জগিং বা ‘স্যোয়েটপ্যান্টস’-এর ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে৷ ফ্যাশন ডিজাইনাররা বলছেন, এ পোশাক আর জিমে পরা বা জগিংয়ের সময় ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই৷ বরং ভবিষ্যতের ফ্যাশনাবল প্যান্ট হতে চলেছে স্যোয়েটপ্যান্টস৷
বিজ্ঞাপন
প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার স্টেলা ম্যাককার্টনি তাঁর হালনাগাদ ফ্যাশন পণ্যে যোগ করেছেন স্যোয়েটপ্যান্টস৷ অনেকের ধারণা, এই প্যান্ট পরে শীঘ্রই মানুষ ক্লাস করবে, অফিস আদালতে যাবে, এমন কি হয়ত বিয়ের অনুষ্ঠানেও যেতে পারে৷ তবে বিষয়টি কতটা নয়নাভিরাম কিংবা কতটা দৃষ্টিকটু তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ আসুন জগিং প্যান্টস-এর পক্ষের এবং বিপক্ষের চারটি যুক্ত সম্পর্কে জানা যাক৷
পক্ষে যেসব যুক্তি:
১. জগিং প্যান্টস-এর চেয়ে আরামদায়ক আর কিছু হতে পারে না৷ এই পোশাককে জনপ্রিয় করতে সম্প্রতি জার্মানিতে ‘স্যোয়েটপ্যান্টস দিবস' পালন করা হয়েছে৷ ফেসবুকে এই দিবসের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন কয়েক হাজার জার্মান৷ ফেসবুক পাতা: http://dpaq.de/nb1rJ
২. জগিং প্যান্টস গতানুগতিক কোনো পোশাক নয়৷ ‘স্যোয়েটপ্যান্টস দিবস'-এর সহ-আয়োজক মাটিয়াস স্ট্রোমেয়ারের মতে, ‘‘অনেকে মনে করেন, পাবলিক এরিয়া বা সর্ব সমক্ষে জগিং প্যান্টস পরা যাবে না৷ এই গতানুগতিক ধারণা বদলে দিতেই জগিং প্যান্টস দিবসের আয়োজন করি আমরা৷''
বার্লিন ফ্যাশান উইক ২০১৪
আগামী হেমন্তে জার্মানরা কি পোশাক পড়বেন, তারই প্রভাব পড়েছে এবারের বার্লিন ফ্যাশান উইকে৷ সব পোশাক যে নিত্যদিনের ব্যবহার্য নয় তা বলাই বাহুল্য৷ কিন্তু পোশাকের সাধারণত্ব আর সৌন্দর্য্য আপনাকে আকর্ষণ করবে৷
ছবি: Getty Images
আভিজাত্য ও বিশুদ্ধ
বার্লিন ফ্যাশান উইকের উদ্দেশ্যই থাকে আগামী হেমন্তে বাজারে কোন পোশাক গ্রহণযোগ্যতা পাবে সেটাকে উপস্থাপন করা৷ বার্লিনের ডিজাইনার হিয়েন লি-র ট্রেন্ড হলো বেল্ট ও বোতাম ছাড়া ছিমছাম পোশাক নয়ে হাজির হয়েছেন, যা একইসাথে আভিজাত্য ও মনে পবিত্রতা এনে দেয়৷
ছবি: Timur Emek/Getty Images for IMG
সব সময়ের গ্ল্যামার
অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত ডিজাইনার লেনা হোশেকের পোশাকের ধরণটা অনেকটা হিয়েন লি-র মতোই৷ তবে তাঁর কাপড়ের নকশায় ৪০ এবং ৫০-এর দশকের স্টাইলের কথা আপনাকে মনে করিয়ে দেবে৷ অনেক লেস, ঘের দেয়া স্কার্ট এবং ফুলেল নকশার পোশাক যে কোনো বয়সের মানুষের জন্যই উপযোগী৷
ছবি: Andreas Rentz/Getty Images for IMG
সর্বকালের সেরা জিন্স
যে কোনো মেয়েরই পছন্দের পোশাকের তালিকায় আজকাল রয়েছে জিন্স৷ এই মডেলরা নিশ্চয়ই এই পোশাকে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন৷ উত্তর-পশ্চিম জার্মানির মডেল লুইসা হার্তেমাকে দেখা যাচ্ছে এখানে৷ তাঁর পরনের শার্ট আর কালো হ্যাট দেখে মনে হতে পারে যে, নিজের আলমাড়ি থেকে নিয়ে এগুলো গায়ে চড়িয়েছেন তিনি৷
ছবি: Frazer Harrison/Getty Images for Mercedes Benz
ফ্যাশান মঞ্চে ট্যাট্যু
সারা শরীরে ট্যাটু বা উল্কি আঁকা এই মডেলের নাম লেক্সি হেল৷ ডিজাইনার মার্ক স্টোনের পোশাক পড়েছেন তিনি৷ তাঁর এই ট্যাটু সেইসব মানুষদের জন্য যাঁরা ফ্যাশান উইকে এসেছেন শুধুই দেখতে, ফ্যাশানের সাথে যাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দেখানো এবং দেখা
