জবাব দিলেন আলাপন, শাস্তি দেবে মোদী সরকার?
৪ জুন ২০২১পশ্চিমবঙ্গের সদ্য সাবেক হওয়া মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে বিরোধ অব্যাহত। আলাপনকে শো কজ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। মোদী সরকারের নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবার রাতে শো কজের জবাব দিয়েছেন আলাপন। সেখানে তিনি বলেছেন, মুখ্যসচিব হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মানতে তিনি বাধ্য ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে গিয়েছিলেন। আবার তার নির্দেশেই তিনি বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।
সংবাদসংস্থা এএনআই শুক্রবার কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকার এখন জবাব খতিয়ে দেখছে। তারপরই তারা পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে। রজ্যের বর্তমান মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর কাছ থেকে কেন্দ্র জানতে চেয়েছিল, আলাপন এখন কী দায়িত্ব পালন করছেন? দ্বিবেদীও চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছেন, আলাপনকে মুখ্য উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি কী কাজ করবেন সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যসচিব।
এরপরই শুক্রবার কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশ দিয়েছে, অবসরের পর সরকারি কর্মকর্তাদের আবার নিয়োগ করতে হলে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের ছাড়পত্র চাই। আরো বলা হয়েছে, কোনো বিশেষ একজনকে নিয়োগ করা চলবে না। বিজ্ঞাপন দিতে হবে। অন্যদেরও সুযোগ দিতে হবে। আলাপন-কাণ্ডের জেরেই এই নির্দেশ বলে মনে করছে রাজ্য সরকার।
তবে এখন প্রশ্ন হলো, আলাপনের জবাব পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকার কী করতে পারে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''হয় এই জবাব পাওয়ার পর এই বিষয়ে আর না এগনোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্র। অথবা আলাপনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। তার পেনশন সহ অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করতে পারে। অথবা বিপর্যয় মোকাবিলা আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে পারে। কেন্দ্র ব্যবস্থা নিলে মামলা আদালত পর্যন্ত গড়াবে।''
তবে সাবেক আমলাদের একাংশের মতে, আলাপনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না কেন্দ্র। কারণ, এখানে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনেছেন। সাবেক কেন্দ্রীয় সচিব এবং প্রসার ভারতীর সাবেক সিইও জহর সরকার আনন্দবাজারে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে লিখেছেন, ''মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা অথরিটির চেয়ারপার্সন। আর মুখ্যসচিব ওই আইনের ২০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, সেই অথরিটির এগ্জিকিউটিভ কমিটির চেয়ারপার্সন। আগে দেখাতে হবে, তার কোন আদেশ রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা অথরিটির চেয়ারপার্সন কিংবা এগ্জিকিউটিভ কমিটির চেয়ারপার্সন অমান্য করেছেন? সেই লিখিত আদেশ কোথায়?'' তার মতে, ''রাজ্যের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে লিখিত ভাবে এ ভাবে কাঠগড়ায় তোলা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় প্রবল আঘাত।''
আরো কিছু সাবেক আমলাও জহর সরকারের সঙ্গে একমত। আবার কিছু সাবেক আমলার মতে, বিপর্যয় আইন অনুসারে কেন্দ্রের নির্দেশই মানতে হবে। এই আইনকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হবে, তার উপরই বিষয়টি নির্ভর করছে। তবে কেন্দ্রীয়. কর্মকর্তার মতে, বিষয়টি এখন পুরোপুরি রাজনৈতিক হয়ে গেছে। সেই হিসাবেই সিদ্ধান্ত হতে পারে।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)