বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে ‘আতিয়া মহল’ নামের একটি পাঁচ তলা ভবন জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে ফেলে পুলিশ৷ শনিবার সকালে সেখানে শুরু হয় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’৷

সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার পরপরই কাছের পাঠানপাড়ায় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পাওয়া যায়৷ বিস্ফোরণের শব্দ শুনে অভিযানস্থল থেকে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা সেখানে ছুটে যান৷ এরপর ঘটে দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি৷ জোড়া বিস্ফোরণে দুই পুলিশসহ ছয়জন নিহত হয়৷ র‌্যাবের গোয়েন্দাপ্রধানসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন৷

সবুজ রঙের দেয়াল ঘেরা আতিয়া মহলের দুটি বাড়ি৷ এসব বাড়িতেই জঙ্গি৷ তাদের হাতে জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযানে ব্যস্ত সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা৷

বাড়ির ভেতরে থাকা জঙ্গিদের কাছে ‘স্মল আর্মস’, বিস্ফোরক ও আইইডি আছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর৷ ভবনের বিভিন্ন স্থানে তারা আইইডি পেতে রাখায় পুরো বাড়ি বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে৷ এ কারণে অভিযানে সময় লাগছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী৷

জিম্মি উদ্ধারের আগে জঙ্গি আস্তানা ঘিরে সতর্ক অবস্থানে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা৷

শনিবার, অর্থাৎক ২৫শে মার্চ সকালে অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই বাড়িতে আটকেপড়া মানুষদের মধ্যে ৭৮ জনকে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা উদ্ধার করে আনেন৷ জিম্মিদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে সেনা কর্মকর্তারা বলছেন, তাতে তারা পুরোপুরি সফল হয়েছেন৷

জঙ্গি আস্তানা থেকে এক নারীকে উদ্ধার করে পাশের বাড়ির ছাদ হয়ে বের করে আনছেন সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা৷

বৃষ্টির মধ্যেই জঙ্গি আস্তানা থেকে জিম্মিদের উদ্ধার করে আনলেন সেনা কমান্ডোরা৷

বাড়ির পেছনের অংশে তৎপর সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা, চারপাশ ঘিরে রেখেছেন তারা৷

শিশু কোলে এক নারীকে জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করে আনছেন সেনা কমান্ডোরা৷

জঙ্গি আস্তানায় আটকে পড়েছিল এই শিশুটি৷ তাকে কোলে করে বের করে আনেন এক সেনা কমান্ডো৷ এই ছবিটি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল৷

জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা ব্যক্তিদের প্রথমে পাশের একটি বাড়িতে রাখা হয়, বিকালে তারা বেরিয়ে আসেন ওই এলাকা থেকে৷ তাদের চোখে মুখে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগের চিহ্ন৷

সোমবার সকাল থেকে থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণ চলছিল৷ অভিযানের চতুর্থ দিন শেষে পাঁচ তলা ওই আতিয়া মহলে চারজনের লাশ পাওয়ার কথা জানিয়েছে সেনাবাহিনী। বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ঢুকে পড়ে সাঁজোয়া যান৷ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের ওয়েবসাইটে অভিযানের পাঁচটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে৷

প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন৷

পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম৷

কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি ছ'জন হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বলেছেন, বাকি কয়েকজনকে হয়তো বাঁচানো যায়নি৷ এই জঙ্গি হামলায় জড়িত একজন ধরা পড়েছে বলেও শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন তিনি৷

কমান্ডো অভিযানে মুক্ত গুলশানের ক্যাফে থেকে উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিদের ১২ ঘণ্টার ‘দুঃস্বপ্ন’ কাটছে না৷ তাঁদের চোখে মুখে ক্লান্তি ও ভীতির ছাপ৷ তারা বলছিলেন, কয়েকজনের মৃতদেহ দেখেছেন, অনেক জায়গায় রক্তের ছাপ৷

তাঁরা বলছেন, জিম্মিকারীরা বাংলাদেশি মুসলমানদের সুরা পড়তে বলে৷ সুরা পড়তে পারার পর তাঁদেরকে রাতে খেতেও দেওয়া হয়৷ যাঁরা হিজাব পরা ছিল, তাঁদের বাড়তি খাতির করা হয়৷

তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে৷ এই জঙ্গি দলের মুখপত্র আমাক নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে এ সব খবরে দাবি করা হয় যে, ‘তাদের’ এই হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪০ জন৷

সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে রাতভর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র‍্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল গুলশানে অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়৷ ৮ টা ১৫ মিনিটে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়৷

৮ টা ৫৫ মিনিটে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা৷ গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে৷ ৯ টা ১৫ মিনিটে ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়৷