বাংলাদেশে জঙ্গি অর্থায়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার৷ এ কারণেই বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক লি.-এ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল৷
বিজ্ঞাপন
মূলত ব্যাংকটির আয়-ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি৷ বৃহস্পতিবার ‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও প্রতিকার' কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, ‘‘ইতিমধ্যেই ইসলামী ব্যাংক তাদের লভ্যাংশ ব্যয়ের একটি প্রতিবেদন দিয়েছে৷ সেই প্রতিবেদনে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে কিনা – তা যাচাই-বাছাই করতে গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গিবাদের মূল উত্স হলো অর্থ৷ এই অর্থের উত্স খুঁজে বের করতে পারলে জঙ্গিবাদ দমন অনেক সহজ হবে৷''
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন,‘‘আরো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত কিনা – তাও তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা৷'' তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ ধরণের অভিযোগ আছে৷''
জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ ওঠায় গত কয়েকবছর ধরেই চাপে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক৷ অভিযোগের কারণে এইচএসবিসি যুক্তরাজ্য, সিটি ব্যাংক এনএ, ব্যাংক অফ আমেরিকা ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করে দেয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটির এক প্রতিবেদনেও ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগ করা হয়৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ‘‘ইসলামী ব্যাংকে এমন কিছু অ্যাকাউন্ট হোল্ডার পাওয়া গিয়েছিল, যাদের নাম ছিল জাতিসংঘের সন্দেহের তালিকায়৷ এ সব অ্যাকাউন্টের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ‘লুকিয়েছিল' ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ৷
জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগের পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ‘অনিয়ম-দুর্নীতির' অভিযোগ থাকায় ২০১০ সাল থেকেই ঐ ব্যাংকে একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ এছাড়া অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাতও তাঁর গবেষণায় বলেছেন, ‘‘ইসলামী ব্যাংক জামায়াত নিয়ন্ত্রিত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান৷ এই ব্যাংক নানা ধরণের অদৃশ্য খাতে অর্থ খরচ করে৷ আর মধ্যে জঙ্গি অর্থায়ন অসম্ভব কিছু না৷''
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, ‘‘এরই মধ্যে সন্দেহের তালিকায় থাকা কয়েকটি আরো ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে৷ আর তাদের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেৰণের জন্যও বলা হয়েছে৷''
তিনি জানান, ‘‘বাংলাদেশের কিছু এনজিও-র কাজেও নজর রাখা হচ্ছে৷ বিশেষ করে কক্সবাজার, উপকূলীয় এলাকা এবং পার্বত্য এলাকায় কর্মরত কিছু এনজিও-র বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নসহ নানা ধরণের অভিযোগ আছে৷''
২০০৯ সালে ‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও প্রতিকার' কমিটি নামের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে সরকার৷ ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণজাগরণ মঞ্চ গঠন হওয়ার পর ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি প্রবল হয়৷ এরপর চলতি বছরেই একটি জাতীয় অনুষ্ঠানে ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে নেয়া তহবিল ফেরত দেয়া হয় ব্যাপক সমালোচনার মুখে৷ এই ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর কতিপয় নেতার হাতে৷