ছয় শিক্ষার্থী হত্যার ১৩ আসামির মৃত্যুদণ্ড
২ ডিসেম্বর ২০২১বৃহস্পতিবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ইসমত জাহান৷
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, এ মামলায় অভিযুক্ত ৬০ আসামির মধ্যে তিনজন বিচার চলাকালেই মারা যান৷ বাকি ৫৭ জনের মধ্যে ১৩ জনকে সর্বোচ্চ সাজার আদেশ দিয়েছেন বিচারক৷ তাদের সবাইকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে৷ অন্য একটি ধারায় এই ১৩ জনকে আরো সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷
আসামিদের মধ্যে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন বিচারক৷ অন্য একটি ধারায় তাদের ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে৷ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার বাকি ২৫ আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত৷
২০১১ সালে আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামেছয়জনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা পুরো দেশকে স্তম্ভিত করে দেয়৷ পুলিশের অভিযোগপত্র পেয়ে ২০১৩ সালে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ৬০ আসামির বিচার শুরু হয়৷ সাক্ষ্য আর যুক্তিতর্ক শেষ করে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসতে আট বছর লেগে যায়৷ গত ২২ নভেম্বর রায়ের দিন ঠিক করে দেন বিচারক৷
জামিনে থাকা ৪২ আসামির জামিন বাতিল করে সেদিন তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত৷ বাকি ১৬ আসামিকে পলাতক দেখিয়ে মামলার বিচার কাজ চলে৷
ঘটনাচক্র
ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাত তরুণ ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলার চরে বেড়াতে যান৷ স্থানীয় কিছু লোক তাদের ডাকাত ভেবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে৷ ঘটনায় একজন প্রাণে বেঁচে গেলেও ছয়জন মারা যান৷
হামলায় নিহত ছয় শিক্ষার্থী হলেন, ধানমণ্ডির ম্যাপললিফ স্কুলের ‘এ' লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শাম্মাম, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ইব্রাহিম খলিল, বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের তৌহিদুর রহমান পলাশ, তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের টিপু সুলতান, মিরপুরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের সিতাব জাবীর মুনিব এবং বাঙলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র কামরুজ্জামান৷
হামলায় গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান আল-আমিন৷ পরে তার কাছ থেকে সেই ভয়াবহ রাতের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়৷ ওই হত্যাকাণ্ডের পর সাভার থানা পুলিশ একটি মামলা করে, যাতে অজ্ঞাতপরিচয় গ্রামবাসীদের আসামি করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন৷
অন্যদিকে ডাকাতির অভিযোগ এনে আল-আমিন এবং তার নিহত ছয় বন্ধুর নামে একটি মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী মালেক৷ পরে আলোচিত ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তে বেরিয়ে আসে নিহত ছাত্ররা ডাকাত ছিল না এবং হত্যা রুখতে পুলিশ যথাযথ ভূমিকা পালন করেনি৷
পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মালেকের অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে মালেকের বিরুদ্ধে মামলা করারও নির্দেশ দেয় আদালত৷
ছয় ছাত্রকে হত্যা মামলার তদন্তভার থানা পুলিশের হাত থেকে সিআইডি এবং পরে আদালতের নির্দেশে র্যাবের হাতে যায়৷
র্যাবের সহকারী পরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলাকারী মালেকসহ ৬০ জনকে আসামি করে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দেন৷
সে বছরের ৮ জুলাই ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ মো. হেলালউদ্দিন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন৷ বেঁচে যাওয়া একমাত্র ভিকটিম আল-আমিনকে ডাকাতির মামলা থেকে সেদিনই অব্যাহতি দেওয়া হয়৷
তদন্ত চলাকালে আসামিদের ১৪ জন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন৷ মামলার বিচারকালে রাষ্ট্রপক্ষে ৫৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয় বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শাকিলা জিয়াসমিন মিতু জানান৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)