মেসোপটেমিয়া, ব্যাবিলন থেকে শুরু করে রোমান সাম্রাজ্য – সিরিয়া ও ইরাকে এই সব প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন ধ্বংস ও কালোবাজারে বিক্রির খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ ইসলামিক স্টেট বা আইএস জঙ্গিরা এমন অপূরণীয় ক্ষতি করছে বলে অভিযোগ উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
আজকের সিরিয়া ও ইরাক সব বিস্তীর্ণ অঞ্চল এককালে মানবসভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল৷ প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে এই অঞ্চলে একে একে মেসোপটেমিয়া থেকে শুরু করে ব্যাবিলন ও রোমান সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিলো৷ সেই ইতিহাসের নিদর্শনেরও অভাব নেই৷ ইরাকে এর আগের কয়েকটি যুদ্ধে তার কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে৷ আজ সিরিয়া ও ইরাক জুড়ে আইসিস জঙ্গিদের তাণ্ডব প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলির জন্য আরও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস) নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি বর্তমানে অস্তিত্বের সংকটের মুখে৷ একদিকে উগ্র ধর্মীয় মতবাদের বলে জঙ্গিরা কিছু নিদর্শন সরাসরি ধ্বংস করে ফেলছে৷ অন্যদিকে অর্থ সংগ্রহের স্বার্থে তারাই আবার প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী আন্তর্জাতিক কালোবাজারে বিক্রি করছে৷ এই অবস্থায় সিরিয়া ও ইরাকে প্রত্নতত্ত্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, যে দুই দেশের প্রাচীন ইতিহাস কার্যত মুছে দেওয়া হচ্ছে৷
প্রাচীন গ্রিসের সবচেয়ে বড় সমাধির সন্ধান লাভ
গ্রিসের উত্তরাঞ্চলের অ্যাম্ফিপোলিস শহরে সম্প্রতি একটি সমাধির সন্ধান পাওয়া গেছে৷ মহাবীর হিসেবে পরিচিত ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট’-এর সময়কার এই সমাধিটি যে কার, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নারীমূর্তি
খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ থেকে ৩২৫ সময়কালের এই সমাধির দ্বিতীয় প্রবেশপথে দুটি নারীমূর্তি পাওয়া গেছে৷ লম্বা ঢিলেঢালা পোশাক পরিহিত কোঁকড়ানো চুলের এই মূর্তি দুটি যেন সমাধির পাহারাদার হিসেবে স্থাপন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
প্রায় অক্ষত
দুটি মূর্তির মধ্যে একটির মুখ পাওয়া যায়নি৷ তবে বাকি সব অক্ষত রয়েছে বলে জানা গেছে৷ গ্রিসের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘‘একটি মূর্তির বাম হাত আর অন্যটির উত্তোলন করা ডান হাত যেন বলে দিচ্ছে যে, সমাধিতে প্রবেশ করা যাবে না৷’’
ছবি: picture alliance/AP Photo
ডানা ও মুন্ডুহীন স্ফিংক্স
খননকাজের সময় প্রত্নতত্ত্ববিদরা সমাধির মূল প্রবেশপথে ডানা ও মুন্ডুহীন এই ‘স্ফিংক্স’ জোড়ার সন্ধান পান৷ তবে তাদের ডানা ও মাথার কিছু ভাঙা অংশ অন্য জায়গায় পাওয়া গেছে৷ মূল সমাধিতে ঢোকার আগে ১৩টি সিঁড়ি আছে৷ সব মিলিয়ে সমাধির উচ্চতা প্রায় ৪৫৭ মিটার৷ ‘স্ফিংক্স’ হলো পাথরের বিশালাকার মূর্তি, যার দেহটি সিংহের এবং মাথা মানুষের মতো৷ মিশরে এমন বহু মূর্তি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্বেল পাথরের সিংহ মূর্তি
