নায়িকা পরিমনিকে আদালতে নেয়ার দৃশ্য আমাদের নিশ্চয় মনে আছে৷ বিপুল সংখ্যক পুলিশের বেষ্টনীর মধ্যে তাকে আদালতে নেয়া হয়৷
বিজ্ঞাপন
সাধারণত এমন কড়া নিরাপত্তা নেয়া হয় দুর্ধর্ষ আসামির ক্ষেত্রে, যার জীবনের উপর হুমকি আছে অথবা পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷
পরিমনি সে রকম আসামি না হলেও প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত করা হয় তার জন্য৷ শুধু তাই নয়, পুলিশের কর্মকর্তা পর্যায়ের কয়েকজন উপস্থিত থেকে পরিমনির নিরাপত্তার বিষয়টা তদারকি করে৷
অন্যদিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের বা বড় সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তার বেলায় উল্টো চিত্র দেখতে পাই আমরা৷ এদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় না৷ নামকাওয়াস্তে স্বল্প সংখ্যক পুলিশ দেয়া হয়, যা না করলেই নয়৷
অনেক ক্ষেত্রে জনবলের অভাবের কারণে পর্যাপ্ত পুলিশ দেয়া সম্ভব হয় না বলে দাবি করা হয়৷ সে যুক্তি যে সঠিক না তা পরিমনির উদাহরণ টেনে বলা যায়৷
বাংলাদেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেখানে পুলিশের সংকট হওয়ার কথা না৷ দেশে জঙ্গি হামলা নেই, রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটছে না আবার বড় ধরনের অপরাধও খুব একটা দেখা যায় না৷ এমন পরিস্থিতে আদালত প্রাঙ্গণ ও জেল থেকে আসামিদের আদালতে আনা-নেয়ার সময় তাদের নিরাপত্তায় যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ নিয়োজিত করাই স্বাভাবিক৷ তবে তা করা হয় না৷
জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর বদলে যাওয়া আদালতপাড়া
২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার পর আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ আদালতপাড়ার হঠাৎ বদলে যাওয়ার চিত্র দেখুন ছবিঘরে....
ছবি: Mortuza Rashed/DW
৯ বছর পর আবার
২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার ৯ বছর পর গত ২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম)-এর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ও মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামিরকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগীরা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
প্রধান ফটকে জিজ্ঞাসাবাদ
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের প্রধান ফটকের সামনে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে আসা এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ৷ এছাড়া কারো গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে আদালতপাড়ায় আসার কারণসহ বিস্তারিত জানতে চাওয়া হচ্ছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পাহারায় পুলিশ
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং মহানগর দায়রা জজ আদালতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কিছু দূর পরপর পুলিশের ৩-৪ জনের একটি দল পাহারা দিচ্ছে৷ কবে থেকে এখানে দায়িত্ব পালন করছেন জানতে চাইলে তারা জানান, ২০ তারিখের পর থেকে নিয়মিত তারা এখানে দায়িত্ব পালন করছেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
রেড অ্যালার্ট ও পুরস্কার ঘোষণা
প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পর বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশজুড়ে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে৷ তাদের ধরিয়ে দিলে পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান৷ তিনি বলেন, দুই জঙ্গিকে ধরতে ১০ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
আড্ডায় আলোচনার বিষয়বস্তু জঙ্গি ছিনতাই
সিএমএম আদালতের আশেপাশে চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায় সেখানে মানুষ জঙ্গি ছিনতাই নিয়ে আলোচনা করছেন৷ ব্যবসায়ী রহমত আলী বলেন, ‘‘শুনেছি পুরো সিনেমার স্টাইলে এখান থেকে জঙ্গি নিয়ে গেছে৷ এর আগেও এখানে আসছি, তবে এত পুলিশ আগে দেখিনি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পুলিশের সংখ্যা এবং নজরদারি বৃদ্ধি
সিএমএম আদালতপ্রাঙ্গণে প্রধান ফটকে সকাল থেকেই পুলিশের কড়াকড়ি দেখা যায়৷ বুধবার সকাল ১০টা বাজতেই সেখানে অবস্থান নেন ১২-১৩ জনের দুটি নিরাপত্তা দল৷ এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও ছিল চোখে পড়ার মতো৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সব আসামির হাতে এখন হাতকড়া
আদালতে নিয়মিত আসা আইনজীবী, সাক্ষী এবং হাজতিদের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার আগে আসামিদের হাতকড়া বা দড়ির ব্যবহার খুব একটা না থাকলেও এখন প্রত্যেককে কড়া নিরাপত্তায় আদালতে আনা-নেওয়া হচ্ছে৷ এছাড়া আদালতপ্রাঙ্গণে আগে কখনো এত পুলিশ সদস্য দেখেননি বলেও জানান তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সব সাময়িক?
