১৯৬১ সালের পর এই প্রথম চীনের জনসংখ্যা কমেছে৷ বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ কি আর শীর্ষে থাকতে পারবে?
বিজ্ঞাপন
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এনবিএসের হিসেবে ২০২২ সাল শেষে দেশটির জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার৷ ২০২১ সালের তুলনায় ৮ লাখ ৫০ হাজার কম৷ ৯৫ লাখ ৬০ হাজার জন্মের বিপরীতে মারা গেছেন প্রায় ১ কোটি ৪ লাখ মানুষ৷
১৯৬১ সালের দুর্ভিক্ষের পর এই প্রথম চীনের জনসংখ্যা কমেছে৷ আধুনিক সময়ের সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল সেবার৷ সে সময় মাও সেতুংয়ের কৃষি নীতির সমালোচনাও হয়েছিল৷
এনবিএসের হিসেবে, এখন নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি৷ প্রায় ৭২ কোটি পুরুষের বিপরীতে রয়েছেন ৬৯ কোটি নারী৷ দেশটির এক সন্তান নীতির কারণে এমনটা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ ২০১৬ সালে এই নীতি তুলে নেবার পর অনেক পরিবার তিনটি করে সন্তান নেবার পরও জনসংখ্যা কমার প্রবণতা কমছে না৷ এছাড়া চীনে সন্তান পালনের খরচ বেড়ে যাওয়াও একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে৷
জাতিসংঘের হিসেবে, ২০৫০ সাল নাগাদ চীনের জনসংখ্যা ১০ কোটি ৯ লাখের মত কমে যাবে৷ আর শিগগিরই ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশে পরিণত হবে৷ এরই মধ্যে তাদের জনসংখ্যা ১৪০ কোটিতে পৌঁছেছে বলে বিভিন্ন হিসেবে দেখা গেছে৷
মানুষ কমলে কী উপকার?
এল পাসিনো আর ক্রাইস্টচার্চের দুই সন্ত্রাসী হত্যাযজ্ঞ শুরুর আগে বলেছিল, বিশ্বে মানুষ কম থাকাই ভালো৷ এক গবেষণা বলছে, মানুষ সত্যিই কমবে, একসময় অর্ধেক হয়ে যাবে জাপান আর স্পেনের জনসংখ্যা৷ কিন্তু মানুষ কমলে আসলে কী উপকার?
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eisele
জন্মদানের ক্ষমতা কমছে
বিশ্বে বয়স্ক মানুষ বাড়ছে আর কমে যাচ্ছে উর্বরতা শক্তি, অর্থাৎ সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা৷ বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ল্যান্সেটে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র বলছে, একুশ শতকের শেষ দিকে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জনসংখ্যা কমবে৷তখন জনসংখ্যাবিস্ফোরণ নিয়ে আতঙ্কের স্থান নেবে একটি প্রশ্ন- নতুন প্রজন্ম আসবে কিভাবে?
ছবি: Imago/photothek/U. Grabowsky
৯৭০ কোটি থেকে কমার শুরু
ইন্সটিটিউট ফর হেল্থ মেট্রিস অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই)-র গবেষণা অনুযায়ী, আগামী চার দশকের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাবে৷ তাই বিশ্বের জনসংখ্যা ৯৭০ কোটিতে পৌঁছে যাবে৷ তারপরই কমতে শুরু করবে মানুষ, এক পর্যায়ে জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৮৮০ কোটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Koch
স্পেন আর জাপান অর্ধেক
গবেষণাটি আরো বলছে, ৮০ বছরের মধ্যে স্পেন আর জাপানের জনসংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে যাবে৷ চীনের জনসংখ্যাও এত কমবে যে, ভারত আর নাইজেরিয়া হয়ে যাবে সবচেয়ে জনবহুল দেশ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Barrientos
স্বাভাবিক ধারায় মাত্র ১২টি দেশ
সোমালিয়া, সাউথ সুদানসহ মাত্র ১২টি দেশে তখন শিশুজন্মের হার স্বাভাবিক থাকবে৷ বাকি সব দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়বে আশঙ্কাজনক হারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Abdiwahab
সবচেয়ে খারাপ আশঙ্কা
সারা বিশ্বে শিক্ষার হার বর্তমান ধারায় বাড়তে থাকলে এবং জন্মনিরোধক ঘরে ঘরে পৌঁছে গেলে ২১০০ সালে সারা বিশ্বে জনসংখ্যা ১৫০ কোটি কমে যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Lage
কমলেই লাভ?
মানুষের সংখ্যা কমলে কার্বন নিঃসরণ কমবে, কমবে সারা বিশ্বের খাদ্যের ওপর চাপ ৷ তবে সব মানুষ সমান হারে কার্বন নিঃসরণ করে না৷ তাই হ্যারিসবুর্গ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষক অরবিন্দ রবিকুমার মনে করেন, মানুষ কমলে জলবায়ুর কল্যাণ হবে এমন ধারণা একেবারেই কাল্পনিক৷
ছবি: Getty Images/AFP/Stringer
জনসংখ্যা কমার অন্ধকার অতীত
জনসংখ্যা কমানো বা নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ অনেক সময় অনেক দেশেই নেয়া হয়েছে৷ বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডায় আদিবাসী নারীদের স্টেরিলাইজ করা হয়৷৷ ১৯৭৬ সালে দাতা গোষ্ঠীর চাহিদা অনুযায়ী, একইভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছিল ভারত৷ তখন ৬২ লাখ মানুষকে স্টেরিলাইজ করেছিল ইন্দিরা গান্ধী সরকার৷ চীনেও এই প্রক্রিয়া অবলম্বনের অভিযোগ রয়েছে৷