1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘জবাবদিহিতা নেই, তাই ইশতাহার বাস্তবায়নে দলগুলোর অনীহা’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৭ নভেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশে প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো ইশতাহার দিয়ে থাকে৷ ডয়চে ভেলেকে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বললেন, ইশতাহারের গুরুত্ব দল বা জনগণ কেউই দিচ্ছে না৷

ছবি: picture-alliance/A.A./N. Kumar

ডয়চে ভেলে : বাংলাদেশে নির্বাচনি ইশতাহার কতটা গুরুত্ব বহন করে?

 ড. বদিউল আলম মজুমদার : অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে৷ যেমন, ২০০৮ সালে মহাজোট বা আওয়ামী লীগের যে নির্বাচনি ইশতাহার ছিল, সেটা ছিল দিনবদলের সনদ৷ ইশতাহারে তারা সবকিছুর আমূল পরিবর্তনের একটা অঙ্গীকার করেছিল, যে কারণে বহু ভোটার তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল৷ বিশেষ করে তরুণ এবং নিরপেক্ষ ভোটাররা৷ এই কারণে তারা বিপুল বিজয় অর্জন করে৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার পরে তারা সেই অঙ্গীকার বহুলাংশেই ভুলে গিয়েছিল৷ যেমন, দলীয়করণ, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ইত্যাদি নির্মূল করা, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণসহ বিভিন্ন রকম সুদূরপ্রসারী অঙ্গীকার ছিল৷ কিন্তু এই অঙ্গীকারগুলো কাগজেই রয়ে গেছে৷ এগুলো বাস্তবে রূপ দেখিনি৷ এই ইশতাহার হলো ভোটার এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে এক ধরনের অলিখিত চুক্তি৷ এটা বাস্তবায়ন করা রাজনৈতিক দলের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সাধারণ নাগরিকদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ৷

সাধারণ ভোটাররা কি ইশতাহারকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন?

কিছু কিছু ভোটার, বিশেষ করে শিক্ষিত সচেতন ভোটাররা তো গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন৷ আমি নিশ্চিত যে, ২০০৮ সালে আমি অনেক অনেক তরুণ ভোটারের কাছ থেকে শুনেছি দিনবদলের সনদ প্রকাশ হওয়ার পর তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন৷ আসলে ভোটারদের এক অংশের জন্য এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ৷

সাধারণ ভোটাররা কি ইশতাহার দেখে ভোট দেন, নাকি মার্কা দেখে? 

‘‘অনেকেই মার্কা দেখে ভোট দেন’’

This browser does not support the audio element.

অনেকেই মার্কা দেখে ভোট দেন৷ আমরা হিসাব করে দেখেছি, দলের প্রতি যে আনুগত্য তাতে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি'র পক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ ভোটার আছে, যারা মূলত মার্কা দেখে ভোট দেয়৷ অন্যান্য দল বাদ দিলে ২৫ শতাংশ ভোটার কিন্তু নির্বাচনি ইশতাহার, প্রার্থী এবং অন্যান্য অনেক বিষয় বিবেচনা করেই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন৷ তাই নির্বাচনি ইশতাহার অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি৷

রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি ইশতাহারকে কতটা গুরুত্ব দেয়?

আমি মনে করি তারা নির্বাচনের আগে সুন্দর সুন্দর কথা বলার ব্যাপারে পারদর্শী৷ কিন্তু নির্বাচনের পরে বহুলাংশেই এগুলো তারা ভুলে যান৷ আমি যেটা বলছিলাম যে, ২০০৮ সালে ইশতাহারে যা ছিল তার বহুলাংশই এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে৷ আজ যদি সেই ইশতাহার বাস্তবায়ন করা হতো, তাহলে রাজনীতি ভিন্নভাবে প্রবাহিত হতো৷ আমরা অনেক বেশি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সহনশীল বাংলাদেশ পেতাম৷

ইশতাহার তৈরির আগে বা পরে তৃণমূল পর্যায়ে এই নিয়ে কোনো আলোচনা হয়?

