কর বাড়াও ও পেনশন কমাও – এই নীতিতে এবারের বিশ্বকাপের খরচ সামাল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়োজক রাশিয়া৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া ইভেন্টটি আয়োজনে খরচের বোঝা তাদের টানতে হবে বেশ কয়েক বছর৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ায় এখন ফুটবল ছাড়া কোনো কথাই নেই৷ শুধু আয়োজক হিসেবেই নয়, বিশ্বকাপে স্বাগতিকদের গতিময় ফুটবলও মন কেড়েছে সবার৷ কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে ছিটকে পড়লেও রাশিয়ার পারফরম্যান্স ফ্যানদের মাথা উঁচু করেছে৷
কিন্তু এসব ডামাডোল যে শেষ হবার সময় এসেছে! ১৫ জুলাই শেষ হবে এই মহাসমারোহ৷ বাড়ি ফিরবেন দেশের বাইরের ফুটবল ফ্যানরা৷ তখন আবার শুরু হবে স্বাভাবিক জীবন৷
বিশ্বকাপ ২০১৮: কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত
রাশিয়া বিশ্বকাপ চলছে৷ ইতোমধ্যে কয়েকটি বড় দল বাদ পড়লেও ফাইনাল অবধি বিশ্বকাপের উত্তেজনা থাকবেই৷ এখানে থাকছে এখন অবধি বিশ্বকাপের কয়েকটি স্মরণীয় মুহূর্তের ছবি৷
ছবি: picture-alliance/T. Goode
পেনাল্টি হিরো
ইংল্যান্ড অবশেষে কোনো বড় টুর্নামেন্টে পেনাল্টি শ্যুট-আউটে জয় পেলো৷ এজন্য সে দলের এরিক ডিয়ার (ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে) এবং গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড বিশেষভাবে ধন্যবাদ পেতে পারেন৷ রাশিয়ায় বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বের ম্যাচে নানা নাটকীয়তার পর পেনাল্টিতে জয় পায় গ্যারেথ সাউথগেটের দল৷
ছবি: picture-alliance/T. Goode
দুর্দান্ত ফিরে আসা
খেলার ইনজুরি টাইমে কাউন্টার অ্যাটাকের জন্য বেলজিয়ামের গোলরক্ষক থি ব্যঁ খ্যোর্থুয়ার বাড়িয়ে দেয়া বল দ্রুতই পৌঁছে যায় নেসার শ্যাদলির কাছে৷ তিনি সেই বল অসাধারণ নৈপুণ্যে জালে জড়ান৷ ফলে ৩-২ গোলে জাপানের বিরুদ্ধে জয় পেয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছায় বেলজিয়াম৷ অথচ, শুরুতে দুই গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল এশিয়ার দলটি৷
ছবি: Reuters/T. Hanai
নায়ক যখন গোলরক্ষক
ক্রোয়েশিয়া এবং ডেনমার্কের মধ্যকার নক-আউট পর্বের ম্যাচে দুই দলের গোলরক্ষকই লড়েছেন সমান তালে৷ উত্তেজনাপূর্ণ সেই ম্যাচে পেনাল্টি শ্যুট-আউটে হেরেছে ডেনমার্ক৷ ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ডানিয়েল সুবাসিত শ্যুট-আউটের তিনটি শট ফেরাতে সক্ষম হন৷ তাঁকে ছাড়া আর কাকে সেই ম্যাচের নায়ক বলা যায়!
