নতুন আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী দুই দশকে দেড়গুণ বেড়ে পাকিস্তানের জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি ৭৮ লাখে৷ একদিকে সম্পদের অপ্রুতলতা, অন্যদিকে আদমশুমারির স্পষ্টতা নিয়ে প্রদেশগুলোর মুখোমুখি অবস্থান, জন্ম দিয়েছে নতুন বিতর্কের৷
বিজ্ঞাপন
৭০ বছর আগে যখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, তখন এর জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৩ কোটি ৩৭ লাখ৷ পরিসংখ্যান বলছে, পাকিস্তানের বড় বড় শহর, পশ্চিমের প্রদেশ এবং আফগান সীমান্তে অবস্থিত আদিবাসী এলাকাগুলোতে জনসংখ্যা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি৷
কিন্তু এই আদমশুমারির তথ্য সঠিক কিনা, সে নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দল৷ ফলে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের এই হুমকি কীভাবে সামাল দেয়া হবে, সে নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন সমাজবিজ্ঞানীরা৷
ছোট প্রদেশগুলো দাবি করছে ইসলামাবাদে অবস্থিত পাকিস্তানের ফেডারেল সরকার এই আদমশুমারির তথ্য কোনোভাবে ‘প্রভাবিত' করেছে৷ রাজনীতিবিদরা মনে করেন, আদমশুমারিতে যা দেখানো হয়েছে, তার চেয়ে তাদের প্রদেশগুলোর সত্যিকার জনসংখ্যা আরো অনেক বেশি৷
কিন্তু এমন মনে করার কারণ কী? তাঁরা বলছেন, জনসংখ্যার হিসেব অনুযায়ীই বরাদ্দ হবে বাজেট৷ ফলে জনসংখ্যা কম দেখিয়ে যাতে অর্থবরাদ্দও কম দেয়া যায়, সেটিই ফেডারেল সরকারের উদ্দেশ্য৷
সাবেক অর্থমন্ত্রী ড. মুবাসির হাসান বলছেন, ‘‘বাজেটের একটি বড় অংশ বরাদ্দ থাকে সেনাবাহিনীর জন্য৷ বাকিটা পুঁজিবাদী, সামন্তবাদী এবং আমলারা ভাগাভাগি করে নিয়ে যায়৷ আমরা যদি প্রতিরক্ষা বাজেট না কমাই, সামন্তবাদ উচ্ছেদ না করি এবং জমি বণ্টন না করে দেই, তাহলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অসংখ্য সমস্যা আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠবে৷''
পাকিস্তানে সাধারণ মানুষের জীবন
আলোকচিত্রী মালোনো টে ২০১৪ সালে পাকিস্তানে গিয়ে সেখানকার সাধারণ মানুষদের জীবনযাত্রার ছবি তোলেন৷ ‘‘পাকিস্তানের প্রেমে পড়ে যেতে বেশি সময় লাগে না,’’ বলেছেন এই জার্মান শিল্পী৷
ছবি: Manolo Ty
‘আজকের পাকিস্তান’
জার্মান আলোকচিত্রী মালোনো টে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন ছয় সপ্তাহের জন্য৷ সিন্ধ, বালুচিস্তান, পাঞ্জাব আর খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ সফর করে ১৫ হাজারের বেশি ছবি তোলেন তিনি৷ তার মধ্যে ২৭৭টি ছবি বেছে নিয়ে তিনি তাঁর ‘পাকিস্তান নাও’ বইটি প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: Manolo Ty
করাচির সন্ধ্যা
করাচি শহরে তাপমাত্রা যখন ৪৫ ছুঁয়েছে, তখন সন্ধ্যার দিকে মানুষজন পরিবারের সকলকে নিয়ে সাগরের তীরে বসে মুখরোচক খাবার খান আর অপেক্ষা করেন, পরের ঢেউটি কখন আবার খালি পায়ের নীচে শীতল আঁচল পেতে দিয়ে যাবে৷
ছবি: Manolo Ty
‘আজ আমি স্বাধীন...’
