বাংলাদেশে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে৷ ভিডিও কনফারেন্সে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপকালে এমন আভাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটি আরো পাঁচদিন বাড়ানো হতে পারে৷ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘আমরা ছুটি দিয়েছিলাম, হয়তো আমাদের আরও কয়েকদিন একটু বাড়াতে হতে পারে৷ কারণ যারা অনেকে গ্রামে চলে গেছেন, সেখানে কোনো রকম আবার এই রোগের প্রার্দুভাব দেখা না দেয়, সেই সময়টা হিসেব করে৷ আমরা ১০/১২ দিনের ছুটি দিয়েছিলাম৷ এটা ১৪ দিন পর্যন্ত হতে পারে৷''
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে গত ২৭ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার৷ বন্ধ করা হয়েছে সব ধরণের যোগাযোগও৷ এই সময়ে সবাইকে বাড়িতে থাকার অনুরোধ জানানো হয়৷
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী আপাতত ৯ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন৷ ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ২৬ মার্চ থেকে ছুটি ছিল৷ কোয়ারান্টিন (১৪ দিনের) কত তারিখ পর্যন্ত হবে? ৯ তারিখ পর্যন্ত৷ তাহলে বোধহয় আমাদের এই ছুটিটা সীমিত আকারে বাড়াতে হবে৷''
সেই সঙ্গে সীমিত আকারে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর কথাও জানান শেখ হাসিনা৷ ‘‘যোগাযোগ ব্যবস্থাটা চালু করার জন্য সেখানে আমরা চিন্তাভাবনা করেই করব, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা সেখানে ছাড় দেব'', বলেন তিনি৷
নববর্ষের আয়োজন বন্ধ
প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী বাংলা নববর্ষ উদযাপন বন্ধ রাখার পক্ষেও মত দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘নববর্ষের অনুষ্ঠান আমি মনে করি ডিজিটাল পদ্ধতিতেই আপনারা করতে পারেন৷ সেখানে সবাই যথাযথ আকারে করুন৷ কিন্তু বিশাল জনসমাগম করে এই অনুষ্ঠান সারা বাংলাদেশে সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে৷ এটা আমার বিশেষ অনুরোধ৷’’
ইংরেজি পঞ্জিকা অনুযায়ী ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে নতুন বাংলা বছর ১৪২৬৷ নববর্ষকে ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশে বড় ধরনের জনসমাগম ঘটে৷ প্রধানমন্ত্রী সেসব আয়োজন বন্ধের ঘোষণা দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘কষ্ট বেশি লাগছে আমার৷ এটা ঠিক যে নববর্ষের উৎসব এটা আমরাই শুরু করেছিলাম অনেক বাধা, বিঘ্ন অতিক্রম করে৷ কিন্তু আজকে সেটাও আমাকে বন্ধ রাখতে হচ্ছে৷’’
‘‘মানুষের কল্যাণের দিকে তাকিয়েই কিন্তু এটা আমি বন্ধ রাখছি৷ কাজেই নববর্ষের অনুষ্ঠান আপনারা করবেন না৷ এটা আপনারা মনে রাখবেন৷’’
এফএস/এডিকে (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
হোম কোয়ারান্টিনের খুঁটিনাটি
সব দেশেই হাসপাতালে কোয়ারান্টিনের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে নিজের বাসায়ও কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷ কিভাবে থাকতে হয় হোম কোয়ারান্টিনে? চলুন জেনে নেই এর খুঁটিনাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
কোয়ারান্টিন কী?
১৪শ শতকে ইউরোপে মহামারি আকার নিয়েছিল প্লেগ, যা ইতিহাসে ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে পরিচিত৷ প্রায় ২০ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল মহামারিতে৷ ভেনিস কর্তৃপক্ষ নিয়ম জারি করে, বন্দরে কোনো জাহাজ ভিড়লে যাত্রীদের নামানোর আগে সমুদ্রে ৪০ দিন নোঙর করে রাখতে হবে। ৪০ সংখ্যাকে ইটালিয়ান ভাষায় বলা হয় কোয়ারানতা, আর অপেক্ষার সময়টিকে কোয়ারানতিনো৷ তখন থেকে সংক্রামক রোগের আশঙ্কায় কাউকে আলাদা করে রাখাকে কোয়ারান্টিন বলা হয়৷
ছবি: London Museum of Archeology
আইসোলেশন কী?