ছবি: Reuters/C. Barria
স্পেনকে ফিরিয়ে নায়ক যিনি
ফিফা ব়্যাংকিংয়ে দুর্বল অবস্থানে থাকা রাশিয়া যে এই বিশ্বকাপে এত দূর অবধি আসবে, তা কে ভেবেছিল? ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের শুরুর ম্যাচে সৌদি আরবকে ৫-০ গোলে হারিয়ে দুর্দান্ত সূচনা করে স্বাগতিকরা৷ আর নক-আউট পর্বে স্পেনের মতো শক্তিশালী দলকে রুখে দিতে সক্ষম হয় দলটির গোলরক্ষক ইগর আকিনফেভের দক্ষতায়৷ পেনাল্টি শ্যুট-আউটে দু’টি শট রুখে ঘরের মাঠে নায়কে পরিনত হন তিনি৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
রোনাল্ডোর মানবিকতা
নকআউট পর্বে পর্তুগালের বিপক্ষে উরুগুয়ের দু’টি গোলই করেন এডিনসন কাভানি৷ স্বাভাবিকভাবে এমন খেলোয়াড়ের উপর অন্তত মাঠে ক্ষিপ্ত থাকার কথা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের৷ কিন্তু না, হলো উলটো৷ খেলার ৭৪ মিনিটে চোট পাওয়া কাভানি যখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে মাঠ ছাড়ছিলেন, তখন তাঁকে সহায়তায় এগিয়ে আসেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো৷ সে ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন শেষ হয় রোনাল্ডোদের৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
জার্মানিকে বিদায় করে দিল দক্ষিণ কোরিয়া
গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচের ইনজুরি টাইমে দুই গোল করে জার্মানিকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দেয় দক্ষিণ কোরিয়া৷ ফলে ১৯৩৮ সালের পর এই প্রথম গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়তে হলো বিশ্বকাপের আসরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা দল জার্মানিকে৷ দক্ষিণ কোরিয়াও অবশ্য বিদায় নিয়েছে, তবে মেক্সিকোকে নক-আউট পর্বে যেতে সহায়তা করেছিল তাদের জয়৷
ছবি: Reuters/J. Sibley
অবশেষে ‘আসল মেসি’র আবির্ভাব
গতবারের মতো এবারও মেসির উপর ভরসা রেখে আর্জেন্টিনার হাতে বিশ্বকাপ দেখার স্বপ্ন দেখেছিলেন অনেকে৷ তবে বিশ্বকাপ শুরুর পর মেসিকে ঠিক যেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না৷ পেনাল্টি মিস থেকে শুরু করে সহজ গোলের একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করেছেন তিনি৷ তবে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আসল মেসির দেখা পেলেন ভক্তরা৷ সেই ম্যাচে নিজের অপেক্ষাকৃত দুর্বল ডান পা দিয়ে চমৎকার এক গোল করেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/A. Morton
গোল্ডেন বুট জয়ের পথে হ্যারি কেন
পানামার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচের প্রথমার্ধে হ্যাটট্রিক করেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন৷ চলতি বিশ্বকাপে এখন অবধি তিনি গোল করেছেন ছয়টি৷ ছয়টির মধ্যে তিনটি গোলই এসেছে পেনাল্টি থেকে৷ তবে আসল কথা হলো, গোল্ডেন বুট জয়ের রেসে বেশ এগিয়ে তিনি৷ চার গোল করে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকু৷
ছবি: Reuters/M. Childs
শেষ বেলার সেই অবিস্মরণীয় গোল
যদিও এবারের বিশ্বকাপে জার্মানির পারফর্ম্যান্স ছিল যাচ্ছেতাই, তা সত্ত্বেও সুইডেনের বিপক্ষে খেলা শেষ হওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগে ফ্রি-কিক থেকে টনি ক্রুসের করা গোলটি ফুটবল ভক্তদের অনেক বছর মনে থাকবে৷ তবে দলের অন্য খেলাগুলোতে যেসব খেলোয়াড় দলকে ডুবিয়েছেন , তাঁদের মধ্যেও অন্যতম ছিলেন ক্রুস৷
ছবি: Reuters/
তারকার মেলায় পুটিন
ফুটবল ইতিহাসের জীবন্ত তারকাদের সঙ্গে এক ফ্রেমে বন্দি হন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনও (বাম থেকে দ্বিতীয়)৷ ছবিতে আছেন লোথার ম্যাথাউস (একেবারে বামে), পেলে এবং মারাদোনা (মাঝে), জে জে ওকোচা (একেবারে ডানে) এবং কানু (পেছন থেকে ডানদিকে)৷
ছবি: picture-alliance/dpa//TASS/M. Metzel
10 ছবি1 | 10
কিন্তু এর মাঝেই ৯২১ কোটি ইউরোর যে আর্থিক বোঝা চাপছে পুটিন সরকারের মাথায়, তা কিভাবে মোকাবেলা করবেন তারা?
