সিরিয়া ও ইরাক থেকে উৎখাত করা হলেও তথাকথিত ইসলামিক স্টেট অ্যামেরিকার জন্য হুমকি হয়ে থেকে যাবে বলে মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ আইএস ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে বিচ্ছিন্ন হামলার আশঙ্কা করছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
ঢাকার গুলশান বা ফ্রান্সের নিস শহরের সমুদ্রতট – আইএস সরাসরি নির্দেশ না দিলেও আততায়ীরা এই গোষ্ঠীর নামে হত্যালীলা চালিয়েছে৷ তাই তাদের আগে থেকে চিহ্নিত করে এমন হামলা প্রতিরোধ করা কঠিন৷ তবে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ভেঙে দিয়ে ইন্টারনেটে তাদের এমন বার্তার উপর আড়ি পাততে হবে, যা হিংসাত্মক হামলা চালানোর প্রেরণা যোগায়৷ এই কাজ আরও ভালোভাবে করতে হবে৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনের সময়ে আইএস সম্পর্কে এমন মূল্যায়ন দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, আইএস বুঝতে পেরেছে যে হাতে গোনা কিছু মানুষ, এমনকি একজন ব্যক্তিকেও যদি তারা অনুপ্রাণিত করতে পারে, তাহলে তারা মেট্রো রেল, মিছিল বা কোনো প্রকাশ্য জায়গায় হামলা চালিয়ে কয়েক হাজার না হলেও কিছু মানুষ হত্যা করতে এগিয়ে আসবে৷ তার ফলে যে আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তা সৃষ্টি হয়, তা তাদের ভাবমূর্তি বাড়াতে সাহায্য করে৷
সন্ত্রাসী হামলা নিশ্চিতভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন ওবামা৷ এমন হামলা প্রতিহত করতে প্রশাসন নিত্যনতুন পথ খুঁজে চলেছে বটে, তবে তিনি বা তাঁর উত্তরসূরিরা এই সমস্যা নির্মূল করতে পারবেন না৷ সামগ্রিকভাবে এই সব উদ্যোগের ফলে অ্যামেরিকা আজ অনেক নিরাপদ হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
বৃহস্পতিবার বারাক ওবামা বলেন, অ্যামেরিকার সামরিক উদ্যোগের ফলে সম্প্রতি সিরিয়া ও ইরাকে অনেক এলাকা আইএস-এর হাতছাড়া হয়ে গেছে৷ তারা সেই সব এলাকা পুনর্দখলও করতে পারছে না৷ মোসুল বা রাকা থেকেও তাদের বিতাড়িত করতে পারলেও তারা হুমকি থেকে যাবে৷ সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে তারা ছোট আকারের হামলা চালিয়ে যাবে বলে মনে করেন ওবামা৷ তবে আতঙ্কিত না হয়ে তাদের উপর কড়া নজর রাখতে হবে৷ অ্যামেরিকা বা ন্যাটোর সহযোগীদের পরাস্ত করার ক্ষমতা তাদের নেই৷
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে রাশিয়ার ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন ওবামা৷ বিশেষ করে আলেপ্পো শহরের বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে রাশিয়া অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছে বলে তিনি মনে করেন৷
কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে আইএস?
পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি, অধিকৃত এলাকায় কর চাপানো এবং প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার একত্র করেছে৷ তাতে তাদের আরও ২ বছর চলে যাবার কথা৷
ছবি: picture alliance/abaca
বেআইনি তেল বিক্রি
বেআইনি ভাবে পেট্রোলিয়াম বিক্রি আইএস-এর আয়ের প্রধান উৎস৷ সিরিয়া ও ইরাকে বেশ কিছু বড় তৈলকূপ আপাতত তাদের দখলে৷ মূলত তুরস্কের মধ্য দিয়েই তারা চোরাচালানের কাজ চালিয়ে থাকে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, কালোবাজারে তেল বিক্রি করে আইএস-এর মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলার আয় হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ব্যাংক ডাকাতি
সিরিয়া ও ইরাকে কোনো এলাকা দখলের পর আইএস সবার আগে ব্যাংকগুলি কবজা করে ফেলে৷ মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এভাবে তারা ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে৷ শুধু মোসুল শহর দখল করেই তারা নাকি ৬২ কোটি ডলার লুট করেছিল৷ বছরে প্রায় ৫০,০০০ জিহাদি কর্মীর বেতন দিতে এই অর্থ যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
কর আদায় ও চাঁদাবাজি
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ৫ থেকে ১৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়৷ জার্মান সরকারের সূত্র অনুযায়ী, আইএস অ-মুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া করও আদায় করে৷ তাছাড়া চাঁদাবাজিও তাদের আয়ের আরেকটি উৎস৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি
‘জিহাদিরা’ আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করতে অভ্যস্ত৷ তবে বেশি দামি অ্যান্টিক সম্পদ সযত্নে সরিয়ে ফেলে কালোবাজারে বিক্রি করে তারা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে পিছপা হয় না এই গোষ্ঠী৷ তবে বিক্রিমূল্যের সঠিক অঙ্ক জানা নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মুক্তিপণ ও প্রচারণা
মানুষজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আইএস-এর দু-মুখী চাল৷ একদিকে এটা আয়ের একটা উৎস, অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণার কাজও হয়ে যায়৷ কিছু ‘মূল্যবান’ জিম্মির শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য পায় আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সহানুভূতি দেখাতে চাঁদা
আইএস-এর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তহবিলে আর্থিক অবদান রাখে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্র অনুযায়ী সৌদি আরবে ২০১০ সাল থেকে ৮৬০ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের কাজে আর্থিক সাহায্য দেবার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ১০০ জনের শাস্তি হয়েছে৷