জঙ্গি মদদের দায়ে আর বন্ধ হচ্ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান?
আসমা মিতা
১০ নভেম্বর ২০১৭
জঙ্গি কার্যক্রমে মদদ দেয়ার অভিযোগে ঢাকার লেকহেড গ্রামার স্কুল বন্ধ হওয়ার পর আবারও আলোচনায় ‘জঙ্গি ইস্যু'৷ তবে সহসা বন্ধ করে দেয়ার তালিকায় নেই আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ তারপরও নজরদারিতে রয়েছে বেশ কিছু স্কুল-কলেজ৷
বিজ্ঞাপন
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম সচল রাখতে সময়োপযোগী বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ আর এজন্য মন্ত্রণালয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এবং ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
লেকহেড গ্রামার স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের করা দু'টি রিটের কারণে এরইমধ্যে অবশ্য স্কুলটি কেন খোলার আদেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট৷ যার শুনানি হবে রোববার৷
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার, জঙ্গি কার্যক্রমের অভিযোগে ঢাকার লেকহেড গ্রামার স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়৷ রাজধানীর ধানমণ্ডি ও গুলশানের দু'টি শাখা বন্ধ করে দেয় ঢাকা জেলা প্রশাসন৷
‘বুধবার থেকে আর এই স্কুলের কোনো কার্যক্রম চালানো হবে না' – স্কুলটির প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছ থেকে এই লিখিত অঙ্গীকার আদায় করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট৷
এই স্কুলের সঙ্গে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও নব্য জেএমবির সদস্যদের অনেকেরই সম্পৃক্ততা ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এছাড়া আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা ইন অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা, আনসার আল-বাইয়্যাত ও মাকদিস নামে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গেও সম্পৃক্ততা ছিল এই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের৷ এরকমই নানা তথ্য উঠে এসেছে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে৷
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে বলা হয়, ঢাকা মহানগরের ধানমণ্ডি ও গুলশানে অবস্থিত লেকহেড গ্রামার স্কুলটির ওপর মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকায় এবং ধর্মীয় উগ্রবাদে অনুপ্রেরণা, উগ্রবাদী সংগঠন সৃষ্টি, জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতাসহ জাতীয় ও স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রম বন্ধের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো৷
মো. মহিউদ্দিন খান
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মহিউদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজ মূলত এটাই৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মতান্ত্রিকতা মানা হচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখা৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরাও যদি দেখি প্রচলিত আইন কানুনের সাথে তা যাচ্ছে না, তখন আমাদের দায়িত্ব হয়ে পড়ে এর একটা ব্যবস্থা নেয়া৷ জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেয় অথবা বিশেষ কারও ব্যাপারে তথ্য দেয়, তাহলে সেটা আমরা অবশ্যই দেখি৷''
রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে জঙ্গি হামলার পর, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জঙ্গিবাদ উপড়ে ফেলতে কঠোর অবস্থান নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়৷ বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় – সব পর্যায় থেকেই আসতে থাকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ৷
২০১৬ সালে ১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ন'টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও সাতটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় জঙ্গি সৃষ্টির উৎস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি তালিকা পাঠানো হয়৷ এছাড়া গত চার বছরে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ৭২ জন ছাত্র ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার কথাও জানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মহিউদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা যে এটা নিয়ে কোনোরকম ‘ফর্মাল' অনুসন্ধান করছি, ব্যাপারটা সেরকম না৷ আমাদের কাছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে বা ‘সোর্স' থেকে যখন এ রকম কোনো খবর আসে বা অভিযোগ আসে, তখন তার ভিত্তিতে আমরা খোঁজখবর নিই৷ আর যদি সেই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তখন আমরা সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই৷''
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রসার ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে উৎসাহ, উদ্বেগ দুই-ই আছে৷ আর সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দল ও ইসলামপন্থিদের উত্থানের বিষয়টিকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ৷ ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে আজকের প্রজন্ম?
