1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জঙ্গিদের অপারেশনের সক্ষমতা না থাকলেও থামেনি তৎপরতা

সমীর কুমার দে
১ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার আট বছর পূর্ণ হল৷ এই আট বছরে ২৭টি জঙ্গিবিরোধী বড় অপারেশন চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী৷ এতে ৭৩ শীর্ষ জঙ্গি নিহত হয়েছে৷ তবুও থেমে নেই জঙ্গিদের কার্যক্রম৷

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার সাত বছর পূর্ণ হল শনিবার৷ছবি: Reuters/A. Abidi

বিশ্লেষকেরা বলছেন, হামলার মতো বড় অপারেশন চালানোর সক্ষমতা হয়তো নেই, তবে তাদের কার্যক্রমও থেমে নেই৷ সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি চলছে অনলাইন কার্যক্রম৷

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মনিরুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জঙ্গিদের বড় ধরনের অপারেশনের সক্ষমতা হয়ত নেই৷ কিন্তু তাদের কার্যক্রমও কিন্তু থেমে নেই৷ আমরা সাধারণত জঙ্গি বিষয়টি বলতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানকে বুঝি৷ অথচ জঙ্গিদের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পার্ট অত্যন্ত সামান্য৷ যাদের মস্তিষ্কে এটা ঢুকে গেছে, তাদের তো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কিছু করতে পারবে না৷ সামাজিকভাবে, রাষ্ট্রীয়ভাবে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটা হচ্ছে না৷ এখানে আমাদের কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে৷

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ নিহত হন মোট ২২ জন৷ তাদের মধ্যে দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা৷ জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় আহত হন পুলিশের অনেকে৷ কয়েকবার প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও স্পর্শকাতর বিবেচনায় রাতে হোলি আর্টিজানে অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোদের ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ অবসান হয় জিম্মিদশার, নিহত হয় হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি৷

জঙ্গিদের তৎপরতা প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, সেটা আমি বলব না৷ তবে, নিয়ন্ত্রণে আছে৷ জঙ্গিবাদের সুপ্ত বীজ লুকিয়ে থাকতে পারে৷ আমরাও কিন্তু বসে নেই৷ আমরা আমাদের কাজটা করে যাচ্ছি৷’’

এর আগে শনিবার সকালে গুলশানে হোলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় শহীদ দুই পুলিশ সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের কমিশনার বলেন, ‘‘দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক চক্রান্তে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করতে বিভিন্ন জঙ্গি হামলা ঘটানো হয়৷ হোলি আর্টিজান হামলার পর আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে যেতে থাকে৷ তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুলিশ ও জনগণ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়৷ সব উন্নয়ন সহযোগীদের স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়, বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিদের উৎখাত করব, আপনারা ফিরে আসেন৷ তারপর আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা দেশে ফিরে আসেন এবং আমাদের উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রয়েছে৷ এরপর থেকে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ করা, গ্রেফতার ও বিচারে সোপর্দ করা অব্যাহত ছিল৷ যারাফলে সমগ্র বাংলাদেশে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আছে৷’’

জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন হয়ে না গেলেও নিয়ন্ত্রণে আছে

This browser does not support the audio element.

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামানও বলেন, ‘‘বর্তমানে দেশে জঙ্গিদের ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিস করার কোনো সামর্থ্য নেই৷ প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সুযোগ তারাও নিয়েছে৷ সাইবার স্পেসে তাদের প্রচার-প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করেছিল৷ কিন্তু সিটিটিসির তৎপরতার কারণে তারা ফিজিক্যালি তাদের কার্যক্রম চালাতে পারছে না৷ ২৪/৭ ঘণ্টা সাইবার স্পেসে আমাদের পেট্টোলিং চলছে৷ এমন অনেককে আমরা শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি৷’’

নিহতদের প্রতি বিভিন্ন দূতাবাসের শ্রদ্ধা
গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে সকালে নিহত ব্যক্তিদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তারা৷ শনিবার সকালে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের পাঁচ নম্বর প্লটের ওই ভবনের সামনে অস্থায়ী বেদিতে প্রথমেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা৷ এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতোনাওকি৷ এ ছাড়া ইটালি ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তারাও নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান৷ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল ১০টার দিকে হোলি আর্টিজানের মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়৷

ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষ হতে পারে এ বছরই
সেই হামলা-হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে বিচারিক (নিম্ন) আদালতে সাত জঙ্গির ফাঁসির রায় হয়৷ এ মামলার বিচার শুরুর সময় আট আসামির ছয়জন কারাগারে ছিলেন৷ বিচার চলাকালে বাকি দুইজন গ্রেপ্তার হন৷ পরে রায়ে মামলার আট আসামির সাত জনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত৷ ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান এ রায় দেন৷ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়৷ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন: জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ এবং মামুনুর রশিদ রিপন৷

এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে৷ ঘটনার সাত বছরের মাথায় আলোচিত সন্ত্রাসী হামলার নৃশংস ঘটনায় দ্বিতীয় ধাপের বিচারের অপেক্ষায় পুরো জাতি৷ হাইকোর্টের বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আলোচিত এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি হচ্ছে৷ গত জানুয়ারিতে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে৷ এরপর গত মে মাসে ৪ দিন শুনানি হয়৷ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু মামলাটির শুনানি শুরু হয়েছে, ফলে চলতি বছরেই হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় আলোচিত মামলায় ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) এবং আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শেষ হতে পারে৷

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন বলেন, ‘‘হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে৷ কিন্তু বেঞ্চের এক বিচারক হজে যাওয়াই শুনানি মুলতবি রয়েছে৷ তিনি ফিরে আসলে জুলাইয়ে আবারও শুনানি হবে৷ আমি মনে করি জুলাই মাসের শেষ দিকে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় আলোচিত মামলায় ডেথ রেফারেন্স এবং আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শেষ হতে পারে৷ আশা করছি, দণ্ডিত আসামিদের সাজা যেন বহাল থাকে৷ যেহেতু মামলাটি দেশে এবং বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, ফলে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে বিশ্ববাসী দেখবে জঘন্য এ হত্যাকাণ্ডের বিচার৷’’

হোলি আর্টিজানের পর ২৭ অপারেশনে ৭৩ জঙ্গি নিহত
২০১৬ সালের হোলি আর্টিজান হামলার পর কল্যাণপুর, নায়াণগঞ্জ, গাজীপুরে ২৭টি অপারেশন পরিচালনা করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও র‌্যাব৷ এসব অভিযানে ৭৩ জন জঙ্গি নিহত হয়৷

জঙ্গিদের অপারেশনের সক্ষমতা না থাকলেও কার্যক্রম থেমে নেই

This browser does not support the audio element.

সিটিটিসির তদন্ত শেষ করা দুটি মামলায় রায় হয়েছে৷ যেখানে ১২ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সিটিটিসির অভিযানগুলোর জন্য জঙ্গিদের কার্যক্রম নেই বললেই চলে৷ হোলি আর্টিজানে নৃশংস হামলার পর গত সাত বছরে সিটিটিসি একের পর এক সফল অভিযানের মাধ্যমে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডকে কঠোরভাবে প্রতিহত করেছে৷ আমাদের ২৩টি হাই-রিস্ক অপারেশনে ৬৩ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়৷ অন্যদিকে র‌্যাবের চারটি অপারেশনে ১০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে৷

আসাদুজ্জামান স্বীকার করেন, অনলাইনে সক্রিয় রয়েছে সবগুলো জঙ্গি সংগঠন৷নীরবে সদস্য সংগ্রহ করছে তারা৷ বাড়াচ্ছে সাংগঠনিক শক্তি৷

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দৃশ্যত আমরা জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি৷ কিন্তু তাদের কার্যক্রম যে থেমে নেই সেটা তো আমরা সবাই জানি৷ এখন তারা অনলাইনে সক্রিয় রয়েছে৷ তাদের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমও চলছে৷ মানুষকে মোটিভেট করার কার্যক্রম তারা চালাচ্ছে৷ ফলে অপারেশনের পাশাপাশি এই দিকে আমাদের বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