1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছিটমহলে নাগরিকত্ব নির্ধারণ

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৯ জুলাই ২০১৫

ছিটমহলে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ জরিপ, অর্থাৎ জনগণনার কাজ চলছে৷ নির্ধারণ করা হচ্ছে নাগরিকত্ব৷ কারা বাংলাদেশে থাকতে চান, কারা চলে যেতে চান ভারতে – তা নির্দিষ্ট হবে এ জরিপে৷ আর ৩১শে জুলাই চূড়ান্ত হবে ছিটমহল বিনিময়৷

Indien Bangladesh Grenze mit Soldaten und Stacheldraht
ছবি: AP

বাংলাদেশের চারটি জেলায় ভারতের ছিটমহল আছে৷ লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম এবং নিলফামারী৷ জুলাই মাসের মধ্যে ঐতিহাসিক এই ছিটমহল বিনিময় চূড়ান্ত হলে অবসান হবে ছিটমহলবাসীর কয়েক দশকের কষ্ট আর যন্ত্রণা৷

লালমনিরহাট

লালমনিরহাটে ভারতের ছিটমহল রয়েছে ৫৯টি৷ তারই একটি ছিটমহল বাঁশমারীর বাসিন্দা বিনোদ চন্দ্র ভারতে চলে যেতে চান৷ তিনি এরইমধ্যে জরিপকারী দলের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে নিজের নাম নিবন্ধন করেছেন৷ টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, ‘‘আমি সপরবিারে ভারতের নাগরিত্ব পেতে আগ্রহ জানিয়েছি৷ কারণ আমার আত্মীয়-স্বজনরা সব ভারতে থাকেন৷ তাঁদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে চাই৷ তাই সপরিবারে ভারতে যাচ্ছি৷''

তবে ভারতীয় এই ছিটমহলে এমন মানুষও আছেন, যাঁরা বাংলাদেশে থেকে যেতে চান৷ তাঁদেরই একজন শাহজাহান মন্ডল৷ তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশেই আমার সব কিছু৷ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে আমার আত্মীয়-স্বজন আছেন৷ তাঁদের ছেড়ে আমি কোথায় যাবো?''

লালমনিরহাটের ছিটমহলগুলোতে এ পর্যন্ত ৮৯ জন নারী, পুরুষ ও শিশু ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণের জন্য ছবি তুলে ফর্মে স্বাক্ষর করেছেন৷ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পরিসংখ্যান অফিসার সাইফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এখানে সবাই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন৷ নিজেই নিজের নাগরিকত্ব বেছে নিচ্ছেন৷ যাঁরা ভারতে যাবেন, তাঁরা তাঁদের জমি, সহায়সম্পদ বিক্রি করে যেতে পারবেন৷ এমনকি অস্থাবর সম্পত্তি চাইলে সাথে করেও নিয়ে যেতে পারবেন৷''

পঞ্চগড়

পঞ্চগড়ে ভারতের মোট ছিটমহল ৩৬টি৷ দু'দেশের ১০টি সমীক্ষা দল সেখানে কাজ করছে৷ পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন জানায়, ৩৬টি ছিটমহলে ১৮টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে৷ এর মধ্যে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতটি ছিটমহলে তিনটি, বোদা উপজেলার ২৩টি ছিটমহলে ছয়টি এবং দেবীগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ছিটমহলে রয়েছে নয়টি ক্যাম্প৷

পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা মুনতাজেরি দীনা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘২০১১ সালে ছিটমহলগুলোতে বাংলাদেশ-ভারত একটি যৌথ জরিপ হয়েছিল৷ তখন ঘরে ঘরে গিয়ে লোকগণনা করা হয়৷ এবারের জরিপে আগের সেই জরিপকে ভিত্তি ধরে ক্যাম্প খুলে জরিপ করা হচ্ছে৷ এলাকায় প্রচার চালিয়ে সবাইকে ক্যাম্পে আসতে বলা হচ্ছে এবং ছিটমহলবাসীরা উৎসাহের সঙ্গে ক্যাম্পে আসছেন৷''

তিনি জানান, ‘‘এবারকার জরিপে সাম্প্রতিক সময়ে যে সমস্ত নবজাতক মারা গেছে এবং যারা বৈবাহিক সূত্রে এখানে এসেছেন – তাদের তথ্যও নেয়া হচ্ছে৷ এছাড়া দুই দেশের জরিপকারীরা প্রত্যেকটি বিষয়ে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন৷''

