1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জনসংখ্যা বিতর্কে অস্থির পাকিস্তান

১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নতুন আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী দুই দশকে দেড়গুণ বেড়ে পাকিস্তানের জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি ৭৮ লাখে৷ একদিকে সম্পদের অপ্রুতলতা, অন্যদিকে আদমশুমারির স্পষ্টতা নিয়ে প্রদেশগুলোর মুখোমুখি অবস্থান, জন্ম দিয়েছে নতুন বিতর্কের৷

Bildergalerie Das Leben in Balochistan
ছবি: Abdul Ghani Kakar

৭০ বছর আগে যখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, তখন এর জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৩ কোটি ৩৭ লাখ৷ পরিসংখ্যান বলছে, পাকিস্তানের বড় বড় শহর, পশ্চিমের প্রদেশ এবং আফগান সীমান্তে অবস্থিত আদিবাসী এলাকাগুলোতে জনসংখ্যা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি৷

কিন্তু এই আদমশুমারির তথ্য সঠিক কিনা, সে নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দল৷ ফলে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের এই হুমকি কীভাবে সামাল দেয়া হবে, সে নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন সমাজবিজ্ঞানীরা৷

ছোট প্রদেশগুলো দাবি করছে ইসলামাবাদে অবস্থিত পাকিস্তানের ফেডারেল সরকার এই আদমশুমারির তথ্য কোনোভাবে ‘প্রভাবিত' করেছে৷ রাজনীতিবিদরা মনে করেন, আদমশুমারিতে যা দেখানো হয়েছে, তার চেয়ে তাদের প্রদেশগুলোর সত্যিকার জনসংখ্যা আরো অনেক বেশি৷

কিন্তু এমন মনে করার কারণ কী? তাঁরা বলছেন, জনসংখ্যার হিসেব অনুযায়ীই বরাদ্দ হবে বাজেট৷ ফলে জনসংখ্যা কম দেখিয়ে যাতে অর্থবরাদ্দও কম দেয়া যায়, সেটিই ফেডারেল সরকারের উদ্দেশ্য৷

সাবেক অর্থমন্ত্রী ড. মুবাসির হাসান বলছেন, ‘‘বাজেটের একটি বড় অংশ বরাদ্দ থাকে সেনাবাহিনীর জন্য৷ বাকিটা পুঁজিবাদী, সামন্তবাদী এবং আমলারা ভাগাভাগি করে নিয়ে যায়৷ আমরা যদি প্রতিরক্ষা বাজেট না কমাই, সামন্তবাদ উচ্ছেদ না করি এবং জমি বণ্টন না করে দেই, তাহলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অসংখ্য সমস্যা আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠবে৷''

সত্যের মুখোমুখি

প্রদেশগুলো যখন এই লড়াইয়ে ব্যস্ত, সুশীল সমাজ তখন খুঁজছেন এই সমস্যার সমাধান৷ ‘‘৬৭ শতাংশ মানুষ কোনো কংক্রিটের ছাদের নীচে বাস করে না, ৩৫ ভাগ কৃষকের নিজের জমি নেই, ৬ কোটিরও বেশি মানুষ বাস করছে দারিদ্র্যসীমার নীচে'', লাহোরের অ্যাকটিভিস্ট ফারুক তারিক জানান ডয়চে ভেলেকে৷ তিনি বলেন, ‘‘এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে মৌলিক সুযোগসুবিধা পৌঁছে দেয়ার পর্যাপ্ত উদ্যোগ না নিলে অবস্থা হবে ভয়াবহ৷''

এই মুহূর্তে পাকিস্তান তার জিডিপির মাত্র ০ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যয় করে স্বাস্থ্যখাতে, ২ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে৷ তারিক মনে করেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনের দিনগুলিতে সমস্যা আরো বাড়বে৷

লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. মেহদি হাসান সমস্যার গুরুত্ব বোঝাতে আরো কিছু পরিসংখ্যান দিলেন ডয়চে ভেলেকে৷ ‘‘প্রায় ২ কোটি শিশু স্কুলের বাইরে রয়েছে৷ তার ওপর আরো ৪৩ শতাংশ শিশু পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার আগেই ঝড়ে পড়ে৷ জনসংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে এই সংখ্যাও দ্রুতই বাড়তে থাকবে৷''

পাকিস্তানের বর্তমান বাজেট ঘাটতি অনেক বেশি, কমছে রপ্তানিও৷ গত চার বছর ধরে প্রচুর পরিমাণে ঋণ নিয়েও অর্থনীতি চাঙ্গা করতে পারছে না দেশটির সরকার৷

অর্থনীতিবিদ জিয়া উদ্দিন বলছেন, ‘‘এরই মধ্যে আমাদের ঋণের পরিমাণ ৭০ বিলিয়ন ইউরো (সাড়ে ৫ লাখ কোটিরও বেশি) ছাড়িয়েছে৷ জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে ঋণের পরিমাণও বাড়বে৷'' জিয়া উদ্দিন জানান, পাকিস্তানের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত চার শতাংশ৷

দক্ষিণ এশিয়ায় এ হার সর্বনিম্ন বলেও জানান তিনি৷ বলেন, ‘‘আমাদের সম্পদ এত অপ্রতুল যে এই আদমশুমারির আগেও আমাদের তেমন কিছুই ছিল না৷''

জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকি

অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন শুধু অর্থনীতি নয়, বর্ধিত জনসংখ্যা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও৷ বিশ্লেষক আহসান রাজা বলছেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অপ্রতুল সম্পদ শুধুমাত্র ধর্মীয় এবং জঙ্গিবাদী শক্তিগুলোকেও আরো শক্তি জোগাবে৷

‘‘আমাদের এখনই ৭৯ হাজার নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মাদ্রাসা আছে৷ গরিব পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠাচ্ছে৷''

এ সব মাদ্রাসার বেশিরভাগেয় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে থাকার জায়গা এবং খাবার দেয়া হয়৷ ফলে দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে মাদ্রাসায় সন্তান ভর্তি করার আগ্রহও ধীরে ধীরে বাড়ছে৷ রাষ্ট্র যত বেশি মৌলিক অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হবে, ততই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ব্যাঙের ছাতার মতো বাড়বে বলে মনে করেন আহসান রাজা৷

শহরগুলোও যে এই হুমকি থেকে নিরাপদ, তা নয়৷ রাজা বলছেন, শহরেও প্রায় ৩০ হাজারের মতো মাদ্রাসা রয়েছে৷ রাজা সতর্ক করছেন, এ সব মাদ্রাসা থেকে অনেক ‘জিহাদি' এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থি বের হবে, এবং শুধুমাত্র নাস্তিক নয়, মুক্তমনা এবং সেক্যুলার কর্মীরাও হবেন তাদের টার্গেট৷

সাত্তার খান/এডিকে

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