জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে ক্ষমতায় থাকতে চাইলে, দমন-পীড়ন ছাড়া উপায় থাকে না৷ আর এই দমন-পীড়ন শুরু হয় মূলত বিরোধীদলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উপর৷ তারপর তা সমাজের অন্যান্য শ্রেণি ও পেশার মানুষের উপর প্রয়োগ হতে থাকে৷
বিজ্ঞাপন
এমন অনাচারের ফলে সমাজে নানা রকমের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়৷ বেড়ে যায় গুম ও খুনের ঘটনা৷ সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়, এই গুম-খুনের অভিযোগ উঠতে থাকে রাষ্ট্রীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধে৷ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, দলের অঙ্গ সংগঠন, ছাত্র সংগঠন নানা রকমের অন্যায়-অনিয়ম, দুর্নীতি, ঠিকাদারি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে৷ অন্যদিকে দমন-নিপীড়নে বিরোধীদল দূর্বল হয়ে পড়ায়, এ সবের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ থাকে না৷ সামগ্রিকভাবে দেশে আইনের শাসন বলতে কিছু থাকে না৷ জনমানুষের জীবন হয়ে পড়ে চরম নিরাপত্তাহীন৷ ক্ষমতাসীনদের আচার-আচরণ-দাম্ভিকতায় মানুষ অতীষ্ট হয়ে ওঠে৷ কিছু অবকাঠামোগত দৃশ্যমান উন্নয়নের কথা বলে ক্ষমতাসীনরা তাঁদের যাবতীয় অপরাধ আড়াল করতে চান৷
গত সাত-আট বছরে মোটামোটিভাবে বাংলাদেশে এমনই একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে৷ এমন অবস্থায় সাধারণত প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন সমাজের অগ্রসর মানুষেরা৷ এর মধ্যে লেখক-শিল্পী-শিক্ষক-সাংবাদিক – অনেকেই থাকেন৷ তবে গণমাধ্যমই এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী নাগরিক সমাজের ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করছে৷
‘‘আল্লাহ’র নামে আর কোনো হত্যাকাণ্ড নয়’’
বাংলাদেশে মুক্তমনাদের উপর হামলা নিয়ে বার্লিনে মানববন্ধনে প্রদর্শন করা প্ল্যাকার্ডের ছিল বিশেষ কিছু বার্তা৷ চলুন সেগুলো দেখে নেয়া যাক৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতাকে ‘না’ বলুন’’
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতার কারণে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ৷ তাই এই বার্তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ৷ আরেকটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘ধর্মীয় সন্ত্রাসকে আপনার মুখ বন্ধ করতে দেবেন না৷’’
ছবি: DW/A. Islam
‘‘আল্লাহ’র নামে কোনো হত্যাকাণ্ড নয়’’
এই বার্তাটাও পরিষ্কার৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ধর্মীয় মৌলবাদীদের হামলার শিকার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী (টুটুল) বলেছিলেন, ‘‘আল্লাহু আকবর’’ বলে তাঁকে কোপানো হয়েছিল৷ বার্লিনে মানববন্ধনে আরেকটি প্ল্যাকার্ডে আল্লাহ’র জায়গায় সৃষ্টিকর্তার কথা উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘ধর্মভিত্তিক সহিংসতা বন্ধ কর’’
ধর্মভিত্তিক সহিংসতা বন্ধের দাবি জানান মানববন্ধনে অংশ নেয়া এক প্রবাসী বাঙালি৷ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিরও বিপক্ষে অবস্থান তাঁর৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘ধর্মীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরব হোন’’
ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্দে সরব হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এই প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে৷
ছবি: DW/A. Islam
বাংলা প্ল্যাকার্ড
বাংলা ভাষায় লেখা প্ল্যাকার্ডও প্রদর্শন করা হয়েছে মানববন্ধনে৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘নাস্তিকতার জন্য মৃত্যু নয়’’
নাস্তিকতা কারো মৃত্যু বা কারাভোগের কারণ হতে পারে না, এমন প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছেন একাধিক ব্যক্তি৷ মানবন্ধনে অংশ নেয়াদের সবাই নাস্তিক নন, তবে তাঁরা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘শব্দ হত্যা করে না, মানুষ করে’’
গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার, লেখক অভিজিৎ রায়ের ছবির সঙ্গে এই বাক্যটি লেখা প্ল্যাকার্ডও ছিল বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে৷ চলতি বছর বাংলাদেশে খুন হয়েছেন চারজন ব্লগার এবং একজন প্রকাশক৷
ছবি: DW/A. Islam
7 ছবি1 | 7
নাগরিক সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করার মোক্ষম পন্থা
দমনে-নিপীড়নে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণে আনার পর, সরকারের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই নাগরিক সমাজ৷ তাঁরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন৷ যেহেতু নাগরিক সমাজ বিবেকবান মানুষ হিসেবে পরিচিত থাকেন, সেহেতু তাঁদের প্রতিবাদের প্রভাব মানুষের উপর পড়ে৷ মানুষ সাহসী হয়ে উঠতে থাকে৷