প্রথমত, ২০১৮-তে রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এমনিতেই খুব বেশি হবার কথা ছিল না৷ সেখনে তা ২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে নেমে এখন ১ দশমিক ৯ ভাগ প্রাক্কলন করা হচ্ছে৷ ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধির গতি আরো শ্লথ হবার শঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
এর একটি কারণ অবশ্য সরকারের মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাড়ানোর ঘোষণা৷ পয়লা জানুয়ারি থেকে দেশটিতে ভ্যাট ১৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০ শতাংশ হচ্ছে৷ সিদ্ধান্তের পরই একটি ঋনাত্মক গতি দেখা গেছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে৷
এমনকি দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় পর্যন্ত বলছে, এই সিদ্ধান্ত প্রবৃদ্ধির রাশ টেনে ধরবে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়াবে৷ এর কারণ, গত চার বছর ধরে বেতনাদিও বাড়ছে না৷ তবে এই সিদ্ধান্তে সরকারি কোষাগারে প্রায় ৬২০ বিলিয়ন রুবল বা ৮৪০ কোটি ইউরো জমা করবে, যা বিশ্বকাপের খরচ (৯২১ কোটি ইউরো)-এর ঘাটতি অনেকটাই মেটাতে সক্ষম হবে৷
এদিকে, পেনশনের ওপর চাপ কমাতে চাকরিতে অবসরের বয়সসীমাও বাড়াতে চলেছে রাশিয়া৷ পুরুষদের ক্ষেত্রে ২০১৯ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে বয়স ৬০ থেকে ৬৫ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ২০৩৪ সালের মধ্যে বয়সসীমা ৫৫ থেকে ৬৩ করতে চলেছে তারা৷
রাশিয়ার শ্রমমন্ত্রী ম্যাক্সিম টোপিলিন বলেন যে, এই অর্থ পেনশন সুবিধা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে৷ এখন রাশিয়াতে গড়ে একেকজন মাসে ২০০ ইউরো করে পেনশনের অর্থ পান৷
তবে বয়সসীমা বৃদ্ধি নিয়ে এরই মধ্যে সাধারণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে৷
ফুটবলের জাদুর ঘর
মস্কোর হুন্দাই মোটরস্টুডিয়োতে গেল ৮ জুন উদ্বোধন হলো এমন এক জাদুঘরের, যেখানে এক ছাদের তলায় আছে পুরো বিশ্বকাপের ইতিহাস৷ ফুটবলের কিংবদন্তিরা আছেন, আরো আছে স্থিরচিত্র, ভিডিওচিত্র, চলতি আসরের ৩২ দলের জার্সিসহ কত কী!
ছবি: DW/M.Noman
এক সঙ্গে ৩২ দল
মস্কোর ফিফা ফুটবল জাদুঘরে কাঁচবন্দী এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ৩২ দলের জার্সি৷ তাতে যে লাল রঙের আধিক্য, সেটি তো বোঝাই যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M.Noman
সমর্থক যখন ‘তারকা’
সমর্থকদের প্রমাণসাইজের পোস্টার দেয়ালে সাঁটানো৷ যেখানে একাকার জার্মানি-ব্রাজিল-পর্তুগাল৷
ছবি: DW/M.Noman
যেখানে চোখ থাকে সবার
চলতি আসরের ৬৪ ম্যাচের ফলের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে জায়গা৷ শূন্যস্থানগুলো ভরে উঠছে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে৷
ছবি: DW/M.Noman
স্মরণীয় বল!
যেনতেন বল নয় এটি৷ বিশ্বকাপের রাশিয়া-সৌদি আরব উদ্বোধনী ম্যাচ হয়েছে এই ‘টেলস্টার ১৮’ দিয়ে৷ স্বাগতিকদের জন্য যে এটি পয়া, ৫-০ ব্যবধানের জয়ই সে ঘোষণা দিচ্ছে৷
ছবি: DW/M.Noman
পোস্টারে চোখ
২১ বিশ্বকাপের অফিসিয়াল পোস্টার ঝুলছে দেয়ালে৷ জাদুঘরে আসা দর্শনাথর্থীরা ইতিহাসকে মোবাইলবন্দী করার সুযোগ হাতছাড়া করেন কীভাবে!
ছবি: DW/M.Noman
ইতিহাস পরিক্রমা
ফুটবলের মতোই গোলাকৃতির এক প্রজেক্টরে বিশ্বকাপের ইতিহাসের ভিডিও দেখানো হচ্ছে অবিরাম৷ সাদা-কালো সময় থেকে টুর্নামেন্টের রঙিন সময়ে বিবর্তনের ধারা বর্ণনা সেখানে৷
ছবি: DW/M.Noman
বিশ্বকাপ বলের আদ্যন্ত
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বলের বিবর্তনও কি হয়নি! ১৯৩০ থেকে শুরু করে ২১ বিশ্বকাপের বল দেখলে তা বোঝা যায় স্পষ্ট৷ দেয়ালের গায়ে তারকারাশির মতো আলো ছড়াচ্ছে সে বলগুলো৷
ছবি: DW/M.Noman
রংধনুর উজ্জ্বলতা
আরো পোস্টার, আরো সমর্থক, আরো রং৷ বিশ্বকাপ রংধনুর উজ্জ্বলতা বেড়ে যায় সমর্থনের এই বৈচিত্র্যেই৷
ছবি: DW/M.Noman
তারকার অটোগ্রাফ
ফিফা জাদুঘরে এসেছিলেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি রবের্তো কার্লোস৷ সর্বকালের অন্যতম সেরা এই উইংব্যাকের অটোগ্রাফ সংরক্ষিত আছে সেখানে৷