মার্চ মাসে সিঙ্গাপুরের প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে ‘ইসলামিক স্টেট ইন বাংলাদেশ' গড়ে তোলে মিজানুর রহমান৷ তার ‘স্বপ্ন' ছিল আইএস-এ যোগ দিয়ে ‘মুজাহিদ' হওয়া এবং সশস্ত্র যুদ্ধে ‘অবিশ্বাসীদের' ধ্বংস করা৷ কিন্তু সেটা আর হলো না!
ছবি: picture-alliance/AP Photo//Ministry of Home Affairs
বিজ্ঞাপন
সিঙ্গাপুরে সেই চার বাংলাদেশি জঙ্গি
00:50
This browser does not support the video element.
সিঙ্গাপুরের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এই প্রথমবারের মতো দণ্ডিত হলো কোনো বাংলাদেশি৷ তবে মিজানুর (৩১) একা নয়, তার সঙ্গে রুবেল মিয়া (২৬), মো. জাবেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর (৩০) এবং ইসমাইল হাওলাদার সোহেলকেও (২৯) সাজা দিয়েছে আদালত৷
শুনানিতে বলা হয়েছে, মিজানুর ও তার দল নিয়মিত বুন লে পার্ক এবং ওয়াটারফ্রন্ট পার্কে জড়ো হয়ে তার সেই ‘স্বপ্ন বাস্তবায়নের' জন্য পরিকল্পনা করতো৷ শুধু তাই নয়, দেশে ফিরে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনাও নাকি ছিল তাদের৷ আদালতে তারা বলেছে, এ সব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কয়েক হাজার মার্কিন ডলার জোগাড় ও সরবরাহ করার উদ্যাগও নেয়া হয়েছিল৷
কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে আইএস?
পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি, অধিকৃত এলাকায় কর চাপানো এবং প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার একত্র করেছে৷ তাতে তাদের আরও ২ বছর চলে যাবার কথা৷
ছবি: picture alliance/abaca
বেআইনি তেল বিক্রি
বেআইনি ভাবে পেট্রোলিয়াম বিক্রি আইএস-এর আয়ের প্রধান উৎস৷ সিরিয়া ও ইরাকে বেশ কিছু বড় তৈলকূপ আপাতত তাদের দখলে৷ মূলত তুরস্কের মধ্য দিয়েই তারা চোরাচালানের কাজ চালিয়ে থাকে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, কালোবাজারে তেল বিক্রি করে আইএস-এর মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলার আয় হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ব্যাংক ডাকাতি
সিরিয়া ও ইরাকে কোনো এলাকা দখলের পর আইএস সবার আগে ব্যাংকগুলি কবজা করে ফেলে৷ মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এভাবে তারা ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে৷ শুধু মোসুল শহর দখল করেই তারা নাকি ৬২ কোটি ডলার লুট করেছিল৷ বছরে প্রায় ৫০,০০০ জিহাদি কর্মীর বেতন দিতে এই অর্থ যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
কর আদায় ও চাঁদাবাজি
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ৫ থেকে ১৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়৷ জার্মান সরকারের সূত্র অনুযায়ী, আইএস অ-মুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া করও আদায় করে৷ তাছাড়া চাঁদাবাজিও তাদের আয়ের আরেকটি উৎস৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি
‘জিহাদিরা’ আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করতে অভ্যস্ত৷ তবে বেশি দামি অ্যান্টিক সম্পদ সযত্নে সরিয়ে ফেলে কালোবাজারে বিক্রি করে তারা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে পিছপা হয় না এই গোষ্ঠী৷ তবে বিক্রিমূল্যের সঠিক অঙ্ক জানা নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মুক্তিপণ ও প্রচারণা
মানুষজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আইএস-এর দু-মুখী চাল৷ একদিকে এটা আয়ের একটা উৎস, অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণার কাজও হয়ে যায়৷ কিছু ‘মূল্যবান’ জিম্মির শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য পায় আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সহানুভূতি দেখাতে চাঁদা
আইএস-এর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তহবিলে আর্থিক অবদান রাখে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্র অনুযায়ী সৌদি আরবে ২০১০ সাল থেকে ৮৬০ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের কাজে আর্থিক সাহায্য দেবার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ১০০ জনের শাস্তি হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/J. Greve
6 ছবি1 | 6
জানা গেছে, বাংলাদেশে সশস্ত্র জঙ্গিবাদ চালাতে অস্ত্র কেনার টাকা জোগানোর দায়েই এই চার বাংলাদেশিকে দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে সিঙ্গাপুর৷ আদালতে জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকারও করেছে মিজানুর৷
গত এপ্রিলে মোট আটজন বাংলাদেশিকে সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে আটক করার পর ছয় জনকে জঙ্গিবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়৷ দণ্ডপ্রাপ্ত এই চারজন ছাড়া বাকি অভিযুক্তরা হলো দৌলতুজ্জামান (৩৪) ও লিয়াকত আলী মামুন (২৯)৷ তাদের বিচারের বিষয়টি এ মুহূর্তে প্রক্রিয়াধীন আছে৷