জঙ্গি দমনে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই
২৩ আগস্ট ২০১৯![](https://static.dw.com/image/35997080_800.webp)
বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের(সিটিটিসি) প্রধান এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম৷
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে জঙ্গিদের সর্বশেষ অবস্থা কী?
মনিরুল ইসলাম: বাংলাদেশে হোলি আর্টিজান হামলা ছিলো আই ওপেনার৷ এরপর আমাদের অভিযান ছিলো কৌশলগত৷ একদিকে আমরা অব্যাহত জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালিয়েছি৷ অন্যদিকে জঙ্গিবিরোধী প্রচার যা সামাজিক, রাজনৈতিক এবং তৃণমূল পর্যায় থেকে হয়েছে৷ ফলে জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিদের তৎপরতা দমন সম্ভব হয়েছে৷ আমরা গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে হোলি আর্টিজানের মত আরো অনেক হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে পেরেছি৷ কিন্তু ভ্রান্ত মতাদর্শকে আমরা পুরোপুরি দমন করতে পারিনি৷ আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় পর্যায় মিলিয়ে সাইবার স্পেসে জঙ্গিদের বিচ্ছিন্ন তৎপরতা লক্ষ্য করছি৷ তারা কিছু ঘটনা ঘটানোরও চেষ্টা করছে৷ তবে হোলি আর্টিজানের সময় তাদের যে সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে উঠেছিল তা আমরা ভেঙে দিতে পেরেছি৷
জঙ্গি নেতা মেজর জিয়া তো এখনো গ্রেপ্তার হয়নি৷ সে কি কোনো থ্রেট হতে পারে?
আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তাতে সে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় নেই৷ সক্রিয় থাকলে আমাদের নেটওয়ার্কে তা জানতে পারতাম৷ তারপরও আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই৷ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে আমাদের জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালিয়ে যেতে হবে৷
জঙ্গিবাদের নতুন কোনো ধারা আপনারা লক্ষ্য করছেন কিনা?
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে জঙ্গিরাও কৌশল পরিবর্তন করে৷ ফিজিক্যাল ওয়ার্কে দুর্বল হওয়ায় এখন তারা সাইবার স্পেসটাকে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করছে৷ সেখানে সাইকোলজিক্যাল ও আইডিওলজিক্যাল ওয়ার্কটা তারা স্বার্থকভাবেই চালাচ্ছে৷ তারা অডিও, ভিডিও, ইমেইল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ভীতি ছড়িয়ে দিচ্ছে৷ তাদের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে দেয়ার পর তারা পুরনো কাঠামোতে না ফিরে ছোট ছোট সেলের মাধ্যমে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে৷
বাংলাদেশি জঙ্গিদের আইএস সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা?
আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ থেকে ২০ জনের মত সিরিয়া বা অন্যদেশে গিয়ে আইএস-এর হয়ে কাজ করেছে৷ সিরিয়ায় আইএস-এর পতনের পর একজন দেশে ফেরত এসেছে এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ আরো একজন ফেরত এসে গ্রেপ্তার হয়েছে৷ তবে সে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিক হলেও বাংলাদেশ থেকে সিরিয়া যায়নি৷ তার জন্ম সৌদি আরবে৷ সে সেখান থেকে গিয়েছিল৷
জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ে ঝুঁকি কতটা? আপনাদের কতটা আধুনিকীকরণ হয়েছে?
জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান সব সময়ই ঝুঁকির৷ কারণ যারা অভিযান পরিচালনা করেন তাদের হতাহত করা থাকে জঙ্গিদের লক্ষ্য৷ তারা বেপরোয়া থাকে৷ তবে এটুকু আমি আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলতে পারি আমাদের যেসব বিশেষায়িত টিম আছে, সোয়াটের নেতৃত্বে হোলি আর্টিজানের পর ২২টি অভিযান হয়েছে৷ এইসব অভিযানে ওই অর্থে আমাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি৷ আমরা তাদের নিরস্ত্র করতে পেরেছি৷ আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে পেরেছি৷
আপনাদের অভিযানে এপর্যন্ত কতজন নিহত হয়েছেন?
অভিযানের সময় কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে আইদার টু কিল অর টুবি কিলড৷ ফলে কোনো অপশন থাকেনা৷ আবার জঙ্গিরা গ্রেপ্তার এড়াতে নিজেরাও আত্মঘাতী হয়৷ শুধু আমাদের অভিযান নয়, সব অভিযান মিলিয়ে এই ধরনের নিহতের সংখ্যা প্রায় একশ৷
জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কারণে নাগরিক অধিকার খর্ব হয় কিনা?
আসলে অভিযানের সময় নাগরিকদের নিরাপত্তার কারণেই আমাদের কিছু কাজ করতে হয়৷ চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়৷ গ্যাস, বিদ্যুৎ বা টেলিফোনের মত সেবা সাময়িক বন্ধ রাখতে হয়৷ তবে আমরা দেখেছি নাগরিকরাই স্বতস্ফূর্তভাবে একাজে আমাদের সহায়তা করেন৷ নাগরিকদের সহায়তা ছাড়া জঙ্গিবাদ দমন সম্ভব নয়৷
কারা জঙ্গিবাদে জড়ায়?
বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের তরুনরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ আগে নিম্নবিত্ত বা মাদ্রাসায় যারা পড়ে তারা জঙ্গিবাদে জড়ায় এমন একটি ধারণা ছিলো৷ কিন্তু আল-কায়েদা এবং আইএস-এর উত্থানে দেখা গেছে তথ্য প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় সব শ্রেণি ও সব ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকেই জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে৷ এর মূল কারণ হতাশা ও ভ্রান্ত চিন্তা৷ হতাশা ও ভ্রান্তচিন্তার কারণ একেক জনের জন্য একেক রকম৷
জঙ্গিরা কি চায়, তাদের উদ্দেশ্য কী?
তারা আসলে কাপুরুষ৷ তারা নানা হতাশায় জীবন থেকে পালাতে চায়৷ তারা চায় সহজে শর্টকাট পথে বেহেস্তে যেতে৷ আবার অনেকে জানেই না আসলে তারা কি চায়৷