কিম জং উন-এর চীন সফর দাবার একটি ভালো চাল ছিল, কারণ, এখন তিনি আলোচনায় শক্ত অবস্থানে থাকবেন৷ যদিও সংশ্লিষ্ট সবাই নিজেদের সফল ভাবছেন, তবুও সুনির্দিষ্ট ফল দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে, মনে করেন ডিডাব্লিউর আলেকজান্ডার ফ্রয়েন্ড৷
ছবি: picture -alliance/AP/L. Jin-man
বিজ্ঞাপন
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম তাঁর চীন সফরকে সফল বলতে পারেন, কারণ, এর মাধ্যমে তিনি ২৭ এপ্রিল দক্ষিণ কোরিয়া আর তারপর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠকের আগে ‘বড় ভাই’ চীনের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পেয়েছেন৷
কিম এখন তাঁর পেছনে চীনের সমর্থন আছে জেনে আলোচনা করতে পারবেন৷ আর পরমাণু সক্ষমতার কারণে তিনি সমানে সমান হয়ে আলোচনার টেবিলে বসতে পারবেন – ভিক্ষুক হয়ে নয়৷
উত্তর কোরিয়া ও কিম জং উনের বিশেষ কিছু জিনিস
উত্তর কোরিয়ায় যেখানে সাধারণ মানুষ নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরিত বলে অভিযোগ রয়েছে, সেখানে নেতা কিম জং উনের আরাম-আয়েশ-বিলাসিতার কোনো কমতি নেই৷ দেখে নিন তার কিছু নমুনা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
অপূর্ব প্রাসাদ
উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং-এ এই বিশাল প্রাসাদ রয়েছে৷ কুমসুসান প্রাসাদটি কিম ইল সুং এর সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে৷ বিশ্বে আর কোন কমিউনিস্ট নেতার এমন বিশাল প্রাসাদ নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
হোটেল
রিউগইয়ং বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোটেলগুলোর একটি৷ পিরামিড আকারের ১০৫ তলা এ হোটেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৭ সালে৷ সেই সময় দেশে কিম ইল সুং এর শাসন ছিল৷ কিম ইল সুং ছিলেন কিম জং উনের দাদা৷ এখনও হোটেলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
আকাশে শাসন
উত্তর কোরিয়ার কাছে বিভিন্ন ধরণের এক হাজারটি বিমান আছে, যেগুলোর বেশিরভাগ সোভিয়েত ইউনিয়ন অথবা চীনে তৈরি৷ এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধে ব্যবহার করা যায় এমন হেলিকপ্টার, যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান এবং ড্রোন৷ কিম জং উনের কাছে এএএম এবং ট্রিপল এ সিস্টেমের মতো কিছু বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও আছে৷
ছবি: Reuters/Kcna
স্কি রিসোর্ট
কিম জং উনের নির্দেশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৩৬০ মিটার উঁচুতে মাসিকরিয়ং নামে এক জায়গায় একই নামে একটি স্কি রিসোর্ট বানানো হয়েছে৷ এই স্থানটি উত্তর কোরিয়ার সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ এর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন কোটি মার্কিন ডলার৷ পর্যটকদের জন্য এখানে ১২০ কক্ষ বিশিষ্ট হোটেল রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo/MAXPPP
জং উনের মোবাইল নেটওয়ার্ক
শোনা যায়, উত্তর কোরিয়ায় কেবল কিম জং উন এবং তাঁর কাছের মানুষদের ব্যবহারের জন্য একটি বিশেষ মোবাইল নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ কোরীয় লিংক নেটওয়ার্কের প্রযুক্তি পরিচালক আহমাদ আল নোয়ামিনি জানিয়েছে, সাধারণ মানুষ এই মোবাইল পরিষেবার সুবিধা ভোগ করতে পারে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/KCNA via KNS
ব্যক্তিগত দ্বীপ
দেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি গোপন দ্বীপ রয়েছে৷ কিম জং উনের অতিথি হয়ে উত্তর কোরিয়া গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এক তারকা৷ এই দ্বীপে রাখা হয়েছিল তাঁকে৷ শোনা যায়, এখানে আনন্দ বিনোদনের সবধরনের ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিম জং উনের ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার অবতরণের জায়গাও রয়েছে সেখানে৷
ছবি: Tourism DPRK
গল্ফ কোর্স
কিম জং উনের উত্তর কোরিয়ায় অসাধারণ কিছু গল্ফ ক্লাব রয়েছে৷ সরকারি কর্মচারীরা গল্ফ ক্লাবগুলোকে সবসময় ঝকঝকে করে রাখে৷ গল্ফ ছাড়া উত্তর কোরিয়ায় ফুটবল, বাস্কেটবল, আইস হকি আর কুস্তি জনপ্রিয় খেলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kyodo
