ঠিক ৬০ বছর আগে নারী যৌনতায় বিপ্লব ঘটাতে এই পিল-এর উদ্ভব৷ নারীর শারীরিক আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এ এক মাইলফলক৷ বলা হচ্ছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা বড়ির কথা৷
বিজ্ঞাপন
১৯৬০ সালের ১৮ আগস্ট মার্কিন কোম্পানি সার্ল অ্যান্ড কো. প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে হরমোন গর্ভনিরোধক পণ্য এনোভিড বাজারে ছাড়ে, যা নারীর শারীরিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক হিসেবে ধরা হয়৷ এই গর্ভনিরোধককে বহু নারী সাদরে আমন্ত্রণ জানালেও তা নিয়ে বিতর্কও ছিল৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হরমোনের গর্ভনিরোধক গবেষণার কাজে নারী অধিকার কর্মী মার্গারেট স্যাঙ্গার এবং ক্যাথরিন ম্যাকোর্মিক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন৷
১৯৬১ সালে আনোভলার নামে গর্ভনিরোধক পিল প্রথম জার্মানির বাজারে আসে৷ সেটা প্রাথমিকভাবে ঋতুস্রাবের প্রতিকার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে৷ তাছাড়া বিবাহিত নারীদের মধ্যে যারা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি সন্তানের মা, তাদেরই কেবল পিল কেনার অনুমতি ছিল৷
৩৮ সন্তানের জননী
মাত্র ২৭ বছরে ৩৮ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন উগান্ডার এক নারী৷ অবাক করা হলেও সত্যি ঘটনা এটি৷ বিশাল এই পরিবারের ভার একাই সামলান এই নারী৷
ছবি: Reuters/J. Akena
কী করে সম্ভব!
মরিয়ম নাবাতানজির বিয়ে হয়েছিল ১২ বছর বয়সে৷ এক বছর পরই জমজ সন্তানের জন্ম দেন তিনি৷ এরপর দুটি করে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন আরো পাঁচবার৷ তিনটি করে সন্তান হয়েছে চারবার৷ আর চারটি করে সন্তান প্রসব করেছেন পাঁচবার৷ তিন বছর আগে স্বামী ছেড়ে যায় তাঁকে৷ ৩৯ বছরের মরিয়ম এখন জীবিত ৩৮ সন্তানের জননী৷
ছবি: Reuters/J. Akena
যে কারণে এত সন্তান
সন্তানদের নিয়ে পূর্ব কাম্পালার মুকোনো জেলার কাসায়ো নামের একটি গ্রামে বসবাস করেন নাবাতানজি৷ প্রথম জমজের জন্মের পর তিনি সেখানকার এক ডাক্তারের কাছে যান৷ ডিম্বাশয়ের আকার বড় হওয়ার কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে– এমন তথ্য জানিয়ে ডাক্তার তাঁকে জন্মবিরতিকরণ পিল খেতে নিষেধ করেন৷ এরপর একের পর এক সন্তান আসতে থাকে নাবাতানজির কোলজুড়ে৷
ছবি: Reuters/J. Akena
প্রতি নারীর ৫ দশমিক ৬ সন্তান
শুধু নাবাতানজির নন, গোটা আফ্রিকায় পরিবারগুলোর আকারই তুলনামূলকভাবে বড়৷ উগান্ডা তার মধ্যে অন্যতম৷ সেখানে প্রতিজন নারীর সন্তান জন্মের হার ৫ দশমিক ৬ জন, বৈশ্বিক গড় সেই তুলনায় অনেক কম– ২ দশমিক ৪৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Forster
নাবাতানজির কষ্ট
নাবাতানজি সবশেষ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন আড়াই বছর আগে৷ ষষ্ঠ এই জমজের একটি শিশু মারা যায় জন্মের সময়ই৷ এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ছয়টি সন্তানের মৃত্যু হয়েছে৷ সবশেষ সন্তানের জন্মের পরই স্বামী নাবাতানজিকে ছেড়ে যায়৷ পরিবারটিতে এখন তাঁর নামটিও যেন এক অভিশাপ৷ ‘‘আমি চোখের জল ফেলেই জীবন কাটিয়েছি৷ আর আমার পুরুষ এই বিপর্যয়ের মধ্যে আমাকে ছেড়ে গেছে,’’ বলেন নাবাতানজি৷
