িতে৷ হামলার সময় পার্শ্ববর্তী গ্রামে আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা৷
ছবি: DW
হামলার প্রত্যক্ষদর্শী
৮৬ বছর বয়সি মৃত্যুঞ্জয় সরকার সেদিনের হামলার প্রত্যক্ষদর্শী৷ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও দেশ ছাড়েননি তিনি৷ কিন্তু হামলার পর তাঁর মনে হচ্ছিল যে, সে সময়ে ছেড়ে যাওয়াটাই উচিত ছিল তাঁর৷
ছবি: DW
গাছও রেহাই পায়নি
বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি মালোপাড়ার গাছও জ্বালিয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: DW
পলাতক জামায়াত নেতা
মালোপাড়ায় হামলার পরে চাপাতলী গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম বালিয়াডাঙ্গায় স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর থানা আমীর মাওলানা আব্দুল আজিজের বাড়ি ভাঙচুর করে যৌথবাহিনী৷ ঘটনার আগে থেকেই পলাতক রয়েছেন এ জামায়াত নেতা৷
ছবি: DW
আক্রান্তদের অভিযোগ
জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুল ওহাব৷ মালোপাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য জামায়াত শিবির ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলকেও দায়ী করেছেন অনেকে৷ সাবেক এই সাংসদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়েছেন৷ সেখানে নতুন প্রার্থী হিসেবে রণজিৎ রায় মনোনয়ন পাওয়ায় এই দুই জনের সমর্থকদের মাঝে বেশ উত্তেজনা ছিল পুরো নির্বাচনের সময়টায়৷
ছবি: DW
গণধর্ষণ
যশোরের আরেক ভয়াল জনপদ মনিরামপুর উপজেলার হাজরাইল গ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দা অনারতী দাস৷ ৭ জানুয়ারি রাতে তাঁর সামনেই অস্ত্রের মুখে একদল দুবৃত্ত গণধর্ষণ করে পুত্রবধু মনিমালা দাস আর ভাতিজি রূপালী দাসকে৷
ছবি: DW
ভয়াবহ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী
কার্তিক দাসকেও সেদিন রাতে সেই ভয়াবহ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী হতে হয়েছিল৷ দাসপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার নিম্নবর্ণের হিন্দু মনিমালা দাসের শ্বশুর ও রূপালী দাসের চাচা তিনি৷
ছবি: DW
বাড়িঘর ছেড়েছেন
দাসপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার হওয়া পরিবার দুটি আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়েছেন৷
ছবি: DW
শুধুই আতঙ্ক
দাসপাড়ার এক নারী৷ দাসপাড়ার নারীদের এখন নির্ঘুম রাত কাটে আতঙ্কে৷
ছবি: DW
14 ছবি1 | 14
লালমনিরহাটের ছিটমহলগুলোতে এ পর্যন্ত ৮৯ জন নারী, পুরুষ ও শিশু ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণের জন্য ছবি তুলে ফর্মে স্বাক্ষর করেছেন৷ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পরিসংখ্যান অফিসার সাইফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এখানে সবাই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন৷ নিজেই নিজের নাগরিকত্ব বেছে নিচ্ছেন৷ যাঁরা ভারতে যাবেন, তাঁরা তাঁদের জমি, সহায়সম্পদ বিক্রি করে যেতে পারবেন৷ এমনকি অস্থাবর সম্পত্তি চাইলে সাথে করেও নিয়ে যেতে পারবেন৷''
পঞ্চগড়
পঞ্চগড়ে ভারতের মোট ছিটমহল ৩৬টি৷ দু'দেশের ১০টি সমীক্ষা দল সেখানে কাজ করছে৷ পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন জানায়, ৩৬টি ছিটমহলে ১৮টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে৷ এর মধ্যে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতটি ছিটমহলে তিনটি, বোদা উপজেলার ২৩টি ছিটমহলে ছয়টি এবং দেবীগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ছিটমহলে রয়েছে নয়টি ক্যাম্প৷
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা মুনতাজেরি দীনা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘২০১১ সালে ছিটমহলগুলোতে বাংলাদেশ-ভারত একটি যৌথ জরিপ হয়েছিল৷ তখন ঘরে ঘরে গিয়ে লোকগণনা করা হয়৷ এবারের জরিপে আগের সেই জরিপকে ভিত্তি ধরে ক্যাম্প খুলে জরিপ করা হচ্ছে৷ এলাকায় প্রচার চালিয়ে সবাইকে ক্যাম্পে আসতে বলা হচ্ছে এবং ছিটমহলবাসীরা উৎসাহের সঙ্গে ক্যাম্পে আসছেন৷''
