মধ্য ভারতের ছোট্ট একটি গ্রামে হঠাৎ একটি স্কেটিং পার্ক গড়ে উঠল কীভাবে? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে যেতে হবে পান্না জেলার জনবার গ্রামে, যেখানে জার্মানির উলরিকে রাইনহার্ড এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
না আছে ট্রেনার, না আছে বিশেষ ট্রেনিং, তা সত্ত্বেও বাচ্চারা চমৎকার স্কেটবোর্ডিং করতে পারে৷ ভারতের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের মাঝখানে এই স্কেটিং পার্ক, যার নাম ‘জনবার ক্যাসল'৷ এই স্কেটিং পার্ক তৈরি হয়েছে এক জার্মান মহিলার প্রচেষ্টায়৷ উলরিকে রাইনহার্ড মধ্য ভারতের জনবার গ্রামের বাচ্চা-কাচ্চাদের জন্য এই স্কেটিং পার্কটি তৈরি করান একটি সামাজিক এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে৷
উলরিকে বললেন, ‘‘দেখা যাচ্ছে যে, ছোটরা এখন আগের চাইতে অনেক কম লাজুক৷ ওদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, ওরা যেন ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে – বলেছেন এক শিক্ষক৷ স্কুলে না গেলে স্কেটবোর্ডিং-ও করতে পারবে না – আমরা এই রুল চালু করার পর থেকে বাচ্চারা আগের চেয়ে অনেক বেশি নিয়মিতভাবে স্কুলে যেতে শুরু করেছে৷''
দুই বিদেশি ভলান্টিয়ার গ্যারি আর ইসাবেল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত৷ তারা এই চার সপ্তাহে ২৫ জন বাচ্চার দেখাশোনা করবে৷
ভীষণ অদ্ভুত পাঁচটি খেলা
একটি খেলায় প্রতিযোগীরা শুধু মুখ ভ্যাংচান৷ আরেকটাতে বেশি বেশি ঝাল খেয়ে অন্যদের হারানোর চেষ্টা করেন৷ জেনে নিন এমন কয়েকটি খেলার কথা যেগুলোতে জয়-পরাজয় নয়, নির্মল আনন্দ লাভই আসল কথা৷
ছবি: Getty Images/J. Li
ক্যাননবলিং
পানিতে আনন্দ করাই এই খেলার মূল উদ্দেশ্য৷ সুইমিং পুলে যত অদ্ভুতভাবে সম্ভব লাফিয়ে পড়া, পানি ছিঁটানো – এ সবেরই প্রতিযোগিতা হয় ক্যাননবলিংয়ে৷ খেলাটি অবশ্য নতুন নয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে নাকি একশ বছর আগেও হতো এ খেলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কাদায় সাঁতরানো
এ খেলার ইংরেজি নাম ‘বগ স্নর্কেলিং’৷ লম্বা কূপের মতো জায়গা হলেই শুরু করা যায় এ খেলা৷ কূপে খুব কাদা থাকতে হবে৷ সেই কাদায় মাথায় স্নর্কেল আর পায়ে ফ্লিপার লাগিয়ে শুরু করতে হবে সাঁতরে সেই কূপ পার হওয়ার চেষ্টা৷ ওয়েলসে ১৯৮৫ সাল থেকে চলছে এ খেলা৷ সেখানে বরফশীতল কাদাজলে অনেক আমুদে, সাহসী মানুষ এ খেলায় অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ঝাল খান আর হাসুন
