২২ বছর বয়সি সিরীয় উদ্বাস্তু জাবেরের দৃশ্যত বার্লিনের কোনো বিমানবন্দরে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছিল৷ কেমনিৎস থেকে পালানোর দু'দিন পরে তিন সিরীয় যুবকের সহায়তায় তাকে লাইপজিগে গ্রেপ্তার করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
গোয়েন্দা পুলিশের কাছে খবর ছিল যে, জাবের জার্মানিতে কোনো ট্রেনের উপর আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছে৷ গোড়া থেকেই জাবেরের উপর নজর রাখা হচ্ছিল৷ শেষমেশ গত শুক্রবার জাবেরের বাসায় হানা দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কেননা ইতিপূর্বে জাবেরকে একটি এক-ইউরো বিপণীতে গঁদ কিনতে দেখা গিয়েছিল৷ গোয়েন্দা বিভাগ ধরে নেয়, এটাই তার বোমা তৈরির শেষ উপাদান৷
কেমনিৎসে পুলিশ হানা দেবার সময় জাবের পালাতে সমর্থ হয়, যদিও তার ফ্ল্যাটে টিএনটি'র চেয়েও বেশি বিস্ফোরক একটি পদার্থ পাওয়া যায় প্রায় দেড় কিলোগ্রাম পরিমাণ৷ পুলিশ নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে সেই পদার্থ বিনষ্ট করে৷ অপরদিকে পলাতক জাবেরের খোঁজ চলে৷ জাবেরের ফ্ল্যাটে হানার প্রায় দু'দিন পরে রবিবার রাত একটায় লাইপজিগের একটি ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ জাবেরকে গ্রেপ্তার করে৷
স্যাক্সনির তিন সিরিয়ান হিরো
এই গ্রেপ্তারের বিশেষত্ব হলো, তা সিরীয় প্রতিবেশীদের উদ্যোগেই সম্ভব হয়েছে৷ দৃশ্যত জাবের লাইপজিগে রাত কাটানোর জায়গার খোঁজ করছিল৷ তখন এই তিনজন সিরীয় তাকে বাড়িতে নিয়ে যান৷ পরে সংশ্লিষ্ট সিরীয় ও তার দুই সঙ্গী উপলব্ধি করেন, কে তাঁদের অতিথি৷ তখন তাঁরা পুলিশকে ফোন করেন৷ পুলিশ তাদের বক্তব্য বুঝতে না পারলে, তারা জাবেরকে বেঁধে ফেলে তার ছবি তোলেন৷ একজন সিরীয় সেই ছবি নিয়ে পুলিশের কাছে যান, অন্য দু'জন তাকে পাহারা দেন৷ তারপর আসে পুলিশের ভ্যান আর মাথার উপর চক্কর দিতে থাকে হেলিকপ্টার৷ পুলিশ এসে দেখে, জাবেরকে ডাকঘরের প্যাকেটের মতো বেঁধে রাখা হয়েছে, শুধু তুলে নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা৷
পাড়ার জার্মান ছেলেরা এখন তাদের সিরীয় প্রতিবেশীদের নিয়ে গর্বিত৷ প্রশংসা এসেছে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের কাছ থেকেও৷ অপরদিকে পুলিশ এই গ্রেপ্তারকার্য সম্পর্কে যথাসম্ভব কম খুঁটিনাটি প্রকাশ করছে, যাতে সংশ্লিষ্ট সিরীয়দের কোনো বিপদ না ঘটে৷
প্যারিস কিংবা ব্রাসেলসের মতো আক্রমণ?
