২০০৩ সালের ১৪ আগস্ট জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার উত্তর মহেশপুর গ্রামে রাতে জঙ্গি-পুলিশ সংঘর্ষ হয়৷
বিজ্ঞাপন
পুলিশ প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েকজন জঙ্গিকে সে রাতে আটকও করেছিল৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত জঙ্গিরা পুলিশের অস্ত্র ও তাদের সঙ্গীদের ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল৷ এ ঘটনার মামলার বিচার এখনও হয়নি৷ এই ঘটনায় জেএমবির ১৪ শীর্ষ নেতা এখনও পলাতক৷ বিশ বছর আগের এই ঘটনার রেফারেন্স টানার কারণ সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশ সদস্যদের ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার খবর৷ বিশ বছর আগে জঙ্গিদের সম্পর্কে ধারণা এবং পুলিশি সামর্থ্য অনেক কম ও দুর্বল ছিল৷ রিপোর্টার হিসেবে ঘটনাটি তখন আমি নিজে কাভার করেছিলাম, দেখেছিলাম- জঙ্গিদের বিস্তার, সামর্থ্য সম্পর্কে সে সময়ে পুলিশের তেমন কোনো ধারণাই ছিল না৷ কিন্তু এখন জঙ্গি দমনে আইনশৃংখলা বাহিনির নানা বিশেষায়িত উইং হয়েছে, তাদের সক্ষমতাও বেড়েছে অনেক গুণ৷ তা সত্ত্বেও দিনেদুপুরে যেভাবে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল, তা সাধারণ জনমনে উদ্বেগ ও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন ও বিশেষজ্ঞদের মতামতধর্মী লেখাগুলোতে মূলত নিরাপত্তার দুর্বলতা এবং কর্তব্যরত পুলিশের গাফিলতিকে দায়ী করা হয়েছে৷ অনেকে প্রসঙ্গক্রমে পুলিশের হেফাজত থেকে আসামি ছিনতাই ও পালিয়ে যাওয়ার পৌনঃপুনিক ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে রেফারেন্স হিসেবে টেনেছেন৷ কিন্তু সাধারণ আসামী ছিনতাই বা পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা আর জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনাকে এক পাল্লায় মাপা কি ঠিক হবে?
জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর বদলে যাওয়া আদালতপাড়া
২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার পর আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ আদালতপাড়ার হঠাৎ বদলে যাওয়ার চিত্র দেখুন ছবিঘরে....
ছবি: Mortuza Rashed/DW
৯ বছর পর আবার
২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার ৯ বছর পর গত ২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম)-এর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ও মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামিরকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগীরা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
প্রধান ফটকে জিজ্ঞাসাবাদ
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের প্রধান ফটকের সামনে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে আসা এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ৷ এছাড়া কারো গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে আদালতপাড়ায় আসার কারণসহ বিস্তারিত জানতে চাওয়া হচ্ছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পাহারায় পুলিশ
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং মহানগর দায়রা জজ আদালতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কিছু দূর পরপর পুলিশের ৩-৪ জনের একটি দল পাহারা দিচ্ছে৷ কবে থেকে এখানে দায়িত্ব পালন করছেন জানতে চাইলে তারা জানান, ২০ তারিখের পর থেকে নিয়মিত তারা এখানে দায়িত্ব পালন করছেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
রেড অ্যালার্ট ও পুরস্কার ঘোষণা
প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পর বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশজুড়ে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে৷ তাদের ধরিয়ে দিলে পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান৷ তিনি বলেন, দুই জঙ্গিকে ধরতে ১০ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
আড্ডায় আলোচনার বিষয়বস্তু জঙ্গি ছিনতাই
সিএমএম আদালতের আশেপাশে চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায় সেখানে মানুষ জঙ্গি ছিনতাই নিয়ে আলোচনা করছেন৷ ব্যবসায়ী রহমত আলী বলেন, ‘‘শুনেছি পুরো সিনেমার স্টাইলে এখান থেকে জঙ্গি নিয়ে গেছে৷ এর আগেও এখানে আসছি, তবে এত পুলিশ আগে দেখিনি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পুলিশের সংখ্যা এবং নজরদারি বৃদ্ধি
সিএমএম আদালতপ্রাঙ্গণে প্রধান ফটকে সকাল থেকেই পুলিশের কড়াকড়ি দেখা যায়৷ বুধবার সকাল ১০টা বাজতেই সেখানে অবস্থান নেন ১২-১৩ জনের দুটি নিরাপত্তা দল৷ এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও ছিল চোখে পড়ার মতো৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সব আসামির হাতে এখন হাতকড়া
আদালতে নিয়মিত আসা আইনজীবী, সাক্ষী এবং হাজতিদের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার আগে আসামিদের হাতকড়া বা দড়ির ব্যবহার খুব একটা না থাকলেও এখন প্রত্যেককে কড়া নিরাপত্তায় আদালতে আনা-নেওয়া হচ্ছে৷ এছাড়া আদালতপ্রাঙ্গণে আগে কখনো এত পুলিশ সদস্য দেখেননি বলেও জানান তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সব সাময়িক?