ছবি: STR/AFP/Getty Images

জানা গেছে, পঞ্চগড়ের ছিটমহল থেকে এ পর্যন্ত ৪৫ জন ভারতে যাওয়ার জন্য নাম তালিকাভুক্ত করছেন৷ পঞ্চগড়ের গাড়াতি ছিটমহলের চেয়ারম্যান মফিদার রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এই ছিটমহল থেকে এ পর্যন্ত ১৭টি পরিবার ভারতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে থাকা অথবা ভারতে যাওয়ার ব্যাপারে ছিটমহলবাসী তাঁদের আত্মীয়-স্বজন কোথায় আছেন এবং ভবিষ্যতের সুযোগ-সুবিধাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন৷''

তাঁর কথায়, ‘‘এই ছিটমহলে বসবাসকারী বিজয় কুমারের তিন ছেলে সপরিবারে ভারতে যেতে চাইলেও, বিজয় কুমার তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে থেকে যাচ্ছেন বাংলাদেশে৷'' সেখানকারই বাসিন্দা মফিদার রহমান বাংলাদেশেই থাকছেন, কারণ তাঁর আত্মীয়-স্বজন সব এই জেলায়ই বসবাস করেন৷''

কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামের ১২টি ছিটমহলে এ পর্যন্ত দু'টি পরিবার ভারতে যাওয়ার জন্য নাম নিবন্ধন করেছে৷ কুড়িগামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এজেএম এরশাদ আহসান হাবীব জানান, ‘‘গাও চুলকা-১ এবং কালামাটি ছিটমহলের দুই পরিবারের সাতজন ভারতে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন৷''

আহসান হাবিব জানান, ‘‘জরিপে ছবি থাকছে৷ থাকছে ১০ ধরণের তথ্য৷ নির্ধারিত ফরমে এই জরিপ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে৷''

কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আনিসুর রহমান প্রধান এই আনন্দের মধ্যেও জানিয়েছেন আশঙ্কার কথা৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ছিটমহল বিনিময়ের পর ভূমির মালিকানা নির্ধারণ বড় সমস্যা হয়ে উঠতে পারে৷ কারণ ১৯১৩ সালের পর আর কোনো ভূমি মালিকানার কাগজ-পত্র নেই৷ অনেকে আবার বৈবাহিক সূত্রে ছিটমহলে এসেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে৷ এখানকার ভূমি মালিকানা অনেকটাই দখলিস্বত্ব৷''

নিলফামারী

নিলফামারীর চারটি ছিটমহলেও যৌথ জরিপের কাজ সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে চলছে বলে ডয়চে ভেলেকে জারিয়েছেন বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ অংশের প্রধান মাইনুল হক৷ তিনি জানান, ‘‘ছিটমলগুলোতে এখন আনন্দ আর নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন৷ দীর্ঘ কয়েক যুগের হতাশা আর বঞ্চনার অবসানের আনন্দ এখানে৷''

তবে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘চারটি ছিটমহলে জরিপের খরচের টাকা নিয়ে নয়-ছয় করছে প্রশাসন৷ বরাদ্দের টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে, তা আমাদের জানানো হচ্ছে না৷''

কোন দেশে যেতে চান আপনি?

সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে ১৬২টি ছিটমহলে একযোগে চলছে এই যৌথ জরিপের কাজ৷ ২০১১ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলে ৩৭ হাজার মানুষের বাস৷ অন্যদিকে ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দা ১৪ হাজার৷

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ছবি: Getty Images/AFP/M.U. Zaman

স্থল সীমান্ত চুক্তি ও প্রটোকল অনুযায়ী, ৩১শে জুলাই মধ্যরাতে ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অংশ হয়ে যাবে আর বাংলাদেশের ৫১টি চলে যাবে ভারতের সঙ্গে৷ ছিটমহলবাসীকে তাঁদের ইচ্ছা অনুযায়ী নাগরিকত্ব বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে৷ ১৯৭৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী, এ সমীক্ষার মাধ্যমে নাগরকিত্ব নির্ধারণ চূড়ান্ত হবে৷ জুলাই মাসের মধ্যে জরিপ শেষ হলেও, আগামী ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত এ নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ পাবে ছিটমহলবাসী৷

প্রসঙ্গত, নাগরিকত্ব নির্ধারণ ও জনগণনা হালনাগাদ ও জটিলতা এড়াতে গত ২২শে জুন থেকে ৩১শে জুলাই পর্যন্ত ছিটমহলের জমি ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ রাখাসহ সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তগুলো বিজ্ঞপ্তি আকারে ছিটমহবাসীকে জানানো হয়েছে৷

গত জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মাদীর ঢাকা সফরের সময় সীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে কয়েক দশক ধরে ঝুলে থাকা ছিটমহল বিনিময়ের বাধা দূর হয়৷ এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আগ্রহ এবং উদ্যোগেই ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন করে ভারতের সংসদ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