ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হলসহ কয়েকটি হল বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছ থেকে দখলমুক্ত করতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা৷ আর তাদের আন্দোলনের ছোঁয়া এবার এসে লেগেছে বাংলা ব্লগ এবং ফেসবুকে৷
বিজ্ঞাপন
জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ সামহয়্যার ইন ব্লগে কৌশিকের নিবন্ধের শিরোনাম, ‘‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমূহ কারা দখল করে রেখেছে? কি তাদের পরিচয়? প্রশাসনের টনক নড়বে কবে?''
এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছি না, কোনোভাবেই বুঝতে পারছি না যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা হল উদ্ধার করার জন্য কেনো ছাত্রদের রাস্তায় নামার প্রয়োজন পড়ে? কেনই বা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বেদখল হয়, কিভাবে হয়েছিল? কারা করেছিল?''
শাহবাগ আন্দোলনের বছরপূর্তি
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা৷ তবে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আরো অনেক ইস্যুতে এখন সরব গণজাগরণ মঞ্চ৷ শাহবাগ আন্দোলনের বর্ষপূর্তি নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি৷ বর্ষপূর্তিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন আন্দোলনের কর্মীরা৷ গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে চলবে এই আন্দোলন৷
ছবি: DW/M. Mamun
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু
পাঁচ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় গণজাগরণ মঞ্চের অনুষ্ঠান মালা৷ তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা হয় বর্ষপূর্তি৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘ফাঁসির’ দাবি
শাহবাগ আন্দোলনের এক বছর পূর্তির শোভাযাত্রায় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের ‘ফাঁসির’ দাবিতে সোচ্চার ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
জনতার ভিড়
গণজাগরণের মঞ্চের আয়োজিত বর্ষপূর্তির বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় সাধারণ মানুষের ঢল নামে৷ এক বছর পূর্তিতে ঢাকার শাহবাগ থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে গণজাগরণ মঞ্চ কর্মীরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘প্রতীকী ফাঁসি’
শোভাযাত্রায় ‘প্রতীকী ফাঁসির’ চিত্রও তুলে ধরা হয়৷ বলাবাহুল্য, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের উদ্যোগকে সমর্থন করলেও ফাঁসির বিষয়ে সমর্থন নেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের৷
ছবি: DW/M. Mamun
আলোকচিত্র প্রদর্শনী
আন্দোলনের বছর পূর্তিতে শাহবাগে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলন শাহবাগ ছাড়িয়ে গোটা বাংলাদেশে এবং পরবর্তীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘নাস্তিক ব্লগার’
শাহবাগ আন্দোলন থেকে সৃষ্ট গণজাগরণের মঞ্চের গত এক বছরের পথচলা মোটেই সহজ ছিল না৷ বরং আন্দোলনের এক পর্যায়ে খুন হন ব্লগার রাজিব হায়দার৷ এরপর ঢালাওভাবে ব্লগারদের নাস্তিক এবং ইসলাম ধর্মবিরোধী আখ্যা দিয়ে তাঁদের শাস্তির দাবিতে রাজপথে নামে হেফাজতে ইসলাম৷ এক পর্যায়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ব্লগে ‘ইসলাম ধর্ম নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য ও কটূক্তির' অভিযোগে চার ব্লগারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷
ছবি: Getty Images
‘সমর্থন আগের মতোই’
তবে ‘নাস্তিক ব্লগার’ প্রচারণার কারণে শাহবাগে জনসমর্থন কমেনি বলে মনে করেন ব্লগার আরিফ জেবতিক৷ শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম এই কর্মী বলেন, ‘‘আমাদের শুরুতে যে জনসমর্থন ছিল, আজকেও সেই একই জনসমর্থন আছে৷ এবং আমি চ্যালেঞ্জ করি যে কোনো মিডিয়া এটা জরিপ চালিয়ে দেখতে পারে৷’’
ছবি: Arif Jebtic
ভিন্নমত
শুরুর দিকে শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন অবশ্য মনে করেন, ‘‘রাজনৈতিক দল এবং আমাদের রাজনীতিক নেতারা আসলে আমাদের আন্দোলনটা খেয়ে ফেলেছে৷’’ দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত আসিফ গত বছর বাংলাদেশে কয়েকমাস কারাভোগের পর বর্তমানে জার্মানিতে অবস্থান করছেন৷
ছবি: DW/A. Islam
বিভিন্ন ইস্যুতে সরব গণজাগরণ মঞ্চ
প্রসঙ্গত, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবির পাশাপাশি আরো অনেক ইস্যুতে সরব রয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ৷ সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ‘রোড মার্চ’ করে গণজাগরণ মঞ্চ৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
10 ছবি1 | 10
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও নিজের নিবন্ধে যোগ করেছেন কৌশিক৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো কারা, কবে, কিভাবে দখল করেছে তার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে এই প্রতিবেদনে৷ কৌশিক লিখেছেন, ‘‘এত প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সংস্থাসমূহের দখলে থাকায় ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন ছাড়া কোন উপায় নেই হয়ত৷ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রোববার পুরান ঢাকার ইসলামপুর এলাকায় ওই হলের সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে তাদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ৷ পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ার শেলে এক শিক্ষকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন৷''
এদিকে, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস নেটওয়ার্ক নামক একটি ফেসবুক পাতা থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিভিন্ন হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে৷ দৈনিক প্রথম আলোর বরাতে বুধবার পাতাটি থেকে জানানো হয়, ‘‘তিব্বত হলসহ বেদখলে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি হল যত দ্রুত সম্ভব সরকার উদ্ধার করবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ৷''
ছাত্র আন্দোলনের আহতদের ছবিও প্রকাশ করা হচ্ছে এই ফেসবুক পাতায়৷ ইতোমধ্যে তাদের অনুসারীর সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়েছে৷ মঙ্গলবার এক পোস্টে পাতাটি থেকে জানানো হয়, ‘‘ক্যাম্পাসে চলে আসুন সবাই৷ দরকার হলে আজকে থেকেই আমরা অনির্দিষ্টকাল ক্যাম্পাসে অবস্থান করব৷ আমাদের হল ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান চলবে৷ ঘরে বসে শুধু ফেসবুকে লাইক দিলেই আন্দোলন সফল হবে না৷ সবার মতো আপনাকেও উপস্থিত হয়ে আন্দোলন চালাতে হবে৷''