১০ বিশিষ্ট নাগরিককে চিঠি দিয়ে হত্যার হুমকিদাতা আল-কায়েদা-আনসারুল্লাহ বাংলাটিম-১৩-র নাম আগে হত্যার হুমকি দেয়া ও হত্যা করা জঙ্গি গ্রুপগুলোর নামের কাছাকাছি৷ গোয়েন্দাদের মতে, একই গ্রুপ এখন নানা নামে সক্রিয়৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার আল কায়েদা-আনসারুল্লাহ বাংলাটিম-১৩ নামে একটি সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, তারানা হালিম, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অসীম সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরী গায়েন, বিকাশ সাহা, ইকবালুর রহিম ও পলান সুতার এই ১০ জনকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠায়৷
বাংলাদেশে আনসার আল ইসলাম, আনসার আল শরিয়াহ, আনসার বাংলা-৭, আনসার বাংলা-৮, আল কায়েদা-আনসারুল্লাহ বাংলাটিম জঙ্গি গ্রুপের নাম এর আগে শোনা গেলেও আল কায়েদা-আনসারুল্লাহ বাংলাটিম-১৩-র নাম এই প্রথম শোনা গেল৷ আগের জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা এর আগে ব্লগারদের হত্যার হুমকি এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ মিলেছে৷ তবে আল কায়েদা-আনসারুল্লাহ বাংলাটিম-১৩ কি আলাদা সংগঠন, না একই সংগঠনের পরিবর্তিত নাম ?
এই প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির উপ কমিশনার (মিডিয়া) জাহাঙ্গির আলম ডয়চে জানান, ‘‘আমরা মনে করছি এটা নতুন কোনো জঙ্গি গ্রুপ নয়৷ আগে যারা ব্লগারদের হত্যা এবং হত্যার হুমকি দিয়েছে তারাই এ কাজ করেছে৷ তাদের প্রধানসহ বড় একটি গ্রুপ এখন কারাগারে থাকলেও তাদের অনুসারীরা সক্রিয় আছে৷'' তিনি জানান, ‘‘এরা আল কায়েদার অনুসারী৷ আগে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা কাগজ পত্র এবং ডকুমেন্ট থেকে এটা জানা গেছে৷''
আর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার সানোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন কাজ করছেন জঙ্গিদের নিয়ে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এই জঙ্গি গ্রুপগুওলো শুধু নাম পালটায়৷ কিন্তু তাদের মূল একই বলে আমার কাছে মনে হয়৷ কারণ তাদের সবার ধরণ এবং কর্মপদ্ধতি একই রকম৷''
২০১৩ সালে মিরপুরে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার ঘটনায় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রকে আটকের পর আলোচনায় আসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম৷ তখন জানা যায়, জসীমুদ্দিন রাহমানী এ সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা৷ পরে বরগুনা থেকে বেশ কয়েকজন অনুসারীসহ জসীমুদ্দিন রাহমানী আটক হন৷
তিনি এখনো কারাগারে থাকলেও তার অনুসারীরা বাইরে আছেন৷ তাদের মধ্যে একজন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর সাবেক ছাত্র রেদওয়ান আজাদ রানা পলাতক অবস্থায় সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে৷ অভিজিৎ রায় হত্যায় রানাকে সন্দেহের শীর্ষে রেখেছেন গোয়েন্দারা৷
গত বছর ঢাকার মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা, মোহাম্মদপুরে রাকিব মামুন নামে এক ব্লগারকে গুলি ও আশুলিয়ায় আরেক ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছিল৷ ওই সময়ের পর ‘আনসার আল শরিয়াহ' ও ‘আনসার আল ইসলাম' নামে দুটি সংগঠন দায়িত্ব স্বীকার করে৷ সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাসকে হত্যার পর পরই টুইটার বার্তায় দায় স্বীকার করেছিল আনসার বাংলা-৮ নামে একটি সংগঠন৷ সব সংগঠনই আল কায়েদার অনুসারী বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা৷
গোয়েন্দারা বলছেন, তাদের হুমকি এবং হত্যার ধরণ একই৷ তারা আল কায়েদার ‘লোন উলফ, এবং ‘স্লিপার সেল পদ্ধতিতে হত্যাকাণ্ড ঘটনায়৷ ফলে নেপথ্যে কারা আছে তা সব সময় জানা যায়না৷ যারা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন তারাও খুব বেশি উপরের লোকজনকে চেনেন না বা জানেন না৷ আর তাদের কেউ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বা বোমা বিশেষজ্ঞ৷ আবার কেউ হত্যাকাণ্ডে পারদর্শী৷ তারা স্থানীয়ভাবে ড্রোন তৈরি করেও হামলার পরিকল্পনা করেছিল৷
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে উগ্রপন্থি জঙ্গি সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে৷ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল জানিয়েছেন, ‘নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে৷'
এর আগে জেএমবি, জেএমজেবি, হুজিবি, হিযবুত তাহরির ও শাহাদাত ই আল হিকমা – এই পাঁচটি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয় বাংলাদেশে৷
জার্মানিতে জঙ্গিবাদ
তারা তরুণ, ধর্মান্ধ এবং জান্নাতে যেতে চায়৷ জার্মানিতে এমন প্রায় ৫০০ ইসলামি জঙ্গি আছে যারা যে-কোনো ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ বিষয়টি বেশ ভাবিয়ে তুলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Boris Roessler
ব়্যাপার থেকে জিহাদি