পুরান ঢাকার সিএমএম, সিজেএম কোর্ট এবং মহানগর দায়রা জজ আদালতে একাধিক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী, আইনজীবী এবং সাধারণ মানুষের কাছে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা পুরো বিষয়টিকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে মন্তব্য করেন৷ বর্তমানে নেয়া কড়াকড়ি ব্যবস্থাকে ‘সাময়িক’ মনে করছেন তারা৷ আগামী কিছুদিনের মধ্যেই আরেকটি বড় ঘটনা ঘটলে এই ঘটনা ধামাচাপা পড়ে পরিস্থিতি আগের রূপেই ফিরে যাবে বলে বিশ্বাস তাদের৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অস্থায়ী হাজতখানায় এখনো শৈথিল্য!
সিএমএম আদালতের পাশে অস্থায়ী হাজতখানায় বিভিন্ন মামলার আসামিদের জেলখানা থেকে এনে আদালতে হাজিরা দেওয়ানোর আগে কয়েক ঘণ্টার জন্য রাখা হয়৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া সেখানে কারো প্রবেশের অনুমতি না থাকলেও বুধবার হাজতিদের আত্মীয়-স্বজনদের সেখানে প্রবেশ করতে দেখা গেছে৷ তবে সাংবাদিকের উপস্থিতি দেখে সেখানে বহিরাগতদের প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
শুধু গরিবদের জন্য?
২০১৪ সাল থেকে রাজনৈতিক মামলায় সাত মাস জেল খেটেছেন ব্যবসায়ী মো. শামীম মোল্লা৷ তিনি মনে করেন, ‘‘এইসব আইন-কানুন আর কড়াকড়ি শুধু যাদের টাকা নাই, তাদের জন্য৷ এই যে পাশেই হাজতখানা, এখানে পাঁচশ-হাজার টাকার বিনিময়ে আত্মীয়-স্বজনেরা হাজতিদের খাবারদাবার থেকে শুরু করে ইয়াবা-ডাইলও হাতে দিতে পারে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অনেক অনিয়ম
ঢাকার নিম্ন আদালতের আইনজীবী মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘‘দুর্ধর্ষ এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের এভাবে ডান্ডাবেড়ি ছাড়া শুধু হাতকড়া পরিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে একই পথে আদালতে নেওয়া হবে কেন? জঙ্গিদের নিরাপত্তায় পুলিশের সংখ্যাও ছিল অপর্যাপ্ত৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বঙ্গবন্ধু চত্বর দোকানপাটমুক্ত
পুরান ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সংলগ্ন জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু চত্বরের চায়ের ১০-১২টি দোকান, ফলমূল বিক্রির ভ্রাম্যমাণ দোকান, ঝালমুড়ি-বাদাম বিক্রির দোকানসহ প্রায় ৩০টি দোকান তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়৷ এছাড়া আরো দুইটি আদালত প্রাঙ্গণও জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর থেকে ভ্রাম্যমাণ দোকানমুক্ত করা হয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পুলিশ বরখাস্ত
জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷ সাময়িক বরখাস্তরা হলেন- সিএমএম হাজতখানার কোর্ট ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান, হাজতখানার ইনচার্জ এসআই নাহিদুর রহমান, আসামিদের আদালতে নেওয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এটিএসআই মহিউদ্দিন, কনস্টেবল শরিফুল হাসান ও কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে উচ্চ আদালতেও
ঢাকার নিম্ন আদালতে নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চ আদালত তথা সুপ্রিম কোর্টেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন৷ পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপত্তা গেট বা আর্চওয়ে দিয়ে সবাইকে তল্লাশি করার পর বিভিন্ন ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
শুধু সাইনবোর্ডেই সীমাবদ্ধ
সিএমএম আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় দেখা যায় জিআর শাখার প্রধান ফটকে ‘প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত’ সাইনবোর্ড ঝুলানো৷ তবে সেখানে সাধারণ মানুষের অবাধ যাতায়াত দেখা যায়৷ এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোনো নিরাপত্তারক্ষীকে ফটকে দেখা যায়নি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
আদালতে স্বজনদের সাক্ষাত
ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সংলগ্ন মহানগর দায়রা জজ আদালতের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পুলিশ প্রহরায় হাজিরা দিতে আসা হাতকড়া পরা আসামিদের সাথে তাদের পরিবারের সদস্যরা কথা বলছেন, খাবারদাবার, পরনের কাপড়চোপড় দিচ্ছেন এবং সন্তানকেও কোলে দিচ্ছেন৷ তবে এসব কাজ সম্পূর্ণ অবৈধ বলে জানান নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
16 ছবি1 | 16
দেখা যাক, বাংলাদেশে আইনশৃংখলা বাহিনির হেফাজতে থাকা আসামি ছিনতাই বা পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা কতটা পৌনঃপুনিকভাবে ঘটে৷ গুগল সার্চ ইঞ্জিনে ‘আসামি ছিনতাই’ ও ‘আসামি পলায়ন’ এই দুইটি কীওয়ার্ডের মাধ্যমে খোঁজ করে চলতি বছরের ১১ মাসে ২৯টি ঘটনায় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর পাওয়া গেছে৷ এর মধ্যে শুধু জুলাই মাসে কোনো ধরনের আসামি ছিনতাই বা পালিয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়নি৷ মার্চ, অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি- চারটি করে ঘটনা ঘটেছে৷ সবচেয়ে কম ঘটেছে জুন ও আগস্ট মাসে৷ ২৯টি ঘটনায় মোট ৩২ জন আসামি পালিয়ে গিয়েছে৷ এই হিসাব থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, গড়ে বাংলাদেশে প্রতিমাসে আসামি পালিয়ে যাওয়া বা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার একাধিক খবর প্রকাশিত হয়েছে৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশের ওপর আক্রমণ, কখনও কখনও পুলিশকে গুলিবিদ্ধ করে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে৷ ফলে দেখা যাচ্ছে, আসামি আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিরাট একটা গলদ রয়ে গেছে৷ সেদিক থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং পুলিশের গাফিলতি যথেষ্ট যুক্তিগ্রাহ্য কারণ বলে বিবেচিত হয়৷ কারণ বারবার রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের মত বড় শহরের পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে একই ধরনের ঘটনা ঘটলেও পুলিশের কাছে বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি বলে প্রতীয়মান হতেই পারে৷
কিন্তু ২০ নভেম্বর ঢাকার আদালত পাড়া থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের ঘটনা আলাদা গুরুত্ব বহন করে৷ তার আগের রাতে চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে দুই আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল৷ কিন্তু চট্টগ্রামের ঘটনাটি ততটা প্রচার পায়নি বা এটি নিয়ে ততটা আলোড়ন তৈরি হয়নি৷ চট্টগ্রামের ঘটনায় শহরজুড়ে রেড এলার্ট জারি না হলেও ঢাকার ঘটনায় সরকারের তড়িৎ কিছু পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবে এই বার্তা দেয় যে, ঘটনাটি কতটা গুরুত্ববহ৷ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে দুই জঙ্গির সন্ধান দিতে ২০ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল৷ ঢাকার আদালত পাড়ার ঘটনাটি আলাদা গুরুত্ব বহন করার কারণ হলো ছিনিয়ে নেয়া আসামিরা হলো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি৷ দুজন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সদস্য৷ তাঁরা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি৷ জঙ্গি সংগঠনটির পরিকল্পনায় ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একাধিক লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও সমকামী অধিকারকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল৷
আলোচিত কয়েকটি জঙ্গি হামলা
১৯৯৯ সালে উদীচী দিয়ে শুরু৷ এরপর বেশ কয়েকটি আলোচিত হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা৷ ছবিঘরে থাকছে সেসব কথা৷
ছবি: bdnews24.com
উদীচীর সমাবেশে হামলা
১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ যশোরে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর সমাবেশে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত এবং ১০৬ জন আহত হয়েছিলেন৷ পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার সূচনা হয় ১৯৯৯ সালে৷ হরকাতুল জিহাদ (হুজি) উদীচীর সমাবেশে হামলা করেছিল বলে পুলিশের ঐ ইউনিট জানিয়েছে৷ উপরের ছবিটি প্রতীকী৷