প্রায় পাঁচ মিটার উঁচু মার্বেল বা মর্মর পাথর দিয়ে তৈরি সিংহের এই মূর্তিটি আবিষ্কৃত সমাধির একেবারে উপরে ছিল বলে ধারণা করা হয়৷ তবে প্রায় একশত বছর আগে, ১৯১২ সালে, স্থানীয় এক নদী থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মূর্তিটি উদ্ধার করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জটিল প্রক্রিয়া
সমাধির খননকাজ শুরু হয় ২০১২ সালে৷ এখনও চলছে৷ প্রধান প্রত্নতত্ত্ববিদ জানিয়েছেন, তাঁরা যেন একেকজন সার্জনের মতো কাজ করছেন৷ অর্থাৎ খুব সতর্কতার সঙ্গে খননকাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/dpa
সুন্দর কারুকাজ
সমাধির প্রধান কক্ষের পাশের ছোট্ট একটি কক্ষের অংশ এটি৷ কারুকাজগুলো যেন যাঁর সমাধি তাঁর সম্পত্তি ও বিশাল ক্ষমতার চিহ্ন বহন করছে৷ আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট-এর স্ত্রী ও সন্তানকে অ্যাম্ফিপোলিসে হত্যা করা হয়৷ তাই এই সমাধিটি তাঁদের হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
অনেক আশা
এটি অ্যাম্ফিপোলিস শহরের যেখানে খননকাজ চলছে, সেখানকার ছবি৷ সমাধিটি ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট’-এর পরিবারের সদস্য ছাড়াও তাঁর শাসনামলের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তারও হতে পারে৷ অবশ্য খননকাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরই সব জানা যাবে৷ তবে সমাধিটি যারই হোক না কেন, গ্রিস সরকার ইতিমধ্যে একে ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ’ বলে আখ্যায়িত করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
ইরাকের ১২,০০০ নথিভুক্ত ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে প্রায় ১,৮০০টি মসুল শহরের কাছে নিনেভা প্রদেশে অবস্থিত৷ গত জুন মাসে এলাকাটি আইএস জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়৷ কালহু, দুর শারুকিন ও আশুর-এর মতো অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রগুলি এখানেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ অরাজকতার সুযোগ নিয়ে কালোবাজারিরা জঙ্গিদের সঙ্গে সহযোগিতায় অবাধ লুটপাট চালিয়ে অমূল্য ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি পাচার করছে বলে সংবাদ সংস্থা এপি-র কাছে দাবি করেছেন ইরাকের সরকারি জাদুঘর বিভাগের কর্মকর্তা কাইস হুসেন রশিদ৷ মসুলের সিটি মিউজিয়ামের অমূল্য সম্পদও চিরকালের জন্য হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি৷
আইএস জঙ্গিরা শুধু প্রাক-ইসলামি সভ্যতার বিরুদ্ধেই রোষ দেখাচ্ছে না৷ শিয়া – এমনকি কিছু সুন্নি ধর্মীয় স্থানও ধ্বংস করে দিচ্ছে তারা৷ পৌত্তলিকতার সামান্য আভাস পেলেই তারা ধ্বংসলীলা শুরু করেছে৷ তবে ঐতিহাসিক নিদর্শন বিক্রির সুযোগ পেলে সংকীর্ণ ধর্মীয় বিশ্বাসের বদলে বাস্তব মুনাফাই তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷ জঙ্গিরা হয় নিজেরাই সরাসরি সে সব বিক্রি করছে, অথবা কালোবাজারিদের হাতে তুলে দিচ্ছে৷
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংগঠন ইউনেস্কো ইরাকের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সুরক্ষায় এক আপদকালীন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷ আর্ট ডিলার ও মিউজিয়াম-গুলির উদ্দেশ্যে ইরাক থেকে পাচার করা চোরাই মালপত্র না কেনার আবেদন করেছে এই প্রতিষ্ঠান৷