পুরান ঢাকার সিএমএম, সিজেএম কোর্ট এবং মহানগর দায়রা জজ আদালতে একাধিক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী, আইনজীবী এবং সাধারণ মানুষের কাছে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা পুরো বিষয়টিকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে মন্তব্য করেন৷ বর্তমানে নেয়া কড়াকড়ি ব্যবস্থাকে ‘সাময়িক’ মনে করছেন তারা৷ আগামী কিছুদিনের মধ্যেই আরেকটি বড় ঘটনা ঘটলে এই ঘটনা ধামাচাপা পড়ে পরিস্থিতি আগের রূপেই ফিরে যাবে বলে বিশ্বাস তাদের৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অস্থায়ী হাজতখানায় এখনো শৈথিল্য!
সিএমএম আদালতের পাশে অস্থায়ী হাজতখানায় বিভিন্ন মামলার আসামিদের জেলখানা থেকে এনে আদালতে হাজিরা দেওয়ানোর আগে কয়েক ঘণ্টার জন্য রাখা হয়৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া সেখানে কারো প্রবেশের অনুমতি না থাকলেও বুধবার হাজতিদের আত্মীয়-স্বজনদের সেখানে প্রবেশ করতে দেখা গেছে৷ তবে সাংবাদিকের উপস্থিতি দেখে সেখানে বহিরাগতদের প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
শুধু গরিবদের জন্য?
২০১৪ সাল থেকে রাজনৈতিক মামলায় সাত মাস জেল খেটেছেন ব্যবসায়ী মো. শামীম মোল্লা৷ তিনি মনে করেন, ‘‘এইসব আইন-কানুন আর কড়াকড়ি শুধু যাদের টাকা নাই, তাদের জন্য৷ এই যে পাশেই হাজতখানা, এখানে পাঁচশ-হাজার টাকার বিনিময়ে আত্মীয়-স্বজনেরা হাজতিদের খাবারদাবার থেকে শুরু করে ইয়াবা-ডাইলও হাতে দিতে পারে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অনেক অনিয়ম
ঢাকার নিম্ন আদালতের আইনজীবী মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘‘দুর্ধর্ষ এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের এভাবে ডান্ডাবেড়ি ছাড়া শুধু হাতকড়া পরিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে একই পথে আদালতে নেওয়া হবে কেন? জঙ্গিদের নিরাপত্তায় পুলিশের সংখ্যাও ছিল অপর্যাপ্ত৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বঙ্গবন্ধু চত্বর দোকানপাটমুক্ত
পুরান ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সংলগ্ন জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু চত্বরের চায়ের ১০-১২টি দোকান, ফলমূল বিক্রির ভ্রাম্যমাণ দোকান, ঝালমুড়ি-বাদাম বিক্রির দোকানসহ প্রায় ৩০টি দোকান তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়৷ এছাড়া আরো দুইটি আদালত প্রাঙ্গণও জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর থেকে ভ্রাম্যমাণ দোকানমুক্ত করা হয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পুলিশ বরখাস্ত
জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷ সাময়িক বরখাস্তরা হলেন- সিএমএম হাজতখানার কোর্ট ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান, হাজতখানার ইনচার্জ এসআই নাহিদুর রহমান, আসামিদের আদালতে নেওয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এটিএসআই মহিউদ্দিন, কনস্টেবল শরিফুল হাসান ও কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে উচ্চ আদালতেও
ঢাকার নিম্ন আদালতে নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চ আদালত তথা সুপ্রিম কোর্টেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন৷ পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপত্তা গেট বা আর্চওয়ে দিয়ে সবাইকে তল্লাশি করার পর বিভিন্ন ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
শুধু সাইনবোর্ডেই সীমাবদ্ধ
সিএমএম আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় দেখা যায় জিআর শাখার প্রধান ফটকে ‘প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত’ সাইনবোর্ড ঝুলানো৷ তবে সেখানে সাধারণ মানুষের অবাধ যাতায়াত দেখা যায়৷ এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোনো নিরাপত্তারক্ষীকে ফটকে দেখা যায়নি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
আদালতে স্বজনদের সাক্ষাত
ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সংলগ্ন মহানগর দায়রা জজ আদালতের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পুলিশ প্রহরায় হাজিরা দিতে আসা হাতকড়া পরা আসামিদের সাথে তাদের পরিবারের সদস্যরা কথা বলছেন, খাবারদাবার, পরনের কাপড়চোপড় দিচ্ছেন এবং সন্তানকেও কোলে দিচ্ছেন৷ তবে এসব কাজ সম্পূর্ণ অবৈধ বলে জানান নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
16 ছবি1 | 16
তাহলে সমস্যাটা কোথায়? কেন আসামিদের নিরাপত্তা ও আদালত প্রাঙ্গণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয় না?