ছবি: bdnews24.com
বাংলা বর্ষবরণে হামলা
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের সকালে ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছিলেন৷ এই ঘটনায় শতাধিক আহতের মধ্যে অনেকেই পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন৷ এই হামলার মধ্য দিয়ে হুজি তাদের শক্ত অবস্থানের জানান দিয়েছিল৷ হামলার দায়ে ২০১৪ সালে হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24.com
ব্রিটিশ হাইকমিশনারের উপর গ্রেনেড হামলা
২০০৪ সালের ২৫ মে সিলেটে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা হয়েছিল৷ এতে পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হয়েছিলেন৷ আনোয়ার চৌধুরীসহ অর্ধশত মানুষ আহত হন৷ হামলার দায়ে ২০০৮ সালে হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ (ছবি) তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ২০১৭ সালের এপ্রিলে মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
ছবি: A.M. Ahad/AP/picture alliance
আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন প্রাণ হারান৷ ২০১৮ সালে মামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়৷ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের জঙ্গিরা হামলায় অংশ নেয়৷ তবে ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল তখনকার জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ‘ইন্ধন’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Munir
৬৩ জেলায় বোমা হামলা
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়েছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)৷ এই হামলায় দুজন নিহত ও অন্তত ১০৪ জন আহত হয়েছিলেন৷
ছবি: DW/H. U.R.Swapan
ব্লগার হত্যা
জঙ্গি হামলায় বেশ কয়েকজন ব্লগার ও মুক্তমনা নিহত হয়েছেন৷ ২০১৩ সালে আহমেদ রাজিব হায়দার হত্যা দিয়ে শুরু৷ এরপর ব্লগার অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাশ, নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায়সহ আরও কয়েকজন হত্যার শিকার হন৷ ২০২১ সালে অভিজিৎ হত্যার মামলার রায়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়৷ তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য৷
ছবি: Robert Richter
হোসেনি দালানে হামলা
২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর আশুরা উপলক্ষ্যে হোসেনি দালানের শোক মিছিলে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা৷ এ ঘটনায় একজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন৷ চলতি বছরের মার্চে দেয়া রায়ে জেএমবির দুই সদস্যকে দশ ও সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
শিয়া মসজিদে হামলা
২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর বগুড়ার এক শিয়া মসজিদের ভেতরে ঢুকে প্রার্থনারতদের উপর গুলি চালায় কমপক্ষে পাঁচ দুর্বৃত্ত৷ এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং অপর তিন ব্যক্তি আহত হন৷ হামলার প্রায় ১৪ মাস পর আদালতে দাখিল করা মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল জেএমবি এবং ইসলামি ছাত্রশিবির হামলায় অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হোলি আর্টিজানে হামলা
২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ ২২ জন নিহত হন৷ পাঁচজন জঙ্গি অস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে বেকারিতে ঢোকার পর সবাইকে জিম্মি করেন৷ এরপর পুলিশ ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশের দুই কর্মকর্তা জঙ্গিদের গুলি ও বোমার আঘাতে মারা যান৷ কয়েকজনকে ছেড়ে দিলেও জঙ্গিরা অন্যদের নৃশংসভাবে হত্যা করে৷ জঙ্গিরা সবাই সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত হয়৷ ইসলামিক স্টেট এই হামলার দায় স্বীকার করেছিল৷
ছবি: bdnews24.com