তিনি জানান, ‘‘এবারকার জরিপে সাম্প্রতিক সময়ে যে সমস্ত নবজাতক মারা গেছে এবং যারা বৈবাহিক সূত্রে এখানে এসেছেন – তাদের তথ্যও নেয়া হচ্ছে৷ এছাড়া দুই দেশের জরিপকারীরা প্রত্যেকটি বিষয়ে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন৷''
জানা গেছে, পঞ্চগড়ের ছিটমহল থেকে এ পর্যন্ত ৪৫ জন ভারতে যাওয়ার জন্য নাম তালিকাভুক্ত করছেন৷ পঞ্চগড়ের গাড়াতি ছিটমহলের চেয়ারম্যান মফিদার রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এই ছিটমহল থেকে এ পর্যন্ত ১৭টি পরিবার ভারতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে থাকা অথবা ভারতে যাওয়ার ব্যাপারে ছিটমহলবাসী তাঁদের আত্মীয়-স্বজন কোথায় আছেন এবং ভবিষ্যতের সুযোগ-সুবিধাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন৷''
তাঁর কথায়, ‘‘এই ছিটমহলে বসবাসকারী বিজয় কুমারের তিন ছেলে সপরিবারে ভারতে যেতে চাইলেও, বিজয় কুমার তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে থেকে যাচ্ছেন বাংলাদেশে৷'' সেখানকারই বাসিন্দা মফিদার রহমান বাংলাদেশেই থাকছেন, কারণ তাঁর আত্মীয়-স্বজন সব এই জেলায়ই বসবাস করেন৷''
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামের ১২টি ছিটমহলে এ পর্যন্ত দু'টি পরিবার ভারতে যাওয়ার জন্য নাম নিবন্ধন করেছে৷ কুড়িগামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এজেএম এরশাদ আহসান হাবীব জানান, ‘‘গাও চুলকা-১ এবং কালামাটি ছিটমহলের দুই পরিবারের সাতজন ভারতে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন৷''
আহসান হাবিব জানান, ‘‘জরিপে ছবি থাকছে৷ থাকছে ১০ ধরণের তথ্য৷ নির্ধারিত ফরমে এই জরিপ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে৷''
পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে মানবতা
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য বিরোধীদলের কর্মসূচিতে পুড়ছে যানবাহন, ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ, মরছে মানুষ৷ হরতাল-অবরোধের নামে পোড়ানো অনেকে এখনো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
সারি সারি পোড়া মানুষ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১ নম্বর বার্ন ইউনিট এখন হরতাল-অবরোধের নামে পোড়ানো জীবিকার তাগিদ কিংবা দৈনন্দিন প্রয়োজনে রাস্তায় নামা মানুষে ভরে গেছে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
শিশুর কষ্ট বোঝেনা তারা!
কোলের শিশুও বাঁচতে পারছেন না জ্বালাও-পোড়াওয়ে হাত থেকে৷ প্রতিপক্ষের আদর্শকে ভুল প্রমাণ করে শ্রেয়তর আদর্শ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা নয়, প্রতিপক্ষকে আঘাত করে, হত্যা করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা অনেক দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ৷ স্বাধীন দেশে নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে পোড়ানোও দেখতে হচ্ছে৷ ৩ নভেম্বর আট বছরের সুমি দাদীর সঙ্গে নেত্রকোনা থেকে ঢাকা আসছিল৷ জয়দেবপুর চৌরাস্তায় তাদের বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বোবা কান্না...
নির্মমতার আরেকটি ছবি হয়ে আছে মজিবরের পোড়া শরীর৷ মজিবর বাকপ্রতিবন্ধী৷ কুমিল্লার দেবিদ্বারের এক ট্রাকের হেলপার৷ পিকেটারদের বোমা হামলায় বাসের সঙ্গে তাঁর শরীরও পুড়েছে৷ সবাই শুনে বুঝবে এমনভাবে কথা তিনি বলতে পারেন না, বোবা কান্নায় শুধু পারেন অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে, আর্তনাদ করতে আর এ অন্যায়ের প্রতিকার আশা করতে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
মেয়েকে দেখতে গিয়ে মা হাসপাতালে
জাহানারা বেগম৷ বয়স ৫২৷ পেশা – ফেরি করে কাপড় বিক্রি করা৷ হরতাল-অবরোধ থাকলে বিক্রি কমে যায় বলেই হয়তো সেদিন কাপড় নিয়ে বাড়ি বাড়ি না ঘুরে জাহানারা গিয়েছিলেন শ্যামপুরে৷ সেখানে তাঁর মেয়ের বাড়ি৷ মেয়েকে দেখে অটো রিক্সায় ফেরার সময়েই বিপদ৷ বিরোধী দলের কিছু সমর্থক সেই অটোরিক্সাতেও ছুড়ে মারে পেট্রোল বোমা৷ সন্তানের প্রতি অপত্য স্নেহের মূল্য আগুনে পুড়ে চুকাচ্ছেন জাহানারা বেগম!
