ছুটি মানে শুধুই ফুর্তি নয়, ছুটিতেও কাজ করা যায়
১৮ জুলাই ২০১১কিন্তু কর্মজাবী বহু মানুষ তার বদলে অন্য কিছু করতে চান৷ যেমন আফ্রিকার কোন গ্রামে গিয়ে বাচ্চাদের টীকা দেয়া, কোথাও বা পানীয় জলের কল বসানো৷
ছুটি মানেই তো চুটিয়ে ঘুমানো, কিচ্ছু না করা৷ সমুদ্রের ধারে রোদ পোয়ানো বা হোটেলের সুইমিং পুলে শরীর ডুবিয়ে রাখা৷ কিন্তু এমন মানুষও এদেশে আছে যারা তাদের অবসরের মুহূর্তগুলো ভিন্নভাবে কাটাতে চান৷ তারা স্বেচ্ছায় চলে যান দক্ষিণ আফ্রিকার সিংহ সুরক্ষা প্রকল্পে কাজ করতে৷ কেউবা ভারতের দুঃস্থ মেয়েদের স্কুলে পড়াতে যান, ঘানায় এইডস রোগের বিস্তার রোধ নিয়ে কাজ করেন অথবা তানজানিয়ায় পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্পে সক্রিয় সহযোগিতা করেন৷ টিলমান স্ট্রাউব তাদেরই একজন৷ ছাত্রাবস্থায় ব্যাকপ্যাক নিয়ে বহু জায়গায় ঘুরেছেন৷ দেখেছেন চারপাশের জগতটাকে৷ কথা বলেছেন নানা মানুষের সঙ্গে৷ সঞ্চয় করেছেন অভিজ্ঞতা, যা বই-এর পাতা থেকে সম্ভব নয়৷ আফ্রিকার দেশ তানজানিয়াও ঘুরে দেখেছেন টিলমান৷ কিন্তু ফিরে গেছেন তিনি সেখানে আবার৷ ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে তাঁর পড়াশোনাটা এবার কাজে লাগিয়েছেন৷
টিলমান স্ট্রাউবের বয়স ৩৫৷ ইন্জিনিয়ার তিনি৷ ‘ইন্জিনিয়ার্স উইদাউট বর্ডার্স' সংস্থার অবৈতনিক সদস্য৷ সংস্থা বিকাশমুখি দেশগুলোতে পানি, জ্বালানি আর জনস্বাস্থ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে কাজ করে থাকে৷
প্রকৌশলী স্ট্রাউব তানজানিয়ার একটি মেয়েদের স্কুলে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ট্যাঙ্ক তৈরি করতে সাহায্য করেছেন৷ এখন সেখানে পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা গেছে৷ আগে প্রতিদিন দূরের কোন এক উৎস থেকে ৫ হাজার লিটার পানি বয়ে আনতে হতো৷ দু বছর তিনি জার্মানি থেকেই এই প্রকল্পের জন্য কাজ করেছেন৷ তারপর ২০১০ সালে তাঁর পুরো বছরের ছুটি নিয়ে ছয় সপ্তাহের জন্য তানজানিয়া গিয়ে পোঁছন৷ তিনি বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজটা ছিল তাঁর জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ৷ তবে দারুণ লেগেছে তাঁর৷ অমন ঝকঝকে সূর্যের আলো৷ বেশ কিছুটা বিশ্রামও হয়েছে তাঁর৷
ছুটির সময় একেবারে কিছু না করা, চুপচাপ বসে থাকা টিলমান স্ট্রাউবের জন্য সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ বরং আফ্রিকায় তাঁর এই কাজকে তিনি জার্মানিতে তাঁর পেশাগত কাজের পরিপূরক বলেই মনে করেন৷ তবে এ ক্ষেত্রে তিনি একা নন৷ যেমন তানিয়া কুনৎস৷ তাঁর ট্রাভেল এজেন্সি ‘‘ট্রাভেলওয়ার্কস'' বিদেশে উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য স্বেচ্ছাসেবী কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা করে থাকে৷ এই স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে আছেন স্কুল শিক্ষয়িত্রী থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ৷ এদের কেউ কেউ বছরে একাধিকবার বিদেশে যান এধরনের কাজ করতে৷ তানিয়া কুনৎস একজন শিক্ষিকার কথা বলেছেন যিনি ইস্টারের ছুটির সময় কেনিয়ায় এবং গরমের ছুটির সময় জাঞ্জিবারের স্কুলে ক্লাস নেন৷ বয়স এক্ষেত্রে কোন বাধাই নয়৷ যেমন ৭৩ বছর বয়সের এক মহিলা৷ অনেক দিন আগেই চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন৷ তিনি এখন আফ্রিকায় একটি সিংহ সুরক্ষা প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট৷ আনন্দের সঙ্গেই এই কাজ তিনি করে যাচ্ছেন৷
প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়