ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঢোকার আশায় প্রতিদিন প্রায় চার হাজার মানুষ নানা উপায়ে গ্রিসে প্রবেশ করছে৷ সেখান থেকে কয়েকটি দেশ পেরিয়ে আশ্রয়প্রার্থীরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করে৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু গত সপ্তাহে পাঁচটি দেশের পুলিশ প্রধানের নেয়া এক সিদ্ধান্তে গ্রিসে আটকা পড়েছে আফগানিস্তানসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে যাওয়া কয়েক হাজার শরণার্থী৷ ঐ সিদ্ধান্তের কারণে ‘যুদ্ধপীড়িত এলাকা' ছাড়া অন্য কোনো দেশের মানুষকে সীমানা পেরোতে দিচ্ছে না পুলিশ৷ আটকে পড়াদের মধ্যে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া শিশু ও সঙ্গীহীন অনেকে রয়েছেন৷
বার্তা সংস্থা এপি'র তোলা ভিডিও ও তথ্য নিয়ে এই বিষয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন তৈরি করেছে ‘ম্যাশেবল' ওয়েবসাইট৷ ভিডিওটি ইউটিউবেও শেয়ার করা হয়েছে৷
ভিডিওতে ইউরোপের বিভিন্ন সীমান্তে আটকে পড়া শরণার্থীদের সীমান্ত পেরোতে দেয়ার আকুতি তুলে ধরা হয়েছে৷ মেসিডোনিয়ার গেভগেলিয়া সীমান্তে একটি ছোট্ট মেয়েকে কেঁদে পুলিশকে বলতে শোনা গেছে, ‘‘পুলিশ, সীমান্ত খুলে দাও৷''
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর অন্তর্ভুক্ত দেশ অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভেনিয়াসহ সার্বিয়া ও মেসিডোনিয়ার পুলিশ প্রধানদের নেয়া সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে ইইউ ও জাতিসংঘ৷ ইইউ বলেছে, বিষয়টি নিয়ে তারা সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে আলোচনা করবে৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বলছে, এই সিদ্ধান্তের কারণে প্রকৃত আশ্রয়প্রার্থীদেরও ফিরিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে৷ এছাড়া আটকে পড়ারা প্রচন্ড ঠান্ডায় কাতর হয়ে পড়বে৷ তাদের প্রতারিত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে৷
জার্মানিতে কয়েকজন শরণার্থীর জীবন
যুদ্ধবিক্ষুব্ধ কোনো দেশ থেকে কীভাবে ইউরোপে আসছে লক্ষ লক্ষ মানুষ? সবাই কি স্থায়ীভাবে ইউরোপে থাকতে চান? থাকতে হলে কী করতে হবে? কী করছেন তাঁরা? কয়েকজন শরণার্থীর জীবন দেখে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
চিকিৎসক থেকে শরণার্থী
সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্কে চিকিৎসক হিসেবে ভালোই ছিলেন হামবার আল-ইসা৷ কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর জন্মভূমির সব সুখ ছেড়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে হয় তাঁকে৷
অনেক পথ পেরিয়ে...
মেসিডোনিয়ায় পৌঁছানোর পর সার্বিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত যেতে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়েছে হামবারকে৷ হেঁটে কোনো শহরে পৌঁছালেই শুরু হতো ইন্টারনেট ক্যাফে খুঁজে বের করার চেষ্টা৷ পেলে প্রথম কাজ কোথায় আছেন, কেমন আছেন সে সম্পর্কে পরিবারকে বিস্তারিত জানানো৷ একা এসেছেন, তাই স্বজনদের তাঁর জন্য খুব চিন্তা৷ তাঁদের চিন্তা দূর করা ও তাঁদের সম্পর্কে জেনে নিজেকে নিশ্চিন্ত রাখতেই পছন্দ করেন হামবার৷
অবশেষে জার্মানিতে...
অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে জার্মানিতে পৌঁছেছেন হামবার৷ সিরিয়াতে সার্জন হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও নতুন দেশে চাইলেই তো আর চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করা যায় না৷ জার্মান ভাষা শিখে নিজেকে তৈরি করতে হবে সবার আগে৷ সেই চেষ্টা চলছে৷ পাশাপাশি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনুবাদকের কাজও করছেন৷ তাঁর স্বপ্ন অবশ্য জার্মানিতে বসবাস করা নয়৷ সুসময় ফিরে এলে নিজের দেশেই ফিরতে চান হামবার৷
দেশান্তরী এক আফগান কিশোরী
তোবার বয়স এখন ১৬ বছর৷ আফগানিস্তানের হেরাত থেকে জার্মানিতে এসেছে সে৷ হেরাতে নিয়মিত স্কুলে যেত সে৷ লেখাপড়া করেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নও দেখতো৷ কিন্তু তালেবান বেছে বেছে মেয়েদের স্কুলে হামলা শুরু করায় তোবার পক্ষেও আর দেশে থাকা সম্ভব হয়নি৷
সপরিবারে জার্মানিতে
আফগানিস্তান থেকে জার্মানিতে অবশ্য একা আসেনি তোবা৷ দুই বোন এবং তাঁদের স্বামীও এসেছেন সঙ্গে৷ কাছের এই মানুষগুলো সঙ্গে থাকার কারণেই ইরান, তুরস্ক, গ্রিস এবং বলকান অঞ্চল হয়ে জার্মানিতে পৌঁছাতে পেরেছে তোবা৷
দুঃস্বপ্নে পোড়া স্কুল, স্বপ্নে সুন্দর আগামী
তালেবান হামলা থেকে বাঁচতে আফগানিস্তান ছেড়ে এলেও স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন কিন্তু ছাড়েনি তোবা৷ নিজেকে নতুন করে তৈরি করছে সে৷ জার্মান ভাষা শিখছে৷ স্বাবলম্বী হতে হলে জার্মানিতে ভাষা শেখাটা তো সবার জন্যই জরুরি৷
এক সাংবাদিকের পরিবার
ওপরের ছবির তিনজন জার্মানিতে এসেছেন সিরিয়ার ইদলিব থেকে৷ আহমেদ (মাঝখানে)-এর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী হেবা এবং বন্ধু সালেহ৷ সিরিয়ায় সাংবাদিক হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন আহমেদ৷
শৈশবেই প্রবাসী
আহমেদ-হেবা দম্পতির এই মেয়েটিও এসেছে জার্মানিতে৷ মাত্র এক বছর বয়সেই শুরু হয়েছে তার প্রবাসজীবন৷ ওর বাবা অবশ্য যুদ্ধ থামলেই ফিরে যেতে চায় সিরিয়ায়৷