যত খুশি ঝাল খাওয়ারও একটা প্রতিযোগিতা আছে৷ আজকাল বিশ্বের বিভিন্ন স্থানেই হয় এমন প্রতিযোগিতা৷ জার্মানির বার্লিনে হয় চিলি সস খাওয়ার প্রতিযোগিতা৷ ঝাল খেতে খেতে অসুস্থও হয়ে পড়েন অনেকে৷ প্রতিযোগীদের উৎসাহে তারপরও ভাটা পড়ে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চেসবক্সিং
১৩ বছর আগে নেহায়েত মজা করতেই দাবার সঙ্গে বক্সিং মিলিয়ে ‘চেসবক্সিং’ নামের মজার এক খেলা শুরু করেছিলেন হল্যান্ডের ইয়েপ রুবিং৷ ৬ রাউন্ড দাবা আর ৫ রাউন্ড বক্সিং, দুটো মিলে ‘চেসবক্সিং’৷ দাবায় একবার কিস্তিমাত করতে পারলে কিংবা বক্সিংয়ে প্রতিপক্ষকে একবার নক আউট করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হবে খেলা৷ খেলাটি এখন অনেক দেশেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stephanie Pilick
ভ্যাংচানো
প্রাচীন কালে ইংল্যান্ডের এগ্রেমন্ট শহরে নাকি বোকা লোকদের মাথায় ঘোড়ার লাগাম লাগিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা হতো৷ লোকটি রেগেমেগে নানা ধরণের মুখভঙ্গি করত আর সবাই তা দেখে হাসতো৷ ওখান থেকেই নাকি খেলাটির উৎপত্তি৷ আবার এ-ও কথিত আছে যে,টক আপেল খেতে গিয়ে অভিব্যক্তিতে যে পরিবর্তন আসে, তা দেখেই নাকি একদিন কারো মাথায় এসেছিল এমন এক খেলার আইডিয়া৷ এগ্রেমন্টে মুখ ভ্যাংচানোর খেলাটি চলছে প্রায় ৮০০ বছর ধরে৷
ছবি: Getty Images/J. Li
5 ছবি1 | 5
স্কেটিং পার্কের সঙ্গে গ্রামের বাকি দৃশ্যটা যেন ঠিক মিল খায় না৷ দিন শুরু হয় বাচ্চাদের পিটি, মানে ব্যায়াম দিয়ে৷ স্কেটিং পার্ক দেখে গ্রামবাসীরাও গোড়ায় হতভম্ব! জনবার গ্রামের বাসিন্দা রোশন লাল জানালেন, ‘‘ওরা যখন এটা তৈরি করতে শুরু করে তখন আমি সেখানে ছিলাম, ওদের সাথে কাজও করেছিলাম৷ জিনিসটা সম্পর্কে গোড়ায় আমার কোনো ধারণাই ছিল না, কিছুই জানতাম না৷ তৈরির সময়েও অনেক খটকা লাগত৷ ভেবেছিলাম, এর পরে হয়ত ওপরের ছাদ তৈরি হবে৷ শেষমেষ সব কিছু তৈরি হয়ে যাওয়ার পর উনি এখানে এসে খানিকটা স্কেটবোর্ডিং করলেন৷ তখন আমরা বুঝলাম যে, এটা একটা স্কেটিং পার্ক৷ উনি আমাদের বলেছিলেন যে, বাচ্চারা এখানে এলে তারা আরো ভালো করে পড়াশোনো করবে৷''
স্কেটিং পার্কের মটো হলো: গার্লস ফার্স্ট৷ প্রত্যেক সকালে তারাই প্রথম ‘মাঠে নামে'৷ উলরিকে এভাবে ছোটদের মধ্যে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের বোধটা জাগিয়ে তুলতে চান৷ মেয়েরা যখন স্কেটবোর্ডিং করে, তখন তাদের কেউ ডিসটার্ব করে না৷ হয় তারা অন্য কোনো মেয়ের সাহায্য নেয়, নয়ত নিজেরাই শিখে নেয়৷ ভলান্টিয়ার ইসাবেল বললেন, ‘‘আশ্চর্য, তাই না? ছোট ছোট চার বছরের বাচ্চারা যেভাবে তাদের দ্বিগুণ উচ্চতা থেকে স্কেটবোর্ড করে নামে৷ ওদের কোনো ভয় নেই, ছোটরা অত ভাবে-টাবে না, কাজটা করে ফেলে৷ কেননা ওদের ভয় নেই৷''
