সরকারের উপর চাপ বাড়াতে নয়া কৌশল কৃষকদের। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী জনসনকে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে না আসার অনুরোধ।
বিজ্ঞাপন
মোদী সরকারের উপর চাপ বাড়াতে নিত্যনতুন কৌশল নিচ্ছে দিল্লির সীমানায় আন্দোলনরত কৃষকরা। এ বার আর মোদী সরকার বা রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন নয়, কৃষক নেতাদের আর্জি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কাছে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে নির্বাচিত শিখ সদস্যদের মাধ্যমে তাঁরা জনসনকে অনুরোধ করেছেন, তিনি যেন আগামী ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে না আসেন। জনসন এ বার প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি। মোদী সরকারের আমন্ত্রণ স্বীকার করে তিনি ওই দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দিল্লি আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কিন্তু তাঁর এই আসা নিয়ে সামান্য হলেও একটা সংশয় দেখা দিয়েছে। কৃষকরা ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিবের কাছে চিঠি দিয়ে এই অনুরোধ করেছেন। তার উপর পার্লামেন্টের শিখ সদস্যদেরও অনুরোধ করা হয়েছে, বিষয়টি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলতে। ঘটনা হলো, গত সপ্তাহে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারতের কৃষক আন্দোলনের প্রসঙ্গ উঠেছিল। তুলেছিলেন পার্লামেন্টের শিখ সদস্য তনমনজিৎ সিং ধেসি। তিনি বরিস জনসনকে প্রশ্ন করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী কি আমাদের উদ্বেগের কথা এবং কৃষক সমস্যার দ্রুত সমাধানের অনুরোধ ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন?
জনসন অবশ্য উল্টো জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যা হচ্ছে, তা খুবই উদ্বেগের। কিন্তু এটা ওই দুই দেশের বিষয়। দুই দেশের সরকারের উচিত, সমস্যার সমাধান করা। কৃষকদের প্রসঙ্গে এই ভাবে পাকিস্তানকে টেনে আনার পর সামাজিক মাধ্যমে জনসনকে নিয়ে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ কম হয়নি। তবে বিষয়টি গুলিয়ে ফেলায় তিনি প্রশ্নের ঠিক জবাব দিতে পারেননি। তাই কৃষক আন্দোলন নিয়ে তাঁর মতও জানা যায়নি।
দিল্লির রাজপথের দখল নিচ্ছেন কৃষকরা
বিতর্কিত আইন প্রণয়নের প্রতিবাদে পাঞ্জাবের কৃষকরা ভারতের রাজধানী দিল্লির পথে নেমেছে৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: IANS
ব্যর্থ আলোচনা
রাজধানী দিল্লি ও হরিয়ানার সীমান্তে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ জানাচ্ছেন কৃষকরা৷ সদ্য পাস হওয়া কৃষি বিল মানতে না পারায় সরকারের সাথে আলোচনায় বসছে কৃষক সংগঠনগুলির নেতৃত্ব৷ কিন্তু এখনো কোনো সুরাহা হয়নি৷ চলছে কৃষকদের অবস্থান বিক্ষোভ৷
ছবি: Moshin Javed
ছাড় নেই
কৃষকদের দাবির মুখে এখনো অনড় কেন্দ্রীয় সরকার৷ প্রতিবাদী কৃষকরা যাতে দিল্লির মূল রাস্তায় না ঢুকতে পারেন, সেজন্য যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Moshin Javed
কর্পোরেটের দখল
ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সম্প্রতি সংসদে তিনটি কৃষি বিল পাশ করেছে৷ নতুন নিয়মের আওতায় এখন আর ফসলের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করতে পারবেন না কৃষকরা৷ খোলা বাজারের নিয়ম মেনেই ঠিক হবে ফসলের দাম৷ কৃষকদের বক্তব্য, এই নিয়মের কারণে কর্পোরেট সংস্থাগুলির প্রভাব বাড়বে, কমবে ফসল ফলানো কৃষকদের অধিকার৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