ছবি: Mustafiz Mamun
তালহার অসহায়ত্ব
২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা৷ শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় আবু তালহা সেই থেকে ১ নম্বর বার্ন ইউনিটে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
রাজমিস্ত্রী
রাজমিস্ত্রী ও ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদের শরীর পুড়েছে গত ১২ নভেম্বর৷ সেদিন ঢাকার রায়েরবাগেও একটি চলন্ত বাসে ছোড়া হয় পেট্রোল বোমা৷ সেই থেকে তাঁরও ঠিকানা ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১ নম্বর বার্ন ইউনিট৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বাসচালক
২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় শাহবাগে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পোড়ানো সেই বাসটি চালাচ্ছিলেন মাহবুব৷ যাত্রীদের মতো তাঁর শরীরও পুড়েছে৷ তাঁর দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যু্দ্ধের সময়, অর্থাৎ ১৯৭১ সালেই জন্ম মাহবুবের৷ স্বাধীনতার ৪২ বছর পর দেশ পুড়ছে, তিনিও পুড়েছেন৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ঘুমের মাঝেই আগুন...
৭ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া ফেরিঘাটে বাসে ঘুমাচ্ছিলেন হেলপার আলমগীর৷ থামানো বাসেই দেয়া হয় আগুন৷ পোড়া দেহ নিয়ে এখন তিনি হাসপাতালে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
লেগুনার যাত্রী
১০ নভেম্বর ঢাকার লক্ষীবাজারে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পোড়ানো হয় একটি লেগুনা৷ লেগুনা পুড়ে শেষ, লেগুনার যাত্রী কামাল হোসেন ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন৷ তবে শরীরের ৩৫ ভাগেরও বেশি অংশ পুড়ে গেছে৷ ৩৬ বছরের এ তরুণ লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে৷ চিকিৎসকদের চেষ্টা এবং সুস্থ মানসিকতার প্রতিটি মানুষের শুভকামনায় তিনি শিগগিরই হয়তো ফিরবেন স্বাভাবিক জীবনে৷ কিন্তু এই দুর্ভোগ, এই দুঃস্বপ্নের দিনগুলো কি কোনোদিন ভুলতে পারবেন?
ছবি: Mustafiz Mamun
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শুভও ছিলেন রায়েরবাগের সেই বাসে৷ তাই ১২ নভেম্বর থেকে তিনিও পোড়া শরীর নিয়ে পড়ে আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিছানায়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
10 ছবি1 | 10
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আনিসুর রহমান প্রধান এই আনন্দের মধ্যেও জানিয়েছেন আশঙ্কার কথা৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ছিটমহল বিনিময়ের পর ভূমির মালিকানা নির্ধারণ বড় সমস্যা হয়ে উঠতে পারে৷ কারণ ১৯১৩ সালের পর আর কোনো ভূমি মালিকানার কাগজ-পত্র নেই৷ অনেকে আবার বৈবাহিক সূত্রে ছিটমহলে এসেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে৷ এখানকার ভূমি মালিকানা অনেকটাই দখলিস্বত্ব৷''
নিলফামারী
নিলফামারীর চারটি ছিটমহলেও যৌথ জরিপের কাজ সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে চলছে বলে ডয়চে ভেলেকে জারিয়েছেন বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ অংশের প্রধান মাইনুল হক৷ তিনি জানান, ‘‘ছিটমলগুলোতে এখন আনন্দ আর নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন৷ দীর্ঘ কয়েক যুগের হতাশা আর বঞ্চনার অবসানের আনন্দ এখানে৷''
তবে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘চারটি ছিটমহলে জরিপের খরচের টাকা নিয়ে নয়-ছয় করছে প্রশাসন৷ বরাদ্দের টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে, তা আমাদের জানানো হচ্ছে না৷''
কোন দেশে যেতে চান আপনি?
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে ১৬২টি ছিটমহলে একযোগে চলছে এই যৌথ জরিপের কাজ৷ ২০১১ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলে ৩৭ হাজার মানুষের বাস৷ অন্যদিকে ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দা ১৪ হাজার৷
স্থল সীমান্ত চুক্তি ও প্রটোকল অনুযায়ী, ৩১শে জুলাই মধ্যরাতে ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অংশ হয়ে যাবে আর বাংলাদেশের ৫১টি চলে যাবে ভারতের সঙ্গে৷ ছিটমহলবাসীকে তাঁদের ইচ্ছা অনুযায়ী নাগরিকত্ব বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে৷ ১৯৭৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী, এ সমীক্ষার মাধ্যমে নাগরকিত্ব নির্ধারণ চূড়ান্ত হবে৷ জুলাই মাসের মধ্যে জরিপ শেষ হলেও, আগামী ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত এ নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ পাবে ছিটমহলবাসী৷
প্রসঙ্গত, নাগরিকত্ব নির্ধারণ ও জনগণনা হালনাগাদ ও জটিলতা এড়াতে গত ২২শে জুন থেকে ৩১শে জুলাই পর্যন্ত ছিটমহলের জমি ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ রাখাসহ সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তগুলো বিজ্ঞপ্তি আকারে ছিটমহবাসীকে জানানো হয়েছে৷
গত জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মাদীর ঢাকা সফরের সময় সীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে কয়েক দশক ধরে ঝুলে থাকা ছিটমহল বিনিময়ের বাধা দূর হয়৷ এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আগ্রহ এবং উদ্যোগেই ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন করে ভারতের সংসদ৷