ছেলেদের সঙ্গে সাঁতারে আপত্তি ছিল এক মুসলমান কিশোরীর৷ বিষয়টি গড়ায় আদালত অবধি৷ কিন্তু জার্মানির সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত জানিয়েছে, ছেলেদের সঙ্গেই সাঁতরাতে হবে, তবে প্রয়োজনে পরা যেতে পারে ‘‘বুর্কিনি''৷
বিজ্ঞাপন
লাইপসিশে অবস্থিতি জার্মানির একটি সর্বোচ্চ আপিল আদালত বুধবার জানিয়েছে, মুসলমান মেয়েদেরও স্কুলে ছেলেদের সঙ্গে সাঁতার ক্লাসে অংশ নিতে হবে৷ তবে মুসলিম রীতি মেনে ‘‘বুর্কিনি'' পরা যাবে৷ স্কুল শিক্ষকদের একটি বড় সংগঠন আদালতের এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, এর ফলে আরো স্বচ্ছভাবে পাঠদানের পরিকল্পনা নিশ্চিত করা যাবে৷
একই আদালত অপর এক রায়ে জার্মান ভাষা শিক্ষা ক্লাসে ‘‘ক্যারাবাট'' ছবি না দেখানোর আপিল বাতিল করে দিয়েছে৷ এই ছবিতে তথাকথিত ‘‘কালো জাদু'' দেখানো হয়েছে দাবি করে এক মা তাঁর সন্তানকে এটি দেখা থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিলেন৷
দুই ক্ষেত্রেই আপিল আদালত ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বাধীনতা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সাংবিধানিক নিয়মনীতির মধ্যে সমন্বয় করেছে৷
মরক্কো বংশোদ্ভূত ১৩ বছর বয়সি মেয়েটি ফ্রাংকফুর্টের বাসিন্দা৷ তার কথা হচ্ছে, ‘‘বুর্কিনি'' পরার পরও লজ্জা লাগে৷ আর ছেলেদের সঙ্গে সাঁতার ক্লাসে অংশ নেয়াটা ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার লঙ্ঘন মনে করে সে৷ সাঁতার ক্লাসে ছেলেদের স্বল্প পোশাক পরার বিষয়েও আপত্তি তার৷
জার্মানিতে গ্রীষ্মের শেষ ক’টা দিন
গ্রীষ্মকালের ঝলমলে রোদ মানেই ছুটি কাটানো, সূর্যস্নান, বারবিকিউ করা, সাইকেল চালানো আরো কত কী! তাই গ্রীষ্ম শেষ হয়ে যাবার আগের দিনগুলোতে সবাই কিছু না কিছু করার সুযোগে থাকে৷
ছবি: Rido - Fotolia.com
নীল আকাশ
গ্রীষ্মকাল অর্থাৎ ঝলমলে রোদ আর নীল আকাশ মানেই ছুটি কাটানো, সূর্যস্নান, বারবিকিউ করা, সাইকেল চালানো, বাগান করা আরো কত কী! এই গরমকাল আসার আগে কত প্রস্তুতিই না থাকে সবার, কিন্তু কেমন করে যেন হঠাৎ করেই গ্রীষ্মটা চলে যায় টেরই পাওয়া যায়না৷ তাই শেষের দিনগুলোতে সবারই কিছু না কিছু করার সুযোগে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
কী আনন্দ!
এ বছরের গ্রীষ্ম যে ভালো হয়েছে এতে কারও কোনো সন্দেহ নেই৷ মাঝে কয়েকদিন কিছুটা ঠান্ডা আর বৃষ্টি হওয়া ছাড়া মোটামুটি সুন্দর আবহাওয়াই পেয়েছি আমরা৷ তবে গ্রীষ্ম এখন যাই যাই করছে, অর্থাৎ ক্যালেন্ডারের পাতায় ২১শে সেপ্টেম্বর গ্রীষ্ম ঋতুর শেষ দিন৷ তাই শেষের দিনগুলো ধরে রাখার আনন্দে মেতেছে সবাই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আহ কী আরাম !
আজ তাপমাত্রা প্রায় তিরিশ ডিগ্রি৷ শুধু তাই নয় আজ হচ্ছে শুক্রবার (০৬০৯১৩) অর্থাৎ সপ্তাহান্তের শুরু৷ তাই আর কোনো কথা নয়, গ্রীষ্মের শেষ আনন্দটুকু উপভোগ করতে সোজা পানিতে নেমে পড়া৷ যেমন ভাবা তেমনি কাজ, দেখুন ছবিতে !