বাংলাদেশে বর্তমানে বিরোধী দল বলতে কিছু নেই৷ দমনে-পীড়নে বিএনপি ছন্নছাড়া৷ এরশাদের জাতীয় পার্টি কোনো দলের পর্যায়েই পড়ে না৷ এদের ‘তোষামোদী দল' বলা যেতে পারে৷ তাছাড়া সরকারের নেতিবাচক, খারাপ বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কোনো প্রতিবাদ নেই৷ প্রতিবাদ একমাত্র আসছিল নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে৷ বিশেষ করে সরকারের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সাংবাদিক, তথা গণমাধ্যম৷ এর মধ্যে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিল টেলিভিশনের রাজনৈতিক আলোচনা অনুষ্ঠান ‘টকশো'৷
তাই বিরোধী দল নিয়ন্ত্রণের পর, সরকারের দায়িত্ব হয়ে পড়ে গণমাধ্যম তথা নাগরিক সমাজ নিয়ন্ত্রণ, টকশো নিয়ন্ত্রণ৷ সরকার মনে করে, নাগরিক সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করার এটাই সবচেয়ে উত্তম পন্থা৷
বর্তমানে দেশে প্রতিটি মানুষের জীবনই নিরাপত্তাহীন৷ আর গণমাধ্যম কর্মীদের জীবন আরও বেশি নিরাপত্তাহীন৷ একের পর এক ব্লগারের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সেই নিরাপত্তাহীনতার কিছুটা প্রকাশ দেখা গেছে৷ বাস্তবে গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর৷ ব্লগারদের উপর ক্ষিপ্ত সমাজের ছোট ধর্মীয় উন্মাদ একটি অংশ৷ সত্যি কথা বলতে কি, গণমাধ্যম কর্মীদের উপর এই ধর্মীয় উন্মাদরা তো ক্ষিপ্তই, তার চেয়ে বেশি ক্ষিপ্ত সরকার, সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী৷ ফলে তাদের বিপদ বহুবিধ৷ ব্লগার, প্রকাশকদের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সরকার অন্যদের ভয় দেখাতে চেয়েছে যে, পরিণতি এমন হলে কিছু করার থাকবে না৷ এর সঙ্গে সাংবাদিক, সম্পাদকদের হত্যার হুমকি, গুমের হুমকি-প্রচেষ্টা তো আছেই৷ ফলে কিছু গণমাধ্যম কর্মী অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছেন৷ গণমাধ্যম মালিকদের যেহেতু আরও অন্য ব্যবসা আছে, ফলে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে-হচ্ছে ভিন্ন পন্থায়৷ কাউকে কাউকে অন্য ব্যবসায় সুবিধা দেয়া হয়েছে-হচ্ছে৷ আবার কারো অন্য ব্যবসায় সমস্যা তৈরি করে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে-হচ্ছে৷ যে সব গণমাধ্যম কর্মী এত প্রতিকৃলতার মধ্যেও সত্য লিখছিলেন, সত্য বলছিলেন, তাঁদেরও নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে নানা পন্থা অবলম্বণ করা হচ্ছে৷ এছাড়া দলীয় মাস্তানদের দিয়ে অনেকের চরিত্রহনন করানো হচ্ছে, মৌখিকভাবে মালিকদের চাপ দিয়ে টকশোতে অনেককে নিষিদ্ধ করানো হয়েছে, অনেকের লেখা পত্রিকাগুলো ছাপাও হচ্ছে না৷ এমনকি বিপদে পড়ার ভয়ে অনেক পত্রিকা নিজেরাই ‘সেন্সর' করছে৷ প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের বিজ্ঞাপণ বন্ধ করিয়ে দিয়ে অন্যদের ভয় দেখানো গেছে৷ এখানেই শেষ নয়৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে কারো কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এক ধরণের ভিতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে৷ তারপরও পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না৷ সরকার অবশ্য নানা উপায়ে এই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা অব্যহত রেখেছে৷
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের নয়া কৌশল
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দু’টি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানি৷ না, এমনিতেই নয়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এমন সিদ্ধান্ত৷ এই কর্তৃপক্ষ চায় গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে, এক ভিন্ন উপায়ে৷
ছবি: DW
শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো
প্রথম আলো পত্রিকার প্রচার সংখ্যা পাঁচ লাখ বলে দাবি করা হয়৷ এটি বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক৷ অনলাইনেও পত্রিকাটি সমান পাঠক প্রিয়৷
ছবি: DW
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপন বন্ধ
গত ১৬ই আগষ্টের পর থেকে পত্রিকাটিতে নির্দিষ্ট কিছু বিজ্ঞাপন কমে যায়৷ বিশেষ করে মোবাইল ফোন ও কহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রথম আলোতে তাদের পণ্য এবং সেবার বিজ্ঞাপন দেয়া কার্যত বন্ধ রেখেছে৷
ছবি: DW
বিজ্ঞাপনের তারতম্য
জুলাই মাসে প্রথম আলো গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলা লিংক, এয়ারটেল, টেলিটক, প্যাসিফিক টেলিকম এবং ইউনিলিভার থেকে বিজ্ঞাপন পেয়েছে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৩০ হাজার ৭০০ টাকার৷ আর সেপ্টেম্বর মাসে পেয়েছে মাত্র ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিজ্ঞাপন৷ রায়ান্স আর্কাইভস থেকে পাওয়া গেছে এই তথ্য৷