কোয়ারান্টিন আর আইসোলেশনের তফাত কী? কোয়ারান্টিন সাধারণত হাসপাতালের বাইরে নির্দিষ্ট স্থানে অথবা নিজ বাসাতেও হতে পারে৷ তবে আইসোলেশন সাধারণত সরাসরি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালেই করা হয়, যাদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তাদের রাখা হয় কোয়ারান্টিনে, উপসর্গ৷ তেমন প্রকট না হলে তাকেও কোয়ারান্টিনে রাখা হয়৷ কিন্তু কারো মধ্যে সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে, তখন তাকে রাখা হয় আইসোলেশনে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Photoshot
হোম কোয়ারান্টিন কেন?
সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত বা শরীরে ভাইরাস থাকতে পারে এমন সন্দেহ হওয়া ব্যক্তিদের সুস্থ মানুষের কাছ থেকে সরিয়ে রাখা প্রয়োজন৷ যাদের মধ্যে অস্বাভাবিক জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা অন্য লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাদের হাসপাতালে বিশেষ কোয়ারান্টিন বা আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে৷ সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত এত বেশি মানুষকে একসঙ্গে হাসপাতালে রাখা সম্ভব নয়৷ এ কারণে অনেককে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে হোম কোয়ারান্টিনে থাকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
হোম কোয়ারান্টিন কী?
‘হোম’ মানে বাসা, কোয়ারান্টিন মানে পৃথক করা৷ সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসায় রোগীকে সবার আগে আলাদা করে ফেলা হয়, যাতে রোগ অন্যদের শরীরে না ছড়ায়৷ রোগীকে যেখানে রাখা হয়, সেখানে নেয়া হয় বিশেষ ব্য়বস্থা৷ এই ব্যবস্থাকেই বলে কোয়ারান্টিন৷ করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মাত্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিজের বাসায় নিজের তত্ত্বাবধানেই কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা৷ এটিকেই বলা হচ্ছে হোম কোয়ারান্টিন৷
ছবি: Getty Images/D. Ramos
কী করতে হবে?
হোম কোয়ারেন্টাইনে আপনাকে পরিবারের অন্য সদস্যদের চেয়ে আলাদা থাকতে হবে৷ সবচেয়ে ভালো হয় আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা ঘরে রাখতে পারলে৷ সে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে৷ আলাদা ঘর সম্ভব না হলে রাখতে হবে আলাদা শোয়ার ব্যবস্থা৷ আক্রান্ত ব্যক্তির অন্তত এক মিটারের মধ্যে অন্য কারো শোয়ার ব্যবস্থা রাখা যাবে না৷ রোগীকে নিয়মিত মেডিক্যাল মাস্ক পরতে হবে এবং সে মাস্ক নিয়মিত পালটাতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/R. Fouladi
যা যা করবেন না
কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা৷ আক্রান্ত ব্যক্তি বাসার বাইরে যেতে পারবেন না, কারো সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না৷ নিজের ব্যবহার্য দ্রব্য ছাড়া অন্য জিনিসপত্র ব্যবহার না করাই ভালো৷ নিজের জন্য নির্ধারিত স্থান ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যবহার করা স্থান, যেমন রান্নাঘর এমনকি বৈঠকখানাতেও যাওয়া উচিত হবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Duff
যা যা আলাদা করবেন
রোগীর ঘর বা বিছানা তো আলাদা থাকবেই, পাশাপাশি রোগীর ব্যবহার করা টুথব্রাশ, থালা-বাসন, তোয়ালে, গামছা, কাপড়চোপড়, বিছানার চাদর, বালিশ, সবই রাখতে হবে অন্যদের থেকে দূরে৷ বাড়িতে কোনো পোষা প্রাণী থাকলে তাকেও আক্রান্তের সঙ্গে মিশতে দেয়া যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Baba Ahmed
নবজাতকের মা কী করবেন?
