বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতেই শুধু কক্সবাজারের যাননি৷ তিনি জনসমর্থনটাও যাচাই করছেন৷ আর সেটা শাসক দল আওয়ামী লীগও আঁচ করতে পেরেছে৷ তাই খালেদার গাড়িবহরে হামলা নিয়ে চরছে নানামুখী আলোচনা৷
বিজ্ঞাপন
খালেদা জিয়া তাঁর গাড়িবহর নিয়ে ঢাকা থেকে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন৷ এরপর ফেনীর ফতেপুর এলাকায় তাঁর গাড়িবহরের সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদের গাড়ির ওপর হামলা হয়৷ সেখানে বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করা হয়৷ এতে তিনজন সাংবাদিক আহতও হন৷
পরবর্তীতে চট্টগ্রামের মীরসরাই এলাকায়ও হামলার ঘটনা ঘটে৷ তবে রবিবার চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি৷ আর আগের দিনের হামলার জন্য বিএনপি শাসকদল আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে৷ রবিবার সকালে চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি'র মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘এই হামলা পরিকল্পিত৷ এতে সাংবাদিকেরাও আহত হয়েছেন৷ এই হামলা কারা করেছে তার সাক্ষী সাংবাদিকরাই৷''
Sakil.mp3 - MP3-Stereo
তিনি আরো বলেন, ‘‘বিএনপির চেয়ারপার্সন মানবিক কর্মসূচিতে যাচ্ছেন৷ কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মধ্যে তিনি ত্রাণ বিতরণ করবেন৷ রাস্তায় হাজার হাজার নেতাকর্মী তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷ এসব জায়গায় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি কোনো বক্তব্য দেননি৷ অথচ ওনার গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে৷''
একইদিন সকালে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘সংবাদপত্রে দেখলাম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা৷ কিন্তু তিনি ও তাঁর গাড়ি অক্ষত আছে৷ তাহলে হামলাটা হলো কোথায়? কিভাবে হলো?''
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে যে, সরকার চাচ্ছিল খালেদা জিয়া যেন সরাসরি কক্সবাজার চলে যান৷ পথে কোনো জমায়েত বা সংবধর্না যাতে না হয়৷ আর সেজন্য ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে যেসব এলাকায় খালেদা জিয়া থামতে পারেন এবং তাঁকে সংবর্ধনা দেয়া হতে পারে সে সব এলাকার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল৷
এদিকে, বিএনপি'র একাধিক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে ফেরার পর নানা কৌশলে তাঁর বক্তব্য সাধারণের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছেন৷ আর একারণেই তিনি জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে বিস্তারিত কথা বলছেন৷ আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি দু'দিন আদালতে কথা বলেছেন৷ আরো বলবেন৷ আর তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থনে দেয়া বক্তৃতায় বাংলাদেশের রাজনীতির নানা দিক উঠে আসছে৷ নিজেরও মামলা ও পরিবারের ওপর নানা হয়রানি ছাড়াও শেখ হাসিনা প্রসঙ্গেও কথা বলছেন তিনি৷ এটা তাঁর একটা কৌশল৷
টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংঘাতের মুখে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশের টেকনাফে এসেছেন সাড়ে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ সেখানে তাঁদের জীবনযাত্রা, তাঁদের জীবনের দুঃসহ স্মৃতির বর্ণনা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের লম্বার বিল এলাকা দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা শরণার্থী আসছে আশ্রয়ের সন্ধানে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে এসে পৌঁছান টেকনাফে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পরিবারের অসুস্থ ও বৃদ্ধ সদস্যদের এভাবে কাঁধে নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে টেকনাফে এসেছেন অনেকেই৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীরা মিয়ামনমার থেকে অনেকটা খালি হাতেই পালিয়ে এসেছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীদের মধ্যে অনেকেই চোখের সামনে দেখেছেন স্বজন হত্যার বিভৎস দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী ও শিশুরা বাংলাদেশে আসার দীর্ঘপথে নদী-খালও পাড়ি দিয়েছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফ ও