1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জঙ্গি মদদের দায়ে আর বন্ধ হচ্ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান?

আসমা মিতা
১০ নভেম্বর ২০১৭

জঙ্গি কার্যক্রমে মদদ দেয়ার অভিযোগে ঢাকার লেকহেড গ্রামার স্কুল বন্ধ হওয়ার পর আবারও আলোচনায় ‘জঙ্গি ইস্যু'৷ তবে সহসা বন্ধ করে দেয়ার তালিকায় নেই আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ তারপরও নজরদারিতে রয়েছে বেশ কিছু স্কুল-কলেজ৷

ছবি: bdnews24.com

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম সচল রাখতে সময়োপযোগী বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ আর এজন্য মন্ত্রণালয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এবং ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

লেকহেড গ্রামার স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের করা দু'টি রিটের কারণে এরইমধ্যে অবশ্য স্কুলটি কেন খোলার আদেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট৷ যার শুনানি হবে রোববার৷

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল

This browser does not support the audio element.

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার, জঙ্গি কার্যক্রমের অভিযোগে ঢাকার লেকহেড গ্রামার স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়৷ রাজধানীর ধানমণ্ডি ও গুলশানের দু'টি শাখা বন্ধ করে দেয় ঢাকা জেলা প্রশাসন৷ 

‘বুধবার থেকে আর এই স্কুলের কোনো কার্যক্রম চালানো হবে না' – স্কুলটির প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছ থেকে এই লিখিত অঙ্গীকার আদায় করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট৷

এই স্কুলের সঙ্গে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও নব্য জেএমবির সদস্যদের অনেকেরই সম্পৃক্ততা ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এছাড়া আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা ইন অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা, আনসার আল-বাইয়্যাত ও মাকদিস নামে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গেও সম্পৃক্ততা ছিল এই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের৷ এরকমই নানা তথ্য উঠে এসেছে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে৷

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে বলা হয়, ঢাকা মহানগরের ধানমণ্ডি ও গুলশানে অবস্থিত লেকহেড গ্রামার স্কুলটির ওপর মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকায় এবং ধর্মীয় উগ্রবাদে অনুপ্রেরণা, উগ্রবাদী সংগঠন সৃষ্টি, জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতাসহ জাতীয় ও স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রম বন্ধের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো৷

মো. মহিউদ্দিন খান

This browser does not support the audio element.

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মহিউদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজ মূলত এটাই৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মতান্ত্রিকতা মানা হচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখা৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরাও যদি দেখি প্রচলিত আইন কানুনের সাথে তা যাচ্ছে না, তখন আমাদের দায়িত্ব হয়ে পড়ে এর একটা ব্যবস্থা নেয়া৷ জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেয় অথবা বিশেষ কারও ব্যাপারে তথ্য দেয়, তাহলে সেটা আমরা অবশ্যই দেখি৷''

রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে জঙ্গি হামলার পর, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জঙ্গিবাদ উপড়ে ফেলতে কঠোর অবস্থান নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়৷ বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় – সব পর্যায় থেকেই আসতে থাকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ৷

২০১৬ সালে ১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ন'টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও সাতটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় জঙ্গি সৃষ্টির উৎস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি তালিকা পাঠানো হয়৷ এছাড়া গত চার বছরে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ৭২ জন ছাত্র ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার কথাও জানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ 

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মহিউদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা যে এটা নিয়ে কোনোরকম ‘ফর্মাল' অনুসন্ধান করছি, ব্যাপারটা সেরকম না৷ আমাদের কাছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে বা ‘সোর্স' থেকে যখন এ রকম কোনো খবর আসে বা অভিযোগ আসে, তখন তার ভিত্তিতে আমরা খোঁজখবর নিই৷ আর যদি সেই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তখন আমরা সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই৷''

‘‘যে স্কুলটি বন্ধ করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যে কেবল জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তা নয়, সরকারের যেসব নিয়ম-নীতি মেনে স্কুল পরিচালন করার কথা সেগুলোও তারা করেনি'', যোগ করেন তিনি৷

শিক্ষা মন্ত্রালয়ের এই কর্মকর্তা জানান, ‘‘আমাদের যেহেতু অনুসন্ধান করার নিজস্ব উইং নেই, তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্যের ওপরই আমরা কাজ করে থাকি৷''

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে জানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এর সঙ্গে যোগযোগ করে ডয়চে ভেলে৷ তিনি বলেন, ‘‘যে পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শুরুতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, সেই পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন আর কঠোর নজরদারিতে নেই৷ তাদের ব্যাপারে যথেষ্ট খোঁজখবর নিয়েই তাদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে৷''

‘‘ঢালাওভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধও আমরা করতে চাই না৷ অকাট্ট প্রমাণ পেলে, তবেই কেবল এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়৷ এখন পর্যন্ত কেবল লেকহেড গ্রামার স্কুলই বন্ধ করা হচ্ছে৷ বন্ধের তালিকায় এখন আর কাউকে দেখছি না'', বলেন মন্ত্রী৷ 

তাঁর কথায়, ‘‘জঙ্গি বিষয়ে খুব বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাদের নজরদারিতে আসেনি৷ যেগুলোর ভেতর তাদের শিক্ষক বা ছাত্র-ছাত্রী জড়িয়ে পড়েছে, শুধুমাত্র সেগুলোর ব্যাপারে নজরদারি করা হচ্ছে৷ এর মধ্যে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে৷ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে৷''

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের নজরদারি খানিকটা শিথিল করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে আমাদের কাছে বেশি তথ্য আসে৷ সেগুলোর ব্যাপারে নজরদারিও শুরু হয়েছে৷ যেগুলোর ব্যাপারে আমরা সম্পৃক্ততা পাইনি সেগুলোর ব্যাপারে নজরদারি কিছুটা হালকা করা হয়েছে৷ তারপরও আমরা খেয়াল রাখছি৷ নতুন করে আবার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত হচ্ছে কিনা, সেদিকে লক্ষ্য রাখছি৷''

প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