আমার জানা মতে, কোনো আলোচনা হয় না৷ আমি কখনো দেখিনি বা শুনিওনি৷ এটা দলের মধ্যে যাঁরা চিন্তাশীল ব্যক্তি আছেন, বুদ্ধিজীবী যাঁরা আছেন, তাঁরা এটা তৈরি করেন৷ আমি মনে করি না, এর সাথে তৃণমূল জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা আছে৷

তৃণমূল পর্যায়ে ইশতাহার নিয়ে আলোচনা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তৃণমূলের মানুষ বুঝতে পারেন এবং তাঁদের মতামত সেখানে প্রতিফলিত হয়৷ এবং সেই ইশতাহার বাস্তবায়ন তাঁদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে৷ এই কারণে তাঁদের মতামত থাকাটা খুবই জরুরি৷

রাজনৈতিক দলগুলো ইশতাহারে কোন বিষয়গুলো মূলত সামনে আনে?

দলগুলো সাধারণত যে বিষয়গুলো মানুষের জন্য আকর্ষণীয়, সেই বিষয়গুলোই মূলত তারা সামনে আনে৷ মানুষের সামনে হাজির করে লোকরঞ্জনকারী জিনিসগুলোই৷

রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় গিয়ে ইশতাহারের কতটা বাস্তবায়ন করে? এ নিয়ে কি আপনাদের কোনো কাজ আছে?

আমরা অতীতে এ নিয়ে পত্রিকায় লিখেছি৷ জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম করেছি৷ আমরা গোলটেবিল বৈঠক করেছি, আলোচনাসভা করেছি৷ বিশেষত ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আমরা এ নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি৷

কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে?

আমি তো বললাম যে, ২০০৮ সালের দিনবদলের সনদ দেয়া হয়েছিল তার বহুল অংশই অপূর্ণ রয়ে গেছে

আগের নির্বাচনগুলো যেমন, ২০০১, ১৯৯৬ বা ১৯৯১ সালে যে নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো নিয়ে নিশ্চয় আপনারা পর্যালোচনা করেছেন? 

হ্যাঁ, সেগুলো আমরা পর্যালোচনা করেছি৷ সেখানেও বাস্তবায়নের হার আশাব্যঞ্জক নয়৷ এগুলোও কথার কথাই রয়ে গেছে৷ এগুলো কাগজে স্থান পেয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবে রূপ পায়নি৷

ইশতাহারের কোন বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকে?

যেগুলো বাস্তবায়ন করা দুরূহ বা যেগুলো বাস্তবায়ন করলে গতানুগতিক রাজনীতি থেকে সরে আসতে হবে, সেগুলোই উপেক্ষিত থাকে৷ যেমন দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, দলীয়করণের অবসান করার কথা দিলেও অতীতে তারা বাস্তবায়ন করেনি৷ বরং এগুলোতেই তারা আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়েছে৷

নির্বাচনি ইশতাহার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর অনীহা কেন?

এর মূল কারণ, দুর্ভাগ্যবশত এ নিয়ে তাদের দায়বদ্ধ করা হয় না, যে কারণে তারা বাস্তবায়ন না করে পার পেয়ে যায়৷ আসলে আমাদের যে মার্কা আছে, সেই মার্কার শ্লোগান দিয়েই তারা ইশতাহার ভুলিয়ে দেন৷ এবং এটা বাস্তবায়ন না করে পার পেয়ে যাচ্ছেন৷

নির্বাচনি ইশতাহার বাস্তবায়ন করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে বাধ্য করার কোনো পথ আছে?

এটা দুরূহ৷ আমাদের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সেখানে তাদের বাধ্য করা দুরূহ৷ আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যদি আরো সুসংহত হতো, আমাদের দেশটা যদি আরো উন্নত হতো, তাহলে এটা সম্ভব হতো৷ তবে এই সময় এটা করা খুবই দুরূহ কাজ৷

রাজনৈতিক দল বা জনগনের উদ্দেশ্যে নির্বাচনি ইশতাহার নিয়ে আপনার যদি কোনো পরামর্শ থাকে...

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, তারা যেন নির্বাচনি ইশতাহারকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন এবং এটা বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ দেন৷ আর সাধারণ ভোটারদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, তাঁরা যেন নির্বাচনি ইশতাহারের প্রতি গুরুত্ব দেন এবং রাজনৈতিক দলগুলো অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করেছে কিনা সে ব্যাপারে তাদের দায়বদ্ধ করে৷ তাহলে এই অবস্থার উন্নতি ঘটবে বলেই আমি বিশ্বাস করি৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