মালোনো টে-র বক্তব্য হলো, পশ্চিমি মিডিয়ায় পাকিস্তানের মহিলাদের সারাক্ষণ পারিবারিক সহিংসতার শিকার হিসেবে দেখানো হয়৷ এই ছবিতে যে শিক্ষিতা তরুণীকে দেখা যাচ্ছে, তিনি কিন্তু কোনো বাধা-বাঁধন মানতে রাজি নন৷
ছবি: Manolo Ty
কনের সাজে...
পাকিস্তানে অনেক বিবাহবাসরে যাবার আমন্ত্রণ পেয়েছেন মালোনো টে৷ এত অতিথির ভিড়, এত খাওয়াদাওয়া, নাচগান - বিয়ে তো নয়, যেন উৎসব বলে মনে হয়েছে মালোনোর!
ছবি: Manolo Ty
ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ...
...যদিও তাঁদের অনেকেরই ভগ্নদশা৷ নয়তো মকলি কবরখানার আয়তন হলো ১০ বর্গকিলোমিটার; এখানে পাঁচ লাখ কবর ও স্মৃতিসৌধ আছে৷ ১৯৮১ সালে এই গোরস্তানটিকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷ এখানে চতুর্দ্দশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর স্থাপত্যের বিভিন্ন নিদর্শন রক্ষিত আছে৷
ছবি: Manolo Ty
জাহাজ ভাঙা
বালুচিস্তানের গড়ানিতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ড আছে৷ একটা জাহাজ ভাঙতে এখানকার কর্মীদের তিন মাস সময় লেগে যায়৷
ছবি: Manolo Ty
তুলোর মতো হালকা!
কাপাস তুলো নিয়ে যাওয়ার ট্রাকগুলোকে যেভাবে বোঝাই করা হয়, তাতে তারা হাইওয়ের একটা লেনের বদলে প্রায় দুটো লেন জুড়ে চলে!
ছবি: Manolo Ty
পাকিস্তানের সংখ্যালঘু
মানোলো টে-র বইতে পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের জীবনও দেখানো হয়েছে৷ এই ছবিতে সিন্ধ প্রদেশের কিছু হিন্দু মহিলাদের দেখা যাচ্ছে৷ এরা বাস করেন সিন্ধু নদীর তীরে সক্কর শহরে৷ মানোলো এদের অতিথি হয়েছিলেন৷
ছবি: Manolo Ty
তুলে আছাড়
পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলে কুস্তি খেলা খুব জনপ্রিয়৷ বাৎসরিক মেলা কি পরবে কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷
ছবি: Manolo Ty
ইমামের সঙ্গে সাক্ষাৎ
মানোলো টে ইসলামাবাদের প্রখ্যাত শাহ ফয়সাল মসজিদের ইমামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান৷ ইমাম তাঁকে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতির কথা বলেন৷
ছবি: Manolo Ty
সুফি সংস্কৃতির ঝলক
লাহোরে প্রতি বৃহস্পতিবার বাবা শাহ জামালের মাজারে সুফি সংগীতের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে, যা শোনার জন্য বহু মানুষ ভিড় করেন৷
ছবি: Manolo Ty
11 ছবি1 | 11
সত্যের মুখোমুখি
প্রদেশগুলো যখন এই লড়াইয়ে ব্যস্ত, সুশীল সমাজ তখন খুঁজছেন এই সমস্যার সমাধান৷ ‘‘৬৭ শতাংশ মানুষ কোনো কংক্রিটের ছাদের নীচে বাস করে না, ৩৫ ভাগ কৃষকের নিজের জমি নেই, ৬ কোটিরও বেশি মানুষ বাস করছে দারিদ্র্যসীমার নীচে'', লাহোরের অ্যাকটিভিস্ট ফারুক তারিক জানান ডয়চে ভেলেকে৷ তিনি বলেন, ‘‘এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে মৌলিক সুযোগসুবিধা পৌঁছে দেয়ার পর্যাপ্ত উদ্যোগ না নিলে অবস্থা হবে ভয়াবহ৷''
এই মুহূর্তে পাকিস্তান তার জিডিপির মাত্র ০ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যয় করে স্বাস্থ্যখাতে, ২ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে৷ তারিক মনে করেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনের দিনগুলিতে সমস্যা আরো বাড়বে৷
লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. মেহদি হাসান সমস্যার গুরুত্ব বোঝাতে আরো কিছু পরিসংখ্যান দিলেন ডয়চে ভেলেকে৷ ‘‘প্রায় ২ কোটি শিশু স্কুলের বাইরে রয়েছে৷ তার ওপর আরো ৪৩ শতাংশ শিশু পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার আগেই ঝড়ে পড়ে৷ জনসংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে এই সংখ্যাও দ্রুতই বাড়তে থাকবে৷''
পাকিস্তানের বর্তমান বাজেট ঘাটতি অনেক বেশি, কমছে রপ্তানিও৷ গত চার বছর ধরে প্রচুর পরিমাণে ঋণ নিয়েও অর্থনীতি চাঙ্গা করতে পারছে না দেশটির সরকার৷
অর্থনীতিবিদ জিয়া উদ্দিন বলছেন, ‘‘এরই মধ্যে আমাদের ঋণের পরিমাণ ৭০ বিলিয়ন ইউরো (সাড়ে ৫ লাখ কোটিরও বেশি) ছাড়িয়েছে৷ জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে ঋণের পরিমাণও বাড়বে৷'' জিয়া উদ্দিন জানান, পাকিস্তানের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত চার শতাংশ৷
দক্ষিণ এশিয়ায় এ হার সর্বনিম্ন বলেও জানান তিনি৷ বলেন, ‘‘আমাদের সম্পদ এত অপ্রতুল যে এই আদমশুমারির আগেও আমাদের তেমন কিছুই ছিল না৷''
মুসলমানদের জন্য সেরা ১৫টি দেশ
প্রকাশিত হয়েছে ‘গ্লোবাল ইসলামিক ইকোনমি রিপোর্ট ২০১৬-১৭’৷ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি মুসলিমবান্ধব দেশগুলোর নাম৷ সেখানে বাংলাদেশও আছে৷ দেখুন...
ছবি: Getty Images/AFP/M. Al-Shaikh
দশম স্থানে ইন্দোনেশিয়া
৩৬ পয়েন্ট নিয়ে ইন্দোনেশিয়া আছে দশ নম্বরে৷ ইসলামি বিনিয়োগে দেশটি আছে নয় নম্বরে৷ এছাড়া হালাল কসমেটিক্স এবং হালাল ওষুধ বেশি পাওয়া যায় এমন দেশগুলোর মাঝে ইন্দোনেশিয়া আছে অষ্টম স্থানে৷
ছবি: SUDIARNO/AFP/Getty Images
নবম স্থানে জর্ডান
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার ঠিক আগে আছে৷ ইসলামি বিনিয়োগে দেশটি আছে নয় নম্বরে৷
ছবি: Reuters
অষ্টম স্থানে কাতার
কাতারের মোট পয়েন্ট ৪৩৷ হালাল ও ইসলামি বিনিয়োগ আর বেশি ইসলামি মিডিয়া আছে এমন দেশগুলোর তালিকার শীর্ষ দশে আছে দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
কুয়েত সপ্তম
কুয়েতের মোট পয়েন্ট ৪৪৷ ইসলামি বিনিয়োগে ষষ্ঠ এবং বেশি ইসলামি মিডিয়া আছে এমন দেশগুলোর তালিকার শীর্ষ দশে আছে এই দেশটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Al-Zayat
ষষ্ঠ স্থানে পাকিস্তান
সেরা মুসলিমবান্ধব দেশগুলোর তালিকায় মোট ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে পাকিস্তান আছে ষষ্ঠ স্থানে৷ হালাল খাবার বেশি পাওয়া যায় এমন দেশগুলোর তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে দেশটি৷ বেশি ইসলামি বিনিয়োগে পাকিস্তান আছে সপ্তম স্থানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Akber
ওমান পঞ্চম
পাকিস্তানের চেয়ে তিন পয়েন্ট বেশি নিয়ে ওমান আছে পঞ্চম স্থানে৷
ছবি: J. Sorges
চতুর্থ স্থানে সৌদি আরব
সৌদি আরবের মোট পয়েন্ট ৬৩৷ তারা আছে চতুর্থ স্থানে৷
ছবি: Reuters/File Photo/A. Jadallah
বাহরাইন সৌদি আরবের চেয়ে এগিয়ে
সৌদি আরবের চেয়ে তিন পয়েন্ট বেশি নিয়ে বাহরাইন আছে তৃতীয় স্থানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Al-Shaikh
দ্বিতীয় স্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাত
মোট ৮৬ পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় সেরা মুসলিমবান্ধব দেশ হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷
ছবি: picture-alliance/DPPI/A. Francolini
সবার সেরা মালয়েশিয়া!