দেখা থেকে করা
জনবারের কিশোরী পিঙ্কি জানাল, ‘‘আমার এ-বিষয়ে কোনো ধারণাই ছিল না৷ একবার শুধু টেলিভিশনে দেখেছিলাম৷ ভাবলাম, আমিও একদিন করব৷ বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কত খরচ পড়বে৷ বাবা বলল, অনেক৷''
যে সাতটি খেলা মস্তিষ্কের জন্য ভালো
দাবা থেকে শুরু করে স্টারক্রাফট, এখানে থাকছে সাতটি কৌশলের খেলা যা ব্রেন বা মস্তিষ্কের জন্য ভালো৷ যারা ব্রেনের ব্যায়ামে আগ্রহী, তারা এগুলো খেলতে পারেন নিয়মিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
দাবা: খেলার রাজা
দাবা খেলার নামটা মূলত এসেছে ফার্সি শব্দ ‘শাহ’ থেকে, যার অর্থ রাজা৷ দাবার বোর্ড তৈরি হয়েছে ভারতে, তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময়ে৷ দু’জন খেলায়াড় একে অপরের বিপরীতে এই খেলায় অংশ নিতে পারেন৷ খেলায় জিততে হলে প্রতিপক্ষের রাজাকে এমনভাবে ‘চেক’ দিতে হয়, যাতে তার পালানোর কোনো উপায় না থাকে৷ এই ‘চেক’ দেয়াকে বলা হয় ‘কিস্তি মাত’৷
ছবি: MEHR
গো: এশিয়ায় তৈরি
‘গো’ খেলাটি সৃষ্টি হয়েছে চীনে৷ তবে এর উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে কোরিয়া এবং জাপান৷ কালো এবং সাদা পাথর দিয়ে একটি বোর্ডের উপর খেলাটি খেলতে হয় যেখানে ১৯টি অনুভূমিক এবং ১৯টি উল্লম্ব রেখা টানা থাকে৷ বোর্ডের অধিকাংশ অংশ যে দখলে রাখতে পারবে, সেই বিজয়ী৷
ছবি: Imago/Xinhua
শোগি: জাপানের দাবা
দাবার জাপানি সংস্করণ শোগিতে বোর্ডটি নয়টি মাঠে ভাগ করা থাকে৷ তবে ছোট বা বড় বোর্ডও পাওয়া যায়৷ দাবার সঙ্গে এটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে, গুটিগুলো খেলোয়াড়ের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া নেই৷ অর্থাৎ উভয়েই সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন৷ তবে উদ্দেশ্য একই, রাজাকে ‘চেক’ দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Sasahara
চেকারস: লাফান এবং চুরি করুন
চেকারবোর্ড দেখতে দাবার বোর্ডের মতো৷ তবে খেলার নিয়ম পুরোপুরি ভিন্ন৷ এখানে একটি গুটি আড়াআড়িভাবে একঘর পর্যন্ত সরানো যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি প্রতিপক্ষের একটি গুটিকে ডিঙাতে পারে৷ আর ডিঙানো গুটিটি যে ডিঙিয়েছে তার হয়ে যাবে৷ এভাবে প্রতিপক্ষের সবগুটি নিতে পারলে জয় আসবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Bouys
টিক-টেক-টো: সার্কেল অথবা স্কয়ার?