ছবি: DW
নয় কোটি টাকার বিজ্ঞাপন কমে গেছে
গ্রামীণ ফোনের ভাষ্য অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষে নির্দেশে বন্ধ হয়েছে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারে বিজ্ঞাপন৷ রায়ান্স আর্কাইভসের হিসেব অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে প্রথম আলো মোট বিজ্ঞাপন পায় ২৪ কোটি ৮৭ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার৷ সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আলো মোট বিজ্ঞাপন পায় ১৫ কোটি ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৯০০ টাকার৷ জুলাই মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আলো ৯ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন কম পেয়েছে৷
ছবি: DW
ক্ষতির মুখে ডেইলি স্টারও
বিজ্ঞাপনে ধস নেমেছে প্রথম আলোর সহযোগী ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারেও৷ পত্রিকাটিতে জুলাই মাসে গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলা লিংক, এয়ারটেল, টেলিটক, প্যাসিফিক টেলিকম এবং ইউনিলিভার থেকে বিজ্ঞাপন পেয়েছে মাসে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ টাকার৷ আর সেপ্টেম্বর মাসে পেয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বিজ্ঞাপন৷ ডেইলি স্টার বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক৷
ছবি: DW
কাদের নির্দেশে বন্ধ হচ্ছে বিজ্ঞাপন?
ডয়চে ভেলেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে গ্রামীণ ফোন ‘কর্তৃপক্ষ’ বলতে কাদের বুঝিয়েছে, তা পরিষ্কারভাবে জানায়নি৷ তবে আল-জাজিরা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে৷
ছবি: DW
6 ছবি1 | 6
ঘুস দিয়ে অথবা ভয়-ভিতি দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা
লেখক-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীদের নিয়ন্ত্রণের জন্যে স্বৈরশাসকরা দু'টি উপায় অবলম্বন করে থাকে৷ এক. সুযোগ-সুবিধা, অর্থ-সম্পদ দিয়ে৷ দুই. ভয় দেখিয়ে৷ অর্থ-সম্পদ দিয়ে নাগরিক সমাজের অনেককে পক্ষে নেয়ার প্রবণতা আইয়ুব খানের সময় থেকে দেখা গেছে৷ বাংলাদেশে সামরিক শাসক জিয়াউর রাহমানও নাগরিক সমাজের অনেককে পদ-পদবি দিয়ে পক্ষে নিয়েছিলেন৷ তবে নাগরিক সমাজের বড় একটি অংশের চরিত্র দুষিত করে দিয়েছেন সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ৷ মন্ত্রীত্ব, পদ-পদবি, ঢাকায় প্লট বাঅর্থ দিয়ে নাগরিক সমাজের অনেককে কাছে টেনে নিয়েছিলেন এরশাদ৷ যাঁদের নিতে পারেননি, তাঁদের উপর জুলুম-নির্যাতন করেছেন৷
বর্তমানে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে বা পাবেন এই লোভে নাগরিক সমাজের বড় একটি অংশ সরকারের দুর্নীতি-অন্যায়-অনৈতিক কর্মকাণ্ড সমর্থন করছেন৷ যাঁরা এখনও সত্য কথা বলছেন, লিখছেন, তাঁদের নানা রকমের ভয়-ভিতি দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে৷ কেউ একজন নিজে ভয় না পেলে, সন্তানদের কথা বলে ভয় দেখানো হচ্ছে৷ দেশে যেহেতু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বলতে কিছু নেই, নেই আইনের শাসন, বিপদে পড়লে আশ্রয়ের জায়গাও নেই, সেহেতু অনেকে নিজে থেকেও সতর্ক হয়ে গেছেন৷ হিসেব করে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করছেন৷ চোখের সামনে অন্যায় হতে দেখছেন, কিন্তু বলছেন না, প্রতিবাদ করছেন না৷ আর যিনি বলতে চান, তাঁকে বলার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না৷ পত্রিকাগুলিও তাঁর লেখা ছাপতে অপারগতা প্রকাশ করছে৷
লোভি-নীতিভ্রষ্ঠ একদল তোষামোদকারী ভোটারবিহীন নির্বাচন থেকে শুরু করে, গুম-খুন, সন্ত্রাস, ব্যাংক-শেয়ার বাজার লুট – এ সব অপকর্মকে ভালো কর্ম বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন৷ সব কিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত খারাপ সময় অতিক্রম করছে৷
বন্ধুরা, গোলাম মোর্তোজার সঙ্গে আপনি কী একমত? আমাদের লিখে জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার শিকার যারা
চলতি বছর ইসলামপন্থিরা একের পর এক হামলা চালিয়ে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷ চলুন জানা যাক ২০১৫ সালের কবে, কারা হামলার শিকার হয়েছেন...৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্লগার খুন
একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হন ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায়৷ কমপক্ষে দুই দুর্বৃত্ত তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ এসময় তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন৷ বাংলাদেশি মার্কিন এই দুই নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’৷ পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