ফ্যাশান উইকে পোশাকের মতো দর্শকরাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ এখানে জার্মান ডিজাইনার লাবেল রিয়ানি দর্শককে নিয়ে গেছেন একেবারে আর্কটিকে৷ মডেলদের পোশাকে তাই অফ হোয়াইটের সাথে রূপালি এবং ধূসর রঙের উপস্থিতি৷
ছবি: Clemens Bilan/Getty Images for IMG
ডিজাইনারের হাসি
নিজের ডিজাইন করা পোশাক পড়ে মডেলরা যখন মঞ্চে হাঁটেন, তা যে কোনো ডিজাইনারের জন্য গর্বের৷ এখানেও সেই গর্বের হাসিই হাসছেন এক পোশাক ডিজাইনার৷
ছবি: Getty Images
ফ্যাশান উইক মানেই সুন্দরীদের ছড়াছড়ি
ফ্যাশান উইক মানেই সুন্দরী মডেলদের ছড়াছড়ি৷ মঞ্চে এসব মডেলদের উপস্থিতি কিন্তু ডিজাইনারদের পোশাককে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে৷
ছবি: Peter Michael Dills/Getty Images for IMG
বার্লিনের পোশাকে বাংলাদেশের রানা প্লাজা
উঠতি মডেল আর ডিজাইনারদের মিলনমেলা বার্লিন ফ্যাশন উইকে এবার বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের দুর্দশার চিত্রও ফুটে উঠেছে৷ গত বছর সেরা তরুণ ডিজাইনারের পুরস্কার জেতা ববি কোলাড এবারের বার্লিন ফ্যাশন উইকে পোশাকে ফুটিয়ে তুলেছেন রানা প্লাজা ধসের ছবি৷ যা নজর কেড়েছে সবার৷
ছবি: William Minke
ফ্যাশান শো-তে মার্সেডিজ
এবারের বার্লিন ফ্যাশান উইকের স্পন্সর মার্সেডিজ৷ এ কারণে ফ্যাশান উইক আয়োজনে এর লোগো প্রায়ই আপনার চোখে পড়বে৷ আর সেই লোগোর সাথে ছবি তুলতে ভোলেননি অনেক মডেল৷
ছবি: Ian Gavan/Getty Images for IMG
আয়োজনে ব্যয় ২৫০ কোটি ইউরো
১৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে বার্লিন ফ্যাশন সপ্তাহ৷ ফ্যাশনের এই বার্ষিক উৎসবকে সফল করতে জার্মান সরকারও বেশ উদ্যোগী৷ প্রতি বছর এই ফ্যাশন সপ্তাহকে কেন্দ্র করে আয় হয় প্রায় ২৫০ কোটি ইউরো৷
ছবি: Getty Images
10 ছবি1 | 10
৩. জগিং প্যান্টস পরলে মেয়েদের বেশ ‘স্টাইলিশ' দেখায়৷ ফ্যাশন পরামর্শক ইনেস মেরোজের মতে, জগিং প্যান্টসের সঙ্গে হাই-হিল পরলে মেয়েদের স্মার্ট লাগবে৷
৪. আপনার স্বকীয়তা ফুটিয়ে তুলতে পারে স্যোয়েটপ্যান্টস৷ বিশেষ করে ডিজাইনারদের তৈরি ‘জগিং বটমস' বা জগিং প্যান্টস নারীর পোশাকে আরো বেশি বৈচিত্র আনতে পারে৷
জগিং প্যান্টসের বিপক্ষের যুক্তি:
১. পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে স্থান এবং সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ জগিং প্যান্টস শুধুমাত্র ব্যায়ামের সময় পরার জন্য তৈরি৷ জার্মানির ‘এটিকেট অ্যাসোসিয়েশন'-এর আগনেস ইয়ারোশ মনে করেন, ‘‘জগিং বটমস সবসময় জগিং বটমস-ই থাকবে৷ সেটা ডিজাইনাররা তৈরি করুক বা অন্য কেউ৷''
২. জগিং প্যান্টস পরলে আপনাকে ‘স্বল্প-আয়ের দুনিয়ার' বাসিন্দা মনে হতে পারে৷
৩. পাবলিক প্লেসে জগিং প্যান্টস পরে ঘুরলে পুরুষদের ‘স্লপি' মনে হয়৷
৪. জগিং প্যান্টস পরার মাধ্যমে মানুষের মনে আঘাত করার শঙ্কা থাকে৷ যেমন ধরুন, কেউ যদি বিয়ের অনুষ্ঠানে জগিং প্যান্টস পরে যান, তাহলে সেটা অসৌজন্যমূলক আচরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে৷
প্রশ্ন হচ্ছে, ডিজাইনারদের চেষ্টা সত্ত্বেও তাহলে কি স্যোয়েটপ্যান্টস সর্বত্র পরিধেয় পোশাকে পরিণত হবে না? এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে জিন্সের কথা৷ একসময় জিন্স পরতেন শুধু খনি শ্রমিকরা৷ এখন সেটা সবাই, কার্যত সর্বত্র পরেন৷ ভবিষ্যতে জগিং প্যান্টসের ক্ষেত্রেও যে এমনটা হবে না, সে নিশ্চয়তা কে দিচ্ছে?