তাসকিন আহমেদকে নিয়ে আইসিসি যা করছে তার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই৷ নিয়মের তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশ দলের অপরিহার্য এক ক্রিকেটারের সঙ্গে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা যে আচরণ করেছে, তাতে ক্রিকেটপ্রেমীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ৷
বিজ্ঞাপন
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মাঝপথে তাসকিনকে হঠাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি৷ কারণ অবৈধ বোলিং অ্যাকশন৷ এত ম্যাচ খেললেন বাংলাদেশের তরুণ পেসার, প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে কত প্রশংসা কুড়ালেন, এতদিন কিছুই হলো না, হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই এমন একটা অভিযোগ এবং নিষেধাজ্ঞা৷ স্বাভাবিক কারণেই ক্রিকেটপ্রেমীরা ভীষণ বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ৷
আইসিসি বলছে, তাসকিনের স্টক ডেলিভারি ও ইয়র্কারে কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা নাকি শুধু বাউন্সারে৷ নিয়ম অনুযায়ী, বাউন্সারে সমস্যা থাকলে বড় জোর সতর্ক করা যায়৷ কিন্তু তাসকিনের বেলায় একেবারে চুল কাটার জায়গায় গলা কাটার মতো শাস্তি!
আইসিসির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে৷ ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস' শোয়েব আখতার মনে করেন, ‘ক্রিকেট বিশ্বের সম্পদ' তাসকিনের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা খুবই দুঃখজনক৷ পাকিস্তানের সাবেক ফাস্টবোলারের আশা, শিগগিরই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে আইসিসি৷
শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়ত হবে৷ সোমবারই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নামছে বাংলাদেশ৷ তাসকিন ও আরাফাত সানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এড়িয়ে মাশরাফিরা স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারবেন কিনা, এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷ তবে ম্যাচের আগেই এসেছে আশা জাগানিয়া খবর – তাসকিনের বিষয়টি পর্যালোচনা করতে বিশেষ কমিটি গঠন করেছে আইসিসি৷ জানা গেছে, কমিটি শিগগিরই বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বৈঠকে বসবে৷
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও অসংখ্য ক্রিকেটানুরাগীর প্রতিবাদের মুখেই এ উদ্যোগ নিয়েছে আইসিসি৷
সবার নজর এখন সেই বৈঠকের দিকে৷ কী সিদ্ধান্ত আসবে ওই বৈঠক থেকে? তাসকিন অবশ্য আশাবাদী৷ নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বাবা আর মায়ের ছবি শেয়ার করেছিলেন৷ ছবিতে তাসকিনের বাবা-মা কাঁদছেন৷ ক্রন্দনরত বাবা-মার উদ্দেশ্যে তাসকিন লিখেছেন, ‘বাবা আর আম্মু, তোমরা ভেবো না৷ আমি শিগগিরই ফিরে আসবো৷ ইনশাল্লাহ!'
তাসকিন নিশ্চয়ই ফিরবেন৷ নিশ্চয়ই আবার ঝড় তুলবেন বল হাতে৷ তবে ফেরার আগে বলছি, ফিরলেও বলবো, ‘ছি ছি আইসিসি! ছি!'
তাসকিনের ‘শাস্তি’ আর তাঁদের বেলায় ‘শান্তি’?
বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেই সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানিকে৷ কিন্তু অনেকের বেলায় এমনটি করেনি আইসিসি৷ দেখুন অভিযোগ ওঠার পরও কারা দিব্যি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন৷
ছবি: Getty Images/Q. Rooney
কুমার ধর্মসেনা
এখন তিনি আম্পায়ার৷ সুতরাং সুযোগ পেলে হয়ত তিনিই কারো বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিযোগ করবেন৷ অথচ শ্রীলঙ্কার এই সাবেক ডান হাতি অফব্রেক বোলারের অ্যাকশন নিয়েই প্রশ্ন ছিল৷ ২০০০ সালে তাঁর বিরুদ্ধে বল ‘চাক’ করা বা ছোঁড়ার অভিযোগ তদন্তও করেছিল আইসিসি৷ কিন্তু খেলার সময় কোনো আম্পায়ার অভিযোগ না করায় ২০০৬ সাল পর্যন্ত নির্বিঘ্নে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে অবসর নেন ধর্মসেনা৷
ছবি: Reuters/D. Gray
ব্রেট লি ও জার্মেইন লসন
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ফাস্ট বোলার ব্রেট লি (ওপরের ছবিতে, ডানে) এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট মিডিয়াম পেসার জার্মেইন লসনের বোলিং অ্যাকশন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল৷ আইসিসি তদন্তও করেছে৷ লসনকে সংশোধনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে দু’বার৷ কিন্তু আম্পায়ার অভিযোগ না করায় এই দু’জনেরও ‘নিষিদ্ধ’ হতে হয়নি৷
ছবি: Getty Images
হরভজন সিং
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই ভারতের স্পিনার হরভজন সিংয়ের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ সরাসরি ‘নিষিদ্ধ’ না করে তাঁর বোলিং অ্যাকশনের বৈধতাও খতিয়ে দেখেছিল আইসিসি৷ ‘সবুজ সংকেত’ পেয়ে খেলা চালিয়ে যেতে হরভজনেরও কোনো অসুবিধা হয়নি৷
ছবি: AP
শোয়েব মালিক
পাকিস্তানের শোয়েব মালিকও হাতে গোনা কয়েকজন সৌভাগ্যবানের একজন বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও যাঁকে ‘নিষিদ্ধ’ হতে হয়নি৷ এখনো তিনি পাকিস্তান দলের একজন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়৷
ছবি: Reuters/Action Images/J. O'Brien
তাসকিনকে সরাসরি ‘নিষিদ্ধ’?
বাংলাদেশের তাসকিন এবং আরাফাত সানিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাময়িকভাবে ‘নিষিদ্ধ’ করা হয়েছে৷ তাসকিনের নিষেধাজ্ঞা তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে৷ তাঁর শুধু ‘বাউন্সার’ নিয়ে সন্দেহ৷ নিয়ম অনুযায়ী বাউন্সার নিয়ে সন্দেহ থাকলে প্রথমে সতর্ক করার কথা, কিন্তু তা না করে সরাসরি নিষিদ্ধ করা হয় তাঁকে৷ আইসিসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড৷ কিন্তু রিভিউয়েও বহাল রয়েছে নিষেধাজ্ঞা৷