লকডাউনের রাশ ধীরে ধীরে আলগা করা হচ্ছে। আগামী রোববার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানাবেন, ৪ মে থেকে দেশে লকডাউন কোথায় কতটা থাকবে।
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/P. Kumar
বিজ্ঞাপন
যদিও গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় রেকর্ড বৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু দক্ষিণ ভারত এবং উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমছে। এই অবস্থায় দেশের সবুজ তালিকাভুক্ত এলাকা বা যেখানে গত ২৮ দিনে করোনায় কেউ আক্রান্ত হননি, সেখানে কড়াকড়ি অনেকটাই কম করে কল-কারখানা খোলার অনুমতি দিচ্ছে সরকার। আর তখনই চিন্তা শুরু হয়েছে, ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলিকে সাহায্য করতে প্যাকেজ ঘোষণার। করোনার ধাক্কায় প্রতিটি শিল্পের হাল শোচনীয়। বড় শিল্পের কাছে তবু পুঁজি রয়েছে। ছোট ও মাঝারি শিল্পের কাছে তাও নেই। সরকারি সাহায্য ছাড়া তাদের ঘুরে দাঁড়ানোটা কঠিন। তাই ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলিকে কীভাবে সাহায্য করা যায় তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে সম্প্রতি ছয়টি বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্যাকেজ দেওয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত কথা হয়েছে। কিন্তু কীভাবে তা দেওয়া হবে, তা নিয়ে রীতিমতো জেরবার তারা।
বেতনের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ
করোনা সংকটে বাংলাদেশের অনেক পোশাক শ্রমিকের জীবনে দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। সরকার এবং বিজেএমইএ-র আশ্বাস সত্ত্বেও এখনো বেতন পাননি তারা। চলছে বিক্ষোভ...
ছবি: bdnews24.com
সড়ক অবরোধ
বুধবার বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকার উত্তরায় সড়ক অবরোধ করে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ।বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জেও পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে।
ছবি: bdnews24.com
বাড্ডায় বিক্ষোভ
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে 'সামাজিক দূরত্ব' বজায় রাখা জরুরি। কিন্তু বুধবার তা না মেনেই ঢাকার বাড্ডা এলাকায় পাওনা বেতন পরিশোধের দাবিতে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ জানাতে হয় পোশাকশ্রমিকদের।
ছবি: bdnews24.com
উত্তরায় মিছিল
ঢাকার উত্তরায় পাওনা বেতন পরিশোধ এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কারখানা খোলার দাবিতে মিছিল করেন পোশাক শ্রমিকেরা।
বুধবার ঢাকার কমলাপুর এলাকাতেও একসঙ্গে বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নেন পোশাক শ্রমিকরা।
ছবি: bdnews24.com
চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ
বুধবার করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে চট্টগ্রাম ইপিজেডের সামনের রাস্তায় বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি তোলেন পোশাক শ্রমিকরা।
ছবি: bdnews24.com
7 ছবি1 | 7
সূত্র জানাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী এমন প্যাকেজ চান না, যার সুবিধা নিয়ে কিছু শিল্প-মালিক লাভবান হবেন এবং ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বাড়বে। ছেট ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী নীতিন গডকরি নিজে একটা তবহবিল করতে চান। সেই তহবিল থেকে ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলিকে ঋণ দেওয়া হবে এবং সরকার তাতে গ্যারেন্টার হিসাবে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি প্রস্তাব নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন করছেন। তিনি নিশ্চিত হতে চান যে, সরকারি প্যাকেজের সুবিধা নিয়ে ছোট ও মাঝারি শিল্পঘুরে দাঁড়াতে পারবে। তিনি নির্দিষ্টভাবে গরিব ও আর্থিক দিক থেকে একেবারে পিছনের সারিতে থাকা মানুষেরা যাতে লাভবান হতে পারেন, এমন প্যাকেজ চান। তাঁর ইচ্ছে, প্রথমে ছোট ও মাঝারি শিল্প ও স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করার। আবার সেটা লোক দেখানো প্যাকেজ হলেও চলবে না। এর আগে মোদী সরকার যে প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেছিল, তা নিয়ে প্রধান অভিযোগই হলো, তাতে হিসাবের কারিকুরি বেশি। লোকের পাওনা অর্থকে আগাম দেওয়া ছাড়া নতুন ঘোষণা কম।
বাজারেও করোনার আঘাত
করোনা ভাইরাসের প্রভাব স্বাস্থ্য থেকে এসে পড়েছে বাজারেও৷ কীভাবে সামলাচ্ছে তারা করোনার দাপট, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: VLADIMIR MARKOV via REUTERS
বাড়ছে প্রতিরোধক বিক্রি
