নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ইমদাদুল হক মিলনের লেখা 'রূপনগর' নাটকে প্রয়াত অভিনেতা খালেদ খানের একটি ডায়লগ বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
নাটকের একটি দৃশ্য়ে দেখা যায়, দুজন সঙ্গীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন খালেদ খান৷ আর সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন অভিনেতা তৌকির আহমেদ৷ সেই সময় পাশের এক সঙ্গীকে তৌকিরের দিকে ইটের টুকরা ছুড়তে বলেন খালেদ খান৷ এরপর নিজেই ঐ সঙ্গীকে বলেন ‘‘ছি ছি ছি, তুমি এত খারাপ, ইটা মেরেছ!’’ এই বলে তিনজনই হেসে ওঠেন৷
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনার তথ্য সংক্রান্ত ওয়েবসাইটটি দেখতে গিয়ে হঠাৎ খালেদ খানের ডায়ালগটি মনে পড়ে গেল৷ মনে হলো, করোনা ব্যাটাতো আচ্ছা খারাপ! শুধু বেছে বেছে ধনী দেশের লোকগুলোকে বেশি ধরছে সে! কারণ আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যার যে তালিকা জন হপকিনস নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছে তাতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর নামই সবার ওপরে দেখা যাচ্ছে৷
তার মানে কি করোনা ধনী-গরিবে বৈষম্য করছে! কিন্তু একটা ভাইরাসের পক্ষেতো তা সম্ভব নয়! তাহলে?
উত্তর সোজা এবং অনেকেই তা জানেন৷ ধনী দেশগুলোতে করোনা পরীক্ষার সুযোগ বেশি থাকায় করোনা ধরাও পড়ছে বেশি৷ এর মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত মানুষ বাছাই করে তাদেরকে কোয়ারান্টিনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যেন তারা অন্যদের মধ্যে তা ছড়াতে না পারেন৷
তাহলে বলা যায়, ধনীরা নিজেদের প্রয়োজনে করোনাকে ভয়াবহ হিসেবে তুলে ধরছে৷ আর গরিব দেশগুলোতে হয় করোনার প্রকৃত তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না, নয়ত চেপে যাওয়া হচ্ছে৷ অর্থাৎ করোনার পরিচিতিটা আসলে ঠিক করছে মানুষ, করোনা নিজে নয়৷ তাই লেখার এই পর্যায়ে এসে শিরোনামে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে৷ এখন বলতে হচ্ছে ‘‘ছি ছি ছি, মানুষ তুমি এত খারাপ!’’
এবার একটু সিরিয়াস কথায় আসি৷
সারা দুনিয়ার সবকিছুর উপর প্রভাব ফেলছে করোনা৷ জাতিসংঘের মহাসচিব থেকে শুরু করে বিশ্বের অনেক বড় নেতা করোনা সংকটকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে দেখছেন৷ ফলে তার মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তাঁরা৷
কোনো সংকট মোকাবিলার জন্য আর্থিক সক্ষমতা একটা বড় বিষয়৷ ধনী দেশগুলোর তা থাকায় তারা বেশি বেশি পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নিতে পারছে৷
কিন্তু গরিব দেশগুলোও যেন সেটা করে এবং করতে পারে সেই চেষ্টা করতে হবে৷ না হলে ভবিষ্যতে ধনী দেশগুলো পরিস্থিতি সামলে উঠতে পারলেও গরিব দেশে করোনার অস্তিত্ব থেকে গেলে ধনীরা আগের মতো স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে না৷ কারণ এই পৃথিবীতে গরিবদের বাঁচার জন্য ধনীদের যতটা প্রয়োজন, ধনীদের বাঁচার জন্য গরিবদের প্রয়োজনীয়তাও ঠিক ততটাই৷
দেখুন ২০ মার্চের প্রতিবেদন...
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে কোন দেশ কী করছে
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়াসহ আছে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কা৷ তবে উন্নত দেশগুলো এই পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Jordan
জার্মানি
সব ধরনের কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে জার্মান সরকার৷ দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মোট ৮০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে দেয়া হচ্ছে কর-ছাড়৷ দেরিতে ঋণ পরিশোধে গুণতে হবে না জরিমানা৷ প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দেয়া হবে সাড়ে ১৪ কোটি ইউরো৷
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে স্পেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানি, কর্মী আর আর্থিক অস্বচ্ছলদের সুরক্ষায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে৷ এর মধ্যে শুধু সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ করা হবে প্রায় ৬৪ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AAB. Akbulut
পর্তুগাল
১৮ মার্চ থেকে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ এখন পর্যন্ত এক হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার৷ এরমধ্যে ৩২২ কোটি ডলার পর্যটন, বস্ত্র, কাঠসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে৷ ৫৩৬ কোটি ডলার আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে কর সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে৷
ছবি: Reuters/M. F. Lopes
ফ্রান্স
প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার সহায়তা তহবিলের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফ্রান্স সরকার৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ রেস্টুরেন্ট, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কোয়ারান্টিনের কারণে যেসব কর্মী কাজে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের জন্য কয়কশ’ কোটি ডলার ব্যয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marin
যুক্তরাজ্য
করোনা ভাইরাসের কারণে ১৪৫০ কোটি ডলারের জরুরি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য৷ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এবং সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেটাতে এই টাকা দেয়া হবে৷ পাশাপাশি খুচরা ব্যবসা এবং পর্যটন শিল্পের জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের ঋণ তহবিলও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Video
যুক্তরাষ্ট্র
সম্প্রতি ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে সেনেট৷ স্বাস্থ্য বিমা ছাড়াই করোনার পরীক্ষা করানো, স্কুলগামী শিশুদের জন্য খাবার সরবরাহ, কর্মীদের ১০ দিনের অসুস্থতাজনিত এবং কিছু ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের বেতনসহ ছুটির পেছনে এই টাকা ব্যয় হবে৷ পাশাপাশি এক ট্রিলিয়ন ডলারের আরেকটি প্রণোদনা প্যকেজের জন্য আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Reuters/L. Millis
ক্যানাডা
ক্যানাডার জন্য পাঁচ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ এই অর্থ দেশটির জিডিপির তিন শতাংশ ৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর-ছাড়, কর্মীদের বেতন, সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ব্যয় হবে এই অর্থ৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Sudoma
অস্ট্রেলিয়া
১১০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার৷ ৬৫ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকে এককালীন ৪৫১ ডলার করে দেয়া হবে এই তহবিল থেকে৷ পাশাপাশি এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষানবিশ চাকুরিজীবী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতেও খরচ করা হবে এখান থেকে৷ অন্যদিকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঋণের সুদহার কমিয়ে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carrett
তুরস্ক
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ১৫৪০ কোটি ডলারের ব্যয় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তুরস্ক৷ ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা’ শিরোনামের এই প্যাকেজটির আওতায় মোট ২১ টি খাতে খরচ করা হবে৷ এর মধ্যে অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধি, ব্যবসা সহযোগিতা, মূল্য সংযোজন কর হ্রাসসহ খুচরা, ইস্পাত, গাড়ি ও পর্যটন শিল্পে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