জাফর ইকবালের উপর হামলা
২০১৮ সালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক তরুণ ছুরি নিয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালায়৷ এই ঘটনায় এ বছরের এপ্রিলে ফয়জুল হাসান নামের একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ফয়জুল কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য কিনা তা প্রমাণিত হয়নি৷ তবে তিনি বিভিন্ন ইন্টারনেট সাইট থেকে জিহাদি প্রবন্ধ ও বই ডাউনলোড করে পড়ে, উগ্রবাদী বক্তাদের বক্তব্য শুনে সন্ত্রাসী কাজে উদ্বুদ্ধ হন৷
ছবি: bdnews24.com
10 ছবি1 | 10
স্বাভাবিকভাবে এটা ধরে নেয়া যায় যে, এ ধরনের জঙ্গিদের পুলিশি হেফাজতে রাখার সময় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে৷ অতীতে আমরা সে ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখেছি৷ তাহলে ২০ নভেম্বর কেন নেয়া হলো না? যেখানে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল আনসার আল ইসলামের মূল নেতা মেজর (বরখাস্ত) জিয়া পলাতক এবং তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরষ্কার ঘোষণা করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি৷ এমনকি পুলিশ হেফাজত থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার অতীত রেকর্ডও যেখানে আছে সেখানে এ ধরনের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা শুধু কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের গাফিলতি বললে বিষয়টির সুদূরপ্রসারী প্রভাবকে একেবারে অলক্ষ্যেই পাশ কাটিয়ে যাওয়া হবে৷ ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশাল ও ভালুকার মাঝামাঝি সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশের প্রিজন ভ্যানে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে এবং এক পুলিশকে হত্যা করে জেএমবির দণ্ডপ্রাপ্ত তিন নেতাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল জঙ্গিরা৷ তাদেরই একজন জঙ্গি নেতা সালাউদ্দিন সালেহীন এখনও পুলিশের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে৷
এটা ঠিক যে, ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনার পর থেকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের মধ্য দিয়ে জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের আইনশৃংখলা বাহিনী ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল৷ এ সাফল্যের পর সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সরকার এবং পুলিশের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা সফলভাবে জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক রোলে মডেলে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করে আসছেন৷ ২০১৭ সালের ২৮ জুন সংসদে এক প্রশ্ন-উত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘জিরো টলারেন্স' নীতির আওতায় কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে জঙ্গি দমনে সারা বিশ্বে ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে৷ ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট এর তৎকালীন প্রধান মনিরুল ইসলাম ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘‘অনেকেই শুধুমাত্র ধারণা করে আইএস আছে, আল-কায়েদা আছে, জঙ্গি আছে৷ বড় ধরনের হামলা হতে পারে৷ কিন্তু এরকম ভয়ের কোন কারণ নেই৷ বাংলাদেশ জঙ্গি কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে৷ এ সবের কোনো অস্তিত্বই বাংলাদেশে নেই৷’’ মূলত জঙ্গি দমনের লক্ষ্যেই কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটটি গঠন করা হয়েছিল৷ সে ইউনিটের প্রধান যখন বলেন দেশে জঙ্গি নেই তারপর যখন আমরা পত্রপত্রিকায় খবর দেখি পাহাড়ি এলাকায় সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলোর সাথে জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, আদালত পাড়ায় জঙ্গিদের দিনে-দুপুরে ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে- তখন সে বক্তব্যকে আত্মতুষ্টি বললে কি খুব বেশি অত্যুক্তি হবে?