বাড়ির সামনে খুন
ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয় ঢাকায়, গত ৩০ মার্চ৷ তিন দুর্বৃত্ত মাংস কাটার চাপাতি দিতে তাঁকে কোপায়৷ সেসেময় কয়েকজন হিজরে সন্দেহভাজন দুই খুনিকে ধরে ফেলে, তৃতীয়জন পালিয়ে যায়৷ আটকরা জানায়, তারা মাদ্রাসার ছাত্র ছিল এবং বাবুকে হত্যার নির্দেশ পেয়েছিল৷ কে বা কারা এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে জানা যায়নি৷ বাবু ফেসবুকে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লিখতেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সিলেটে আক্রান্ত মুক্তমনা ব্লগার
শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ গত ১২ মে সিলেটে নিজের বাসার কাছে খুন হন নাস্তিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস৷ ভারত উপমহাদেশের আল-কায়েদা, যাদের সঙ্গে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সম্পর্ক আছে ধারণা করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷ দাস ডয়চে ভেলের দ্য বব্স জয়ী মুক্তমনা ব্লগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/EPA/Str
বাড়ির মধ্যে জবাই
ব্লগার নিলয় চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি নিলয় নীল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, হত্যা করা হয় ঢাকায় তাঁর বাড়ির মধ্যে৷ একদল যুবক বাড়ি ভাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ৮ আগস্ট তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ নিজের উপর হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় পুলিশের সহায়তা চেয়েছিলেন নিলয়৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে সহায়তা করেনি৷ ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে, তবে তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
জগিংয়ের সময় গুলিতে খুন বিদেশি
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে জগিং করার সময় ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় খুন হন ইটালীয় এনজিও কর্মী সিজার তাবেলা৷ তাঁকে পেছন থেকে পরপর তিনবার গুলি করে দুর্বৃত্তরা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে জিহাদিদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা একটি সংস্থা৷ তবে বাংলাদেশে সরকার এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে ‘এক বড় ভাইয়ের’ তাঁকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)
রংপুরে নিহত এক জাপানি
গত ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন হন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও৷ মুখোশধারী খুনিরা তাঁকে গুলি করার পর মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়৷ ইসলামিক স্টেট এই হত্যাকাণ্ডেরও দায় স্বীকার করেছে, তবে সরকার তা অস্বীকার করেছে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না যে তাঁর দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীটির উপস্থিতি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হোসনি দালানে বিস্ফোরণ, নিহত ১
গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হোসনি দালানে শিয়া মুসলমানদের আশুরার প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণে এক কিশোর নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন৷ বাংলাদেশে এর আগে কখনো শিয়াদের উপর এরকম হামলায় হয়নি৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট, তবে সরকার সে দাবি নাকোচ করে দিয়ে হামলাকারীরা সম্ভবত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি-র সদস্য৷ সন্দেহভাজনদের একজন ইতোমধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ঢাকায় প্রকাশক খুন
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় দু’টি স্থানে কাছাকাছি সময়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়৷ এতে খুন হন এক ‘সেক্যুলার’ প্রকাশক এবং গুরুতর আহত হন আরেক প্রকাশক ও দুই ব্লগার৷ নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের সঙ্গে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার-আল-ইসলাম’ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
প্রার্থনারত শিয়াদের গুলি, নিহত ১
গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশের বগুড়ায় অবস্থিত একটি শিয়া মসজিদের ভেতরে ঢুকে প্রার্থনারতদের উপর গুলি চালায় কমপক্ষে পাঁচ দুর্বৃত্ত৷ এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং অপর তিন ব্যক্তি আহত হন৷ তথকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা দাবি করা স্থানীয় একটি গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