1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘জঙ্গি’ আটক: ধনীর জামিন আছে, গরীবের নাই

এম আবুল কালাম আজাদ
১৭ অক্টোবর ২০২২

হুমায়রা জাকির নাবিলা ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল আটক হয়, জামিনে জেল থেকে বেরিয়ে আসে ১৩ জুন। ‘ব্যাটউইম্যান’ খ্যাত নাবিলা ছিলেন নব্য জেএমবির নারী শাখার প্রধান। ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ে নাবিলা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে অর্থও যোগান দেন।

Symbolbild islamistischer Kämpfer
প্রতীকী ছবিছবি: Fotolia/Oleg Zabielin

২০১৭ সালের ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসের র‍্যালিতে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ তাকে আটক করে। এছাড়াও নারী জঙ্গিদের রিক্রট করে জঙ্গিবাদে তাদের উদ্বুদ্ধ করার মত শক্ত অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। অথচ মাত্র দুই মাস ৮ দিনের মধ্যে তাকে জামিনে দেয়া হয়।

২০১৪ সালে ২৪ সেপ্টেম্বর অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের ছেলে আসিফ আদনান ও সরকারি এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সন্তান ফজলে এলাহি তানজিলকে আটক করে ডিবি পুলিশ। তারা দুজন অনলাইনে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা জসীমুদ্দিন রাহমানিয়ার ফলোয়ার ছিল। সে সময় দুজনেই আল কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরির বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়।

২৫ সেপ্টেম্বর ডিবি এক সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, আইএসের পক্ষে যোদ্ধা সংগ্রহের জন্য লন্ডন থেকে ঢাকায় আসা বাংলাদেশি সামিউন ওরফে ইবনে হামদানের মাধ্যমে তারা তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় গিয়ে জিহাদে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। সামিউন আটক হওয়ার আগে একাধিক বৈঠক করেছেন৷ আদনান ও তানজিলের সাথেও তার যোগাযোগ হয়।

অবশ্য মাস তিনেকের মধ্যেই আদনান জামিনে বেরিয়ে যায়। শুধু তাই না, পরবর্তীতে উচ্চ আদালত তাকে সকল অভিযোগ থেকে খালাস প্রদান করে। তানজিলও জামিনে বেরিয়ে লাপাত্তা হয়।

জিহাদি রিক্রুটার সামিউনও জেল থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশের বাইরে চলে যায়। পরবর্তীতে সে ভারতে আটক হয়। তাকে কেন জামিন দেয়া হল এবং তিনি তার পাসপোর্ট কিভাবে ফেরত পেলেন সেটা নিয়ে সে সময় বেশ হইচই বাঁধে।

জামিন পাওয়ার, না পাওয়ার কারণ

শুধু প্রভাবশালী বা ধনাঢ্য পরিবারের অভিযুক্ত ব্যক্তিদের এভাবে জামিনে মুক্ত হন তা নয়, বরং জঙ্গি অভিযোগে আটক অধিকাংশ নারী-পুরুষের ক্ষেত্রেও এটা হতে পারে।

জঙ্গিবাদের অভিযোগে আটক ব্যক্তিদের নিম্ন আদালতে সাধারণত জামিন দেয়া হয় না। জামিন মূলত দেয়া হয় উচ্চ আদালতে। যেকোনো আটক ব্যক্তি উচ্চ আদালতে আপিল করলে অধিকংশ ক্ষেত্রেই তার জামিন মঞ্জুর হয়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যাই হোক না কেন।

তবে ধনী ও প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যদের দ্রুত জামিনে বেরিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে তাদের পরিবার বড় ভূমিকা রাখে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ও আদালত কে "ম্যানেজ” করে তারা সহজেই জামিনের ব্যবস্থা করেন। যেমন ঘটেছে নাবিলা ও আদনানের ক্ষেত্রে।

তবে যারা উচ্চ আদালতে যেতে পারেন না, তারা জামিন না পেয়ে বছরের পর বছর জেলে বন্দি থাকেন। তৃষা মনি ও মাহমুদা খাতুনের বেলায় এটা ঘটেছে।

নাটোর ও কুষ্টিয়া জেলার দুটি জঙ্গিমামলায় মাহমুদাকে আটক করা হয় ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি। অন্যদিকে তৃষা ২০১৬ সালের ২৪শে ডিসেম্বর ঢাকার আশকোনায় এক জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় আত্মসমর্পণ করে। নিম্ন আদালতে বার বার আবেদন করলেও তাদের জামিন নাকচ করে দেয় বিচারক। দরিদ্র পরিবারের পক্ষে উচ্চ আদালতে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

এভাবে জামিনের ক্ষেত্রে এক ধরনের অসমতা তৈরি হয়েছে। ফলে, একদিকে মারাত্মক অপরাধের অভিযোগে আটক ব্যক্তি ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে ছোটখাট অপরাধে অভিযুক্তরা জামিন পাচ্ছে না।

জঙ্গি মামলায় অর্ধেক জামিন পায়

জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিয়মিত নারী ও পুরুষদের আটক করা হয়। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে পুলিশ জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টার তথ্যপ্রমাণ যেমন জিহাদি বই, ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস, অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে থাকে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক কর্মকাণ্ড করা হয় তাই পুলিশ তাদের ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টও সংরক্ষণ করে এবং সকল নথিপত্র আদালতে জমা দেয়। এসব নথিপত্র, তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষীদের সাক্ষীর ভিত্তিতে বিচারক সে সকল ব্যক্তি জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত কি না তার বিচার করে। তবে আটক এসব ব্যক্তিদের বড় অংশ জামিনে বেরিয়ে যায়।

পুলিশের বিভিন্ন পরিসংখান অনুযায়ী, জঙ্গিবাদে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৯৯৬ সাল থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার জনকে আটক করা হয়েছে। এদের অধিকংশই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজিবি) এবং নব্য জেএমবি আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (পরবর্তীতে আনসার আল ইসলাম) সাথে জড়িত।

তবে এদের অর্ধেকেরও বেশি জামিন পায়।

সব চেয়ে বেশি সংখ্যক প্রায় ১৫০০ জনকে জেএমবির নেতাকর্মী হিসাবে আটক করা হয়, যার মধ্যে প্রায় ৭০০ জন জামিন পায়।

সব চেয়ে বেশি জামিন পায় নব্য জেএমবির সাথে জড়িতরা। আটক ১০০০ ব্যক্তির মধ্যে ৯০০ জন জামিন লাভ করে।

অন্যদিকে পুরাতন জঙ্গি সংগঠন হুজিবির প্রায় ২৩০ জনকে আটক করা হয়, যার মধ্যে জামিনে বেরিয়ে যায় ২০০ জন।

এবিটি বা আনসার আল ইসলামের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয় প্রায় ৪০০ ব্যক্তিকে। এদের প্রায় অর্ধেক জামিন পায়।

জামিন কোন আটক ব্যক্তির আইনগত অধিকার। তবে জঙ্গিবাদের অভিযোগে আটক ব্যক্তিদের জামিনের ক্ষেত্রে আইনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় আটক ব্যক্তির পারিবারিক ও আর্থিক অবস্থা। জঙ্গি মামলার জামিন ও বিচারের বেলাতেও প্রভাব সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিপত্তি বড় ব্যাপার।

জঙ্গি কর্মকাণ্ড গুরুতর অপরাধ বলে নিম্ন আদালতে "জঙ্গিরা” জামিন পায় না। অথচ সেসব জঙ্গিরাই উচ্চ আদালতে সহজেই জামিন পেয়ে যায়।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