পাকিস্তানে প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি প্যাকেজ সহায়তা তহবিল বাতিল করছে যুক্তরাষ্ট্র৷ পেন্টাগনের অভিযোগ, জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিবৃত্ত করতে পাকিস্তানের সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷
বিজ্ঞাপন
কোয়ালিশন সাপোর্ট ফান্ড (সিডিএফ) নামের প্যাকেজ সহায়তা তহবিলটি বাতিলের বিষয়ে শনিবার নিশ্চিত হওয়া গেছে৷ অবশ্য বছরের শুরুতেই ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানকে অর্থ সহায়তা বন্ধের হুমকি দিয়েছিল৷ তাদের অভিযোগ, পাকিস্তান ‘মিথ্যা ও প্রতারণার' আশ্রয় নিয়েছে৷
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিস্তারকেন্দ্রগুলোতে হামলা চালাতে চাপ দিচ্ছিল৷ শনিবার পেন্টাগন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল কোন ফকনার বলেন, ‘‘(যুক্তরাষ্ট্রের) দক্ষিণ এশিয়া কৌশল সমর্থনে পাকিস্তানের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে আমরা বাদবাকি ৩০ কোটি মার্কিন ডলার অন্য জরুরি প্রয়োজনে বরাদ্দ করছি৷''
ফকনার অবশ্য জানান যে, সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হবে কেবল কংগ্রেস একমত হলেই৷
যদিও পাকিস্তান নিজের মাটিতে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে অনেকবার, ওয়াশিংটনের সন্দেহ পাকিস্তানের মাটি আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করে জঙ্গিরা আফগানিস্তানে হামলা চালাচ্ছে৷ শুধু আশ্রয় নয়, জঙ্গিদের, বিশেষ করে তালেবানকে অর্থ সহায়তাও দিচ্ছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই৷ শুধু আদর্শিক কারণেই নয়, আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব ক্রমাগত বাড়ছে বলেই তার জবাব হিসেবে এমন করছে পাকিস্তান, বলে বিশ্বাস করে ওয়াশিংটন৷
এমনকি তালেবান পাকিস্তানকে ‘সেফ হেভেন' হিসেবে ব্যবহার করছে, এমন পর্যবেক্ষন থেকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও পাকিস্তানের সেসব সেফ হেভেন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন৷ এছাড়া তাঁর সময়ই অ্যাবোটাবাদে মার্কিন কমান্ডো দল পাঠিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়েছিল৷
শনিবারের ফকনারের বক্তব্য ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্কের ব্যাপক অবনতিরই ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ মার্কিন কংগ্রেস এর আগেই সিডিএফ ফান্ড থেকে ৫০ কোটি ডলার সরিয়ে নিয়েছিল৷ এবার সেখান থেকে আরো ৩০ কোটি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে৷
এমন এক সময়ে এই সিদ্ধান্ত এলো যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও একজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা জোসেফ ডানফোর্ড এক সপ্তাহ পরই ইসলামাবাদ সফর করছেন৷ সেখানে এ অঞ্চলে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় কীভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়েই আলোচনা হবার কথা৷
২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাকিস্তান প্রায় ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান পেয়েছে৷ যদিও এর প্রায় ১৪ বিলিয়নই খরচ হয়েছে আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ দমনে৷
জেডএ/ এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
তালেবান: যাদের কারণে চাপের মুখে পাকিস্তান
ট্রাম্পের টুইটের পর হোয়াইট হাউস স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করার অন্যতম কারণ, পাকিস্তান তালেবান জঙ্গিদের সাহায্য করছে৷ কিন্তু কেন? পাকিস্তানের রাজনীতির সঙ্গে তালেবানের সম্পর্কই বা কী?
ছবি: Majid Saeedi
গোড়ার কথা
১৯৭৮ থেকে ’৯২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ পাশতুন জনজাতির যোদ্ধারা সে সময় রাশিযার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল৷ পরবর্তীকালে তারাই তালেবান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে৷ রাশিয়াকে ঠেকাতে সেই সময় পাকিস্তান এবং অ্যামেরিকা তালেবানকে সাহায্য করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/A. Khan
গৃহযুদ্ধ এবং তালেবান
১৯৯২ থেকে ’৯৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়৷ সেই সময় তালেবান ত্রমতার কাছাকাছি পৌঁছে যায়৷ অভিযোগ, তালেবানদের সেই উত্থানেও পাকিস্তান সাহায্য করেছিল৷ বস্তুত, বিস্তীর্ণ আফগানিস্তান জুড়ে তালেবান যে সরকার গঠন করেছিল, কেবল পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল৷ বিশ্বের অন্য কোনও দেশ তালেবান সরকারকে সমর্থন দেয়নি৷
ছবি: Majid Saeedi
৯/১১ এবং মার্কিন সৈন্য
নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে আল কায়দা হামলা চালানোর পর অ্যামেরিকা আল কায়দা এবং তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে৷ আফগানিস্তানে পৌঁছায় মার্কিন সৈন্য৷ আফগানিস্তানের হামিদ কারজাই সরকারকে সমর্থন জানায় অ্যামেরিকা এবং ন্যাটো বাহিনী৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সৈন্যরাও ন্যাটোর ছত্রছায়ায় তালেবানবিরোধী লড়াইয়ে শামিল হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পাকিস্তানের লাভ
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের প্রথম এবং প্রধান শত্রু আফগান তালেবান নয়, ভারত৷ এ কারণে ভারতের বিরুদ্ধে ‘প্রক্সি’ যুদ্ধ চালানোর জন্য তালেবান জঙ্গিদের পাকিস্তানের প্রয়োজন৷ ভারত বহুবার অভিযোগ করেছে যে, সীমান্তে আটক করা জঙ্গিদের সঙ্গে তালিবান যোগ আছে৷ তালিবান পাকিস্তানেই প্রশিক্ষণ নেয় বলেও অভিযোগ করে আসছে ভারত৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Shirzad
অন্য কূটনীতি
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তান ছাড়লে আফগানিস্তানের মৌলবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে পাকিস্তানকে পশ্চিমের সীমান্ত নিয়ে ভুগতে হতে পারে৷ তাই তালেবান প্রশ্নে ‘কৌশলগত’ অবস্থান নিতে হয় পাকিস্তানকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
পাকিস্তানেও তালেবান হামলা
গত এক দশকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা নষ্ট করতে একের পর এক আক্রমণ চালিয়েছে জঙ্গিরা৷ পাঁচ তারা হোটেল থেকে ভলিবল স্টেডিয়াম, বাজার থেকে সামরিক ঘাঁটি সর্বত্রই হামলা হয়েছে৷ বারবারই আঙুল উঠেছে তালেবানের দিকে৷ অভিযোগ, এতৎসত্ত্বেও পাকিস্তান তালিবানের প্রতি নরম থেকেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
মার্কিন হুমকি
ভারতসহ বেশ কিছু দেশ বার বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে৷ এতদিনে অ্যামেরিকা সে অভিযোগে শিলমোহর দিল৷ ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটের পর হোয়াইট হাউস জানিয়ে দিলো যে, পাকিস্তানকে তারা আর কোনও সামরিক সহায়তা দেবে না, কারণ, সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকা স্পষ্ট নয়৷