ছয়ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবলো কলকাতা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত আট
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ১৫০ থেকে ৩৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গড়িয়ার কামডহরিতে ৩৩২ মিলিমিটার, যোধপুর পার্কে ২৮৫, কালীঘাটে ২৮০, তপসিয়ায় ২৭৫, চেতলায় ২৬২, মানিকতলায় ১৪৭ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। গোটা কলকাতায় গড়ে বৃষ্টি হয়েছে ২৫১ মিলিমিটারের মতো। ১৯৭৮ সালের পর থেকে এত বৃষ্টি সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের পর কখনো হয়নি বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে।
উল্টোডাঙা, কাঁকুড়গাছি, সল্টলেক, বেহালা, বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, গড়িয়া, কসবা, যাদবপুর, আলিপুর, ভবানীপুর, সন্তোষপুর, মানিকতলা, তপসিয়া, বড়বাজারসহ কলকাতার বহু এলাকা জলমগ্ন। রাজভবনের পাশ থেকে শুরু করে রাইটার্স বিল্ডিং পর্যন্ত পুরো এলাকা জলমগ্ন। কলকাতা হাইকোর্টে যাওয়ার রাস্তা জলমগ্ন।
দুপুর বারোটাতেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। উত্তর থেকে দক্ষিণ, মধ্য থেকে পূর্ব কলকাতা এবং শহরতলি সব জায়গায় জল জমে আছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সব পরীক্ষা বাতিল করেছে।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু
নেতাজিনগর থেকে ইন্দ্রনীল রায় ফেসবুকে জানাচ্ছেন, তার বাড়ির সামনে এক ফলওয়ালা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন।
ফল ব্যবসায়ী প্রশান্ত কুণ্ডু তার দোকানে এসেছিলেন। সাইকেল রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটিতে রাখতে যান এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে একটি কুকুর সেই সাইকেলে চড়তে যায়। কুকুরটিও মারা গেছে।
মোমিনপুর থেকেও একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। তার নাম জিতেন্দ্র সিং। গড়ফা, কালিকাপুরেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মনুষ মারা গেছেন। হরিদেবপুর, অভিষিক্তা মোড়সহ বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মানুষ মারা গেছেন।
যত সময় যাচ্ছে, ততই বিভিন্ন জায়গা থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে।
বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু এই দুর্দশা্র জন্য দায় কার। কলকাতা ও বিধাননগরের মেয়রদের অদক্ষতাী ও উদাসীনতার ফল মানুষকে ভোগ করতে হয়।
ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন
হাওড়া, শিয়ালদহ, চিৎপুরে কারশেডে জল জমে গেছে। জল জমার কারণে শিয়ালদর মেন, বনগাঁ শাখায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত।
দমদম স্টেশনেই ট্রেন আসতে পারছে না। সেখানে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে, যখন ট্রেন ঢুকতে পারবে, তখন তা শিয়ালদহের দিকে যাবে। পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না।
হাওড়াতেও বৃষ্টির কারণে ট্রেন চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। কলকাতা মেট্রো রেলের কয়েকটি স্টেশনে জল ঢুকে গেছে। ফলে মেট্রো চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে।
কী অবস্থা কলকাতার?
কলকাতা থেকে ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি শময়িতা চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, ''বেহালায় প্রায় হাঁটুজল। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। সারারাত প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। আবাসনের ভিতরে জল জমেছে। গাড়ির চাকা জলে ডুবে আছে।''
দেবযানী লাহা ঘোষও বলেছেন, উত্তর কলকাতায় তার বাড়িতেও প্রথমবার জল জমেছে।
অধ্য়াপক উত্তরা রায় ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''রাজাবাজার ট্রামডিপোর কাছে ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন কলেজে প্রচুর জল জমেছে। তাই কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিটিরোডও জলের তলায়।''
সল্টলেক থেকে অধ্যাপক সুব্রত হোড় জানিয়েছেন,'' সল্টলেকে জল জমেছে। সকালে সেই জল কিছুটা নেমে গেলেও রাস্তার দুই ধার জলে ভর্তি। অনেক বাড়িতে জল ঢুকে গেছে।''
অনির্বাণ মাইতি ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, তিনি এয়ারপোর্টে থাকেন। কাজের জন্য আসতে হবে টালিগঞ্জে। আজই তাকে জরুরি কাজ শেষ করতে হবে। তিনি জানেন না কী করে গন্তব্যে পৌঁছাবেন।
মেয়রের আবেদন
মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, পুরসভা জল বের করার চেষ্টা করছে। কিন্তু গঙ্গায় জল বেড়ে গেছে। গঙ্গা ও বিভিন্ন খালে জল ফেললে ব্যাক ফ্লো হচ্ছে। বহু জায়গায় বিদ্যুতের মিটার ডুবে গেছে। ফ্রিজ ডুবে গেছে। তাই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। মানুষ খুব কাজ না থাকলে যেন বাইরে না বের হন।
ফিরহাদ বলেছেন, এটা মেঘফাটা বৃষ্টি। তিনি জীবনে কখনো এত বৃষ্টি কলকাতায় দেখেননি।
তিনি বলেছেন, লকগেট খোলার পরেও ব্যাক ফ্লো করে জল চলে আসছে।
তার দাবি, পুরসভার পোস্ট থেকে কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়নি।
মণ্ডপগুলির অবস্থা
প্রবল বৃষ্টিতে অনেক পুজোমণ্ডপেই জল থই থই অবস্থা। অনেকগুলি মণ্ডপের ক্ষতি হয়েছে। মাঠে জল জমে গেছে।
আরো বৃষ্টি হবে
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আরো বৃষ্টি হবে। পুজোর দিনগুলিতেও বৃষ্টি হতে পারে।
জিএইচ/এসসি