করোনা ভাইরাস ছড়ানোর মতোই দ্রুতগতিতে বাড়ছে জীবাণুর ভয়৷ সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা ধরনের জীবাণু-প্রতিরোধকের চাহিদা৷ কেমিক্যাল সংস্থাগুলির বিভিন্ন পণ্যের বিক্রিও বাড়ছে৷ কিন্তু পণ্যবাহী জাহাজ চীনের সীমান্তে আটকা থাকার ফলে নতুন মাল পৌঁছতে পারছে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
রেস্টুরেন্টে ভাঁটা
কেএফসি, পিৎজা হাট বা ম্যাকডোনাল্ডসের মতো ফাস্ট ফুড চেনগুলির রমরমা করোনা ভাইরাসের কারণে আগের মতো নেই৷ বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে এই সব দোকান৷ অনলাইনে বিক্রিও বন্ধ৷ অন্যান্য অনলাইন খাবার অর্ডার করার অ্যাপও এখন আর চীনে খাবার সরবরাহ করছে না৷
ছবি: picture-alliancedpa/imaginechina/Y. Xuan
খেলার সামগ্রীতেও করোনার প্রভাব
বিশ্বখ্যাত খেলার সামগ্রীর ব্র্যান্ড অ্যাডিডাস ও নাইকি সাময়িকভাবে চীনে তাদের বেশির ভাগ দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, যেসব দোকানে নাইকি বা অ্যাডিডাসের পণ্য বিক্রি হয়, সেখানেও চলছে কড়া নজরদারি, যাতে করে বিক্রি না হওয়া পণ্যের মাধ্যমে জীবাণু আরো না ছড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stringer/Imaginechina
বিপদের ঝুঁকিতে গাড়িপ্রস্তুতকারীরা
জার্মান গাড়ি শিল্পের উপর এই ভাইরাসের ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে, মনে করছেন গাড়ি শিল্প বিশেষজ্ঞ ফার্ডিনান্ড ডুটেনহ্যোফার৷ বিখ্যাত গাড়িপ্রস্তুতকারী সংস্থা ফক্সভাগেনের মোট ৩৩টি কারখ্না রয়েছে চীনে, যার মধ্যে বেশ কটি আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে৷ গাড়ি প্রস্তুতের কাজে বাধা আসলেও ডেলিভারির কাজ ঠিকই চলছে এখনও৷
ছবি: Imago Images/Xinhua
সাবধানী হন্ডা
করোনা ভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র উহান অঞ্চলে জাপানি গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা হন্ডার তিনটি কারখানা আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে৷ এখনও যদিও স্পষ্ট নয় যে কবে থেকে কাজ আবার শুরু হবে, কিন্তু তবুও সাবধানে ফাঁকি রাখতে চান না হন্ডা কর্মকর্তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাহিদামত পণ্য নেই বাজারে
বর্তমান বিশ্বে এক দেশের বাজারের সাথে আরেক দেশের শিল্প খুব গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট থাকায় হ্যুনডাই বা হন্ডার মতো সংস্থার প্রস্তুত বন্ধ থাকার প্রভাব পড়ছে বিশ্বের বাজারেও৷ দক্ষিণ কোরিয়ায় এই সপ্তাহেও বন্ধ থাকবে হ্যুনডাই গাড়ির প্রস্তুতের কাজ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই ধারা অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও দেখা যাবে৷
ছবি: Reuters/Aly Song
ফ্রাংকফুর্টেও করোনার প্রভাব
চীনের সাথে একাধিক দেশ ইতিমধ্যে বন্ধ করেছে বিমান পরিষেবা৷ এই বন্ধের ফলে বহু ব্যবসায়ী প্রাংকফুর্টের বিখ্যাত ‘আম্বিয়েন্টে’ শিল্পমেলায় তাদের পসরা নিয়ে আসতে পরেননি৷ যদিও জার্মানির সাথে উহানের কোনো সরাসরি বিমান ব্যবস্থা নেই, তবুও সাবধান থাকতে এয়ারপোর্টে বিশেষ আইসোলেশন ইউনিট (চীনফেরত যাত্রীদের জন্য বিচ্ছিন্ন বলয়) রাখা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Schreiber
7 ছবি1 | 7
তাই বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামানের প্যাকেজ বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নেওয়া ব্যবস্থায় ছোট ও মাঝরি শিল্পের খুব বেশি লাভ হয়নি। বৃহস্পতিবারও নির্মলা ও ভারি শিল্প ও বানিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। সরকার চাইছে, ছোট ও মাঝারি শিল্প সহজ শর্তে ঋণ পাক। তাদের হাতে টাকা আসুক। আর তারা উৎপাদন শুরু করে সেই টাকা শোধ করার মতো জায়গায় আসুক। কিন্তু তার জন্য অর্থনৈতিক কাজকর্ম পুরোদমে চালু করতে হবে। নীতি আয়োগের চেয়ারম্যান অমিতাভ কান্ত জানিয়েছেন, শুধু লাল তালিকাভুক্ত এলাকায় অন্তত নির্মমভাবে করোনার মোকাবিলা করা হোক। অর্থনৈতিক কাজ পুরোদমে চালু হোক, বিশেষ করে জিনিসের সরবরাহ পুরোদমে শুরু হোক।
এটা করতে গেলে লাল এলাকাভুক্ত জেলা বা জায়গা ছাড়া বাকি এলাকায় কড়াকড়িএকেবারেই শিথিল করে দিতে হবে। যাতায়াত ব্যবস্থা চালু করে দিতে হবে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় দুই হাজার জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গিয়েছেন ৭৩ জন। মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে। মহারাষ্ট্র, গুজরাট, দিল্লির মতো রাজ্যগুলিতে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। দক্ষিণ ভারতে কেরল, তেলেঙ্গানার মতো রাজ্যে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতেও পরিস্থিতি ভালো। উত্তর ভারতের মধ্যে হরিয়ানায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। তারপরেও একদিনে এতজনের করোনায় আক্রান্ত হওয়া মানে, অনেক রাজ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। তাই পুরো দেশ থেকে লকডাউন তুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।