ছয় বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস, উত্তর গাজায় যাবেন ফিলিস্তিনিরা
২৭ জানুয়ারি ২০২৫
এই সপ্তাহে আরো ছয় বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস। অন্যদিকে লেবানন-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ বাড়লো।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানোর সময় অ্যারবেল ইয়েহুদিকে বন্দি করে নিয়ে যায় হামাস। ছবি: Sarah Hofmann/DW
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাস এই সপ্তাহে আরো বন্দিকে মুক্তি দেবে।
যে ছয়জন বন্দিকে মুক্তি দেয়ার কথা, তার মধ্যে তিনজন আগামী বৃহস্পতিবার মুক্তি পাবেন। এই তিনজন হলেন, বেসামরিক মানুষ অ্যারবেল ইয়েহুদ, সেনা অ্যাগাম বার্গার এবং আরো একজন বন্দি। এরমধ্যে ইয়েহুদ ইসরায়েলের পাশাপাশি জার্মানিরও নাগরিক।
এই ছয়জন বন্দিকে মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল সোমবার থেকে ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় যেতে দেবে। তার অর্থ মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নেয়া ছয় লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি উত্তর গাজায় ফিরতে পারবেন। ইসরায়েল-হামাসের লড়াইয়ের ফলে উত্তর গাজার অনেকটা অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চালু থাকবে।
সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চালু থাকবে।
সংঘর্ষ-বিরতি: ঘরে ফিরছেন লেবাননের সাধারণ মানুষ
হিজবুল্লার সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘর্ষের জেরে বহু মানুষ বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। অন্যদিকে সেনা সরাতে শুরু করেছে ইসরায়েল।
ছবি: MAHMOUD ZAYYAT/AFP
রাস্তাজুড়ে গাড়ির লাইন
লেবাননের হাইওয়েতে গাড়ির লাইন চোখে পড়ার মতো। কাতারে কাতারে মানুষ বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন। হিজবুল্লার সঙ্গে ইসরায়েলের লড়াইয়ের জেরে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ছবি: MAHMOUD ZAYYAT/AFP
ঘরে ফিরবেন ইসরায়েলের মানুষ?
উত্তর ইসরায়েলের বহু মানুষ ১৪ মাস আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন। লেবানন সীমান্তের কাছে আশ্রয়শিবিরে ছিলেন তারা। হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ চালানোর পরেই তারা বাড়ি ছেড়েছিলেন প্রাণ সংশয়ে। এতদিন পর তারাও বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন।
ছবি: Hussein Malla/AP Photo/picture alliance
নীল সীমান্তের কাছে
জাতিসংঘ ইসরায়েল এবং লেবাননের যে সীমান্ত চিহ্নিত করেছে, তার আনুষ্ঠানিক নাম ব্লু লাইন। সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর ওই ব্লু লাইনের কাছেই আশ্রয় শিবিরে যেতে হয়েছিল বহু মানুষকে। বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করলেও হিজবুল্লাকে এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না অনেকে।
ছবি: Daniel Carde/Getty Images
শক্তি কমেছে হিজবুল্লার
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, অন্তত দুইবছর বড় কোনো আক্রমণের রাস্তায় হাঁটবে না হিজবুল্লা। কারণ সাম্প্রতিক সংঘর্ষে তাদের প্রভূত শক্তিক্ষয় হয়েছে। সে কারণেই তারা লড়াইয়ের ময়দান ছাড়তে রাজি হয়েছে।
হিজবুল্লাকে সংঘর্ষবিরতিতে রাজি করানোর অন্যতম দাবিদার ইরান। অভিযোগ, হিজবুল্লাকে আর্থিক এবং সামরিক সাহায্য করে তারা। সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষ-বিরতিতে যাওয়ার জন্যেও ইরান চাপ তৈরি করেছিল হিজবুল্লার উপর। কারণ ইরান বুঝতে পারছিল যে, হিজবুল্লা ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।
ছবি: Faraz
লেবাননের সেনা
হিজবুল্লা যেমন উত্তর লেবানন থেকে চুক্তি মেনে সরতে শুরু করেছে, তেমন লেবাননের সেনা লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে পোস্ট তৈরি করছে। কিন্তু লেবাননের সেনার শক্তি কতটা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাদের দাবি, লেবাননে হিজবুল্লার দাপট এতটাই যে সেনার ক্ষমতা খুব বেশি নয়। তাদের শক্তি পুলিশের মতো।
ছবি: Hussein Malla/AP/picture alliance
রাজনৈতিক পরিস্থিতি
লেবাননের রাজনীতিতে হিজবুল্লার বিরাট প্রভাব। পার্লামেন্টে হিজবুল্লার রাজনৈতিক সংগঠনের আসন আছে। এই পরিস্থিতিতে সংঘর্ষবিরতি কতদিন স্থায়ী হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
ছবি: ANWAR AMRO/AFP/Getty Images
ফিরছে ইসরায়েলের সেনা
চুক্তি অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে ইসরায়েলের সেনাকে লেবানন ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে। সংঘর্ষ-বিরতি শুরু হওয়ার পর ধীরে ধীরে জায়গা ছাড়ছে ইসরায়েলের সেনা।
ছবি: Mostafa Alkharouf/picture alliance/Anadolu
ধ্বংসস্তূপে ফেরা
লেবাননের একটি বড় অংশে একের পর এক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণেও আক্রমণ চালানো হয়েছে। লেবাননের বহু মানুষ সে সময় বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলেন। সংঘর্ষ-বিরতি শুরু হওয়ার পর তারা বাড়ি ফিরছেন কিন্তু যে বাড়ি ছেড়ে তারা গেছিলেন, তা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ছবি: Hassan Hankir/REUTERS
জাতিসংঘের অবস্থান
হিজবুল্লা এবং ইসরায়েল সংঘর্ষ-বিরতিতে রাজি হওয়ার পর তাকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, এই সংঘর্ষ-বিরতির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে। দিকে দিকে যে সংঘর্ষ চলছে, তা সমাপ্তি ঘটবে এবার।
এরপর লেবানন জানায়, তারা এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলবে।
এর আগে ইসরায়েল জানিয়েছিল, তারা চুক্তির শর্ত মেনে দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করছে না। কারণ, লেবানন, চুক্তির শর্ত পুরোপুরি রূপায়ণ করেনি।
রোববার উত্তেজনা বাড়তে থাকে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গ্রামবাসীরা তাদের বাড়িতে ফিরছিলেন, তখন ইসরায়েলের সেনা গুলি চালায় এবং ২২ জনের মৃত্যু হয়।
গত নভেম্বরে ইসরায়েল এবং ইরান সমর্থিত হেজবোল্লা ৮০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। সেই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ রোববার শেষ হয়।
হেজবোল্লাকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি-সহ একাধিক সুন্নি আরব দেশও।