ছেলেদেরও নিয়মিত ইউরোলজিস্টের কাছে যাওয়া উচিত
৪ জুলাই ২০২৩
যৌনশিক্ষা ও প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়৷ যেমন কোনো নারী ১৪ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে প্রথম বার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেলেও অনেক তরুণ পুরুষের ইউরোলজিস্টের কাজ সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই৷
কিছু তরুণ সে বিষয়ে জানেন, কয়েকজন হয়তো ইউরোলজিস্টের কাছেও গেছেন৷ নারীপুরুষ নির্বিশেষে তরুণ প্রজন্ম অনলাইনে তথ্য পান৷ কিন্তু স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও ব্লগার শিলা দে লিস মনে করেন, ইন্টারনেটের অনেক খবর মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেক মানুষই বিভ্রান্ত এবং তাদের এমন ভরসার মানুষ চাই, যে সহজ ভাষায় বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে পারে৷ অর্থাৎ নানা খটোমটো শব্দে ভরা ডাক্তারি পরিভাষা দিয়ে কোনো কিশোরের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায় না৷ সেটা মোটেই সাহায্য করে না৷’’
শিলা ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে টিনএজারদের কাছে পৌঁছতে চান৷ তিনি তাদের শেখাতে চান৷ মেয়েদের বয়ঃসন্ধির বিষয়ে তিনি ‘গার্ল অন ফায়ার' নামের বই লিখেও সেই লক্ষ্য পূরণ করতে চান৷ নিজের মেয়ের সঙ্গে মিলে তিনি যত বেশি সম্ভব প্রশ্নের জবাব দেবার চেষ্টা করছেন৷ ছেলেদের জন্যও তা বোধগম্য হবে৷ শিলা মনে করেন, ‘‘আসলে সবারই খুব কম ধারণা রয়েছে৷ মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের তথ্য সংগ্রহ করতে বেশি বেগ পেতে হয়৷ দুর্ভাগ্যবশত ছেলেরা হয় ইন্টারনেট থেকে বা পর্নোগ্রাফি দেখে খবর পায়৷ তারা ভাবে, যৌনতা সম্পর্কে সত্য জানতে পেরেছে৷ আমরা জানি, সেখানে যা দেখানো হয় তা মোটেই বাস্তব নয়৷’’
এর ফলে নানা প্রশ্ন মনে জাগে৷ কিন্তু মেয়েদের জন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া রুটিন হলেও ছেলেরা প্রায়ই জানে না, তাদের কেন আদৌ কোনো ইউরোলজিস্টের কাছে যাওয়া উচিত৷
চিকিৎসক হিসেবে ক্রিস্টিয়ান রাৎস মনে করেন, তরুণদের জন্যও এমনটা স্বাভাবিক করে তোলা যেতে পারে৷ তিনি এমন অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করেছেন, যার আওতায় ছেলেরা যে কোনো প্রশ্ন নিয়ে তাঁর কাছে আসতে পারে৷ তিনি অনেক স্কুলও পরিদর্শন করেছেন৷ তাঁর মতে, মনে অনেক প্রশ্ন যেমন আছে, সংকোচও কম নেই৷ ড. রাৎস বলেন, ‘‘তারা ভাবে শুধু বয়স্ক পুরুষদের প্রস্টেট ও রেকটাল পরীক্ষা জরুরি৷ ডাক্তার আঙুর ঢুকিয়ে পরীক্ষা করেন৷ তাদের সেটা ভয়ংকর মনে হয়৷ তাছাড়া অনেক ভুল ধারণা ও লজ্জাও কাজ করে৷ তারা ভাবে ইউরোলজিস্টের কাছে গেলে কী যে হবে!’’
আসলে প্রথমে শুধু সংলাপ চলে, তারপর ব্যথাহীন আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা৷ যারা নিজেদের ভয় কাটিয়ে উঠেছে, তারা সেটা জানে৷ সংবাদ মাধ্যমে কোনো ফুটবল খেলোয়াড়ের টেস্টিকুলার ক্যানসারের খবর প্রকাশিত হলে ইউরোলজিস্টদের ওয়েটিং রুম ভরে যায়৷ ডানিলো ভালেন্টাও এর শিকার হয়েছিলেন৷
ড. রাৎস বলেন, বাৎসরিক চিকিৎসার প্রয়োজন নেই৷ তবে কীভাবে ঠিকমতো নিজের শরীর পরীক্ষা করা যায়, সেই জ্ঞান থাকলে ভালো হয়৷ হাতেনাতে বিষয়টি খোলসা করে তিনি বলেন, ‘‘হাত মুঠো করে পেশির অংশে চাপ দিলে স্বাভাবিক অণ্ডকোষ ছোঁয়ার অনুভূতি হবে৷ একটু মোটা, নমনীয় মনে হবে৷ গাঁটের মতো শক্ত ও আড়ষ্ট নয়৷ সেটা হলে উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখানো উচিত৷’’
সেটা ছাড়াও ইউরোলজিস্টরা এইচপিভি টিকাও দেন, যা কিশোর-কিশোরীদের নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়৷ সেটি ক্যানসার সৃষ্টিকারী ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয়৷ রোগ প্রতিরোধ, রোগের চিকিৎসা অথবা গর্ভনিরোধ – সব ক্ষেত্রেই লজ্জামুক্ত শিক্ষা সব লিঙ্গের মানুষের উপকারে আসে৷ সবার জন্যই সেই ব্যবস্থা করা উচিত৷ ড. শিলা দে লিস মনে করেন, ‘‘ছেলে ও পুরুষদের জন্য যৌন শিক্ষা প্রসারের এক সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে পারলে খুব ভালো হয়৷ সেটা ‘পুরুষদের সমস্যার জায়গা’৷ আমরা যৌন বিষয়ে কথা বলাও স্বাভাবিক করে তুলতে পারি৷ পুরুষ বা ছেলেদের শুধু শরীর চালু রাখাই জরুরি নয়, অনেক কিছু জানার ও শেখার আছে৷''
মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক৷ বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির সময় তো বটেই৷ সেই সব প্রশ্নের জবাবও আছে৷ কিন্তু ট্যাবু বা ‘নিষিদ্ধ বিষয়' আর কারো উপকারে আসে না৷
লিসা ব্রকস্মিট/এসবি