র্যাব ও পুলিশ নিয়মিত সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আটক করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকা এসব ‘জঙ্গি' ধরে দাবি করা হয় যে তারা গোপনে সংগঠিত হচ্ছিল, ষড়যন্ত্র করছিল নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের।
বিজ্ঞাপন
জঙ্গি সম্পর্কিত কোনো ‘অঘটন' ঘটলে তার দায়দায়িত্ব কেউ নিতে নারাজছবি: bdnews24.com
অবৈধ অস্ত্র, বিস্ফোরক ও জিহাদী বইপত্র উদ্ধার করা হয় তাদের হেফাজত থেকে।
সাংবাদিকদের এসব তথ্য দিয়ে জঙ্গি আটকের কৃতিত্ব নেয় তারা। অনেকটা পাল্লা দিয়ে র্যাব-পুলিশ এটা করে চলেছে কয়েক বছর ধরে। সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবেও পাচ্ছেন প্রশংসা ও পুরস্কার।তবে জঙ্গি সম্পর্কিত কোনো ‘অঘটন' ঘটলে তার দায়দায়িত্ব কেউ নিতে নারাজ।সবার মধ্যে দায় এড়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। যার যা দায়িত্ব ছিল তা তারা পালন করেছে বলে দাবি করে। অনেক সময় একে অপরকে দোষারোপ করতেও দেখা যায়। রবিবার আদালত থেকেফাঁসির আসামী দুই জঙ্গিকে পুলিশের হেফাজত কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার পর এর দায় না নেয়ার ও অন্যদের দোষারোপ করার ব্যাপারটা আবার দেখা যায়।
সেদিন আদালত প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ এটাকে ‘বিচ্ছিন্ন' ঘটনা বলে দাবি করেন। কারা ও আদালত কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এমনটি ঘটেছে বলে মনে করেন পুলিশের অনেক কর্মকর্তা। তাদের বক্তব্য, নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ চাইলে পুলিশ বিভাগ অবশ্যই ব্যবস্থা করতো।
জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বাহিনীর কেউ দায়ী থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দাবি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এই ঘটনার জন্য পুলিশ, কারা কর্তৃপক্ষ ও আদালতে নিরাপত্তার দায়িত্ব যাদের ছিল কেউই দায় এড়াতে পারে না। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন গতানুগতিক বক্তব্য বিষয়টাকে হাল্কা করে দেখার প্রয়াস মাত্র।
এম আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক ডয়চে ভেলেছবি: Private
কারা কর্তৃপক্ষও এর দায় নিতে নারাজ
"আমাদের দায়িত্ব হলো কারাগারের ভিতরে৷ আদলাতে আসামিদের নেয়া এবং কারাগারে ফেরত পাঠানোর দায়িত্ব কোর্ট পুলিশ ও থানা পুলিশের৷ আমরা তাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে আসামিদের রেডি রাখি৷ তারা কীভাবে নেবেন, হ্যান্ডকাফ বা ডান্ডাবেড়ি পরাবেন কিনা তা তাদের দায়িত্ব,”জঙ্গি ছিনতাইয়ের ব্যাপারেজানতে চাইলে গতকাল ডয়েচে ভেলের কাছে এভাবেই দায় এড়িয়ে যান কাসিমপুর কারাগারের জেল সুপার তরিকুল ইসলাম। অথচ ঐ জঙ্গিদের ঢাকার আদালতে আনা হয়েছিল কাসিমপুর কারাগার থেকে।
আদালতে আসামিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আছেন প্রসিকিউশনের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জসিম উদ্দিন।
কারা কর্তৃপক্ষের উপর দোষ চাপিয়ে গতকাল তিনি ডয়েচে ভেলেকে বলেছেন যে, আসামিদের নিরাপত্তার কথা জেল কোডে বলা আছে৷ কাদের ডান্ডাবেড়ি পরানো হবে, কাদের শুধু হ্যান্ডকাফ-এটা জেলখানাই নির্ধারণ করে৷ আমরা কারাগারকে আগেই জানিয়ে দিই আসামি কী প্রকৃতির৷ আমরা এই জঙ্গিদের ব্যাপারেও জানিয়েছিলাম। ''
জনবলের অভাবে পর্যাপ্ত পুলিশ জঙ্গিদের সঙ্গে দেয়া যায়নি বলে তিনি দাবি করেন৷ দায়িত্বে অবহেলার দায় ঢাকতেই তিনি এমন স্থুল যুক্তি দিয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গির নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ চাইলে সেটা তিনি নিশ্চয়ই পেতেন।
গোয়েন্দা ব্যর্থতা কেন?