খেলাটার বাংলা নাম ‘কাটা-কুটি’৷ দীর্ঘ ভ্রমণের পথে দ্বাদশ শতক থেকে চলে আসা এই খেলাই সম্ভবত সেরা৷ এর জন্য আপনার শুধু একটি পেন্সিল এবং এক টুকরো কাগজ দরকার৷ কাগজের উপরে আঁকা নয়টি ঘরের মধ্যে দু’জন খেলোয়াড় ক্রস বা সার্কেল আঁকেন৷ যে খেলোয়াড়টি আগে একইরকম সংকেত দিয়ে অনুভূমিক, উল্লম্ব কিংবা আড়াআড়িভাবে তিনটি ঘর ভরতে পারবে, সেই বিজয়ী৷
ছবি: imago/J. Tack
সিভিলাইজেশন: বোর্ড থেকে স্ক্রিনে
শুরুতে বোর্ড গেম হিসেবে চালু হওয়া ‘সিভিলাইজেশন’-এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালে৷ খেলার ধারণা জটিল ছিল: একটি সিভিলাইজেশনকে সেই লৌহযুগের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে টিকে থাকতে হবে৷ সাতজন খেলোয়াড় একসঙ্গে এটি খেলতে পারে৷ আর একেকটি গেমের দৈর্ঘ্য হতে পারে দশ ঘণ্টা পর্যন্ত৷ ১৯৯১ সালে ‘সিভিলাইজেশন’ কম্পিউটার গেম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷
ছবি: 2007 Free Software Foundation, Inc.
স্টারক্রাফট: অবসরের খেলা
কারো কারো কাছে এটা হয়ত নিখাদ বিনোদন, তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘স্টারক্রাফট’ হচ্ছে অবসর সময়ের জন্য উপযোগী জাতীয় খেলা৷ ‘রিয়েল টাইম স্ট্র্যাটেজি’ খেলাটি চালু হয় ১৯৯৮ সালে৷ আর তখন থেকেই এটি অন্যতম জনপ্রিয় কম্পিউটার গেম হিসেবে বাজার দখল করে আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
7 ছবি1 | 7
ছেলেরা তখন বাঁশের স্কুলবাড়িতে বসে গ্যারির কাছ থেকে ইংরেজি শিখছে৷
জনবার স্কুলের শিক্ষক ঈশ্বরদীন সাধু জানালেন, ‘‘মেয়েরা আগের চাইতে অনেক বেশি নিয়মিতভাবে স্কুলে আসে৷ ওদের শৃঙ্খলা আছে আর ওরা পড়াশুনো সম্পর্কেও অনেক বেশি আন্তরিক৷''
জনবার এমন একটি জায়গা, যেখানে আগের প্রজন্মের মানুষজন নিরক্ষর৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও পরিবর্তন আসছে, বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে৷ তারা নিজেদের ওপর আগের চেয়ে অনেক বেশি আস্থা রাখে৷
জনবার স্কুলের ছাত্রী পুজা খুশওয়াহা বলল, ‘‘আমি আরো পড়াশুনো করার জন্য পান্নায় যাব৷ আমার বাড়ির লোক আমি যেখানে পড়তে যেতে চাই, আমাকে সেখানেই পাঠাবে৷''
জনবারের একশ'র বেশি বাসিন্দারা একটা বিশাল পরিবর্তন দেখছেন৷ মহিলা হওয়ার অর্থ আর শুধু চাষবাস বা রান্নার কাজ নয়৷
জনবারের বাসিন্দা পান্না দেবী বললেন, ‘‘ছোটদের আচার-ব্যবহারেও পরিবর্তন এসেছে৷ তারা এখন স্কুলে যাচ্ছে৷ আগে তারা সারাদিন মাঠেঘাটে খেলে বেড়াত৷ আজ তারা স্কুলে যাচ্ছে৷ ওদের কথাবার্তাও অনেক ভালো হয়েছে৷''
ক্রাউড ফান্ডিং ছাড়াও প্রখ্যাত চীনা শিল্পী আই ওয়ে ওয়ের মতো শিল্পীরাও উলরিকেকে তাঁর স্কেটিং পার্ক প্রকল্প সমাপ্ত করতে সাহায্য করেছেন৷ এখন স্থানীয় সরকারও উলরিকেকে এলাকার অন্যান্য গ্রামে এই ধরনের প্রকল্প গড়ে তুলতে সাহায্য করতে চান৷