ফসলের ন্যূনতম দাম
এমএসপি বা মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইসের ব্যবস্থা এতদিন নিশ্চিত করেছে ফসলের দাম৷ এই এমএসপির সুবিধা তুলে দেওয়ায় বড় বড় কর্পোরেট সংস্থা কৃষকদের ক্ষতির কারণ হতে পারে৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
চাপে স্থানীয় নেতৃত্ব
যদিও স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব বলছে যে, এমএসপির সুবিধা সরানো হবে না, কৃষক সংগঠনগুলির মত, তবুও বাড়বে কৃষিক্ষেত্রে কর্পোরেট হস্তক্ষেপ, যার কোপ এসে পড়বে ছোট চাষীদের ওপরেই৷ প্রতিবাদে বিজেপি কার্যালয়গুলির সামনে ও নেতাদের বাসস্থানের বাইরেও অবস্থানে রয়েছেন কৃষকরা৷ অনেক ক্ষেত্রেই গ্রামাঞ্চলে, যেখানে কৃষিনির্ভর পরিবারের বাস, সেখানে সমর্থন হারাচ্ছে বিজেপি৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
পাঞ্জাবের রাজনীতিতে প্রভাব
কৃষক সংগঠনগুলি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলকে এই প্রতিবাদে না টানলেও, তাদের এই প্রতিবাদ সরকারকে চাপে রাখছে৷ পাঞ্জাবে বহুদিন ধরেই বিজেপির জোটসঙ্গী আকালি দল, যারা চলমান প্রতিবাদের পরিস্থিতিতে জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে৷ বলা হচ্ছে, এমনটা তারা করেছে স্থানীয় সমর্থন না হারাতে৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
সম্মানের, জীবিকার প্রশ্ন
পাঞ্জাবে একজন কৃষক গড়ে এক থেকে দুই হেক্টর জমির মালিক৷ তবে সেই জমি থেকে আয় খুব একটা বেশি নয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের খরচ চালানোর জন্য তা যথেষ্টই হয়৷ ভারতের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ প্রায় ১২০ কোটি মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল৷ ফলে, তাদের জন্য এই প্রতিবাদ গুরুত্বপূর্ণ৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
কিছু বদলাবে কি?
কৃষকদের মত, তাদের সমস্যা শুনতে রাজি নয় কর্তৃপক্ষ৷ উল্টোদিকে, কৃষকদের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযোগ, তারা ‘নতুন বিলগুলি ঠিক করে পড়েনি’, তারা‘অর্থনীতি বুঝতে নারাজ’, এবং তারা ‘অতীতেই আটকে আছে’৷ কৃষকরা ‘রাজনৈতিক ঘুঁটি’, এমনটাও শোনা গেছে সরকারের তরফে৷ কৃষকরা হলফ করে বলতে পারছেন না এখনো কতদিন পথ আঁকড়ে পড়ে থাকবেন৷ কিন্তু প্রতিবাদ থেকে সরে এলে তাঁদের কথা প্রচার করবার কোনো পন্থা থাকবে না বলে মনে করেন তারা৷
ছবি: Seerat Chabba/DW
8 ছবি1 | 8
কিন্তু গত সপ্তাহে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব যখন আগামী ২৬ জানুয়ারি জনসনের ভারতে আসার কথা ঘোষণা করেন, তখন তিনি বলেছিলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে তিনি কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তখন তিনি বলেছেন, 'আপনাদের রাজনীতির' সঙ্গে 'আমাদের রাজনীতিরও' কিছুটা মিল আছে। কারণ, ব্রিটেনে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সংখ্যা যথেষ্ট। রাব যা বলেননি, তবে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা হলো, ভারতীয় মূলের ভোটব্যাঙ্ককে তাঁরাও চটাতে চান না।
কাকতালীয় হলেও ঘটনা হলো, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা জানিয়েছেন, করোনার পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাঁদের মত হলো, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যেন এখন বাইরের দেশে সফর না করেন।
তবে প্রজাতন্ত্র দিবসের ক্ষেত্রে এখনো একমাসের বেশি সময় আছে। ততদিনে পরিস্থিতি বদলাতেই পারে। তবে কৃষকদের আশা, জনসন তাঁদের অনুরোধে সাড়া দেবেন।