সেনা ঘাঁটি
উত্তর কোরিয়ার নৌবাহিনীতে অনেক যুদ্ধ জাহাজ, টহল নৌকা এবং বড় বড় সামরিক জাহাজ রয়েছে৷ নিজেদের সামরিক শক্তিকে শক্তিশালী করা উত্তর কোরিয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য৷ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে দেশটি৷
ছবি: REUTERS/KCNA
বিলাসবহুল গাড়ি
শোনা যায়, ২০১৪ সালে কিম জং উন ১ দশমিক ৬ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে গাড়ি কিনেছিলেন৷ এর মধ্যে মার্সিডিজ বেনৎস, লিমোজিন আর আছে লাক্সারি স্পোর্টস কার৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
পিয়ানো ভীষণ পছন্দ
শোনা যায়, কিম জং উনের কাছে ২০টিরও বেশি পিয়ানো আছে৷ এমন গুজবও রয়েছে যে, তিনি প্রতিদিনই পিয়ানো বাজান, আর যদি সুরের কোনো গণ্ডগোল হয়, সেটাকে তিনি পিয়ানোর দোষ হিসেবে মনে করেন, নিজের নয়৷
ছবি: Reuters/KCNA
সাবমেরিন
কিম জং উনের কাছে সোভিয়েত আমলের কিছু পুরানো সাবমেরিন রয়েছে৷ এছাড়া দেশটির কাছে আরো বেশ কয়েকটি চীনের সাবমেরিন রয়েছে৷ আর কিছু সাবমেরিন উত্তর কোরিয়ার সেনারা নিজেরাই তৈরি করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Sinmun
11 ছবি1 | 11
পরমাণু কর্মসূচি ত্যাগের বিনিময়ে কিম দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ’ আশা করছেন৷ অর্থাৎ, কিম ও তাঁর আশেপাশের সবাই নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইছেন, আর দক্ষিণ কোরিয়া নিজেদের অস্ত্রহীন করা শুরু করবে বলে আশা করছেন৷
এদিকে, আলোচনা শুরুর আগে কিমের চীনের কাছ থেকে সমর্থন চাওয়ার বিষয়কে বেইজিং বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করতে পারে৷ চীনের গণমাধ্যমে কিমের রহস্যময় ট্রেনযাত্রা যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে শি জিনপিং-এর নেতৃত্ব প্রচার করা হয়েছে, তা দেখলে বোঝা যায় যে, চীনের জন্য সাফল্যের বিষয়টি কত গুরুত্বপূর্ণ৷ শি জিনপিং নিজেকে যুক্তিসঙ্গতভাবেই বিজয়ী ভাবতে পারেন৷ কারণ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কিম যে আলোচনাই করুন না কেন, শি'কে ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে না৷
কোরীয় সংকটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও নিজেকে সফল হিসেবেই দেখেন, কারণ, তাঁর কঠোর মনোভাবের কারণে চাপে পড়ে উত্তর কোরিয়া এগিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে৷ এখন ট্রাম্প যদি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভালো এমন কোনো চুক্তিতে উপনীত হতে পারেন, তাহলে সেটি একান্ত তাঁরই সফলতা হিসেবে দেখা হবে৷ কোরীয় উপত্যকায় পরমাণু কর্মসূচি বাতিল, কিংবা যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে উত্তর কোরিয়ার রকেট পরীক্ষা বন্ধ হওয়া – এসবই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সফল বলে বিবেচিত হতে পারে৷
ডিডাব্লিউর আলেকজান্ডার ফ্রয়েন্ড
তবে এই সফলতার জন্য ট্রাম্প কতটা ছাড় দিতে রাজি আছেন তা দেখতে হবে৷ তিনি হয়ত দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ মহড়া থেকে সরে আসতে পারেন, কিংবা থাড ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নিতে পারেন৷ কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে একমত হওয়াটা ট্রাম্পের জন্য কঠিন হবে৷
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুনকেও সফলের তালিকায় রাখতে হবে, কেননা, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব তিনি এমন সময়ে দিয়েছিলেন যে, তা সব পক্ষের মধ্যে বিশ্বাস আনতে সহায়তা করেছে৷
কথায় বলে, একটি সংকটে যখন সবাই নিজেদের বিজয়ী ভাবে, তখন সাফল্যের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়৷ তবে একটি বিষয় সবপক্ষকে স্পষ্ট জানিয়ে দিতে হবে যে, এখনও সুনির্দিষ্ট সফলতা আসেনি এবং প্রকৃত আলোচনা এখনও অমীমাংসিত৷ এখনও একে অপরের মধ্যে মতপার্থক্য ও অবিশ্বাসের মাত্রা বেশ বড়৷ তবে এটা ঠিক, একটা সমাধান হওয়ার বাস্তবিক আশা আছে৷ আর গত কয়েকমাসের যুদ্ধংদেহী মন্তব্যের কথা বিবেচনা করলে এখন যে পর্যায়ে আসা গেছে, সেটিই আসলে একটি বড় সাফল্য৷