হ্যাঁ, তালিকায় সবার ওপরে আছে মালয়েশিয়া৷ তাদের মোট পয়েন্ট ১২১!
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kahnert
এবং বাংলাদেশ
২৬ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ আছে ১৫ নম্বরে৷ ১৫টি সেরা মুসলিমবান্ধব দেশের তালিকায় বাংলাদেশের আগে আছে শুধু ইরান, সুদান, ব্রুনেই এবং সিঙ্গাপুর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
11 ছবি1 | 11
জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকি
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন শুধু অর্থনীতি নয়, বর্ধিত জনসংখ্যা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও৷ বিশ্লেষক আহসান রাজা বলছেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অপ্রতুল সম্পদ শুধুমাত্র ধর্মীয় এবং জঙ্গিবাদী শক্তিগুলোকেও আরো শক্তি জোগাবে৷
‘‘আমাদের এখনই ৭৯ হাজার নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মাদ্রাসা আছে৷ গরিব পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠাচ্ছে৷''
এ সব মাদ্রাসার বেশিরভাগেয় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে থাকার জায়গা এবং খাবার দেয়া হয়৷ ফলে দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে মাদ্রাসায় সন্তান ভর্তি করার আগ্রহও ধীরে ধীরে বাড়ছে৷ রাষ্ট্র যত বেশি মৌলিক অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হবে, ততই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ব্যাঙের ছাতার মতো বাড়বে বলে মনে করেন আহসান রাজা৷
শহরগুলোও যে এই হুমকি থেকে নিরাপদ, তা নয়৷ রাজা বলছেন, শহরেও প্রায় ৩০ হাজারের মতো মাদ্রাসা রয়েছে৷ রাজা সতর্ক করছেন, এ সব মাদ্রাসা থেকে অনেক ‘জিহাদি' এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থি বের হবে, এবং শুধুমাত্র নাস্তিক নয়, মুক্তমনা এবং সেক্যুলার কর্মীরাও হবেন তাদের টার্গেট৷
পাকিস্তান: অগুনতি সন্ত্রাসী হামলার একটি দশক
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সঙ্গীদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে যোগ দেয়ার পর, চড়া মূল্য দিতে হয়েছে পাকিস্তানকে৷ উগ্রপন্থিদের হাতে দেশটির কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ ছবিঘরে দেখুন সেই মর্মান্তিক কাহিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A Majeed
২০০৭ – সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাবর্তনের দিন করাচিতে হামলা
২০০৭ সালের ১৮ অক্টোবর করাচিতে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর গাড়িবহরে জোড়া বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ সে সময় দীর্ঘ আট বছর পর দেশে ফিরছিলেন তিনি৷ হামলায় বেনজির বেঁচে গেলেও, প্রাণ হারায় ১৩৯ ব্যক্তি৷ কিন্তু এর মাত্র দু’মাস পর, ২৭ ডিসেম্বর, রাওয়ালপিন্ডিতে অপর এক হামলায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Khawer
২০০৮ – ওয়াহ বোমা হামলা
ওয়াহ-তে অবস্থিত ‘পাকিস্তান অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিস’-এ জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারায় ৬৪ ব্যক্তি৷ ২০০৮ সালের ২১ আগস্টের সেই হামলাই এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানে কোনো সামরিক স্থাপনায় সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘তাহরিক-ই-তালেবান’ (টিটিপি) সে সময় ঐ হামলার দায় স্বীকার করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Khan
