1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রাকৃতিক সম্পদ

১২ মে ২০১২

বিদেশিদের হাতে প্রাকৃতিক সম্পদ তুলে দিতে চেয়েছিল বাংলাদেশ সরকার৷ কিন্তু এহেন একটি জাতীয় স্বার্থ বিরোধী নীতিমালা সমর্থন পায়নি জনগণের৷ জানালেন প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ৷

A worker of state-coal miner PT Bukit Asam shows a coal rock at the open pit mine in Tanjung Enim in South Sumatra province August 23, 2011. China Railway Group has been awarded a $1.3 billion contract to build a 307-km rail line from the giant Bukit Asam coal mine in South Sumatra to a new port near the city of Bandar Lampung. Acquiring the land for the railway highlights many of the issues in building infrastructure in Indonesia. REUTERS/Dwi Oblo +++REUTERS+++
Kohle in der Hand, Indonesienছবি: Reuters

বাংলাদেশের মতো ‘তৃতীয় বিশ্ব'-এর বহু দেশের একটা বড় সমস্যা হলো, প্রাকৃতিক সম্পদ বিপুল পরিমাণে থাকা সত্ত্বেও সেই সম্পদ তারা নিজেদের কাজে লাগাতে পারেনি৷ সরকারের ভুল নীতি এবং বহুজাতিক কোম্পানিমুখী বিভিন্ন ধরনের নীতির কারণে আফ্রিকা বা ল্যাটিন অ্যামেরিকার দেশগুলিতে সেই সম্পদ উত্তোলন হচ্ছে, হচ্ছে রপ্তানিও৷ কিন্তু এতে দেশগুলোর কোনো উন্নতি হয়নি৷ বরং বেড়েছে দারিদ্র্য এবং অপশাসন৷

এই অভিজ্ঞতাগুলো দেখে, বাংলাদেশে গঠিত হয়েছে ‘তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষায় একটি জাতীয় কমিটি৷ ভারতে গ্যাস রপ্তানির উদ্যোগ বাংলাদেশের মানুষকে বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত করবে - এ দাবিতেই ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় এই সম্মিলিত জাতীয় কমিটি৷ যাতে যোগ দেন বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ছাত্র-ছাত্রী, এমনকি আইনজীবীরাও৷

প্রশ্ন, এ নীতি গঠনের পিছনে কী কাজ করেছিল? অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ জানান, ‘‘আমাদের যে সম্পদ আছে, তা খুবই সীমিত৷ তেল-গ্যাস-কয়লা এগুলো অনবায়নযোগ্য৷ এগুলো ইচ্ছা করলেই আবারো নতুন করে সৃষ্টি করা যায় না৷ তাই ভুল নীতি যদি একবার হয়, সেটা সংশোধন করার কোনো উপায় নেই৷ তাছাড়া, এ সম্পদ শতভাগ জনগণের৷ তাই এটাকে শতভাগ জনগণের মালিকানাতেই থাকতে হবে৷ এটা হচ্ছে এক নম্বর কথা৷ দু'নম্বর হচ্ছে যে, এই সম্পদ রপ্তানি করা যাবে না৷ তৃতীয়ত, এই কাজগুলি করার জন্য স্বাধীনতা পরবর্তী সময় বাংলাদেশে একটা দক্ষতা তৈরি হয়েছে৷ এই যেমন গ্যাস উত্তোলন, পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করা, কয়লা ব্যবহার করা৷ সুতরাং, সেগুলোকেই কাজে লাগাতে হবে৷''

জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগাতে চায় না সরকারছবি: DW

উন্মুক্ত খনন পদ্ধতির মাধ্যমে কয়লা উত্তোলনের ফলে সারা পৃথিবীতে অনেক ক্ষতি হয়েছে৷ তবে যেসব দেশে ‘ওপেন পিট' আছে, সে সব দেশে আবাদি জমি কম, জনবসতিও তেমন নেই৷ অথচ বাংলাদেশে প্রত্যেক ইঞ্চি জমি কিছু না কিছু উৎপাদন করে৷ মাটির নীচে একটু খুঁড়লেই পানি পাওয়া যায়, প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যা এখানে প্রায় ১,২০০ থেকে ১৩,০০ জন৷

স্বাভাবিকভাবেই, বাংলাদেশ থেকে কয়লা তুলে বিদেশে রপ্তানি করা হলে সর্বনাশ হতো৷ এতে কয়লা যেত, মানুষ যেত, আবাদি জমি নষ্ট হতো, ক্ষতি হতো খাদ্য নিরাপত্তারও৷ আর তাই, এক বিশাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের মানুষ৷ ফুলবাড়ির ঐ ঘটনায় জীবনও দিয়েছিল তারা৷

আনু মুহাম্মদের কথায়, ‘‘বাংলাদেশের মানুষের একটা ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ও চেতনা তৈরি হয়েছে এ ব্যাপারে৷ আর সে জন্যই বাংলাদেশ নাইজেরিয়ার মতো একটি অভিশপ্ত দেশে পরিণত হয় নি৷ কিন্তু তার অর্থ এটা না যে, বাংলাদেশ এর থেকে পুরোপুরি মুক্ত৷ সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে৷ যা রপ্তানির জন্য নিতে চাইছে বিদেশি কোম্পানি৷ আসলে বাংলাদেশে যে সরকারই আসুক, তাদের নিজেদের মধ্যে বহু বিষয়ে মারামারি হলেও, জনস্বার্থ বিরোধী নীতির ব্যাপারে খুব বেশি মতানৈক্য দেখা যায় না৷ কমিশনভোগীরা দেখা যায় দুই পক্ষেই বেশ শক্তিশালী৷''

বলা বাহুল্য, বর্তমানে উন্মুক্ত কয়লা খনন পদ্ধতি নিষিদ্ধ৷ সারা বিশ্বে এখন ‘ক্লিন এনার্জি', ‘ক্লিন কোল' ইত্যাদি নিয়ে নানা রকম গবেষণা চলছে৷ ‘‘কিন্তু বাংলাদেশে এক্ষেত্রে তখনই কিছু করা সম্ভব হবে, যখন সব রকম ‘কর্পোরেট ইন্টারেস্ট'-এর প্রভাবমুক্ত হতে পারবো আমরা'', জানান অধ্যাপক মুহাম্মদ৷ বলেন, ‘‘আমরা পানি সম্পদের দিক থেকে খুবই সমৃদ্ধ৷ তাই এই কয়লা তুলতে গিয়ে পানিসম্পদ নষ্ট করার কোনো মানে হয় না৷ অর্থনৈতিকভাবে এর কোনো যুক্তিও নেই৷ তার ওপর বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের যে ঝুঁকি রয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে এতে আমাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে, ভয়াবহ বিপদের মধ্যে পড়তে পারে সাধারণ মানুষ৷''

তাই আনু মুহাম্মদের মন্তব্য, ‘‘কি ধরনের পদ্ধতিতে আমরা কয়লার সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারি, তা নির্ধারণ করতে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন৷ এবং তার আগ পর্যন্ত আমাদের যে গ্যাস সম্পদ রয়েছে, তা দিয়েই দূর করা উচিত বিদ্যুতের সমস্যা৷''

সাক্ষাৎকার: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