কেমনিৎসে জাবেরের বাসায় যে বিস্ফোরক পাওয়া গিয়েছে, তা প্রায় ব্যবহারের উপযোগীই ছিল বলে জানিয়েছেন স্যাক্সনি রাজ্যের পুলিশ প্রধান ইয়র্গ মিশায়েলিস৷ এমন বিস্ফোরক প্যারিস ও ব্রাসেলসের অনুরূপ কোনো আক্রমণের জন্যই সংগ্রহ করা হয়েছিল বলে ধারনা করা হচ্ছে৷ স্বয়ং জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়েরও এমনটিই বলেছেন৷
সন্ত্রাস দমনে ইউরোপের প্রস্তুতি
১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে সাম্প্রতিক কালেও একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে ইউরোপ৷ ইউরোপের একাধিক দেশে এমন পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত বিশেষ সন্ত্রাস-দমন বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
হামলার শিকার ইউরোপ
প্যারিস, ব্রাসেলস, নিস – ইউরোপের একের পর এক শহরের মানুষ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে৷ শোক সামলে নেওয়ার পর বার বার প্রশ্ন উঠেছে, এমন হামলা কি প্রতিরোধ করা যেত? অথবা আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া কি সম্ভব হতো?
ছবি: Reuters/E. Gaillard
জার্মানির ‘জিএসজি ৯’
বন শহরের কাছে জার্মানির বিশেষ কমান্ডো বাহিনী ‘জিএসজি ৯’-এর ঘাঁটি৷ সন্ত্রাস দমনের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই ইউনিট জার্মানিতে সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়, যেমনটা সম্প্রতি মিউনিখে দেখা গেছে৷ ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকের সময় ইসরায়েলি পণবন্দি নাটকের পর এই বাহিনী গঠন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
অস্ট্রিয়ার ‘একো কোবরা’
অস্ট্রিয়ার কেন্দ্রীয় ফেডারেল পুলিশ বাহিনীর এই ইউনিট সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলার জন্য সর্বদা প্রস্তুত৷ জার্মানির মতোই অস্ট্রিয়াও মিউনিখ অলিম্পিকে হামলার পরও নড়েচড়ে বসে৷ ১৯৭৮ সালে প্রথমে ‘জিইকে’ নামের বাহিনী তৈরি হয়৷ ২০০২ সালে তার নাম বদলে রাখা হয় ‘একো কোবরা’৷
ছবি: Getty Images
ফ্রান্সের ‘জিআইজিএন’
ফ্রান্সের জাতীয় পুলিশ বাহিনীর বিশেষ ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ সন্ত্রাসী হামলা, জিম্মি পরিস্থিতি, জাতীয় হুমকি ইত্যাদির সময় হস্তক্ষেপ করে৷ এই বাহিনী গঠনের পেছনেও কাজ করেছে ১৯৭২ সালে মিউনিখ হামলার ঘটনা৷ ১৯৭৪ সালে ‘জিআইজিএন’ বাহিনী গড়ে তোলা হয়৷
ফ্রান্সের আদলে ইটালিতেও ১৯৭৭ সাল থেকে এক ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ সক্রিয় রয়েছে৷ সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে আকাশপথে দ্রুত মোতায়েন করা যায় এই বিশেষ বাহিনী৷ ভিআইপি-দের সুরক্ষার কাজেও লাগানো হয় এই বাহিনী৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
নেদারল্যান্ডস-এর ‘ডিএসআই’
২০০৬ সালে জাতীয় পুলিশ বাহিনীর ছত্রছায়ায় ‘ডিএসআই’ নামের এই বিশেষ ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ গঠন করা হয়৷ সন্ত্রাসবাদ ও চরম হিংসার পরিস্থিতিতে এই বাহিনী দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ এর আগে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের প্রক্রিয়ার দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে এই ইউনিট গঠন করা হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Van Dijl
স্পেনের ‘ইউইআই’
স্পেনে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার জন্য ‘ইউইআই’ নামের ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ কাজ করছে ১৯৭৮ থেকে৷ সন্ত্রাসবাদ থেকে শুরু করে জিম্মি নাটক – যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সামলাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই ইউনিটকে৷ এই বাহিনী সম্পর্কে প্রকাশ্যে বেশি তথ্য প্রকাশ করা হয় না৷