সিরিয়া ও ইরাকে আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকা আগের তুলনায় ১৪ শতাংশ কমে গেছে৷ তবে একই সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও খিলাফত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে এই গোষ্ঠীর৷ তাই প্রশ্ন উঠেছে আইএস বা আইসিস-দমন অভিযানের সাফল্য নিয়ে৷
বিজ্ঞাপন
মানচিত্রে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' নিয়ন্ত্রিত এলাকার দিকে তাকালে বিচ্ছিন্ন কিছু জমির টুকরো চোখে পড়ে৷ কয়েকটি অংশে সেই জমির সীমানা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত৷ তাছাড়া আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার সীমানা সদা পরিবর্তনশীল৷ তারা নতুন এলাকা দখল করে, আবার কিছু এলাকা তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়৷ বছরের শেষে হিসাবনিকাশ করে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে আইএস প্রায় ১৪ শতাংশ জমি হারিয়েছে৷
তবে শুধু জমির আয়তনই এ ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বিষয় নয়৷ রাকা ও মোসুল-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর আইএস-এর নিয়ন্ত্রণে থাকায় তাদের কৌশলগত সুবিধা রয়ে গেছে৷
একদিকে মার্কিন ও আরব দেশগুলির জোট, অন্যদিকে রাশিয়া আইএস-এর উপর বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷ কুর্দি ও অন্যান্য কিছু গোষ্ঠী তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে৷ তা সত্ত্বেও আইএস-কে পুরোপুরি পরাস্ত করার সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না৷ সিরিয়া ও ইরাকের বাইরে লিবিয়ায় তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ছে৷ বিশ্বের অন্য কিছু প্রান্তেও আইএস তাদের খিলাফত সম্প্রসারণ করতে চায়৷ আফগানিস্তানে তালেবানকে কোণঠাসা করে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে তারা৷
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়াও আইএস-এর কুনজর থেকে দূরে নেই৷
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আরেক দেশ ফিলিপাইন্সেও সক্রিয় হয়ে উঠতে চায় ইসলামিক স্টেট৷
আইসিস-এর বিরুদ্ধে রণকৌশল মার্কিন নির্বাচনেও বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে৷ এই প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং তাঁরই ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
6 ছবি1 | 6
এসবি/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)
আইসিস-এর বিরুদ্ধে রণকৌশল কী হতে পারে বলে আপনার মনে হয়? জানান নীচের ঘরে৷