বিএনপি আমলে ২০০২ সালে যখন জঙ্গি বিষয়ক রিপোর্টিং শুরু করি তখনকার পুলিশ ও সরকারী কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে এই ধরনের বক্তব্য দিতে দেখেছিলাম৷ ২০০৪ সালে সিআইডি এক বিশেষ প্রতিবেদনে যখন সরকারকে অবহিত করেছিল যে, উদীচী ও রমনা বোমা হামলাসহ ১৯৯০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যতগুলো বোমা হামলা হয়েছে সবগুলো একই জঙ্গি গোষ্ঠীর কাজ, তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, দেশে জঙ্গিবাদ বলে কিছু নেই৷ এমনকি পরে বাংলা ভাই ও শায়খ আব্দুর রহমানকে তারা ‘মিডিয়ার সৃষ্টি’ বলে দাবি করেছিল৷ এখানে একটি কথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে জঙ্গি দমনে কার্যকর অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং সফলও হয়েছিল৷ কিন্তু জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর জঙ্গি দমনে আইনশৃংখলা বাহিনীর যতগুলো ইউনিট কাজ করছে তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়৷ জঙ্গি বিষয়ক রিপোর্টিং অভিজ্ঞতা থেকে একটি কথা বলতে পারি, বাংলাদেশের গোয়ন্দা সংস্থাগুলো জঙ্গি দমনে সাময়িক সাফল্য পেলেও জঙ্গিদের গোড়ার দিককার মূল নেতাদের গ্রেপ্তার, তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজন, তাদের এত বছরের আর্থিক যোগানদাতাদের সম্পর্কে খুব কম তথ্যই জানতে পেরেছে, অথবা হয়তো এসব সম্পর্কে জানতে তাদের খুব বেশি আগ্রহ নেই৷ উপরন্তু অনেক মূল নেতা বিভিন্ন সময়ে জামিনে বের হয়ে যাওয়ার পর আইনশৃংখলা বাহিনি আর তাদের কোন খোঁজ পায়নি৷ বাংলাদেশে প্রথম বড় ধরনের জঙ্গিবাদের ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৯ সালে মুসলিম মিল্লাত বাহিনীর নেতৃত্বে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায়৷ ওই সময় গ্রেপ্তার হলেও পরে ছাড়া পাওয়ার পর মিল্লাত বাহিনির প্রধান চাকরিচ্যুত মেজর মতিউর রহমানকে আর কখনও খুঁজে পায়নি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো৷ বিশ বছরের বেশি সময় পার হলেও এখনও রমনা বোমা হামলার সকল আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি বাংলাদেশে জঙ্গি দমনে গঠিত বিশেষ বাহিনীগুলো৷ বাংলাদেশে জঙ্গি বিষয়ে যারা কাজ করেন তারা মোটামুটি সবাই জানেন, বাংলাদেশে আগে পরে যতগুলো বোমা হামলা হয়েছে তার সাথে রমনা বোমা হামলার প্রথম চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামি কোনো না কোনোভাবে জড়িত৷ সম্প্রতি রমনা বোমা হামলার আসামি মুফতি শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা গেলেও এতদিন ধরে তার অর্থের যোগানদাতাদের কোনো হদিস আমরা পাইনি৷ ১৯৯৬ সালে এসি এন পালিতের নেতৃত্বে উখিয়া-টেকনাফে গ্রেপ্তার হওয়া ৪১ জন জঙ্গিরা জামিন পাওয়ার পর আর কখনই তাদের খোঁজ রাখেনি আইনশৃঙখলা বাহিনিগুলো৷ ২০০৩ সালে জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের পর থেকে পলাতক আছে উত্তরবঙ্গের ১৪ জন জঙ্গি, যাদের কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি৷ এর মধ্যে সালেহীনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও জঙ্গিরা তাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল৷ পরবর্তীতে প্রত্যেকটি জঙ্গিবাদের ঘটনায় এই ১৪ জঙ্গির সম্পৃক্ততার কথা কোনো না কোনোভাবে এসেছে৷ দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের আইনশৃংখলা বাহিনির জঙ্গি দমনে যে সক্ষমতা তা সাময়িক বা ঘটনাভিত্তিক৷ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিচার করে দেশের জঙ্গিবাদের মূল হোতাদের গ্রেপ্তারে অথবা দীর্ঘমেয়াদি নজরদারিতে তাদের সাফল্য প্রশ্নসাপেক্ষ৷ এই ধরনের একটি বড় গ্যাপ রেখে শুধু ঘটনার পর রি-অ্যাকটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে বল প্রয়োগ বা হার্ড এপ্রোচ নীতি প্রয়োগ করলে রোল মডেলের রেকর্ড যে হুমকির মুখে পড়বে সে কথা বলাই বাহুল্য৷