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রিল করা
গ্রীষ্মে বেশ কয়েকদিনই হয়তো বারবিকিউ করা হয়েছে, জার্মানরা যাকে ‘গ্রিল’ বলে৷ তারপরও ঝলমলে রোদ আর গরম হলেই যেন গ্রিল করার কথা মনে হয়৷ হেমন্ত আসার আগে আগে যেহেতু আবহাওয়ার তেমন ঠিক থাকেনা৷ অর্থাৎ কখনো রোদ আর গরম, আবার হঠাৎ করেই বাতাস, বৃষ্টি আর ঠান্ডা! তাই এমন সুন্দর দিনকে কাজে লাগানো চাই৷
ছবি: Fotolia/stockcreations
গ্রীষ্মকে বিদায় জানাতে বাগানে শেষ পার্টি
জার্মানিতে গত শীত ছিলো খুবই লম্বা, যেন কিছুতেই যেতে চাইছিলো না৷ সবাই হাঁপিয়ে উঠেছিলো শীতের কষ্টে৷ শীত যেমন কষ্টের ছিলো গরমও তেমনি আনন্দের হয়েছে এ বছর৷ আর সেই আনন্দকে স্মরণ করে রাখতে আবারও গার্ডেন পার্টির আয়োজন করেছে অনেকে৷
ছবি: DW/N.Steudel
ভিটামিন ডি
ছুটিতে সূর্যস্নান করে গায়ের রং তামাটে করে ফিরেছিলো, ক’দিন অফিসের বদ্ধ ঘরে বসে থেকে যা ফিকে হয়ে এসেছে৷ তাই গ্রীষ্মের শেষ প্রান্তে আর সপ্তাহান্তের শুরুতে যথেষ্ট সূর্যের তাপ দেখে শুয়ে পড়লেন খোলা মাঠে৷ বলা হয়, গ্রীষ্মে কেউ সূর্যের তাপ থেকে যথেষ্ট ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ করলে সে শীতকালে অনেকটাই সুস্থ থাকতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়া
জার্মানরা অনেকে শীতকালেও সাইকেল চালায়৷ তবে শীত আর গ্রীষ্মে সাইকেল চালানোতে রয়েছে বিরাট তফাত৷ শীতকালে অনেকটা প্রয়োজনে সাইকেল চড়া, আর গ্রীষ্মে মনের আনন্দে রাইন নদীর তীর ঘেঁষে ঘুরে বেড়ানো৷ ক্লান্ত হলে কোথাও বা একটুখানি জিরিয়ে নেওয়া, এটা শুধু গরমকালেই সম্ভব তাই আবারো বেড়িয়ে পড়লেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মজা করে আইসক্রিম খাওয়া
জার্মানিতে সারা বছরই আইসক্রিমের দোকানগুলো খোলা থাকে৷ তবে স্বাভাবিকভাবেই গ্রীষ্মকালে বেশি আইসক্রিম বিক্রি হয়৷ আর বাইরে বসে আইসক্রিম খাওয়ার আনন্দ শুধু গ্রীষ্মকালেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাগান করা
বাগানপ্রেমীরা শীতের শেষে অপেক্ষা করেন, কখন আবহাওয়া ভালো হবে আর মনের সুখে তাদের বাগান সাজাবেন৷ কারণ বাগানে বিভিন্ন রং-এর আর নানা জাতের ফুল ফোটানো আর সবজি ফলানো যে শুধু গরমকালেই সম্ভব৷ তাই গ্রীষ্মের শেষ দিনগুলোতে ফুল আর ফলের বিচি যত্ন করে রেখে দেন আগামী গরমের জন্য৷
ছবি: Rido - Fotolia.com
9 ছবি1 | 9
এই কিশোরী গণমাধ্যমকে বলেছে, ‘‘ আমি আমার স্কুলের একমাত্র মেয়ে যে হেডস্কার্ফ পরে৷'' আদালতে দায়ের করা মামলায় মেয়েটি ছেলেদের সঙ্গে সাঁতার ক্লাসে অংশ নেয়া থেকে অব্যাহতি চেয়েছিল৷ এর আগে হেসে রাজ্যের দু'টি নিম্ন আদালত এই মামলা খারিজ করে দিয়েছে৷
লাইপসিশের আপিল আদালতের প্রধান বিচারক ভ্যার্নার নয়মান বলেছেন, ‘‘মুখ, হাত এবং পা ছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশ ঢেকে রাখা যায় এমন বিশেষ সাঁতারের পোশাক ‘‘বুর্কিনি'' মুসলিম রীতি রক্ষার ক্ষেত্রে একটি উপায় হতে পারে৷''
হেসের দু'টি আদালতের রায়ের সঙ্গে সম্মতি প্রকাশ করে লাইপসিশের প্যানেল জানিয়েছে, সাঁতারের পোশাক পরিহিত ছেলেদের দেখার ফলে মেয়েটির ধর্মীয় স্বাধীনতা খানিকটা বিঘ্ন হচ্ছে বটে, কিন্তু জার্মানির রাস্তাঘাটেও নিয়মিত ঢিলেঢালা পোশাক পরিহিত অসংখ্য মানুষ দেখা যায়৷ বিশেষ করে গ্রীষ্মে পোশাকের দিকে অনেকেই তেমন খেয়াল রাখে না৷
নয়মান মনে করেন, বহুত্ববাদী সমাজের স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রত্যেক ধর্মের বিষয়গুলি আলাদাভাবে বিবেচনা করা সম্ভব নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘সেক্ষেত্রে পাঠদানে ব্যাপক বিভেদ সৃষ্টি হবে৷''
‘‘ক্যারাবাট'' ছবি নিয়ে তোলা আপত্তি খারিজ করে দিয়ে আদালত জানিয়েছে, সমাজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব স্কুলের৷
জার্মানির ১৪০,০০০ প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকের সংগঠন ভিবিই জানিয়েছে, আদালতের এসব রায়ের ফলে স্কুলগুলো আরো নিশ্চিতভাবে তাদের পাঠদান পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবে৷