মা আক্রান্ত হলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে কোনো বাধা নেই৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বুকের দুধ থেকে শিশু আক্রান্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ তারা এখনও পাননি৷ তবে শিশুকে স্পর্শ করার আগে মাকে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে৷ মুখে মেডিক্যাল মাস্ক পরে নিতে হবে৷ অন্য সময় শিশু থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Ramirez
বাড়ির অন্য সদস্যরা?
সেবার জন্য নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তি থাকলে ভালো হয়৷ একেক দিন একেক জন রোগীর সেবা করলে বাড়ির সবাই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে৷ বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যত দূরে রাখা সম্ভব ভালো৷ সেবাদানকারী সেবা দেয়ার সময় মেডিক্যাল মাস্ক ভালো করে পরে নেবেন৷ ব্যবহার করার সময় মাস্কে আর হাত দেয়া যাবে না৷ রোগীর ঘর থেকে বের হয়েই সে মাস্ক ঢাকনা দেয়া ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে, হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/G. Markowicz
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
ঘর নিয়মিত ব্লিচিং সলিউশন দিয়ে মুছতে হবে৷ তার ব্যবহার করা চেয়ার টেবিল বা অন্য যেকোনো কিছু নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে৷ রোগী যে টয়লেট ব্যবহার করবেন, সেটি যদি অন্য কেউ ব্যবহার করেন তাহলে সাবধানে থাকতে হবে৷ রোগী টয়লেট ব্যবহার করার পর প্রতিবার ভালো করে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে৷ রোগীর কাপড় ৬০ থেকে ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানিতে ডিটারজেন্ট দিয়ে নিয়মিত ধুয়ে দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Ena
দর্শণার্থীর সঙ্গে সাক্ষাৎ
কেউ অসুস্থ হলে তার খোঁজ নিতে বা সুস্বাস্থ্য কামনা করতে ফলমূল-উপহার নিয়ে আমরা হাজির হই রোগীর বাড়িতে৷ কিন্তু করোনা ভাইরাসের মতো মারাত্মক সংক্রমণে কারো সঙ্গে দেখা করতে না যাওয়াই ভালো৷ এতে করে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে ভাইরাস নিয়ে আপনি নিজেই তা ছড়িয়ে দিতে পারেন আপনার অন্য প্রিয়জনের শরীরে৷ বরং আক্রান্তের সঙ্গে দেখা না করলেই তাকে সবচেয়ে নিরাপদে রাখতে পারেন আপনি৷
ছবি: Reuters/J. Redmond
ডাক্তারের কাছে যাবেন না
অনেকেই আতঙ্কে বা না জেনে নিজেই চলে যাচ্ছেন চিকিৎসকের কাছে৷ কিন্তু এর ফলে আপনার শরীর থেকে যেমন ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে, আপনি সুস্থ থাকলে অন্যের শরীর থেকে আপনার শরীরেও ভাইরাস চলে আসার ঝুঁকি থাকে৷ আগে স্থানীয় চিকিৎসক বা চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে ফোনে যোগাযোগ করুন৷ কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় জ্বর, কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ বেশি মাত্রায় অনুভব করলে রোগতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের হটলাইনে যোগাযোগ করুন৷
ছবি: Imago Images/A. Hettrich
কতদিন কোয়ারান্টিন?
সাধারণত চিকিৎসকেরা ১৪ দিন পর্যন্ত বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলবেন৷ এর মধ্যে নানা পরীক্ষার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণে রাখবেন তারা৷ তবে ব্যক্তিবিশেষে এই কোয়ারেন্টাইন কম-বেশিও হতে পারে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস কেমন প্রভাব ফেলবে তা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে৷ ফলে কেউ ৩-৪ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠলেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আবার কারো ১৪ দিনের বেশি সময় লাগলেও শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
করোনায় করণীয়
আমরা সবাই সচেতন থাকলে, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেই ঠেকানো যাবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব৷ তাই গুজবে বিশ্বাস না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করুন৷ ভাইরাসের লক্ষণ শরীরে দেখা দিয়েছে মনে করলে আগেই সরাসরি ডাক্তারের কাছে না গিয়ে হটলাইনে কল করুন৷ রোগতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন৷