নাইক্ষংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত থেকে আসা কমে গেলেও শাহপরীর দ্বীপ থেকে এখনও দলে দলে শরণার্থীরা আসছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের নাফ নদীর ওপারে প্রতিদিনিই দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের বসতি জ্বালিয়ে দেয়ার দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তিন দিন ধরে আগুন দেয়া হচ্ছে মংডু ও রাসিডাং এলাকার রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর৷ শাহপরীর দ্বীপ থেকে তোলা ছবি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশে আসা শরণার্থীদের অনেকেই নিয়ে আসছেন গবাদি পশু৷ এক্ষেত্রে তাঁরা ব্যবহার করছেন নাফ নদীকে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
গত কয়েকদিন ধরে আসা মানুষদের বড় একটা অংশের শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই মেলেনি৷ কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের পাশেই দিন কাটছে তাঁদের৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
অনেকে আবার জায়গা করে নিয়েছেন সড়কের পাশের বিভিন্ন টিলার উপরে৷ সোখানে খোলা আকাশের নীচেই দিন রাত পার করছেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের বালুখালীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নুতন শিবির৷ বিশাল এ এলাকায় সব শরণার্থীরই জায়গা করে দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ২ লাখের বেশিই শিশু, যা এবার আসা মোট শরণার্থীর ৬০ শতাংশ৷ ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ শে আগস্টের পর থেকে ১১শ’রও বেশি শিশু অভিভাবক ছাড়া রাখাইন থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ শুরু হয়েছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের কাজ৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করলে প্রথমে সীমান্ত সিল করা দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কিন্তু কয়েকদিন পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরনের নির্দেশ দিলে সীমান্ত শিথিল হয় এবং ব্যাপকহারে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছেন৷ কোনো গাড়ি থেকে শুকনা খাবার দিতে দেখলেই খাবার সংগ্রহ করতে তাঁদের মধ্যে শুরু হয় কঠিন প্রতিযোগিতা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫শে আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অস্ত্রধারী বিদ্রোহীরা ২৪টি পুলিশ চেকপোস্ট ও একটি সেনাঘাঁটিতে একযোগে হামলা চালায়৷ তাদের পাল্টা হামলা চালালে তা সহিংসতায় রূপ নেয়৷ দু’পক্ষের সংঘর্ষে সেইদিনই রাখাইন রাজ্যে অন্তত ৮৯ জন নিহত হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
22 ছবি1 | 22
বিএনপি সূত্রে আরো জানা গেছে যে, আগামী নির্বাচনের জন্য বিএনপি এখনই প্রস্তুত হচ্ছে৷ দলটি এবার ‘পজিটিভ' আন্দোলন করতে চায়৷ নির্বাচনের আগে বিএনপি নির্বাচরকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা প্রকাশ করবে৷ এবং সেই রূপরেখা বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলনে যাবে৷
খালেদা জিয়ার গাড়ি বছরের সঙ্গে থাকা অনলাইন নিউজ পেপার ‘বাংলা ট্রিবিউনে'র সিনিয়র রিপোর্টার সালমান তারেক শাকিল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘চট্টগ্রাম খেকে কক্সবাজারের সড়কের দু'পাশে বিএনপি'র শত শত নেতাকর্মী খালেদা জিয়া যাত্রাপথে দাঁড়িয়ে ছিল৷ তখন খুব ধীরগতিতে খালেদা জিয়ার গড়ি বহর এগোয়৷ নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা যায় নির্বাচনি আমেজ৷ তারা অনেকেই দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ এর আগে শনিবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে পথেও একই পরিস্থিতি দেখা যায়৷''
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, খালেদা জিয়া আসলে দেশের মানুষের মনোভাব জানতে চেয়েছেন এই সুযোগে৷ আর সেটা তিনি এরইমধ্যে বুঝতে পেরেছেন৷ নেতাকর্মীরা সাহস নিয়ে মাঠে নামলে নির্বাচনের আগেই বিএনপি চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন তিনি৷
উল্লেখ্য, রবিবার সন্ধ্যার পর খালেদা জিয়া কক্সবাজার শহরে পৌঁছলেও তিনি ত্রাণ বিতরণ করবেন সোমবার সকালে৷ কক্সবাজারের উখিয়ায় চারটি ক্যাম্পে তাঁর ত্রাণ বিতরণের কথা রয়েছে৷