ছবি: Reuters
পিয়ান মুগ্ধ নবীর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়ান মুগ্ধ নবীর কাছে ধর্ম বিষয়টা পুরোপুরি ব্যক্তিগত হলেও রাজনীতি ব্যক্তিগত বিষয় নয়৷ তবে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে তিনি কখনোই সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
শিবরাজ চৌধুরী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী শিবরাজ চৌধুরী৷ তার মতে, ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ ধর্মের মূল বিষয় মনুষত্ব বা মানুষের মধ্যকার শুভবোধ৷ তবে ধর্মের নামে যদি কখনো মৌলবাদ কিংবা চরমপন্থা চলে আসে, সেটা কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়৷
ছবি: DW
শিহাব সরকার
ঢাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শিহাব সরকার৷ তার মতে, ধর্ম ধর্মের জায়গায় আর রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়৷ বলা বাহুল্য, ধর্মের নামে রাজনীতি তিনিও সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
আসিফ হামিদী
আসিফ হামিদীও মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন৷ তিনিও মনে করেন ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ তাই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ঘোর বিরোধী তিনি৷
ছবি: DW
মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর
ঢাকার একটি মাদ্রাসা থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেছেন মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর৷ তাঁর মতেও রাজনীতি ধর্মভিত্তিক হতে পারে না৷ তবে আল্লাহ এবং রাসুলের কিংবা ইসলামের উপর কোনোরকম আঘাত আসলে তার বিরোধীতা করা সব মুসলমানের নৈতিক দ্বায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW
সাদমান আহমেদ সুজাত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদমান আহমেদ সুজাত৷ তাঁরও ঐ এক কথা৷ ‘‘ধর্ম এবং রাজনীতি কখনো এক হতে পারে না৷’’ তিনি জানান, ‘‘ধর্ম আমরা সাধারণত জন্মগতভাবে পাই, কিন্তু রাজনীতিকে আমরা অনুসরণ করি৷’’
ছবি: DW
সাজ্জাদ হোসেন শিশির
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন শিশির৷ তাঁর মতে, রাজনীতি সবসময়ই ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়া উচিত৷ তাঁর বিশ্বাস, ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেললে তার ফল কখনো ভালো হয় না৷
ছবি: DW
দাউদুজ্জামান তারেক
ঢাকার আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাউদুজ্জামান তারেক মনে করেন, রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের কখনো মিল হতে পারে না৷ কারণ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা একই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসরণও করতে পারেন৷
ছবি: DW
8 ছবি1 | 8
‘‘যে স্কুলটি বন্ধ করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যে কেবল জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তা নয়, সরকারের যেসব নিয়ম-নীতি মেনে স্কুল পরিচালন করার কথা সেগুলোও তারা করেনি'', যোগ করেন তিনি৷
শিক্ষা মন্ত্রালয়ের এই কর্মকর্তা জানান, ‘‘আমাদের যেহেতু অনুসন্ধান করার নিজস্ব উইং নেই, তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্যের ওপরই আমরা কাজ করে থাকি৷''
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে জানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এর সঙ্গে যোগযোগ করে ডয়চে ভেলে৷ তিনি বলেন, ‘‘যে পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শুরুতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, সেই পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন আর কঠোর নজরদারিতে নেই৷ তাদের ব্যাপারে যথেষ্ট খোঁজখবর নিয়েই তাদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে৷''
‘‘ঢালাওভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধও আমরা করতে চাই না৷ অকাট্ট প্রমাণ পেলে, তবেই কেবল এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়৷ এখন পর্যন্ত কেবল লেকহেড গ্রামার স্কুলই বন্ধ করা হচ্ছে৷ বন্ধের তালিকায় এখন আর কাউকে দেখছি না'', বলেন মন্ত্রী৷
তাঁর কথায়, ‘‘জঙ্গি বিষয়ে খুব বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাদের নজরদারিতে আসেনি৷ যেগুলোর ভেতর তাদের শিক্ষক বা ছাত্র-ছাত্রী জড়িয়ে পড়েছে, শুধুমাত্র সেগুলোর ব্যাপারে নজরদারি করা হচ্ছে৷ এর মধ্যে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে৷ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে৷''
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের নজরদারি খানিকটা শিথিল করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে আমাদের কাছে বেশি তথ্য আসে৷ সেগুলোর ব্যাপারে নজরদারিও শুরু হয়েছে৷ যেগুলোর ব্যাপারে আমরা সম্পৃক্ততা পাইনি সেগুলোর ব্যাপারে নজরদারি কিছুটা হালকা করা হয়েছে৷ তারপরও আমরা খেয়াল রাখছি৷ নতুন করে আবার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত হচ্ছে কিনা, সেদিকে লক্ষ্য রাখছি৷''
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার শিকার যারা
চলতি বছর ইসলামপন্থিরা একের পর এক হামলা চালিয়ে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷ চলুন জানা যাক ২০১৫ সালের কবে, কারা হামলার শিকার হয়েছেন...৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্লগার খুন
একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হন ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায়৷ কমপক্ষে দুই দুর্বৃত্ত তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ এসময় তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন৷ বাংলাদেশি মার্কিন এই দুই নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’৷ পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
বাড়ির সামনে খুন
ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয় ঢাকায়, গত ৩০ মার্চ৷ তিন দুর্বৃত্ত মাংস কাটার চাপাতি দিতে তাঁকে কোপায়৷ সেসেময় কয়েকজন হিজরে সন্দেহভাজন দুই খুনিকে ধরে ফেলে, তৃতীয়জন পালিয়ে যায়৷ আটকরা জানায়, তারা মাদ্রাসার ছাত্র ছিল এবং বাবুকে হত্যার নির্দেশ পেয়েছিল৷ কে বা কারা এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে জানা যায়নি৷ বাবু ফেসবুকে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লিখতেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সিলেটে আক্রান্ত মুক্তমনা ব্লগার
শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ গত ১২ মে সিলেটে নিজের বাসার কাছে খুন হন নাস্তিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস৷ ভারত উপমহাদেশের আল-কায়েদা, যাদের সঙ্গে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সম্পর্ক আছে ধারণা করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷ দাস ডয়চে ভেলের দ্য বব্স জয়ী মুক্তমনা ব্লগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/EPA/Str
বাড়ির মধ্যে জবাই
ব্লগার নিলয় চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি নিলয় নীল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, হত্যা করা হয় ঢাকায় তাঁর বাড়ির মধ্যে৷ একদল যুবক বাড়ি ভাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ৮ আগস্ট তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ নিজের উপর হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় পুলিশের সহায়তা চেয়েছিলেন নিলয়৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে সহায়তা করেনি৷ ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে, তবে তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
জগিংয়ের সময় গুলিতে খুন বিদেশি
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে জগিং করার সময় ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় খুন হন ইটালীয় এনজিও কর্মী সিজার তাবেলা৷ তাঁকে পেছন থেকে পরপর তিনবার গুলি করে দুর্বৃত্তরা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে জিহাদিদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা একটি সংস্থা৷ তবে বাংলাদেশে সরকার এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে ‘এক বড় ভাইয়ের’ তাঁকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)
রংপুরে নিহত এক জাপানি
গত ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন হন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও৷ মুখোশধারী খুনিরা তাঁকে গুলি করার পর মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়৷ ইসলামিক স্টেট এই হত্যাকাণ্ডেরও দায় স্বীকার করেছে, তবে সরকার তা অস্বীকার করেছে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না যে তাঁর দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীটির উপস্থিতি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হোসনি দালানে বিস্ফোরণ, নিহত ১
গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হোসনি দালানে শিয়া মুসলমানদের আশুরার প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণে এক কিশোর নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন৷ বাংলাদেশে এর আগে কখনো শিয়াদের উপর এরকম হামলায় হয়নি৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট, তবে সরকার সে দাবি নাকোচ করে দিয়ে হামলাকারীরা সম্ভবত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি-র সদস্য৷ সন্দেহভাজনদের একজন ইতোমধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ঢাকায় প্রকাশক খুন
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় দু’টি স্থানে কাছাকাছি সময়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়৷ এতে খুন হন এক ‘সেক্যুলার’ প্রকাশক এবং গুরুতর আহত হন আরেক প্রকাশক ও দুই ব্লগার৷ নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের সঙ্গে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার-আল-ইসলাম’ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
প্রার্থনারত শিয়াদের গুলি, নিহত ১
গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশের বগুড়ায় অবস্থিত একটি শিয়া মসজিদের ভেতরে ঢুকে প্রার্থনারতদের উপর গুলি চালায় কমপক্ষে পাঁচ দুর্বৃত্ত৷ এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং অপর তিন ব্যক্তি আহত হন৷ তথকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা দাবি করা স্থানীয় একটি গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