বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বিস্তারে ব্রিটেনের জঙ্গিদের প্রভাব আছে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং জঙ্গি বিষয়ক গবেষকরা৷ তাঁদের মতে, জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করা উচিত৷
বিজ্ঞাপন
জঙ্গি বিষয়ক গবেষক মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে একাধিক ব্রিটিশ জিহাদি এর আগে ধরা পড়েছে৷ ২০০৬ সালের পর থেকে ব্রিটেনের গোয়েন্দারা বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ জিহাদিকে এখান থেকে আটক করে নিয়ে গেছে৷ তাই তাদের যে প্রভাব এখানে আছে, তা স্পষ্ট৷''
[No title]
অন্যদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশীদ (অব.) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘লন্ডনে, বিশেষ করে পূর্ব লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগারিকদের একটি অংশ চ্যারিটি এবং এনজিও-র নামে অর্থ সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহার করে৷ যুদ্ধাপরাধের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এবং ব্রিটেনে আশ্রয়প্রাপ্ত চৌধুরী মইনুদ্দিন তাদেরই একজন৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অন্তত ৩০ জন ব্রিটিশ নাগরিক সিরিয়ায় গিয়ে আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ এখান থেকেও সরাসরি গেছে অনেকে৷'' তাই আব্দুর রশীদের কথায়, ‘‘জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের একসঙ্গে কাজ করা উচিত৷''
[No title]
শুধু তাই নয়৷ এর সঙ্গে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ দরকার৷ কারণ ‘‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকায় সবচেয়ে বেশি জঙ্গিবাদের হুমকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ৷'' এ মন্তব্যও নূর খানের৷
সহিংসতায় প্রধান হাতিয়ার ‘পেট্রোল বোমা’
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার সময় পেট্রোল বোমার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে৷ হাতে তৈরি এই বোমা ব্যবহার করে গাড়িতে আগুন দেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পেট্রোল বোমায় পুড়ছে জীবন
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ৷ নির্বাচনসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এসময়৷ হরতাল, অবরোধ চলাকালে ব্যাপক আকারে ব্যবহার হয়েছে পেট্রোল বোমা৷
ছবি: imago/imagebroker/theissen
যেভাবে তৈরি হয় এই বোমা
কাঁচের বোতল, পেট্রোল আর কিছু ভাঙা কাঁচ বা মার্বেলের টুকরা ব্যবহার করে পেট্রোল বোমা তৈরি করছে দুর্বৃত্তরা৷ এরপর সুযোগ বুঝে সেগুলো নিক্ষেপ করছে যাত্রীবাহী গাড়িতে৷ ফলে গাড়ি পুড়ছে, সঙ্গে পুড়ছে মানুষ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture alliance/abaca
রয়েছে অন্য বোমাও
তবে শুধু পেট্রোল বোমাই নয়, লাল বা কালো টেপে মোড়া ককটেলও ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে৷ ককটেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ছোট পেরেক বা লোহার টুকরা৷ এছাড়া বোমা তৈরিতে গান পাউডারও ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোমা বাণিজ্য
রাজনৈতিক অস্থিরতায় সময় হাতে তৈরি বোমার চাহিদা বেড়ে যায়৷ তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও পেশাদারি গ্রুপও বোমা তৈরি করে৷ চড়া দামে এসব বোমা বিক্রিও করা হয়৷ গত বছর পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, একেকটি হাত বোমার দাম ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত৷
ছবি: Reuters
বড় পর্যায়ে বোমা হামলা
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মঘাতী বা বড় পর্যায়ে বোমা হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তবে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷
ছবি: dpa - Bildfunk
আত্মঘাতী হামলা
১৭ আগস্টের সেই সিরিজ হামলার পর কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে৷ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেসময় ‘‘বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হন৷’’ তবে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে জঙ্গিবাদের উত্থান দমনে সক্ষম হয়৷ ২০০৭ সালে জেএমবির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
ছবি: AP
বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম
ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানান, বাংলাদেশ পুলিশের শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম রয়েছে৷ তাদের কাছে আধুনিক সরঞ্জামও রয়েছে৷ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বোমা নিষ্ক্রিয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশের এই টিম৷