1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জনদুর্ভোগ ও ভিআইপি

গোলাম মোর্তোজা
১২ মার্চ ২০১৯

পৃথিবীর আর কোনো দেশে লাল বাতি জ্বললে গাড়ি চলতে শুরু করে? কোনো দেশের কথা মনে করতে পারছি না৷ জানা আছে কারো? আফ্রিকার কিছু দেশে গেছি৷ কোথাও এমন দৃশ্য দেখেছি বলে মনে পড়ে না৷

Bangladesch Straßenverkehr in Dhaka
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman

পৃথিবীর এমন আর একটি দেশের নাম জানার চেষ্টা করছি, যে দেশের মন্ত্রী-এমপি-সচিব বা সরকারি অফিসের বড় কর্তাদের বড় বড় গাড়ি রাস্তার উলটো দিক দিয়ে চলে৷ মনে করতে পারছি না৷ জানেন কেউ?

বাংলাদেশে ‘ভিআইপি' শব্দটি বহুল ব্যবহৃত৷ কে ভিআইপি, আর কে ভিআইপি নয়, তা বোঝা বেশ কঠিন৷ প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির চলাচলের সময় অন্য যান চলাচলের জন্য রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ সাধারণ মানুষ জানেন উনারা ভিআইপি, নিরাপত্তার জন্যে রাস্তা বন্ধ করা জরুরি৷ খুশি না হলেও, মেনে নেন৷

এছাড়া ভিআইপি কারা? তারা কী সরকার নির্ধারণ করে দেওয়া ভিআইপি, না নিজেরা নিজেদের ভিআইপি ঘোষণা দিয়ে নিয়েছে?

ধরে নেই, মন্ত্রী-এমপিরা স্বীকৃত ভিআইপি? এমপিরা আইন তৈরি করেন৷ তাঁরা আইন তৈরি করেছেন, গাড়ি রাস্তার উলটো দিক দিয়ে চলতে পারবে না৷ তাঁরা এমন কোনো আইন তৈরি করেননি যে, তাঁদের গাড়ি উলটো দিক দিয়ে চলতে পারবে৷ কিন্তু তাঁদের অনেকের গাড়ি রাস্তার উলটো দিক দিয়ে চলে৷ সচিব বা সরকারি অফিসের কর্তারা কেন ভিআইপি? তাঁদেরও অনেকের গাড়ি কেন রাস্তার উলটো দিক দিয়ে চলে? প্রশ্নের উত্তর কেউ কখনো দিয়েছেন বলে মনে করতে পারি না৷

বসবাসের জন্যে পৃথিবীর অন্যতম নিকৃষ্ট নগর ঢাকা৷ এমন অপরিকল্পিত নগর পৃথিবীতে আর কয়টি আছে, সেটা কুইজের প্রশ্ন হতে পারে৷ দেড় থেকে দুই কোটি মানুষের শহরে কোনো গণপরিবহণ নেই৷ যা আছে তা থাকার চেয়ে না থাকা ভালো৷ যানজট এমন একটা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ভাষা দিয়ে তা বোঝানো প্রায় অসম্ভব৷

এমন দুর্বিসহ পরিবেশকে প্রতিদিন আরও দুর্বিসহ করে দেয় ‘ভিআইপি'রা৷ রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সগুলো যানজটে আটকে থাকে৷ ভিআইপিরা চলে যায় রাস্তার উলটো দিক দিয়ে৷ উলটো দিক দিয়ে চলতে গিয়ে, সামনে থেকে আসা গাড়িগুলোর গতি কমে যায়৷ ফলে পুলিশ প্রহরায় ভিআইপি চলে গেলে, দুই পাশে গাড়ির জট লেগে যায়৷

ঢাকা শহর যেহেতু মূলত দু'টি প্রধান সড়কের উপর নির্ভরশীল, বাইপাস রাস্তা নেই বললেই চলে৷ ফলে কোনো একটি রাস্তা আটকে বা উলটো দিক দিয়ে ভিআইপিরা চলাচল করলে, পুরো শহরে তার প্রভাব পড়ে৷ রাস্তায় গাড়ি আটকে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা৷

