জঙ্গি দমনে প্রয়োজন সার্বক্ষণিক সহযোগিতা
২৭ অক্টোবর ২০১৪ গত ২রা অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খগড়াগড়ে একটি বাড়িতে বোমা বানাতে গিয়ে দু'জন নিহত হয়৷ তারা হলেন শাকিল আহমেদ এবং সোবহান মন্ডল৷ ভারতীয় গোয়েন্দরা তখনই দাবি করে যে, নিহতরা বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি-র সদস্য এবং তারা বাংলাদেশের নাগরিক৷
এ ঘটনার পর বাংলাদেশ ভারতের কাছে জঙ্গিদের ব্যাপারে তথ্য চায় এবং বাংলাদেশও জেএমবি জঙ্গিদের ব্যাপারে তথ্য দেয়া শুরর করে৷ এছাড়া বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যে, জেএমবি জঙ্গিদের একটি গ্রুপ ভারতে অবস্থান করে বাংলাদেশেও বড় ধরণের হামলার পরিকল্পনা করছিল৷ এই সূত্রে শনিবারও বাংলাদেশে চারজন জেএমবি জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় জেহাদি বইপত্র এবং বিস্ফোরক৷ গোয়েন্দারা তাদের একটি বোমা তৈরির ল্যাবরেটরিরও সন্ধান পান৷
গোয়ন্দো বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘জঙ্গিদের একটি অংশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, তারা বাংলাদেশে অপারেশন চালানোর জন্য এখানকার জঙ্গিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে৷ এমনটাই জানা গেছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে৷''
এদিকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দেভাল পশ্চিমবঙ্গ সফরে গিয়ে বলেছেন, ‘‘বর্ধমান বোমা বিস্ফোরণের পিছনে একটি নিষিদ্ধ গোষ্ঠী জড়িত৷ তাদের চিহ্নিত করতে গোয়েন্দারা কাজ করছেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এখন চমত্কার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে৷ তাই এ সব জঙ্গিদের চিহ্নিত করতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে, পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে কাজ করছে৷''
ভারতের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বর্ধমান বিস্ফোরণের মূল পরিকল্পনাকারী জঙ্গি-জেহাদিদের আস্তানা শিমুলিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পলাতক ইউসুফ শেখের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এনআইএন৷ রবিবার পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গের নেপাল সীমান্ত ঘেঁষে ইউসুফের অপর একটি গোপন আস্তানার খবর পেয়েছে এনআইএ৷ এছাড়া ভারতে যে ১৮০ জন বাংলাদেশি জঙ্গি গা-ঢাকা দিয়ে আছে, তাদের তালিকা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশকে দেবে এনআইএন৷
গত ২রা অক্টোবর খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর তিনদিন পর্যন্ত ইউসুফ তার স্ত্রী ও তিন সন্তান দিয়ে বর্ধমানেই ছিল৷ এরপর সে মেবাইল ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেয়৷
এনআইএ ভারতে যেমন জেএমবি নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করতে চাইছে, তেমনি জেএমবি-র অর্থের উত্সও খুঁজের বের করার চেষ্টা করছেন ভারতীয় তদন্তকারীরা৷ ভারতে যে ৩৬টি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের তালিকা এনআইএ তৈরি করেছে, তার ২৭ নম্বরে রয়েছে জেএমবি৷ অন্যদিকে বাংলাদেশে পাঁচটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের এক নম্বরে হলো জেএমবি৷
ওদিকে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা বলছেন, জেএমবি জঙ্গিদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে বাংলাদেশ ঘুরে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে টাকার জোগান গেছে৷
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশিদ (অব.) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জঙ্গিদের এই অঞ্চলেও নতুন মেরকরণ শুরু হয়েছে৷ সীমান্তের দুই পারেই জঙ্গিরা তত্পর এবং তাদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে৷ তাই দুই দেশ বা আঞ্চলিক সহযোগিতা জঙ্গি দমনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘মাঠ পর্যায়ে জঙ্গি তত্পরতার তথ্য এবং তাদের অপারেশন এবং কার্যক্রমের সঠিক সময় ও চিত্র নিয়ে গোয়েন্দাদের মধ্যে ঘাটতি আছে৷ এটা দূর করা প্রয়োজন৷ আর সেটা দূর করতে দুই দেশের মাঠ পর্যায়ে যাঁরা জঙ্গি নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে তথ্য বিনিময় প্রয়োজন৷ এ জন্য একটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে৷''
তাঁর মতে, ‘‘বর্ধমানের বোমা বিস্ফোরণ নিয়ে যদি বাংলাদেশ এবং ভারত সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ শুরু করে থাকে, তা ভালো৷ তবে এটি শুধু এই একটি ঘটনায় নয়৷ জঙ্গি দমনে দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন সার্বক্ষণিক৷''