ছবি: Reuters/J. Akena
বিশাল পরিবারের ভরণপোষণ
সন্তানদের দেখাশোনা আর তাদের ভরণপোষণের জন্য আয়রোজগারেই দিন পার করেন নাবাতানজি৷ এজন্য একাধিক কাজ করতে হয় তাঁকে৷ চুল সজ্জা, মানুষের ঘর সাজানো, ফেলনা জিনিপত্র সংগ্রহ ও সেগুলো বিক্রি, হার্বাল ঔষধ বিক্রি– একা সবই করেন তিনি৷ আর দিনশেষে যা আয় হয়, সবই চলে যায় সন্তানদের খাবার, চিকিৎসা, কাপড় আর স্কুল ফি-র পেছনে৷
ছবি: Reuters/J. Akena
এক ঘরে দিনযাপন
নাবাতানজির সন্তানদের একজন সাত বছর বয়সের ইসাক মুবিরো৷ একটি কক্ষে এমন লোহার খাটে পাতলা ম্যাট্রেসের উপর ঘুমায় বারো সন্তান৷ বাকিরা ময়লা মেঝেতেই রাত পার করে৷
ছবি: Reuters/J. Akena
২৫ কেজি ভুট্টা
নাবাতানজি জানান, দৈনিক ২৫ কিলোগ্রাম ভুট্টার আটা লাগে পুরো পরিবারের খাওয়ার জন্য৷ এই একটি খাবারই সারাদিন চলে৷ মাছ আর মাংস খাওয়ার ঘটনা ঘটে খুবই কম৷
ছবি: Reuters/J. Akena
দায়িত্ব বন্টন
নাবাতানজির সন্তানদের প্রত্যেকেই ঘরের কাজ ভাগ করে নেয়৷ বড়রা ছোটদের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করে৷ প্রত্যেকেই রান্নাসহ ঘরের সব কাজ করে৷ দেয়ালের একটি কাঠের বোর্ডে দৈনিক কাজের তালিকা ভাগ করে দেয়া থাকে৷
ছবি: Reuters/J. Akena
8 ছবি1 | 8
গর্ভনিরোধক পিলের প্যাকেটে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার উল্লেখ থাকায় সেটাও অনেকের মধ্যে দ্বিধার সৃষ্টি করেছিল৷
সেসময় খুব কম চিকিৎসকই জন্মনিয়ন্ত্রণপিল সেবনের পরামর্শ দিতেন৷ ফলে বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রে বড়ি পাওয়া খুব কঠিন ছিল৷ চিকিৎসক এবং রক্ষণশীল রাজনীতিবিদরাও জন্মনিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেটের বিপক্ষে ছিলেন, বিশেষ করে ক্যাথলিক চার্চ গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট প্রবর্তনের তীব্র বিরোধিতা করেছিল৷ কঠোর নিন্দা করেছিলেন ষষ্ঠ পোপ পল৷
১৯৬৮ সালে যখন জাতিসংঘ পরিবার পরিকল্পনার অধিকার ঘোষণা করে এবং বড়ি সম্পর্কে আরও গবেষণার ফলাফল পাওয়া যায়, তখন জার্মান চিকিৎসকরা পিলের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব শিথিল করেন৷ এবং তারপর থেকে জার্মানিতে আরও বেশি সংখ্যক মহিলা জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য পিল সেবন শুরু করেন৷ এমনকি জন্মনিয়ন্ত্রণের কারণে নারীরা স্বাধীনভাবে পড়াশোনা করতে পারায় শিক্ষিত নারীর সংখ্যাও বেড়েছে৷
জার্মানিতে জন্মনিরোধক হিসেবে পিল এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয়৷ জানুয়ারি মাসে ফেডারেল সেন্টার ফর হেলথ এডুকেশনের করা এক জরিপে জানা যায়, ১৮ থেকে ৩৯ বছর বয়সিদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ নারী জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য পিলকেই বেছে নেন৷