ডেনিশ কুসপার্ট এর বাবা জার্মান এবং মা ঘানার৷ তাঁর জন্ম ১৯৭৫ সালে বার্লিনে৷ ইসলামিক স্টেটের অন্যতম জিহাদিস্ট এই ব়্যাপার ডেসো নামেও পরিচিত৷ ২০১২ সালের শেষ থেকে সিরিয়ায় আছেন কুসপার্ট৷ তার লক্ষ্য হলো জার্মানির সালাফিস্টদের জিহাদি হওয়ার পথে নিয়ে যাওয়া৷ চলতি মাসের প্রথম দিকে শিরশ্ছেদের নতুন ভিডিওতে দেখা গেছে তাকে৷ জার্মান সরকার জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছের কথা জানিয়েছে৷
ছবি: twitter.com
শরিয়া পুলিশ
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভুপার্টাল শহরের রাস্তায় রাস্তায় এদের দেখা যায়৷ মুসলিম তরুণরা যাতে জুয়া না খেলে, মদ না খায় এবং গান না শোনে তার নির্দেশ দেয় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
অভিবাসী জঙ্গি
জার্মানিতে অন্তত কয়েক হাজার ইসলামপন্থি রয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকশ জনকে জঙ্গি হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ অনেকেই অভিবাসীদের সন্তান, যারা জার্মানিতে এসে একই সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে একতাবদ্ধ হতে গিয়ে এমন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ আর কিছু আছে যারা ধর্মান্তরিত হয়ে এ পথে এগিয়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাইন ইলেভেন হামলা
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে যে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছিল, তার একটা অংশের পরিকল্পনা হয়েছিল জার্মানির হামবুর্গে৷ নাইন ইলেভেন হামলার সঙ্গে জড়িত চার পাইলটের তিনজন সহ আরও ছয় ব্যক্তি হামবুর্গের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন৷ ছবিতে উপরে মাঝখানে যিনি আছেন তিনি আত্মঘাতী বিমান চালক মো. আত্তা৷ নীচে বামদিকে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি মুনীর এল-মোতাস্সাদেক, যাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/lno
সুটকেস বোমা
২০০৬ সালে লেবাননের শিক্ষার্থী জিহাদ হামাদ এবং ইউসুফ আল হাজদিব কোলন শহর থেকে হাম ও কোবলেনৎস শহরে যাওয়ার দুটি ট্রেনে সুটকেস বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছিল৷ তবে সেটা ব্যর্থ হয়েছিল৷ হামাদকে এখন বৈরুতে ১২ বছর জেল খাটতে হচ্ছে৷ আর আল হাজদিব জার্মানিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে৷
ছবি: AP
সারল্যান্ড সেল
২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে নর্থ রাইন ভেস্টফালিয়া রাজ্য থেকে তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়৷ তারা আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে জার্মান ও মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছিল৷ এদের ১২ বছর ধরে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷
২০১১ সালের মার্চে আরিদ উকা নামে এক জঙ্গি ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে গুলি চালিয়ে দুই মার্কিন সেনাকে হত্যা করে এবং হামলায় আরো দুই জন গুরুতর আহত হয়৷ উকার জন্ম কসোভোতে, সে বেড়ে উঠেছে জার্মানিতে৷ ফেসবুকে সে নিজেকে একজন ‘জিহাদিস্ট’ বলে উল্লেখ করেছে৷
ছবি: picture alliance / dpa
ড্যুসেলডর্ফের আল কায়েদা সেল
হালিল এ (মাঝে) কে আদালতে হাজির করা হয়েছিল ২০১১ সালের ডিসেম্বরে৷ অভিযোগ ড্যুসেলডর্ফের সন্ত্রাসী সেলের সঙ্গে যুক্ত তিনি৷ এই সেলের এক সদস্যের দাবি তিনি কোনো এক সময় আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের দেহরক্ষী ছিলেন৷ এই সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কটি জার্মানির বেশ কয়েক জায়গায় বড় আকারের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিল৷ তবে ঐ সেলের চার সদস্যই এখন কারাগারে বন্দি৷
ছবি: dapd
সালাফিস্ট
জার্মানিতে সালাফিস্টদের সংখ্যা বাড়ছে৷ বর্তমানে এদের সংখ্যা অন্তত ৭,০০০ বলে ধারণা করা হয়৷ ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে তারা ইসলাম প্রচারের অংশ হিসেবে জার্মান ভাষায় অনুদিত কোরআন শরীফ বিনামূল্যে বিতরণ করে আসছে৷ তাদের লক্ষ্য আড়াই কোটি কোরআন বিতরণ৷ তবে সালাফিস্টদের মধ্যে আগ্রাসী মনোভাব কম৷ প্রায় ৫০০ সালাফিস্ট সিরিয়া এবং ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ঘুরে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Britta Pedersen
বন শহরে হামলা
২০১২ সালের ডিসেম্বরে বন এর কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনে একটি নীল রং এর ব্যাগে বোমা পাওয়া গিয়েছিল৷ এই হামলার পেছনে মার্কো জি এর হাত ছিল বলে জানা গেছে৷ ওলডেনব্যুর্গ এ বেড়ে ওঠা মার্কো ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আইএস
২০১৩ সালের জুলাইতে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে সিরিয়া গিয়েছিলেন ক্রেসনিক বি৷ জার্মানিতে ফেরার সময় বিমানবন্দরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ দোষ প্রমাণিত হলে তার অন্তত চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