এর পেছনে দুর্নীতি, অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা এবং জবাবদিহির অভাব এই তিনটি বড় কারণ বলে আমি মনে করি৷
প্রথমেই আসা যাক দুর্নীতির বিষয়টায়৷ কারাগারের মত আদালতেও টাকা দিয়ে অনেক কিছু করা যায় আর তা কম-বেশি সকলেরই জানা৷
অতীতে অনেক স্পর্শকাতর মামলার আসামিরা কোর্টে হাজিরা দিতে এসে জন্মদিন ও বিবাহবার্ষিকী পালন করে, যা সম্ভব হয়েছে পুলিশের অসৎ কয়েকজন সদস্যের কারণে৷ অর্থের বিনিময়ে কোর্ট হাজতে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ব্যাপারটা সব সময় ঘটে থাকে৷
এছাড়াও আদালত প্রাঙ্গণে আদালতের কর্মচারী নেতাদের যোগসাজশে অবৈধভাবে মোটর সাইকেল রাখা হত৷ আছে অনেক অবৈধ দোকান৷ এসব কিছুই আদালতের নিরাপত্তার সাথে জড়িত৷
আবার কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর দায়িত্বহীনতার কারণেও আদালতে যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না বলে মনে হয়৷
অতীতে দেখেছি বিভিন্ন সময় জঙ্গিদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল আদালত৷ জঙ্গিরা বোমা হামলায় চালিয়েছে বেশ কয়েকটি আদালতে, তাতে বিচারকসহ অনেকে প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছে অনেকে৷ এসব বিবেচনায় আদালতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটাই কাম্য ছিল৷
বিশেষ করে ঢাকার আদালতে অনেক বড় জঙ্গি ও আসামিদের আনা-নেয়া করা করা হয়৷ ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ অনেক জনাকীর্ণ থাকে৷ একদিনে অনেক মামলার শুনানি হয়৷ কয়েকশ আসামিকে জেল থেকে আদালতে আনা হয়৷ এমন পরিস্থিতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে৷ ফলে আদালতে যথাযথ নিরাপত্তা নেয়া উচিত৷ এই দায়িত্ব পুলিশ বিভাগ ও আদালত কর্তৃপক্ষের৷ কিন্তু সেদিকে তারা নজর দেন না৷
তবে কোন অঘটন ঘটলেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়৷ যেমন দুই জঙ্গি পালানোর পর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের প্রবেশ পথসহ চারপাশে পাহারায় অতিরিক্ত পুলিশ, আদালতের হাজতখানার সামনেও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনি, কয়েদি বহনকারী প্রতিটি প্রিজন ভ্যানের সামনে ও পেছনে পুলিশের পাহারা বসানো হয়৷ মূল গেটে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেক করাও হচ্ছে৷ জঙ্গি পালিয়ে যাওয়ার পর এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতান্তই লোক দেখানো৷
আমাদের দেশে ঘটনা ঘটার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়৷ কিন্তু ঘটনাটি যেন না ঘটে সেটা ভেবে ব্যবস্থা নেয়া হয় না৷ এটা কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা ছাড়া কিছুই না৷
এছাড়াও রয়েছে জবাবদিহির অভাব৷ সার্বিকভাবে বাংলাদেশে আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেকে তাদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করে না৷ জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে৷ দায়িত্বে অবহেলা বা অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য ব্যবস্থা নিয়ে কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হয় না৷ বড় জোর তাদের অন্যত্র বদলি করা হয়৷ জঙ্গি পালানোর ঘটনাতেও এমনটাই ঘটছে৷ জবাবদিহিতা না থাকলে অঘটন ঘটাই স্বাভাবিক৷
ঢাকার আদালতে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর আরেকটি ঘটনা ঘটে৷ গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলা মামলার রায় শেষে ঢাকার আদালতের কাঠগড়া থেকে জঙ্গি রাকিবুল আইএস-এর পতাকা ও লোগোর আদলে তৈরি টুপি মাথায় দিয়ে প্রিজনভ্যানে ওঠে৷ এ নিয়ে তখন তোলপাড় হয়৷ আদালত এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ রাকিবুল জানিয়েছিল, ভিড়ের মধ্যে কেউ একজন তাকে টুপিটা দিয়েছিল৷
এর আগে ২০১৪ সালে ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা করে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়৷ আগের ঘটনাগুলো প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়া হলে একই ঘটনা আবার ঘটতো না৷
সর্বশেষ দুই জঙ্গি আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া পর জঙ্গিদের আদালতে আনা-নেয়ার নিরাপত্তা ও আদালত প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা নিয়ে সবাই সচেতন হয়েছে৷ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ অন্যান্য সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ তবে এই ব্যবস্থা হবে সাময়িক৷ কিছু দিন পর নিরাপত্তার এই চিত্র আর থাকবে না৷ আবার সবকিছু আগের মতই ঢিলেঢালাভাবে চলতে থাকবে, যতক্ষণ না আরেকটি অঘটন ঘটবে৷