সম্প্রতি চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গেল৷ প্রাণ হারানো ৭০ জন নিয়ে হয়ত বেশি আলোচনা হয়েছে৷ হওয়ারই কথা৷ তবে প্রাণহানির বাইরে যারা পুড়ে গেছেন, যারা সর্বস্ব হারিয়েছেন, কয়েক সেকেন্ডের আগুনের আতঙ্কে যারা ট্রমার মধ্যে আছেন, তাদের কথা তেমন একটা আলোচনা হয় না৷ পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো অতি সরু৷ আগুন লাগলে বা বিপজ্জনক কিছু ঘটলে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ঢুকতে পারে না৷ যানজট তো থাকেই৷ আশপাশ দিয়ে যদি কোনো ভিআইপি চলাচল করেন, পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো প্রায় সারা দিনের জন্যে জট লেগে থাকে৷ ভিআইপিরা জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি করে চলাচল করেন, দুঃখ লাঘবের কোনো চিন্তা তাদের বিবেচনায় থাকে না৷ বুড়িগঙ্গা নদী দখল করে ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছেন ভিআইপিরাই৷ ঢাকা শহরের ভেতর দিয়ে যেমন ৫৪ টি খালের গল্প শোনা যায়, তেমনি ২০-২৫ বছর আগেও পুরান ঢাকায় অনেকগুলো পুকুর ছিল৷ ভিআইপিরা সেসব পুকুর দখল করে পার্ক বা বিল্ডিং বানিয়েছেন৷

গোলাম মোর্তোজা, সাংবাদিকছবি: Golam Mortoza

নতুন ঢাকাও গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে৷ এর জন্যেও দায়ী ভিআইপিরা৷ তারাই পরিকল্পনাহীন পরিকল্পনায় ‘উন্নয়ন' নাম দিয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করছেন৷ তাতে এক জায়গার জট আরেক জায়গায় হস্তান্তর হচ্ছে৷

এখন কিছু নিয়ম নীতির মধ্যে যদি আসা সম্ভব হয়, তবে জনদুর্ভোগ হয়ত কিছুটা কমতে পারে৷ প্রথমে দরকার সুস্পষ্ট নীতি, প্রয়োজনে আইন করে নির্ধারণ করতে হবে ভিআইপি কারা? প্রথমে ভিআইপি মর্যাদা দিতে হবে অ্যাম্বুলেন্সকে৷ যে-কোনো গাড়ি আটকে অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে হবে৷

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ ভিআইপি মর্যাদা পাবেন কিনা, নির্মোহভাবে তা নির্ধারণ করতে হবে৷

মন্ত্রীরা পুলিশ প্রহরা পেতে পারেন৷ অন্য গাড়ি দাঁড় করিয়ে বা উলটো দিক দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করতে হবে৷ এখনো যে সিদ্ধ আছে, তা নয়৷ এভাবে গাড়ি যাতে যেতে না পারে, ঘোষণা দিয়ে পুলিশকে সেই ক্ষমতা দিতে হবে৷ সাধারণ মানুষ যেভাবে জ্যামে আটকে থাকে, মন্ত্রী-সচিবরাও সেভাবে আটকে থাকবেন৷ লালবাতি, সবুজবাতির রসিকতা বন্ধ করতে হবে৷ পুরো শহর মনিটরিংয়ের জন্যে মন্ত্রী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবেন না, সিসিটিভি ক্যামেরার উপর নির্ভর করতে হবে, যা অত্যন্ত সহজ পদ্ধতি৷ এত কম খরচে এর চেয়ে বেশি সুবিধা আর কোনো কিছুতে পাওয়া যাবে না৷ ভালো মানের ক্যামেরা এবং তা যদি সচল থাকে, নগরের অপরাধ প্রবণতাও কমে যেতে পারে৷

তথাকথিত এসব ভিআইপিরা যদি নিয়ম মেনে চলেন, তাদের যদি নিয়ম মানতে বাধ্য করা যায়, তবে জনদুর্ভোগ কিছুটা হয়ত কমতে পারে৷ এতে জনদুর্ভোগ যতটা না কমবে, মানুষের মনের ক্ষোভ তার চেয়ে অনেক বেশি কমতে পারে৷

তথাকথিত যে ভিআইপিদের কথা লেখক লিখেছেন, তাঁরা কি কখনো নিয়ম মানতে বাধ্য হবেন? লিখুন নীচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