গুলশান হামলার পর অবৈধ স্থাপনা, বিশেষ করে গুলশান-বারিধারার অবৈধ হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা কি সম্ভব? স্থাপনা উচ্ছেদে সুফলের সম্ভাবনাই বা কতটুকু?
বিজ্ঞাপন
এরইমধ্যে গুলশান-বারিধারার অবৈধ স্থাপনার তালিকা করা হয়েছে৷ যে কোনো দিন উচ্ছেদ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন৷
গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ১ জুলাই জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ অন্তত ২৮ জন নিহত হয়৷ অবাক করা ব্যাপার হলো, হোলি আর্টিজান রেষ্টুরেন্টটিও অবৈধভাবে গড়ে উঠেছিল৷ এমনটিই জানিয়েছেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন৷
রেস্টুরেন্টের এই প্লটটি নার্সিং হোম করার কথা বলে ১৯৭৯ সালে বরাদ্দ নেয়া হয়৷ ১৯৮২ সালে নার্সিং হোমের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়৷ কিন্তু পরে সেখানে নাসিং হোম না করে প্লটের একটি অংশে হোলি আর্টিজান বেকারি গড়ে তোলা হয়৷
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
ঢাকার গুলশানের আর্টিজান ক্যাফেতে দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার জিম্মি ঘটনার অবসান হলেও মানুষের মন থেকে আতঙ্ক যাচ্ছে না৷ এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই নিহত হয়েছে ২০ জিম্মি৷ নিহত হয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তাও৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
ঘটনার শুরু
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
দুই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু
পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি ছ'জন হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বলেছেন, বাকি কয়েকজনকে হয়তো বাঁচানো যায়নি৷ এই জঙ্গি হামলায় জড়িত একজন ধরা পড়েছে বলেও শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters
এ যেন দুঃস্বপ্ন
কমান্ডো অভিযানে মুক্ত গুলশানের ক্যাফে থেকে উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিদের ১২ ঘণ্টার ‘দুঃস্বপ্ন’ কাটছে না৷ তাঁদের চোখে মুখে ক্লান্তি ও ভীতির ছাপ৷ তারা বলছিলেন, কয়েকজনের মৃতদেহ দেখেছেন, অনেক জায়গায় রক্তের ছাপ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য
তাঁরা বলছেন, জিম্মিকারীরা বাংলাদেশি মুসলমানদের সুরা পড়তে বলে৷ সুরা পড়তে পারার পর তাঁদেরকে রাতে খেতেও দেওয়া হয়৷ যাঁরা হিজাব পরা ছিল, তাঁদের বাড়তি খাতির করা হয়৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/S. K. Das
আইএস-এর দায় স্বীকার
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে৷ এই জঙ্গি দলের মুখপত্র আমাক নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে এ সব খবরে দাবি করা হয় যে, ‘তাদের’ এই হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪০ জন৷
ছবি: picture-alliance/abaca
কমান্ডো অভিযান
সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে রাতভর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল গুলশানে অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়৷ ৮ টা ১৫ মিনিটে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ভবনের নিয়ন্ত্রণ ও আতঙ্কের অবসান
৮ টা ৫৫ মিনিটে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা৷ গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে৷ ৯ টা ১৫ মিনিটে ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
8 ছবি1 | 8
মন্ত্রণালয় রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলোয় এক হাজার ৬২৫টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছে৷ এর মধ্যে মধ্যে কূটনৈতিক পাড়া গুলশান ও বারিধারায় রয়েছে ৫৫২টি৷ এছাড়া উত্তরায় ২১৫, মিরপুরে ৮৮০, ধানমন্ডি-লালবাগে ১৭৩ এবং মতিঝিল-খিলগাঁও এলাকায় ১০৫টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে৷
সারা দেশে চিহ্নিত অবৈধ স্থাপনার মধ্যে আবাসিক প্লট ও ভবনে থাকা ১২ হাজার ৯৫৭টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে নোটিস দিয়েছে সরকার৷ নোটিসের জবাব পর্যালোচনা করে সেসব প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে বুধবার সচিবালয়ে ‘নগর এলাকার রাস্তার পাশে আবাসিক প্লট ও ভবনে রেস্তোরাঁ-বারসহ নানাবিধ বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনাজনিত সমস্যা নিরসনে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিষয়ক' কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়৷
তবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সঙ্গে জঙ্গি দমনের সম্পর্ক কতটুকু জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ তিনি সংসদ অধিবেশেনের ব্যস্ততার কথা বলে এড়িয়ে যান৷
[No title]
তবে এ বিষয়ে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়েছে৷ তিনি মনে করেন, ‘‘অবৈধ স্থাপনা স্বাভাবিক নিয়মেই উচ্ছেদ করা উচিত৷ এতদিন না করে হঠাত্ কেন তোড়জোড় শুরু হয়েছে তা আমি বুঝতে পারছিনা৷ এর সঙ্গে জঙ্গি দমনের দূরতম সম্পর্ক থাকতে পারে, তবে আমি সরাসরি কোনো সম্পর্ক দেখছিনা৷'’
তিনি বলেন, ‘‘গুলশান হামলার পর তদন্তে আমরা এখনো কোনো অগ্রগতি দেখছিনা৷ জঙ্গিবিরোধী বিশাল অভিযানে উদ্ধার হয় দা, চাপাতি৷ জঙ্গিরা ধরা পড়ছেনা৷ আমার মনে হচেছ, আসল কাজ না করে এখন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ নানা কাজ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে ফেরাতে চায় সরকার৷''
এদিকে ব়্যাব ২৬১ জন নিখোঁজ ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করেছে৷ গুলশান হামলার পর নিখোঁজ এসব তরুণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ মানুষের কাছে ‘দুশ্চিন্তা’ উঠেছে, কারণ, গুলশান হামলাকারীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল৷
প্রিয় পাঠক, এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন নীচে মন্তব্যের ঘরে...
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রসার ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে উৎসাহ, উদ্বেগ দুই-ই আছে৷ আর সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দল ও ইসলামপন্থিদের উত্থানের বিষয়টিকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ৷ ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে আজকের প্রজন্ম?
ছবি: Reuters
পিয়ান মুগ্ধ নবীর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়ান মুগ্ধ নবীর কাছে ধর্ম বিষয়টা পুরোপুরি ব্যক্তিগত হলেও রাজনীতি ব্যক্তিগত বিষয় নয়৷ তবে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে তিনি কখনোই সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
শিবরাজ চৌধুরী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী শিবরাজ চৌধুরী৷ তার মতে, ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ ধর্মের মূল বিষয় মনুষত্ব বা মানুষের মধ্যকার শুভবোধ৷ তবে ধর্মের নামে যদি কখনো মৌলবাদ কিংবা চরমপন্থা চলে আসে, সেটা কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়৷
ছবি: DW
শিহাব সরকার
ঢাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শিহাব সরকার৷ তার মতে, ধর্ম ধর্মের জায়গায় আর রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়৷ বলা বাহুল্য, ধর্মের নামে রাজনীতি তিনিও সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
আসিফ হামিদী
আসিফ হামিদীও মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন৷ তিনিও মনে করেন ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ তাই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ঘোর বিরোধী তিনি৷
ছবি: DW
মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর
ঢাকার একটি মাদ্রাসা থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেছেন মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর৷ তাঁর মতেও রাজনীতি ধর্মভিত্তিক হতে পারে না৷ তবে আল্লাহ এবং রাসুলের কিংবা ইসলামের উপর কোনোরকম আঘাত আসলে তার বিরোধীতা করা সব মুসলমানের নৈতিক দ্বায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW
সাদমান আহমেদ সুজাত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদমান আহমেদ সুজাত৷ তাঁরও ঐ এক কথা৷ ‘‘ধর্ম এবং রাজনীতি কখনো এক হতে পারে না৷’’ তিনি জানান, ‘‘ধর্ম আমরা সাধারণত জন্মগতভাবে পাই, কিন্তু রাজনীতিকে আমরা অনুসরণ করি৷’’
ছবি: DW
সাজ্জাদ হোসেন শিশির
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন শিশির৷ তাঁর মতে, রাজনীতি সবসময়ই ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়া উচিত৷ তাঁর বিশ্বাস, ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেললে তার ফল কখনো ভালো হয় না৷
ছবি: DW
দাউদুজ্জামান তারেক
ঢাকার আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাউদুজ্জামান তারেক মনে করেন, রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের কখনো মিল হতে পারে না৷ কারণ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা একই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসরণও করতে পারেন৷