২০০৮ – রাজধানীর হোটেলে সন্ত্রাসী হামলা
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত মারিয়ট হোটেলে বিস্ফোরকভর্তি ট্রাক দিয়ে হামলা চালানো হয়৷ ২০০৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের সেই হামলায় প্রাণ হারায় কমপক্ষে ৬০ ব্যক্তি, আহত ২০০৷ হতাহতদের মধ্যে ২০ জন বিদেশিও ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Matthys
২০০৯ – পেশোয়ারে হামলা
পাকিস্তানের পেশোয়ারে নারী ও শিশুদের বাজার হিসেবে পরিচিত ‘মিনা বাজারে’ একটি গাড়ি বোমা হামলায় ১২৫ ব্যক্তি নিহত ও ২০০ ব্যক্তি আহত হয়৷ পাকিস্তান সরকার এই হামলার পেছনে তালেবান জড়িত বলে দাবি করলেও, জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবান এবং আল-কায়দা – উভয়েই সেই হামলার দায় অস্বীকার করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A Majeed
২০১০ – ভলিবল ম্যাচে আত্মঘাতী হানা
পাকিস্তানের বানুর একটি গ্রামে ভলিবল খেলা চলাকালে আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারায় ১০১ ব্যক্তি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Azam
২০১১ – চারসাদার পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হামলা
পাকিস্তানের খাইবার পাকতুনখার চারসাদা জেয়া একটি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জোড়া বোমা হামলায় ৯৮ ব্যক্তি নিহত ও ১৪০ জন আহত হয়৷ ২০১১ সালে ১৩ মে ক্যাডেটরা যখন প্রশক্ষিণ শেষে দশদিনের ছুটিতে নিজ নিজ বাড়ি যাওয়ার পথে বাসে উঠছিল, তখন হামলার ঘটনাটি ঘটে৷ বলা হয়ে থাকে, ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই নাকি ঐ হামলা চালায় তালেবান৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Ahmed
২০১৩ – পেশোয়ারে চার্চে বোমা হামলা
২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পেশোয়ারের ‘অল সেইন্ট চার্চে’ জোড়া আত্মঘাতী হামলায় ৮২ ব্যক্তি প্রাণ হারায়৷ ‘তাহরিক-ই-তালেবান’ বা টিটিপি সংশ্লিষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী জুনদাল্লাহ সেই হামলার দায় স্বীকর করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Khan
২০১৪ – পেশোয়ারে স্কুলে হত্যাযজ্ঞ
২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর টিটিপি-র সাতজন বন্দুকধারী পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে হামলা চালায়৷ তারা ১৫৪ ব্যক্তিকে হত্যা করে, যাদের মধ্যে ১৩২টি শিশু ছিল৷ পাকিস্তানের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা৷
ছবি: AFP/Getty Images/A Majeed
২০১৫ – করাচিতে বাসে হামলা
২০১৫ সালের ১৩ মে আটজন বন্দুকধারী করাচিতে একটি বাসে হামলা চালিয়ে ৪৬ ব্যক্তিকে হত্যা করে৷ নিহতদের সবাই শিয়া মুসলমান ছিল৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করে জুনদাল্লাহ বা ‘আল্লাহ-র সেনা’ নামের জঙ্গি গোষ্ঠী৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
২০১৬ – হাসপাতালে বোমা হামলা
চলতি বছরের ৮ আগস্ট পাকিস্তানের কোয়েটায় সরকারি হাসপাতালে আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং গুলিতে ৭০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়৷ নিহতদের অধিকাংশই আইনজীবী, যাঁরা অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত বেলুচিস্তান বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিলাল আনওয়ার কাসির মরদেহ নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন৷