র্যাব ও পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতা বেশ শক্তিশালী। তারা আগাম অনেক তথ্য পেয়ে থাকে। মধ্য রাতে জঙ্গিদের গোপন বৈঠকের খবর পেয়ে যায়। সন্ত্রাসী ও নাশকতার পরিকল্পনা আগেভাগেই জেনে যায় আর তাই পরিকল্পনাকারীদের ধরেও ফেলতে পারে।
জঙ্গিরা গোপনে নতুন দল গঠন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বা তারা কোথায় গোপন আস্তানা করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, সেসব তথ্যও র্যাব ও পুলিশের কাছে চলে আসে। কিন্তু জঙ্গিদের ছিনতাইয়ের ব্যাপারটা অজানা থেকে যায়।
জঙ্গিদের বা জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিষয়ে এত কিছু জানতে পারলেও তারা যে পালিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে সে ষড়যন্ত্রের খবর র্যাব-পুলিশ জানতে পারে না। ফলে ৯ বছরের ব্যবধানে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো।
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির খুনিদের নিশ্চিত করা যায়নি! তাই নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করেই রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে চলছে ‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করি’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী৷
ছবি: DW
ছবিতে বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ড
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তিতে এই প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে সাগর-রুনির পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীরা৷ প্রদর্শনীটি চলবে ২৬শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷
ছবি: DW
স্থান পেয়েছে কবরের ‘এপিটাফ’
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তিতে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর দুই দরজায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির কবরের এপিটাফ-এর একটি আলোকচিত্র৷
ছবি: DW
‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’
‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করি’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীটিতে সাংবাদিক দম্পতির কর্মস্থলের পরিচয়-পত্র৷ ঢাকায় মাছরাঙা টেলিভিশনে যোগ দেয়ার আগে সাগর সরওয়ার কাজ করতেন ডয়চে ভেলেতে আর মেহেরুন রুনি কাজ করতেন বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’-এ৷
ছবি: DW
ছোটবেলার সেই দিনগুলো...
সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির পরিচয়-পত্রের পাশে রুনির ছোটবেলার আলোকচিত্র৷ মেহেরুন রুনির পারিবারিক অ্যালবামের এ সব ছবিও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে৷
ছবি: DW
‘আজও বড় ভালোবাসি তোমায়’
সাগর-রুনি ও তাঁদের একমাত্র শিশুপুত্র মেঘের একটি মর্মস্পর্শী ছবি৷ ছবিটির বামদিকে মেঘের আঁকা বাবার ছবি আর ডানে মায়ের ছবি৷ কোনো এক ‘মা দিবসে’ ছবিটি এঁকেছিল মেঘ, যার পাশে কাঁচা হাতে লেখা – ‘‘ভালোবাসি মা’’৷
ছবি: DW
চঞ্চল মেঘের প্রশ্নবিদ্ধ চোখ
প্রদর্শনী জুড়ে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে মাহির সরওয়ার মেঘের চঞ্চলতা৷ পুরো গ্যালারি জুড়ে আপন মনে খেলে চলা ছোট্ট এই শিশুটির দু’চোখেই যেন বাবা-মা হত্যার বিচারের আকুতি৷ মেঘ কি পাবে বর্বর এ হত্যাকাণ্ডের বিচার?
ছবি: DW
ছোট্ট মেঘের হাতের কাজ
ডয়চে ভেলেতে কাজের সূত্রে মেঘকে নিয়ে সাগর-রুনির বসবাস ছিল জার্মানিতে৷ সে সময়ে স্কুলের জন্য তৈরি করা মেঘের একটি ছবির অ্যালবাম৷
ছবি: DW
সত্যি কি আমরা ভুলে যায়নি?
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর প্রকাশিত বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা৷ আর তার সামনে, দেয়ালে লেখা ‘Let’s Forget Sagar-Runi’ – ‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’৷
ছবি: DW
হারিয়ে যাওয়া বোনের জন্য...
প্রদর্শনীতে মেহেরুন রুনির ছোটবেলার একটি ছবি বোর্ডে লাগাচ্ছেন ভাই নওশেদ আলম৷ চার ভাই-বোনের মধ্যে রুনি ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান৷
ছবি: DW
দোষীদের খোঁজ পাওয়া যাবে তো?
রুনির আরেক ভাই নওশের রোমান৷ তিনি জানান, ‘‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতেই এ প্রদর্শনীর আয়োজন৷ এতে পুরো ঘটনার ভয়াবহতা ফুটে না উঠলেও, জঘন্যতম এই অপরাধের প্রতি মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা সৃষ্টি করার প্রয়াস রয়েছে৷’’
ছবি: DW
কোথায় গেল সাগরের ল্যাপটপ?
প্রদর্শনীতে সাগর সরওয়ারের ব্যবহৃত ল্যাপটপের পাশে তাঁরই লেখা একটি বই৷ মাঝে প্রতীক হিসেবে রাখা হয়েছে একটি খেলনার পিস্তল৷
ছবি: DW
চোখে চশমা, মুখে সেই অনবদ্য হাসি
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তিতে আয়োজিত প্রদর্শনীতে মেহেরুন রুনি ও সাগর সরওয়ারের ব্যবহৃত চশমা৷ এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে সাংবাদিক দম্পতির বিভিন্ন আলোকচিত্র ছাড়াও দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্রও স্থান পেয়েছে৷
ছবি: DW
আজও কেমন জলজ্যান্ত!
প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রের পাশাপাশি দেখানো হচ্ছে ভিডিও ক্লিপও৷ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর নানা ঘটনার ভিডিও-চিত্র দেখানো হচ্ছে প্রজেক্টরে৷
ছবি: DW
নৃশংসতার প্রতীক
নিহত এই সাংবাদিক দম্পতির প্রতি সম্মান জানাতে এবং একই সাথে পুরো রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন৷ ২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে, অজ্ঞাত আততায়ীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন তাঁরা৷
ছবি: DW
নীরবে-নিভৃতে কাঁদে...
মেহেরুন রুনির পুরনো ছবির সামনে অশ্রুসজল মা নুরন নাহার মির্জা৷ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে আজও নীরবে-নিভৃতে চোখের জল ফেলে চলছেন এই মা৷
ছবি: DW
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই
প্রদর্শনীতে সাগর-রুনি ও মেঘের ছবির সঙ্গে ‘সেলফি’ তুলছেন এক দর্শনার্থী৷ সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান পাওয়া সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার এখন বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের দাবি৷