নতুন হলের দাবিতে আন্দোলন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিত্যক্ত জায়গায় আবাসিক হল নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন করছেন তাঁরা৷
ফাইল ফটোছবি: DW/M. Mamun
বিজ্ঞাপন
সোমবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মিছিল পুলিশের বাধার মুখে পড়ে৷ পুলিশের লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন আহত হন৷ শিক্ষার্থীরা তখন স্মারকলিপি জমা দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন৷
শিক্ষার্থীরা বলছেন, একটি মহিলা হলসহ ১৩টি হল থাকলেও সেগুলো প্রভাশালীদের দখলে রয়েছে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল উদ্ধার বা আবাসন সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আন্তরিক হচ্ছেন না৷
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই হলের দাবিতে আন্দোলনের শুরু সাত বছর আগে৷ এতদিনে কথিত ১৩টি হলের মধ্যে দুটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷ বাকিগুলো কেন উদ্ধার হচ্ছে না, কেন ছাত্রদের আবাসনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না – এমন প্রশ্নের উত্তরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মিজানুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানান, ছাত্রী হলের নির্মাণকাজ চলছে৷ তিনি আরো জানান, ২০০৫ সালে স্রেফ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে একটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার কারণেই দেখা দিয়েছে এই সংকট৷ তাঁর মতে, মাত্র সাড়ে সাত একর জায়গায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করাই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত৷
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কর্মচারী বা শিক্ষকেরও আবাসনের ব্যবস্থা নেই – এ তথ্য জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরো দাবি করেন, যে ৯টি হলের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো মূলত দখল করা হিন্দুদের বাড়ি৷ সেগুলো দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা যথাসম্ভব দূর করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট রয়েছে, তবে কাজটি সময়সাপেক্ষ৷
তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তুপক্ষের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না৷
এদিকে মঙ্গলবারও পুরান ঢাকার রাস্তায় অবস্থান নিয়ে হলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা৷
শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন অনেকেই৷ সাংবাদিক লেখক আনিসুল হক, গণ জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ড. ইমরান এইচ সরকারসহ অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা মনে করেন শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়া উচিত৷
আনিসুল হক জানতে চেয়েছেন, ‘‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল কেন থাকবে না?''
আর ড. ইমরান এইচ সরকার লিখেছেন , ‘‘সাবাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়! আপনাদের আবাসিক হলের দাবীর সাথে একাত্বতা জানাচ্ছি৷ ন্যায্য দাবীর আন্দোলনে দমন-পীড়ন, টিয়ার শেল নিক্ষেপেরও নিন্দা জানাচ্ছি৷ ইতিহাসের শিক্ষা, অধিকার আদায় করে নিতে হয়৷ অধিকার আদায়ের ন্যায্য লড়াইয়ে সংহতি রইলো৷''
শিক্ষার্থীদের চোখে শিক্ষকদের মর্যাদা
শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কেমন চোখে দেখেন? ঢাকার কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে সেটিই জানতে চেয়েছিলেন আলোকচিত্রী মুস্তাফিজ মামুন৷
ছবি: DW/M. Mamun
অনন্ত সাদ
ঢাকা নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী অনন্ত সাদ একজন শিক্ষকের ছেলে৷ তাঁর মতে, ‘‘মাতা-পিতার পরেই যাঁদের স্থান তাঁরাই হলেন শিক্ষক৷ আর এটা আমরা শিখেছি পরিবার থেকেই৷ শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে যতই রাগারাগি করেন না কেন সেটা আমাদের ভালোর জন্যই করে থাকেন৷ আমার বাবাও একজন শিক্ষক এবং তিনিই আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে শিক্ষকদের সম্মান করতে হয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
কাজী ফয়সাল আরেফিন
তিনিও ঢাকার নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী৷ তিনি মনে করেন, শিক্ষকদের সম্মান সবার উপরে৷ তাই শুধু ছাত্রদের নয়, সবারই উচিত শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান করা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মোহাম্মদ নাঈম
ঢাকার নটরডেম কলেজের আরেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাঈম৷ তাঁর মতে, ‘‘শিক্ষক হলেন আমাদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার কারিগর৷ সেই শিক্ষকদের যদি সম্মান করা না হয় তাহলে আমাদের উন্নতি সম্ভব নয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
সুজানা জাহিদ
ঢাকার আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী সুজানা জাহিদ মনে করেন, শিক্ষকরা বাবা-মায়ের মতোই৷ সুজানা জানালেন, বাবা মা-কে যতটা সম্মান করেন, ঠিক ততটাই সম্মান করেন তিনি শিক্ষকদের৷
ছবি: DW/M. Mamun
মুনিয়া
ঢাকার মতিঝিল মডেল স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনিয়া শিক্ষকদের পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবেই দেখেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সারজিমা হোসেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের শিক্ষার্থী সারজিমা হোসেন তৃমার বাবা-মা দুজনই শিক্ষক৷ তাঁর মতে, ‘‘আমাদের সমাজে বর্তমানে শিক্ষকদের সম্মান অনেক কমে গেছে৷ তবে আমরা সবসময়ই শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান দিয়ে থাকি৷ আরেকটা বিষয় হলো, রাজনৈতিকভাবে শিক্ষদের অনেক হেয়, অসম্মান করা হয় যেটা বন্ধ হওয়া উচিত৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
মেহনাজ জাহান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের আরেক শিক্ষার্থী মেহনাজ জাহান বলেন, ‘‘শিক্ষকরা আমাদের গুরুজন৷’’ তাঁর মতে, শিক্ষকরা একেকজন পিতা-মাতা৷ সুতরাং তাঁরা যদি কোনো ভুলও করে থাকেন সেজন্য তাঁদের কোনোভাবেই অসম্মান করা যাবে না৷ ‘‘আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে সামান্য কিছু হলেও আমরা তাঁদের কাছে শিখেছি,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ইফতেখার ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডি বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখার ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের হাত ধরে এতদূর এসেছি, তাঁরাই হলেন আমাদের শিক্ষক৷ তাই তাঁদের সম্মান সবার আগে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
মাহবুবুর রহমান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান৷ তাঁর মতে, বাবা-মা কোনো ভুল করলে যেমন আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে যেতে পারিনা, তেমনি শিক্ষকরাও ভুল করলে তাঁদের অসম্মান করতে পারিনা৷
ছবি: DW/M. Mamun
তাহমিদ ইবনে আলম
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্যের শিক্ষার্থী৷ তাঁর মতে, শিক্ষকরা হাতে ধরে সবকিছু শিক্ষা দেন, সুতরাং তাঁদের সম্মান সবার আগে৷ কোনো শিক্ষার্থীরই উচিত হবে না শিক্ষকদের অসম্মান করা৷