ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এক চিকিৎসককে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম-সিটিটিসি৷
বিজ্ঞাপন
‘নিখোঁজের' এক সপ্তাহ পর ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
বুধবার যাত্রাবাড়ী থেকে ডা. মো. জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদুল ইসলাম ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান৷
জাকির নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের ‘সক্রিয় সদস্য' উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে হাজির করা হয়৷ আদালত দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে৷
মো. জাকির হোসেন মানিকগঞ্জ শহরের বনগ্রাম আবাসিক এলাকার ৪৫/১ বাড়ির বাসিন্দা মো. সামসুল আলম ও জেসমিন আক্তার দম্পতির ছেলে৷ তিনি বিবাহিত এবং এক সন্তানের বাবা৷
৩৮তম বিসিএস-এর এই কর্মকর্তা ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ভাঙ্গার তুজারপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সহকারী সার্জন হিসেবে যোগ দেন৷ কিন্তু তুজারপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনো স্থাপনা না থাকায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়৷ সেই থেকে গত তিনবছর ধরে তিনি এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত৷
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ৮ নভেম্বর হাসপাতালে কাজ শেষ করে সহকর্মী ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে খুদেবার্তা পাঠানোর পর ডা. জাকির হোসেনের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি৷ এরপর থেকেই তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়৷
তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও তার শ্বশুর গত বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) ভাঙ্গা থানায় দুইটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন৷
জিডির বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ৮ নভেম্বর দুপুর ২টা পর্যন্ত জাকির হোসেন ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগের দায়িত্ব শেষ করে হাসপাতাল ত্যাগ করেন৷
৯ নভেম্বর রাত ১২টা ৩ মিনিটে জাকির হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রীর কলির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে খুদেবার্তায় জানানো হয় – বিদ্যুৎ নেই, তার (জাকির হোসেন) মোবাইল ফোন যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷
একইদিন ভোর ৫টা ৫৪ মিনিটে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে জাকির হোসেনের ফোন থেকে খুদেবার্তায় জানানো হয় – শাশুড়ি অসুস্থ; জরুরি ঢাকায় যেতে হবে৷ আগামীকাল (১০ নভেম্বর) ফিরতে একটু দেরি হবে৷
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহসিন উদ্দিন ফকির বলেন, ‘‘আমি থানায় কথা বলে জানতে পেরেছি ডা. জাকির হোসেনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য৷”
ভাঙ্গা থানার ওসি মো. জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট যাত্রাবাড়ী থেকে ডা. জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে, বিষয়টি শুনেছি৷ এর আগে চিকিৎসক জাকির হোসেনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ও তার শ্বশুর ভাঙ্গা থানায় দুইটি জিডি করেন৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
ইসলামিক স্টেটের শক্তি এখন কেমন?
২০১৯ সালের মার্চে সিরিয়া-ইরাক সীমান্তের বাঘুজে সংঘাতের পর ইসলামিক স্টেট তথা আইএস-এর পতন ঘটেছিল৷ এরপর সেটি এখন গেরিলা সংগঠনে পরিণত হয়েছে৷ বুধবার মার্কিন অভিযানে তাদের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা প্রাণ হারান৷
ছবি: Dabiq/Planet Pix via ZUMA Wire/ZUMAPRESS/picture alliance
পতন
২০১৯ সালের মার্চে সিরিয়া-ইরাক সীমান্তের বাঘুজে সংঘাতের পর ইসলামিক স্টেট তথা আইএস-এর পতন ঘটেছিল৷ এরপর ঐ বছরের অক্টোবরে আইএস-এর প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর আল-বাগদাদি নিহত হন৷ একসময় ইরাক ও সিরিয়ার একটি বিশাল এলাকার লাখ লাখ মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করলেও বর্তমানে সংগঠনটি গেরিলা হামলা চালানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Cacace
দুই শীর্ষ নেতার মৃত্যু
বাগদাদির মৃত্যুর পর আইএস এর প্রধান হন ইরাকের আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি আল-কুরেশি৷ একসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কারাবন্দি ছিলেন৷ গত বুধবার রাতে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা অভিযানের সময় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তিনি নিহত হন৷ কুরেশি ছাড়া সংগঠনটির আর কোনো নেতা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় না, কারণ আইএস এখন গোপনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে৷
ছবি: Mohamed Aldaher/REUTERS
কত সদস্য আছে?
বাঘুজে লড়াই শেষে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট জানিয়েছিল, প্রায় তিন হাজার বিদেশিসহ সংগঠনে এখনও ১৪ থেকে ১৮ হাজার সদস্য আছে৷ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আইএস-এর অনেক স্থানীয় সদস্য হয়ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে৷ কিন্তু সুযোগ পেলেই তারা আবার আবির্ভূত হতে পারে৷
ছবি: Dabiq/Planet Pix via ZUMA Wire/ZUMAPRESS/picture alliance
তিনবছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা
সপ্তাহ দুয়েক আগে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের হাসাকা শহরের একটি জেলখানায় হামলা চালায় আইএস৷ সেখানে তাদের সদস্যদের বন্দি রাখা হয়েছিল৷ ঐ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস জানিয়েছে, হামলায় তাদের ৪০ জন সদস্য, কারাগারের ৭৭ জন নিরাপত্তা প্রহরী ও চারজন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান৷ আর ইসলামিক স্টেটের ৩৭৪ জন হামলাকারী বা বন্দি ঐ হামলায় নিহত হন৷
মার্কিন সরকারের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, গত তিন মাসে আইএস ইরাকে ১৮২টি ও সিরিয়ায় ১৯টি হামলা চালিয়েছে৷ আইএস এখনও প্রাণঘাতী ও জটিল হামলা চালাতে সক্ষম৷
ছবি: HUSSEIN FALEH/AFP/Getty Images
ভবিষ্যৎ কৌশল?
ইসলামিক স্টেটের পূর্বসূরি সংগঠনের নাম ছিল ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক৷ ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্র ঐ সংগঠনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল৷ এরপর ঐ সংগঠনের সদস্যরা গোপনে চলে গিয়েছিলেন৷ তারপর সুযোগ বুঝে সামনে এসেছিল তারা৷ এবারও কি সেই কৌশল নেবে তারা?
ছবি: SDF/AP photo/picture alliance
কী ছিল সেই কৌশল?
ইরাকে শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় সুন্নিদের মধ্যে অসন্তোষ এবং সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সামনে আসা শুরু করেছিল আইএস৷ ২০১২ ও ২০১৩ সালে ইরাকের বিভিন্ন কারাগারে হামলা চালিয়ে অনেক সদস্যকে মুক্ত করে তারা৷ একই সময়ে মানুষজনকে ভয় দেখিয়ে এবং চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি উপায় ব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহ করেছিল৷ এরপর ২০১৪ সালে মসুল ও ইরাকের উত্তরাঞ্চলের এক বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল আইএস৷
ছবি: Dabiq/Planet Pix via ZUMA Wire/ZUMAPRESS/picture alliance