জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়ায় আফগান তালেবানকে সতর্ক করলো পাকিস্তান
১৫ জুলাই ২০২৩
পাকিস্তানের আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তান প্রদেশে বেশ কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি তালেবান, তেহরিক-ই-জিহাদ পাকিস্তান এবং তথাকথিত 'ইসলামিক স্টেট' গ্রুপ।
জেনারেল আসিম মুনির বলেছেন, পাকিস্তানি তালেবান নামে পরিচিত তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান -টিটিপি আফগানিস্তানে "নিরাপদ আশ্রয় এবং স্বাধীনতা'' পাচ্ছে, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান।
টিটিপি এর আগে বালুচিস্তান প্রদেশে হামলার দায় স্বীকার করেছে।
এই অঞ্চলে সক্রিয় অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে রয়েছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট- আইএস এবং তেহরিক-ই-জিহাদ পাকিস্তান নামের একটি নবগঠিত গোষ্ঠী। নতুন এই দলটি এ সপ্তাহে একটি হামলায় নয়জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হওয়ার দায় স্বীকার করেছে৷
পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, "এই ধরনের হামলা সহ্য করা হবে না এবং পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী এর উচিত জবাব দেবে।"
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের করা ২০২০ সালের চুক্তি অনুযায়ী কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি।
তারা যদি এ প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হয় তাহলে এই "আক্রমণগুলোর একটি উচিত জবাব" দেয়া হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন মুনির। অবশ্য সে প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি সেনাপ্রধান।
তবে টিটিপি বা পাকিস্তানে হামলাকারী অন্য কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যদের আশ্রয় দেয়ার কথা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে তালেবান।
মসজিদে বিস্ফোরণ নিয়ে পাকিস্তান-তালেবান তরজা
পেশোয়ারে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের পর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তালেবানদের মধ্যে বিরোধ সামনে এসেছে।
ছবি: MAAZ ALI/AFP/Getty Images
বিস্ফোরণের দায়
তেহরিক-ই-তালেবান এই আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করে। পরে তারা জানায়, এই বিস্ফোরণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সন্দেহ করা হচ্ছে, স্থানীয় কিছু বেআইনি গোষ্ঠী এর পিছনে। কিন্তু পাকিস্তানের কিছু মন্ত্রী তেহরিক-ই-তালেবানকেই দায়ী করে আফগানিস্তানের তালেবানদের দায়িত্ব পালন করতে বলেন।
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
তালেবানের জবাব
টোলো নিউজ জানাচ্ছে, আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বলেছেন, পাকিস্তান যেন পেশোয়ার বিস্ফোরণের জন্য কাবুলকে দায়ী না করে। আফগানিস্তানে কোনো জঙ্গি ঘাঁটি নেই। আফগানিস্তানের মাটি থেকে কোনো জঙ্গি সংগঠনকে কাজ করতে দেয়া হয় না।
ছবি: ABDUL MAJEED/AFP/Getty Images
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে
মুত্তাকির বক্তব্য, পাকিস্তান যেন নিজের ছাদের বরফ অন্যদের ছাদে না ফেলে। এটা পাকিস্তানের নিজের সমস্যা। ওরা যেন, পেশোয়ার বিস্ফোরণের তদন্ত ভালো করে করে।
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
পাকিস্তানের জবাব
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মমতাজ জাহরা বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার ক্ষেত্রে পাকিস্তান প্রত্যাশা করে, আফগানিস্তান তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। আন্তর্জাতিক দুনিয়ার প্রত্যাশা পূরণ করবে। তিনি বলেছেন, ''আমরা নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুকে খুবই গুরুত্ব দিই। প্রত্যাশা করি, আমাদের প্রতিবেশী দেশও তাই করবে।''
ছবি: Abdul Majeed/AFP/Getty Images
অভিযোগ নয়, সহযোগিতা
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, তারা সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার প্রশ্নে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলায় বিশ্বাস করেন না। তারা চান, আফগানিস্তান যেন পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কার্ষকলাপের জন্য জঙ্গিদের তাদের দেশের জমি ব্যবহার করতে না দেয়। তাদেরকে এই লক্ষ্যে কাজ করে দেখাতে হবে।
ছবি: MAAZ ALI/AFP/Getty Images
পুলিশের বিক্ষোভ
পোশেয়ারের মসজিদে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। আত্মঘাতী জঙ্গি পুলিশের পোশাক পরে এসেছিল। বিস্ফোরণে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় পুলিশ কর্মীই মারা গেছেন। এরপরই পুলিশ কর্মীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
ছবি: Faridullah Khan/DW
পুলিশের দাবি
বিক্ষোভরত পুলিশ কর্মীদের দাবি ছিল, তাদের হাত বেঁধে পশুর সামনে ফেলে দিচ্ছে সরকার। যদি পুলিশ নিজের প্রাণ বাঁচাতে না পারে, তাহলে তারা কী করে সাধারণ মানুষের প্রাণরক্ষা করবে। ৪২ বছরের ইনায়েত উল্লার বন্ধু বিস্ফোরণে মারা গেছেন। তিনি বলেছেন, সকালে যখন বাড়ি থেকে বেরোই, তখনও জানি না, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে পারব কি না।