1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নাজেহাল ভারত

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি২০ জুলাই ২০১৬

জম্মু-কাশ্মীর থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে জঙ্গি তত্পরতা দমনে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির দিশাহারা অবস্থা৷ এর মধ্যেই আবার নতুন হামলার ডালপালা মেলছে তথাকথিত আইএসের মতো জঙ্গি গোষ্ঠী৷ বেড়ে গেছে সরকারের দুশ্চিন্তা৷

কাশ্মীর
ছবি: AFP/Getty Images/T. Mustafa

জম্মু-কাশ্মীর ইতিহাসের এক অসমাপ্ত অধ্যায়৷ তার জেরে আজও চলেছে সহিংসতা, সন্ত্রাস আর নিরাপত্তাবাহিনীর দমন পীড়ন৷ কাশ্মীরের জনজীবন এখনও অশান্ত৷ হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে৷ জানমালের ক্ষয়ক্ষতি যেন নিত্যদিনের ঘটনা৷ কিন্তু এর আশু গ্রহণযোগ্য সমাধান সরকার দিতে ব্যর্থ৷

এর সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের পরিস্থিতির গুণগত কোনো প্রভেদ নেই৷ স্বাধীনতার পর প্রথম ভারত বৈরিতা মাথা তোলে নাগাল্যান্ডে৷ তারপর আসাম, মনিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে৷ কারণ কী ? কারণ একাধিক৷ প্রথমত, পঞ্চাশের দশকে রাজ্যগুলির সীমানা চিহ্নিতকরণের সময় আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যতার দিকে নজর দেওয়া হয়নি৷ ফলে রাজ্যের অধিবাসীদের মধ্যে জাতিসত্তা তথা আত্মপরিচয়ে বিস্তর ঘাটতি থেকে গেছে৷ ঠিকমতো নজর দেওয়া হয়নি জাতিগত, ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের দিকে৷ তা সত্বেও সব রাজ্যকে একই বন্ধনিতে রাখা হয়েছে৷

এতে রাজ্যগুলির অধিবাসীদের মনে রয়ে গেছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ৷ দেখা দিয়েছে রাজ্যগুলির অধিবাসীদের সঙ্গে বহিরাগতদের সংঘাত৷ দাবি উঠেছে পৃথক রাষ্ট্রের, নয়তো উঠেছে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের কিংবা পৃথক রাজ্যের দাবি৷ এছাড়া আছে আর্থ-সামাজিক ইস্যু৷যেমন ঐসব রাজ্যের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ, জৈব-বৈচিত্র্য ও জল-বিদ্যুত উত্পাদনের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হওয়ার দরুণ আর্থিক অনগ্রসরতা ইত্যাদি৷সরকারের জাতীয় সংহতির ডাক ঐসব রাজ্যের অধিবাসীদের মনে তাই দাগ কাটতে পারেনি৷তারই জেরে মাথা তুলেছে জঙ্গি কার্যকলাপ৷

রাজ্যগুলির ৯টি জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইউনাইনেড লিবারেশন ফ্রন্ট' গঠন করে এখনও চালিয়ে যাচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই৷ কখনো কম, কখনও বেশি৷ ফিজোর নেতৃত্বে নাগাল্যান্ডকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার সহিংস আন্দোলন শুর হয় ১৯৫০-এর দশকে৷ ২০১৬ সালে এসেও তার পুরোপুরি সমাধান হয়নি৷ চলেছে উপজাতি গেরিলা বাহিনীর আঘাত আর নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা আঘাত৷ রাজনৈতিকভাবে ঐসব রাজ্যের সমস্যাগুলির মোকাবিলা না করে সরকার সেনা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে ‘আফস্পা'র মতো দমন পীড়নের বিশেষ ক্ষমতা আইন৷ এতে মানবাধিকার লংঘনের মাত্রা বেড়ে চলেছে৷ জীবনের নিরাপত্তা বিপন্ন হয়ে পড়ছে৷ বলা হয়েছিল এটা সাময়িক এক ব্যবস্থা৷ কিন্তু আজও তা প্রত্যাহার করা হয়নি ফলে নিরীহ মানুষদের নিরাপত্তা বাহিনীর জুলুমের নিষ্ঠুর শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত৷ হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে দেশের শীর্ষ আদালতকে৷

অতি বামপন্থি কমিউনিস্ট আদর্শের ঔরসে জন্ম নেয় নক্সালবাদ ও মাওবাদ৷ এদের দাপট এখন মূলত ঝাড়খন্ড, বিহার ছত্তিশগড়ে৷ এদের আস্তানা রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাহাড় আর জঙ্গলে ঘেরা আদিবাসী প্রধান দুর্গম এলাকায়৷ সেসব জায়গার রাস্তাঘাট ওরাই চেনে৷ নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে চেনা খুবই কঠিন৷ শুধু তাই নয়, স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠী মাওবাদীদের এক জনভিত্তি৷ বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান শুরুর আগেই তাঁদের কাছে খবর পৌঁছে যায়৷ দুর্গম পাহাড়ি পথে মাওবাদীরা পেতে রাখে মরণ ফাঁদ৷ আইইডি বিস্ফোরক৷ মাত্র দুদিন আগে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর কনভয় এরই শিকার হয়, নিহত হয় ১২ জন জওয়ান৷

প্রশ্ন হলো, এরা অস্ত্র ধরেছে কেন? মাওবাদীদের চোখে ভারতীয় সমাজ এখনও অনগ্রসর, আধা ঔপনিবেশিক, আধা সামন্ততান্ত্রিক৷ উপজাতি গরিবদের ওপর চলেছে আর্থ-সামাজিক শোষণ৷ বড় বড় শিল্প সংস্থা ও পুঁজিবাদীরা শিল্প স্থাপনের জন্য উপজাতিদের বনাঞ্চল দখল করে নিচ্ছে৷ বন সম্পদই আদিবাসীদের জীবিকা৷ খনিজ সম্পদ আহরণের জন্য নির্বিচারে স্থানীয় গরিবদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে৷ জমিহীন গরিব কৃষিজীবীরা চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ উচুঁ জাতি নিচু জাতির বিভেদ বাড়ছে৷ এর যোগ্য প্রত্যুত্তর সশস্ত্র সংগ্রাম, জাতপাতের বৈষম্য মুছে দিতে শ্রেণী সংগ্রাম- এমনটাই মনে করে মাওবাদীরা৷ কিন্তু এদের রসদ যোগাচ্ছে কে বা কারা? কোথা থেকে পাচ্ছে এরা অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্র, গুলি, বারুদ? আগে তো হাতিয়ার বলতে এদের ছিল তীর-ধনুক আর টাঙ্গি৷

স্বভাবতই সন্দেহের আঙুল মাওবাদের জন্মভূমি চীনের দিকে৷ মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলের প্রায় ৯ কোটি আদিবাসী কি বোঝে মাওবাদ কী? বুঝে হোক, বা না বুঝে হোক, সমর্থন করুক, বা না করুক, হিংসা ও পাল্টা হিংসার নিরীহ শিকার তাঁরা৷ বহু আদিবাসীকে এজন্য জীবন দিতে হয়েছে৷ সমাজবিদরা মনে করেন, এতদিন শক্তি প্রয়োগে যখন কাজ হয়নি, তখন গণতন্ত্রের কাঠামোর মধ্যেই এর সমাধান খুঁজে পেতে হবে৷ আর সেটাই হবে ভারতীয় গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